29/10/2025
VIA পজিটিভ (Positive) হলে পরবর্তী করণীয়:
.চলুন আজ আমরা আগের আলোচনার ধারাবাহিকতায় দেখি—VIA Positive হলে এরপর কী করতে হয়। আগের পোস্টে আপনাদের অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন, "স্যার, পজিটিভ এলে পরের ধাপে কী করা উচিত?" তাই আজ বিষয়টা একদম পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করছি।
প্রথমেই একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বোঝা দরকার— VIA টেস্ট পজিটিভ (Positive) হওয়ার মানেই ক্যানসার নয়।
এর অর্থ হলো, জরায়ুমুখে এমন কিছু কোষগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে, যা ক্যানসার-পূর্ববর্তী (Pre-cancerous) বা কখনো কখনো ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ হতে পারে। তাই, এই পরিবর্তনটি ঠিক কী ধরনের বা কতটা গভীর, তা নিশ্চিত করার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
VIA পজিটিভ হলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান (Standard Medical Protocol) অনুযায়ী সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:
ধাপ ১: বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করা
VIA টেস্টে পজিটিভ ফলাফল এলে রোগীকে আর দেরি না করে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ (Gynecologist) বা নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালের কলপোস্কোপি ক্লিনিকে (Colposcopy Clinic) রেফার করা হয়।
ধাপ ২: কলপোস্কোপি (Colposcopy) পরীক্ষা
এটি হলো পরবর্তী প্রধান ধাপ।
• কলপোস্কোপি কী? -এটি একটি বিশেষায়িত পরীক্ষা, যেখানে 'কলপোস্কোপ' নামক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে জরায়ুমুখকে (Cervix) প্রায় ১০ থেকে ৪০ গুণ বড় করে দেখা হয়। এটি একটি শক্তিশালী আতশ কাচের মতো কাজ করে।
• কীভাবে করা হয়? VIA টেস্টের মতোই এই পরীক্ষাতেও জরায়ুমুখে অ্যাসিটিক অ্যাসিড (Acetic Acid) লাগানো হয়। কলপোস্কোপ যন্ত্রের মাধ্যমে চিকিৎসক খুব সূক্ষ্মভাবে দেখতে পান ঠিক কোন কোন জায়গায় সাদা ভাব (Acetowhite lesions) তৈরি হয়েছে এবং সেই পরিবর্তনগুলো কতটা অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে।
ধাপ ৩: বায়োপসি (Biopsy) নেওয়া
কলপোস্কোপি করার সময় যদি চিকিৎসক কোনো স্থানকে সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক মনে করেন, তখন তিনি সেই স্থান থেকে একটি ছোট মাংসের নমুনা (Tissue Sample) সংগ্রহ করেন। এই প্রক্রিয়াটিকে বায়োপসি বলা হয়।
• বায়োপসি নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, কোষের পরিবর্তনটি ঠিক কোন পর্যায়ের, তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে (Histopathology) নিশ্চিত হওয়া।
• এই পরীক্ষাতেই definitively বোঝা যায় যে পরিবর্তনটি স্বাভাবিক, নাকি CIN 1, CIN 2, CIN 3 (ক্যানসার-পূর্ববর্তী বিভিন্ন ধাপ) অথবা ক্যানসার।
CIN এর পূর্ণরূপ হলো Cervical Intraepithelial Neoplasia।
এর মানে, জরায়ুমুখের ভেতরের স্তরের কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়েছে।
এটি তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়—
CIN 1: হালকা পরিবর্তন (Lower grade)। অনেক সময় চিকিৎসা ছাড়াই নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়।
CIN 2: মাঝারি মাত্রার পরিবর্তন (Moderate dysplasia)। চিকিৎসা দরকার।
CIN 3: উচ্চমাত্রার পরিবর্তন (Severe dysplasia)। এটিকে ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা হয়।
ধাপ ৪: চিকিৎসা পরিকল্পনা (বায়োপসি রিপোর্টের ভিত্তিতে)
বায়োপসি রিপোর্ট পাওয়ার পর চিকিৎসক চিকিৎসার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
১. যদি CIN 1 (নিম্ন-ঝুঁকিপূর্ণ) হয়:
• অনেক ক্ষেত্রে (বিশেষ করে তরুণীদের) এই পরিবর্তনগুলো কোনো চিকিৎসা ছাড়াই শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
• চিকিৎসক সাধারণত ৬ মাস বা ১ বছর পর পর ফলোআপ কলপোস্কোপি বা প্যাপস টেস্ট (Pap's Smear) করার পরামর্শ দেন।
২. যদি CIN 2 বা CIN 3 (উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্যানসার-পূর্ববর্তী) হয়:
• এই পর্যায়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা করা হয়, কারণ এগুলো ভবিষ্যতে ক্যানসারে রূপ নেওয়ার ঝুঁকি বেশি।
• চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো জরায়ুমুখের ওই অস্বাভাবিক কোষগুলোকে সম্পূর্ণ অপসারণ বা ধ্বংস করা। প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হলো:
• লিপ (LEEP - Loop Electrosurgical Excision Procedure): একটি ছোট বৈদ্যুতিক তারের লুপের মাধ্যমে জরায়ুমুখের আক্রান্ত অংশটি কেটে ফেলা হয়। এটি সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি।
• ক্রায়োথেরাপি (Cryotherapy): খুব নিম্ন তাপমাত্রা (ঠান্ডা) প্রয়োগ করে অস্বাভাবিক কোষগুলোকে জমিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
• কোল্ড নাইফ কোনাইজেশন (Cold Knife Conization): সার্জিক্যাল ছুরি দিয়ে জরায়ুমুখের শঙ্কু (Cone) আকৃতির একটি অংশ কেটে ফেলা হয়।
..এই ছিল প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী VIA টেস্টের পরবর্তী করনীয় এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। এখন আপনারা চাইলে আমরা আরো একটি পর্ব লিখতে পারি যেখানে এই সমস্যার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হবে।