05/04/2025
"হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সংবিধান ‘অর্গানন অব মেডিসিন’ গ্রন্থ আয়ত্তের কৌশল"
- ডা. এ কে এম রুহুল আমিন
“অর্গানন অব মেডিসিন আয়ত্তের কৌশল” এই বিষয়ে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করছি। আলোচনার সুবিধার জন্য বিষয়টিকে কয়েকটি শিরোনামে বিভক্ত করে উপস্থাপন করছি, শিরোনামগুলো হচ্ছে –
১। ভূমিকা ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের ব্যবহারিক গুরুত্ব
২। অর্গানন অব মেডিসিন আয়ত্তের ব্যবহারিক কৌশল
৩। অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের মূল বিষয়াবলী
১। ভূমিকা ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের ব্যবহারিক গুরুত্ব
অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান রচিত এক অসাধারণ গ্রন্থ। যে গ্রন্থকে হোমিওপ্যাথির সংবিধান গ্রন্থ বলা হয়। এই গ্রন্থে বর্ণিত যাবতীয় নিয়ম নীতি অনুসরণ করেই হোমিওপ্যাথিক ধারার চিকিৎসা কর্ম পরিচালিত হয়। নাবিকের জাহাজের হাল যেমন- তেমনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার হাল হচ্ছে অর্গানন।
এই অসাধারণ গ্রন্থটির মোট ৬টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। সবগুলোর সংস্করণ হ্যানিম্যান নিজেই করেছেন, তবে ৬ষ্ঠ সংস্করণের পান্ডুলিপি হ্যানিম্যান কর্তৃক রচিত হলেও গ্রন্থটির ৬ষ্ঠ সংস্করণ হ্যানিম্যানের মৃত্যুর ৮৮ বৎসর পর ১৯২১ সালে ডা. রিচার্ড হেলের তত্ত্বাবধানে জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়। ১৯২২ সালে আমিরিকার ডাঃ উইলিয়াম বরিক ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। (যার অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২৯১)
১ম প্রকাশ ১৮১০ (অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২৫৯)
২য় সংস্করণ ১৮১৯ (অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৩১৮)
৩য় সংস্করণ ১৮২৪ (অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৩১৮)
৪র্থ সংস্করণ ১৮২৯ (অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২৯২)
৫ম সংস্করণ ১৮৩৩ (অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২৯৪)
৬ষ্ঠ সংস্করণ ১৯২২ (অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২৯১)
২। অর্গানন অব মেডিসিন আয়ত্তের ব্যবহারিক কৌশল
অর্গানন অব মেডিসিন আয়ত্বের ব্যবহারিক কৌশলকে যদি আমি ধাপে ধাপে উল্লেখ করতে চাই, তাহলে-
ক) অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থকে আয়ত্ত করতে হলে আমাদেরকে প্রথমে হোমিওপ্যাথির সংজ্ঞাকে বুঝতে হবে।
খ) তারপর, হোমিওপ্যাথির মৌলিক চিকিৎসা নীতিগুলোকে বুঝতে হবে, যা অর্গানন গ্রন্থের মধ্যেই বর্ণিত আছে।
গ) এরপর, অর্গাননে বর্ণিত বিষয়াবলীকে ভাগ ভাগ করে বিস্তারিতভাবে বুঝতে হবে।
ঘ) অর্গানন গ্রন্থের প্রতিটি অনুচ্ছেদ বা এফোরিজম পাদটীকা ও ভাষ্য মূল গ্রন্থ থেকে পড়তে হবে।
ঙ) অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা বিভিন্ন লেখক/মনীষীদের গ্রন্থ থেকে পড়তে হবে।
চ) প্রতিদিন অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের এক বা একাধিক অনুচ্ছেদ নিয়মিতভাবে মূলকথা, পাদটীকা, ভাষ্য, ব্যাখ্যা, বিভিন্ন মনীষীদের মতামত ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে পাঠ করতে হবে।
ছ) অর্গানন বিষয়ে কোথায়ও সেমিনার, সিম্পজিয়াম, আলোচনা অনুষ্ঠান হলে সেখানে অংশ গ্রহণ করে জ্ঞানার্জন করতে হবে।
জ) অর্গানন পড়ার সময় নিজে নোট করে পড়তে হবে, কোন বিষয় অনুধাবন দূরুহ হলে তা সিনিয়র শিক্ষক বা সিনিয়র চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
ঝ) ইন্টারনেটেও অর্গাননের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যামূলক অনেক ভাষ্য পাওয়া যায়, সেগুলো পাঠ করে অর্গাননকে আয়ত্ত করা যায়।
কাজেই এবার আসুন, ধারাবাহিকতার প্রথম কাজটি, অর্থাৎ অর্গাননের আলোকে আমরা হোমিওপ্যাথির সংজ্ঞাটিকে বুঝার চেষ্টা করি-
হোমিওপ্যাথির সংজ্ঞা (Definition of Homoeopathy)
