02/01/2024
তোমাকে যখন বিয়ে করে আমার ঘরে আনলাম......
তখন তোমার মাত্র ১২ বছর বয়স....আর আমি সদ্য কুড়িতে পা দিয়েছি কি দেই নি।
প্রথম রাতেই তুমি আমাকে দেখে খাটের নিচে গিয়ে লুকিয়েছিলে...
মামনিকে ডেকে ডেকে সেকি কান্না.....
আমার খুব হাসি পেয়েছিল সেদিন।
এরপর থেকে তুমি মামনি ঘরেই ঘুমাতে..
মাঝে মাঝে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার জানলায় উঁকি দিতাম...চেয়ে দেখতাম মায়াভরা একটা বালিকাবধূর মুখ।
সেদিন হয়তো বুঝতাম না ভালোবাসা কি...তবে তোমায় দেখে বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠতো...।
তোমার মনে আছে, আমাদের বাড়ির বাগানের প্রত্যেকটা আম গাছে তুমি চড়ে বেড়াতে...
আম পেড়ে মামনি কাছে জমা রাখতে।
নেয়ার সময় একটা কম হলে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে। ফুঁপাতে ফুঁপাতে যখন বাবা কাছে নালিশ করতে তখন চোখ, নাক লাল হয়ে যেতো....
তখন যে তোমাকে কি অপরূপ লাগতো!!!
আমি সে সৌন্দর্য দেখতাম আর মুচকি মুচকি হাসতাম।
সে হাসি যদি তুমি একটু খানি টের পেতে তাহলে আর রক্ষা নেই...
তোমার ছেলেমানুষি আর খুনশুটিতে আমার বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ মেতে থাকতো।
আর আমি দূর থেকে দেখতাম ছোট্ট একটা বধূ। যার চোখে মুখে উপচে পড়ছে আনন্দের ঝিলিক।
তোমার মনে পড়ে, সেদিন আমার ঘরে এসে তুমি মেলায় যাওয়ার বায়না করেছিলে.....কত করে বুঝিয়ে ছিলাম বাড়ির বউরা মেলায় যায় না...
কিন্তু তোমার কাছে আমার হার মানতেই হয়েছিলো.....
মেলায় মানুষের পা লেগে এতো কাদা ছিলো যে তুমি হাঁটতেই পারছিলে না।
তাই পুরো মেলা তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হয়েছিলো...।
সামান্য টিপ,,, চুড়ি,,আর মাটির কয়েকটা পুতুল তোমাকে যে খুশি করেছিলো....
সে খুশির কলরবে আমার পুরো বাড়ি মুখোরিত হয়েছিলো।
আমিও তোমার অজান্তেই এক জোড়া নূপূর কিনেছিলাম,তোমাকে দেবো বলে।
যেদিন নূপূরগুলো তোমার পায়ে পড়িয়ে দিয়েছিলাম তুমি খুশিতে ছুটে ছুটে সবাইকে দেখাচ্ছিলে...
আমি তোমার নূপূরের প্রত্যেকটা ধ্বনি শুনছিলাম আর শিহরনে হারিয়ে যাচ্ছিলাম অন্য কোন এক জগতে.....।
হঠাৎ একটা ঝড়ে যেন সবকিছু বদলে গেলো...
মামনি মারা গেলেন। বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এলো।
এই শোক যেনো বদলে দিয়ে গেলো তোমাকে। তুমি চুপচাপ হয়ে গেলে...
আস্তে আস্তে বুঝতে শিখলে আমি তোমার স্বামী আর এইটা তোমার শ্বশুরবাড়ি।
সবাইকে অবাক করে তুমিই বাড়ির হাল ধরলে...আস্তে আস্তে মামনি শূন্যতাটা কেটে যেতে লাগলো।
সবাই ভুলতে পারলেও তুমি পারোনি আমি জানতাম।
যখন সে শূন্যতা তোমায়