21/06/2023
একজন মহিলার জন্য কতবার সিজারিয়ান ডেলিভারী করানো নিরাপদ❓
➡️আসলে এর কোন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া যাবে না। তবে যত বেশি সংখ্যকবার সিজারিয়ান ডেলিভারী করা হবে জটিলতা ও ঝুঁকির মাত্রা দুটোই বাড়বে।
স্বাভাবিক ডেলিভারী ঝুঁকিপূর্ণ হলে মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য সিজারিয়ান পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এই পদ্ধতিতে জরায়ুর একটি নির্দিষ্ট স্থানে কেটে সেখান দিয়ে বাচ্চা বের করে কাটা স্থানটিকে আবার সেলাই করে জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়।
যে স্থানটি জোড়া লাগানো হয় তা পরবর্তীতে স্কার টিস্যু (Scar tissue) তৈরী করে,যা জরায়ুর অন্যান্য স্থানের চেয়ে দূর্বল (weak) ও পাতলা হয়ে থাকে।
প্রতিবার সিজার করার সময় জরায়ুতে নতুন করে কাটা হয়,এভাবে স্কার টিস্যুর পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং স্বাভাবিকভাবে জরায়ুর সেই জায়গাগুলো ক্রমান্বয়ে আরও দূর্বল ও পাতলা হতে থাকে।
‼️বার বার সিজার করাতে যেসব জটিলতা হতে পারে,তা হলো:
⚠️আগের বারের চেয়ে প্রসবের সময় বেশি লাগা।
⚠️অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং শরীরে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হওয়া।
⚠️জরায়ুর আগের সেলাইয়ের জায়গা ফেটে যাওয়া,যাতে রুগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
⚠️খাদ্যনালী,মূত্রনালী,মূত্রথলি কাটা পড়া।
⚠️গর্ভফুল জরায়ুর ভেতরে ঢুকে যাওয়া। এটি সিজারিয়ান ডেলিভারীর সবচেয়ে মারাত্মক ঝুঁকি।
⚠️জরায়ূ কেটে ফেলা (তৃতীয় সিজারে এর হার ১% এবং ষষ্ঠ সিজারে এই হার ৯%)।
⚠️আশেপাশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও পেটের ওয়াল জরায়ুর সাথে লেগে যাওয়া।
⚠️রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা হওয়া ।
⚠️প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া ।
⚠️দেরীতে সুস্থ হওয়া ।
⚠️হার্নিয়া হওয়া ।
⚠️পেট ঝুলে পড়া।
⚠️পেটের সেলাইয়ের স্থানে ব্যাথা ও অবশবোধ হওয়া।
‼️তাই সিজারিয়ান পদ্ধতিতে কতবার বাচ্চা নিতে পারবে তা নির্ভর করে :
জরায়ুর অবস্থা, মূত্রাশয়ের অবস্থা, জরায়ুর আশেপাশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো জরায়ুর সাথে কতটা জড়িয়েছে তার উপর। এছাড়াও সিজারের সংখ্যা নির্ধারণের আগে জীবিত সুস্থ সন্তানের সংখ্যা এবং একজন মহিলা কতটা সন্তান নিতে চান সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে পঞ্চম সিজার কোন জটিলতা ছাড়া করেছি। আবার দ্বিতীয় সিজারের সময় বহুবার অনাকাঙ্ক্ষিত মারাত্মক জটিলতার সম্মূখীন হয়েছি।
তাহলে করণীয় কি?
🚫তাই এই সকল বিষয় বিবেচনা করে বলা হয়ে থাকে, তৃতীয় বারের বেশি সিজার করে বাচ্চা নেয়া নিরাপদ নয়।
✔️বার বার সিজার করার এই সকল জটিলতা প্রতিরোধ করার জন্য প্রথম বাচ্চা সিজার করে নেয়ার প্রবণতা কমাতে হবে।মনে রাখতে হবে সিজার একটি মেজর (বড়) অপারেশন।তাই প্রথম সিজার করার সিদ্ধান্ত গর্ভবতী মা বা ডাক্তার কারও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
✔️সেইসাথে বার বার সিজারের ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় এনে একটি মানসম্পন্ন হাসপাতাল ও অবশ্যই একজন দক্ষ চিকিৎসক দ্বারা সিজার অপারেশন করাতে হবে,যিনি শুধু সঠিকভাবে অপারেশন করবেন তাই নয়, উপরন্তু সেই জটিলতাগুলো থাকলে তার সঠিক সমাধানও করতে পারবেন। এমনকি তিনি বলে দিতে পারবেন রোগীর পরবর্তীকালে গর্ভধারণ তার জন্য কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
অধ্যাপক ডাঃ লায়লা নূর,
স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ও সার্জন,
আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল,
মগবাজার,ঢাকা।
নিয়মিত এই ধরনের তথ্য পেতে আমার পেজটি ফলো করুন।
আর অন্যদেরও জানাতে পোস্টটি শেয়ার করুন। আর কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।