মানুষকে অসুস্থ অবস্থা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তিদানের উদ্দেশ্যে তথা আদর্শ আরোগ্য প্রদানের জন্য আরোগ্যের বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক নীতির উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. ফেড্রিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩) কর্তৃক উদ্ভাবিত, বিকাশিত ও তাঁর রচিত অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থে বর্ণিত যাবতীয় নিয়ম-নীতি ও নির্দেশকে যথাযথ ভাবে অনুসরণ করে দর্শন, বিজ্ঞান ও কলার সমন্বয়ে যে সদৃশ বিধান ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি পরিচালিত হয়, তাকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিদ্যা বলা হয়।
সংক্ষেপে এই প্যাথির মূলসুর হচ্ছে –
• বাংলায় – সদৃশ দ্বারা সদৃশ আরোগ্য হয়,
• ইংরেজিতে – like cures like,
• ল্যাটিন ভাষায় – Similia Similibus Curentur
এই চিকিৎসা পদ্ধতির মূলনীতি হচ্ছে – আদর্শ আরোগ্যের জন্য ওষুধকে
(১) সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষিত
(২) একক ও অবিমিশ্র
(৩) সদৃশ
(৪) শক্তিকৃত ও
(৫) সূক্ষ্ণমাত্রায়
হতে হবে এবং এই পদ্ধতির চিকিৎসককে-
• বেসিক মেডিক্যাল বিষয়,
• হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিষয় সহ
• রোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিক ধারণা, রোগের মৌলিক কারণ (মায়াজম) ও উত্তেজক কারণ, স্বাস্থ্য, জীবনীশক্তি, রোগশক্তি, ওষুধশক্তি, ওষুধের মাত্রা ও প্রয়োগ বিধান, পথ্যাপথ্য, রোগ আরোগ্যের পথে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী উপাদান সমূহ, চিকিৎসকের জ্ঞাতব্য ও কর্তব্য, রোগীলিপি প্রস্তুতের কৌশল সহ বিবিধ অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে।
হোমিওপ্যাথির সংজ্ঞার পর এবার আমরা হোমিওপ্যাথির মৌলিক বা Basic চিকিৎসা নীতিগুলোকে বুঝার চেষ্টা করব, যা অর্গানন গ্রন্থের মধ্যেই বর্ণিত আছে।
Principles of Homoeopathy
(Cardinal Principles)
• Every science has certain fundamental principles which guide the whole system. Homeopathy as a science of medical treatment has a philosophy of its own and its therapeutics is based on certain fun-damental principles. These are:
1. Law of Similia – ‘Similia Similibus Curantur’
2. Law of Simplex – The Single Remedy
3. Law of Minimum.
4. Doctrine of Drug Proving.
5. Theory of Chronic Disease.
6. Theory of Vital Force.
7. Doctrine of Drug-Dynamisation.
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূল বা মৌলিক নীতিগুলোকে বুঝার জন্য বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে, যেমন –
• The Principles and Art of cure by Homoeopathy – Herbert A. Roberts. MD
• The Basic Principles of Homeopathy by GEORGE VITHOULKAS
• The Science of Homeopathy by GEORGE VITHOULKAS
• হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি – ডা. এম. এম. আবুল মনসুর এবং ডা. গুরুদাস সরকার
• হোমিও সাথী – ডা. এস. পি. দে
• হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান ও আরোগ্য কলা – ডাঃ পরেশ চন্দ্র সরকার
• অর্গানন অব মেডিসিন – অনুবাদঃ ডা. ত্রিগুনানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
• অর্গানন অব মেডিসিন – অনুবাদঃ ডা. হরিমোহন চৌধুরী
• অর্গানন অব মেডিসিন – অনুবাদঃ ডা. জি দীর্ঘাঙ্গী
• অর্গানন অব মেডিসিন – অনুবাদঃ ডা. আবু হোসেন সরকার
• হোমিওপ্যাথি মেডিসিন ফর দ্যা নিউ মিলেনিয়াম – ডা. প্রফেসর জর্জ ভিথোলকাস ( বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায় )
হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি গ্রন্থটিকে ভাল করে আয়ত্ব করেন, অর্গানন আপনার আয়ত্তে চলে আসবে। হোমিওপ্যাথির মূল বা মৌলিক নীতিগুলো আপনি জানতে ও বুঝতে পারবেন। তারপর ধীরে ধীরে ২/১ টি করে অনুচ্ছেদ ক্রমান্বয়ে বুঝে বুঝে পাঠ করুন, অর্গানন আপনার সাথে কথা বলতে শুরু করবে, আপনি অর্গাননকে ভালবাসবেন, হোমিওপ্যাথি আপনাকে ভালবাসবে। রোগী চিকিৎসায় অধিক সাফল্য আপনার জন্য অবধারিত।
ডিএইচএমএস কোর্সের হোমিওপ্যাথি নিয়মনীতির সিলেবাসটি নিম্নরূপ, যা আমাদেরকে অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থকে অনুধাবন করতে সহায়তা করে।
1. Definition of Homoeopathy and conception of Disease from the Homoeopathic point of view.
2. Code of Homoeopathic Ethics.
3. (a) History of Medicine with reference to Hippocrates, Galen, Paracelsus and Abu Sina etc.
