28/05/2024
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক আশীর্বাদ।
কিন্তু সেই অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক উপায়ে প্রয়োগ না করলেই হতে পারে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।।
❓অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী?
কেউ যদি অ্যান্টিবায়োটিক (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী) সঠিক পরিমাণে এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে গ্রহণ না করেন তাহলে জীবানুসমুহ পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে বরং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে। তখন ঐ জীবানুর বিরুদ্ধে ঐ অ্যান্টিবায়োটিক পরবর্তীতে আর কাজ করে না। এটাকেই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলা হয়।।
❓অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণ কী?
বিশ্বে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করতে যে পরিমান সময় প্রয়োজন হয়, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি হারে বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।।
যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে সামান্য হাঁচি-কাশি-জ্বরেও মানুষের মৃত্যু-ঝুঁকি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।।
👉 অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সবচেয়ে বড় কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে অত্যধিক মাত্রায় অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার।।
👉 জ্বর, সর্দি, হাচি, কাশি, মাথাব্যথা , সামান্য অসুস্থ হলেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা।।
👉 চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক নিলেও সেটার পূর্ণ কোর্স সম্পন্ন না করে কয়েকটি ডোজের পর ভালো বোধ করলেই ছেড়ে দেওয়া।।
👉 এছাড়া, প্রাকৃতিকভাবেও সৃষ্টি হতে পারে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
যেমন মাছ, হাঁস, মুরগি বা গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক-যুক্ত খাবার দেয়া হলে এবং শাকসবজির উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
❓ এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হলে আমাদের কি ক্ষতি বা অসুবিধে হতে পারে?
এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, এমনকি সামান্য ইনফেকশানের কারনে মৃত্যুর আশংকাও দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।।
একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি-
ধরুন আপনার দীর্ঘদিন যাবৎ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা। আপনি চিকিৎসকের সরনাপন্ন হলে- চিকিৎসক আপনার রোগটা "প্রস্রাবের ইনফেকশন" ডায়াগোনোসিস করলো এবং আপনাকে ৭ দিনের একটা ছোট এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে বললো।।
আপনি ৭ দিন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেন।।
কিন্তু এরপরও আপনার প্রস্রাবের ইনফেকশান ভালো হলো না, কারন ঐ এন্টিবায়োটিকটা আপনার শরীরে রেজিস্ট্যান্ট হওয়াতে সেটা কাজ করেনি।।
৭ দিন পর আপনার প্রস্রাবে ইনফেকশন বেড়ে গিয়ে প্রচন্ড জ্বর+ বমি হলো, তার মানে এন্টিবায়োটিকটা কাজ না করাতে ইনফেকশনটা আরো বেড়ে গিয়েছে।।
এখন চিকিৎসক আপনাকে কিছু পরীক্ষা করাতে বল্লো এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলো।কারন, আপনার এই ইনফেকশন দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, আপনার জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।।
আপনার এই সামান্য প্রস্রাবের ইনফেকশন বৃদ্ধি পেয়ে পাইলোনেফ্রাইটিস হয়ে, ইউরোসেপসিস হয়ে, আপনার ব্লাড প্রেসার কমে গিয়ে আপনার মৃত্যুর কারনও হতে পারে।।
এবার চিন্তা করুন, শুধুমাএ এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারনে, সামান্য প্রস্রাবের ইনফেকশন আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত নিয়ে যেতে বাধ্য করছে।।
❓ আমাদের করনীয় কি?
আমাদের উচিত সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা। এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স সম্পর্কে নিজে জানা এবং অন্যকে জানানো ও বুঝানো।।
সামাজিক ও ব্যক্তিগত সচেতনতার মাধ্যমে এন্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ করা সম্ভব।।
যে কোনো সমস্যা হওয়া মাএই চিকিৎসকের (এমবিবিএস/বিডিএস) পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।।
এতে শুধু আমরা না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর ভয়ানক পরিনতি থেকে রক্ষা পাবে ইংশা-আল্লাহ।।
আসুন,
আমরা সবাই এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার নিয়ে নিজেরা সচেতন হই এবং অন্যকেও সচেতন করি।।