17/10/2025
ফাঙ্গাল ইনফেকশন: ছত্রাকের ছায়ায় লুকিয়ে থাকা স্বাস্থ্যঝুঁকি
ছত্রাক—একটি শব্দ, যা শুনতে নিরীহ মনে হলেও এর প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এই অদৃশ্য জীব আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, বিশেষ করে যখন আমাদের শরীর দুর্বল থাকে বা পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা দেয়। ফাঙ্গাল ইনফেকশন (Fungal Infection) বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ আজকাল একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষের মধ্যেই দেখা যায়।
এই ফিচারে আমরা জানব ফাঙ্গাল ইনফেকশন কী, এর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং সচেতনতার গুরুত্ব।
এটি এমন একটি সংক্রমণ যা fungus বা ছত্রাক দ্বারা ঘটে। ইংরেজিতে বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশনের নামও রয়েছে, যেমন:
• Ringworm (ত্বকে গোলাকার দাগ)
• Athlete’s Foot (পায়ের আঙুলের ফাঁকে সংক্রমণ)
• Yeast Infection (মুখ বা যৌনাঙ্গে সংক্রমণ)
• Onychomycosis (নখে ছত্রাক সংক্রমণ)
• Tinea Capitis (মাথার ত্বকে সংক্রমণ)
ফাঙ্গাস কী এবং এটি কীভাবে সংক্রমণ ঘটায়
ফাঙ্গাস বা ছত্রাক হলো এক ধরনের জীব যা উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের বাইরে আলাদা একটি জীবজগৎ হিসেবে বিবেচিত। এটি এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে এবং মাটি, গাছের বাকল, পচা জৈব পদার্থ, এমনকি মানুষের শরীরেও জন্মাতে পারে। মাশরুম, মোল্ড, এবং খামির হলো ফাঙ্গাসের উদাহরণ।
যখন এই ছত্রাক আমাদের শরীরের ত্বক, নখ, মাথার চুল, মুখগহ্বর বা যৌনাঙ্গে সংক্রমণ ঘটায়, তখন তাকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বলা হয়। এটি সাধারণত ত্বকের উপরিভাগে শুরু হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে গভীরে প্রবেশ করে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সাধারণ ধরন
১. ডার্মাটোফাইট ইনফেকশন (Ringworm, Athlete’s Foot, Jock Itch)
২. ক্যান্ডিডিয়াসিস (মুখ, যৌনাঙ্গ বা অন্ত্রের সংক্রমণ)
৩. নখের ছত্রাক সংক্রমণ (Onychomycosis)
৪. স্কাল্প ইনফেকশন (Tinea Capitis)
৫. সিস্টেমিক ফাঙ্গাল ইনফেকশন (গভীর অঙ্গপ্রতঙ্গে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণ)
ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণসমূহ
১. দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, HIV/AIDS রোগীদের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় ছত্রাক সহজেই সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
২. আর্দ্র ও উষ্ণ পরিবেশ
ছত্রাক আর্দ্র ও উষ্ণ পরিবেশে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ঘামে ভেজা কাপড়, জুতা বা দীর্ঘক্ষণ ভেজা অবস্থায় থাকা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. ত্বকের ক্ষত বা ফাটল
ত্বকে কাটা, ঘা বা ফাটল ছত্রাকের প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে।
৪. অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েডের অতিরিক্ত ব্যবহার
দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে শরীরের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়, যা ছত্রাকের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
৫. অপরিষ্কার জীবনযাপন
নিয়মিত গোসল না করা, অপরিষ্কার কাপড় পরা, ঘন ঘন শরীর না শুকানো—এসব অভ্যাস ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ
আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়, তোয়ালে, বিছানার চাদর বা সরাসরি সংস্পর্শে এলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশনের লক্ষণ
১. তীব্র চুলকানি
২. লালচে বা বাদামি দাগ
৩. ত্বকে ফাটল বা খোসপাঁচড়া
৪. নখ মোটা হয়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া
৫. মুখে বা যৌনাঙ্গে সাদা স্তর জমা
৬. দুর্গন্ধযুক্ত নিঃসরণ
৭. মাথার চুলে খুশকি বা চুল পড়া
চিকিৎসা ও প্রতিকার
১. চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ফাঙ্গাল ইনফেকশন দেখা দিলে প্রথমেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সেলফ-মেডিকেশন থেকে বিরত থাকা উচিত।
২. অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম ও ওষুধ
সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসক অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, লোশন, পাউডার বা ট্যাবলেট প্রেসক্রাইব করেন। যেমন—ক্লোট্রিমাজল, মাইকোনাজল, ফ্লুকোনাজল, ইট্রাকোনাজল ইত্যাদি।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
প্রতিদিন গোসল করা, শুকনো কাপড় পরা, সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৪. আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ
শরীরের ভাঁজে বা আর্দ্র স্থানে পাউডার ব্যবহার করে আর্দ্রতা কমানো যেতে পারে।
৫. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি, জিঙ্ক, আয়রন ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
৬. নখ ও চুলের যত্ন
নখ ছোট রাখা, নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং চুলে অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
১. নিজের ও পরিবারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা
২. ভেজা কাপড় বা জুতা দীর্ঘক্ষণ না পরা
৩. সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস না ব্যবহার করা
৪. ঘন ঘন হাত ধোয়া
৫. শরীরের ভাঁজে শুকনো রাখার চেষ্টা
৬. নিয়মিত সূর্যালোক গ্রহণ
৭. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
সচেতনতার গুরুত্ব
ফাঙ্গাল ইনফেকশন অনেক সময় সাধারণ ত্বকের সমস্যা মনে হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন
বাংলাদেশে অনেক মানুষ ফাঙ্গাল ইনফেকশনকে লজ্জার বিষয় মনে করে চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করেন। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। স্কুল, কলেজ, কর্মস্থল ও গণমাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক ও সমাজকর্মীদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে যাতে মানুষ সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করেন এবং সংক্রমণ ছড়ানো রোধ হয়।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন একটি সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য, যদি আমরা সচেতন হই এবং সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ—এই তিনটি বিষয় আমাদের ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে পারে।
যোগাযোগ
হাকীম মো. মিজানুর রহমান
ডিইউএমএস (ঢাকা) | বিএসএস (জা.বি) | এএপিএনএ (ভারত)
অলটারনেটিভ মেডিসিনে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ৩৫৪৬/এ
চিকিৎসা কেন্দ্রের ঠিকানা
সততা প্লাজা,
ইবনে সিনা হেলথ কেয়ার
প্লট নং ২৬, গাউছিয়া মডেল টাউন
রামপুর বাজার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর
প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: 01762-240650
সেবাসমূহ :
শ্বেতী রোগ, যৌন রোগ, সোরিয়াসিস, দাদ, একজিমা, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, থাইরয়েড, পাইলস-ফিস্টুলা, ডায়াবেটিস, টিউমার, জরায়ু টিউমার, ব্রেস্ট টিউমার, পলিপাস, টনসিল, মেহ প্রমেহ, আঁচিল, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বর চিকিৎসা।
@ফলোয়ার
@সেরা ফ্যান