(b) Life & Works of Hahnemann.
4. Source and origin of Principles of Homoeopathy.
5. Definition of Principle and opinion, their differences.
6. Basic principles of Homoeopathy:
a) The universal law of cure SIMILIA SIMILIBUS CURENTUR.
b) Homoeopathic law of Nature.
c) Definition of Homoeopathic Drug and Remedy.
d) Proving of drugs.
e) Dynamization or Potentization of drugs.
f) Individualization of patients and drugs.
g) Infinitesimal and minimum dose.
h) Single remedy.
i) Treat the patient but not the disease, Treat the patient wholly, but not partly.
j) Symptoms and its importance in Homoeopathy.
K) Subjective and Objective symptoms.
l) Totality of symptoms.
m) Homoeopathic Psology.
n) Examination of patients.
৩। অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের মূল বিষয়াবলী
(This outline was prepared by Julian Winston for the students of the Wellington College of Homeopa-thy. It was printed in the USA in Homeopathy Today. )
1. Basic postulates about disease and healing (রোগ ও আরোগ্য সম্পর্কে বেসিক/মৌলিক স্বীকার্য) অনুচ্ছেদ ১ হতে ৯
2. The concept of vital force and its relation to disease (জীবনী শক্তি সম্পর্কে ধারনা এবং রোগাবস্থার সাথে এর সর্ম্পক) অনুচ্ছেদ ৯ হতে ১৮
3. The need for proving (determine the nature of medicine) (ওষুধ পরীক্ষণ এর প্রয়োজনীয়তা, ওষুধের চরিত্র নির্ধারণ) অনুচ্ছেদ ১৯ হতে ২১
4. The principle of similars (সদৃশ নীতি) অনুচ্ছেদ ২২ হতে ২৭
5. How it works (হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ওষুধ কিভাবে কাজ করে) অনুচ্ছেদ ৮ হতে ২৯
6. Philosophy of the system of homoeopathy (হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাধারার দর্শন) অনুচ্ছেদ ৩০ হতে ৬৯
7. Summary of all that has been said so far (ইতোপূর্বে বলা কথার সারর্মম) অনুচ্ছেদ ৭০ ও ৭১
8. Acute and chronic diseases (তরুণ রোগ ও চিররোগ) অনুচ্ছেদ ৭২ হতে ৮১
9. Case-taking (রোগীলিপি প্রস্তুতকরণ) অনুচ্ছেদ ৮২ হতে ১০৪
10. Epidemic disease (মহামারী রোগ) অনুচ্ছেদ ১০০ হতে ১০২
11. Chronic disease (চিররোগ) অনুচ্ছেদ ১০৩ হতে ১০৪
12. Effects of the remedies (ওষুধের প্রভাব) অনুচ্ছেদ ১০৫ হতে ১২০
13. Conducting provings (ওষুধ পরীক্ষণ এর আবহ) অনুচ্ছেদ ১২১ হতে ১৪২
14. Formation of the materia medica (মেটেরিয়া মেডিকা গঠন) অনুচ্ছেদ ১৪৩ হতে ১৪৫
15. Application of medicine to the disease (রোগাবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ ) অনুচ্ছেদ ১৪৬ হতে ১৭১
16. The one-sided case (একদৈশিক ব্যাধি) অনুচ্ছেদ ১৭২ হতে ১৮৪
17. Local diseases (স্থানীয় ব্যাধি) অনুচ্ছেদ ১৮৫ হতে ২০৩
18. Introduction to the treatment of chronic disease (চিররোগের চিকিৎসার ভূমিকা) অনুচ্ছেদ ২০৪ হতে ২০৯
19. Mental Diseases (মানসিক রোগ) অনুচ্ছেদ ২১০ হতে ২৩০
20. Intermittent diseases (সবিরাম রোগ) অনুচ্ছেদ ২৩১ হতে ২৪৪
21. How to use the remedies (ওষুধের ব্যবহার বিধি) অনুচ্ছেদ ২৪৫ হতে ২৬৩
22. The medicines (ওষুধ) অনুচ্ছেদ ২৬৪ হতে ২৭১
23. Administering the remedies (ওষুধ প্রয়োগ নীতি) অনুচ্ছেদ ২৭২ হতে ২৭৯
24. More on dosages and allied practices (মাত্রা ও অন্য সহায়ক প্রথার ব্যবহার) অনুচ্ছেদ ২৮০ হতে ২৯১