25/05/2025                                                                            
                                    
                                                                            
                                            বয়স চল্লিশের কোঠা পেরোতে না পেরোতেই অনেকের শরীরে বার্ধক্য জেঁকে বসে। ফিকে হয়ে যাওয়া অনুজ্জ্বল ত্বক দেখে মনে হয়, বেলা হয়ে এল বুঝি। অথচ যথেষ্ট বয়স হওয়ার পরও তো কাউকে কাউকে বেশ তরুণ দেখায়! কেন এমন হয়?
এর নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। তবে দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রণালিই এ ক্ষেত্রে প্রধানত দায়ী। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, আপনার দিনের শুরু, তথা সকালের কিছু বদভ্যাস আপনাকে দ্রুত বুড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষত সকালের এক ঘণ্টা। মিডিয়াম ডটকমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ঘুম থেকে ওঠার প্রথম ঘণ্টা আপনার বয়স বাড়ার গতি কমিয়ে বা বাড়িয়ে দিতে পারে। নাটকীয় শোনালেও এটাই সত্য। সংশ্লিষ্ট নিবন্ধটিতে এমন পাঁচটি ভুল বিষয় এবং সেসবের সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
_______________ 
১. সকালের ক্লান্তিবোধ: 
আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই এমন হয়। রাতে টানা ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর পরও শরীর ভারী লাগে। মনে হয় আরও ঘুমালে ভালো হতো। এই ভারী লাগা, আধো জাগ্রত আধো ঘুমন্ত অবস্থাকে বলা হয় ‘স্লিপ ইনারশিয়া’। বাংলায় ঘুম–জড়তা বলা যেতে পারে। সহজ ভাষায়, শরীরের চেয়ে মস্তিষ্কের পিছিয়ে থাকা। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টে আপনার শরীর জাগলেও মস্তিষ্ক তখনো ঘুমের মুডেই থাকে। ঘুম থেকে ওঠার প্রথম ৩০ মিনিটে আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ফলে সকালে স্পষ্টভাবে চিন্তা করা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
যা করবেন:
শরীর ও মনকে একই সঙ্গে পুরোপুরি জাগিয়ে তুলতে তিনটি কাজ করতে পারেন।
শরীর নাড়াচাড়া করুন। একটু হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। ঘাড়, হাত-পা ঘোরানোর মতো ছোট্ট কিছু কাজ আপনার আড়ষ্টতা কাটাতে সাহায্য করবে। এতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং পেশিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে।
মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। এতে স্নায়ুতন্ত্র সজাগ হয়ে উঠবে।
শরীরে সূর্যের আলো লাগান। এই প্রাকৃতিক আলো আপনার মস্তিষ্ককে সংকেত দেবে যে সকাল হয়েছে। এটি মেলাটোনিন (ঘুমের হরমোন) নিঃসরণ বন্ধ করে এবং আপনাকে জেগে উঠতে সাহায্য করে।
•
২. পানিশূন্যতা: 
ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস এবং ঘামের মাধ্যমে আপনার শরীর স্বাভাবিকভাবেই পানি হারায়। বেশির ভাগ মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর হালকা পানিশূন্যতায় ভোগেন। ঘুম থেকে উঠে পানি পান না করে যদি চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে ধরে রাখুন, আপনি দিনের শুরুতেই পানিশূন্যতার শিকার হচ্ছেন।
যা করবেন: 
অন্য কিছু খাওয়ার আগে আধা লিটার পানি খান।
তাতে একচিমটি লবণ (ইলেকট্রোলাইটের জন্য) বা সামান্য লেবুর রস (ভিটামিন সি এবং হজমের জন্য) মেশান।
সামান্য মধু মেশালে আরও উপকার পাবেন। মধু হজম ও এনার্জি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৩. শরীরচর্চা:
ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরচর্চার কথা ভাবতেও খারাপ লাগে; কিন্তু শরীর ও মস্তিষ্ককে সজাগ করতে এবং বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করতে এটি দুর্দান্ত উপায়। এটি দেহের আড়ষ্টতা কমায়। দেহে রক্ত চলাচল বাড়ায়, যা ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
যা করবেন:
ভয় নেই। এ জন্য আপনাকে জিমে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাম ঝরানোর কথা বলা হচ্ছে না। ৫-১০ মিনিটের হালকা ব্যয়াম করুন। হাত-পা নাড়াচাড়া করা, গোটা দশেক স্কোয়াট, সিঁড়িতে ওঠানামা, একটু দৌড়ানোর মতো অল্প শ্রমের ব্যয়ামই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট হতে পারে।
৪. সকালের নাশতা: 
অনেকেই সকালের নাশতা বাদ দেন, কেউবা নাকেমুখে কিছু গুঁজে ছোটেন কাজে। অনেকে আবার দেরি করে নাশতা করেন। এর কোনোটাই স্বাস্থ্যকর নয়।
যা করবেন:
দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার সকালের নাশতা। সকালের নাশতায় এমন খাবার বেছে নিন, যাতে সারা দিন পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়, আবার অতিরিক্ত শর্করা বা স্নেহজাতীয় উপকরণও না থাকে। রাজার মতো খাবার দিয়ে দিন শুরু করার আসল অর্থ কিন্তু এটাই। এতে ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে, আপনি থাকবেন সুস্থ।
৫. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট খাবার: 
বয়সের গতি কমাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবারের তুলনা নেই। এটি ফ্রি র্যাডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করে, যা কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ করে।
যা করবেন: 
দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার রাখুন। শাকসবজি ও ফলমূল অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎকৃষ্ট উৎস। ডার্ক চকলেট, কাঠবাদাম, আখরোট, গ্রিন–টি খেতে পারেন। আনারস, আঙুর, আপেল, গাজর, টমেটো, কিশমিশ, ভুট্টা, জলপাই, খেজুর, লাল আটা, বাদাম তেলসহ বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেলেও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাবেন। ভিটামিন ই ও সি-সমৃদ্ধ খাবারও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎস।
সংগৃহীত