22/08/2025
শিক্ষনীয় হচ্ছে- যে কোন ব্যথার ঔষধ খাবার আগে কমপক্ষে একটা CBC (platelet count নরমাল কিনা দেখার জন্য), S. bilirubin & SGPT (লিভার ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য), S. creatinine (কিডনি ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য) ECG (হার্টে কোন সমস্যা আছে কিনা দেখার জন্য) করা উচিত। রোগী গরীব কিংবা ধনী এসব দেখার সুযোগ নেই।
ডাক্তাররা কেন টেস্ট করেন? কারনে না অকারনে? নাকি কমিশনের জন্য?। প্রথমে 2 টি ঘটনা বলি...
১। একবার 2 দিনের জ্বর নিয়ে ৩০ বছর বয়সী একজন রোগী আমাকে দেখালেন। আমি দেখার পর মনে হল ভাইরাল ফেভার। রোগীর প্রেসার কম আর খেতে পারছে না তাই রুটিন টেস্ট দিয়ে ভর্তি করলাম। ভর্তি হবার 2 ঘন্টা পর (তখনও রিপোর্ট আসে নাই) রোগী হঠাত খারাপ হয়ে গেল। রোগী খুবই ছটপট শুরু করল, প্রেসার 200/120, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, রোগীকে আইসিইউতে নেয়া হল, কিছুক্ষণ পর (৩০ মিনিট এর মধ্যে) রোগী মারা গেল। ওই সময় আমি আর আমার একজন সিনিয়র স্যার সেখানে উপস্থিত ছিলাম। রোগী মারা যাবার পর রিপোর্ট আসল, আমরা দেখলাম platelet count 30000.
রোগীর লোকের কাছে আবারো ইতিহাস নেয়া হল। রোগীর লোক বলল গতকাল অনেক জ্বর ও গায়ে ব্যথা ছিল, গ্রামের ফার্মেসীতে গিয়ে ঔষধ চেয়েছি, diclofen ট্যাবলেট দিয়েছিল। শরীরে platelet count কম থাকলে যে কোন সময় রক্তক্ষরন শুরু হতে পারে। আবার ব্যথার ঔষধগুলো শরীরে রক্তক্ষরনের ঝুঁকি বাড়ায়। এই রোগীর platelet count কম ছিল, তার উপর diclofen খেয়ে ব্রেনে রক্তক্ষরন হয়ে রোগী মারা গেছে।
২। ৩/৪ দিন আগে একজন ডায়াবেটিসের রোগী জ্বর নিয়ে আমাকে দেখালেন, আমার মনে হল তার প্রসাবে ইনফেকশন, আমি প্রসাবের পরীক্ষা দিলাম, কিডনীর টেস্ট আগে করা ছিল, নরমাল ছিল তাই আর করালাম না। রোগী বাসা গেলো। ২ দিন পর রোগী হাস্পাতালে ভর্তি হল, রোগীর তেমন কোন উন্নতি নেই, C/S দেখার পর এ্যান্টবায়োটিক পরিবর্তন করবো, ভাবলাম কিডনী কেমন আছে দেখি (আগের রিপোর্ট খুজে পেলাম না, তাই কিডনীর পরীক্ষাটা করতে দিলাম)। রিপোর্ট আসার পর আমার কোনভাবেই সঠিক মনে হয় নাই, কারন S. creatinine 12 mg/dl ছিল, ল্যাবে বললাম রিপিট কর, রিপোর্ট একই আসল। S. electrolyes করে দেখলাম hyperkalaemia আছে। রোগীর গতকাল ডায়ালাইসিস করা হয়েছে।
তাহলে এসব টেস্ট কি অকারনে করা হয়েছিল???শিক্ষনীয় হচ্ছে-ডায়াবেটিস/হাইপ্রেসারের রোগীর মাঝে মাঝে (অন্তত ৬ মাসে ১ বার) এবং যে কোন acute illness এ ভাইটাল অর্গানগুলো চেক করা উচিত। (এই রোগীকে প্রথমেই কিডনীর পরীক্ষা দিলে, রোগী বলত সামান্য জর নিয়ে এলাম আর ডাক্তার এত গুলো পরিক্ষা অকারনে দিল, আর রোগী যখন খারাপ হয়ে গেল তখন রোগির লোকের ভাষ্য-আপনি আগে কেন কিডনী টেস্ট করালেন না)।
এবার আসি পরীক্ষা-নীরিক্ষায়। কোন পরীক্ষা কেন করা হয়??
CBC করে আমরা অনেকগুলো তথ্য পাই, যেমন-শরীরে রক্তের পরিমান কেমন, শরীরে কোন ইনফেকশন আছে কিনা, ব্লাড ক্যন্সার আছে কিনা এবং platelet count কেমন, যা কমে গেলে শরীর থেকে রক্ত ক্ষরন হতে পারে। যে কোন রোগির এই টেস্ট না করে তার শরীরের সার্বিক অবস্থা বুঝা সম্ভব না।
RBS এই পরীক্ষা দিয়ে কারো ডায়াবেটিস আছে কিনা তা স্ক্রেনিং করি। ১৮ বছর পর এই পরীক্ষা বছরে অন্তত একবার করা উচিত, তবে যাদের বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস আছে আর যাদের ওজন বেশি তাদের বছরে অন্তত ২ বার (৬ মাস পর পর) করা উচিত। কারো যদি ডায়াবেটিস untreated or uncontrolled থাকে তবে তার কিডনী নষ্ট হয়ে যেতে পারে, হারট এ্যাটাক, ষ্ট্রোক, অন্ধত্ত সহ আরো অনেক জটিল রোগ হতে পারে।
S. creatinine এই টেস্ট দিয়ে আমাদের কিডনী ঠিক আছে কিনা দেখা হয়। কিডনী রোগ যত তারাতারি ধরা পরবে তত ভালো হবার সম্ভবনা বেশি। যাদের ডায়াবেটিস/হাইপ্রেসার আছে তাদের কিডনী নষ্ট হবার সম্ভবনা অনেক বেশি। তাছাড়া যে কোন ধরনের ব্যথার ঔষধ , কিছু প্রেসারের ঔষধ, কিছু ডায়াবেটিসের ঔষধ, বাত রোগের ঔষধ, ক্যান্সারের ঔষধ দেয়া না দেয়া, কি ডোজে দিতে হবে তা নির্ভর করে S. creatinine এর উপর। বছরে অন্তত একবার S. creatinine করা উচিত।
Urine R/E এটি খুবই সাধারন একটি পরীক্ষা কিন্তু খুবই ইনফরমেটিভ, এটি দিয়ে প্রসাবে ইনফেকশন আছে কিনা, কিডনীতে কোন সমস্যা আছে কি না, কিডনীতে কোন পাথর আছে কিনা, ডায়াবেটিস আছে কিনা ইত্যাদি জানা যায়। এছাড়াও কারো কিডনীতে সমস্যা কেবল শুরু হয়েছে কিনা (যা চিকিতসায় ভালো করা সম্ভব) তাও বোঝা যায় (প্রসাব দিয়ে যদি protein যায় তবে বুঝতে হবে কিডনীতে সমস্যা শুরু হয়েছে)।
ECG গত সপ্তাহে একজন ডায়াবেটিস রোগী দেখেছিলাম, যিনি ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, ভেবেছিলেন ঔষধ খাবার আর দরকার নেই, তার ডায়াবেটিসের পরীক্ষা, কিডনীর পরীক্ষা আর ECG করতে দিলাম, ECG তে Recent anterior MI আসল, ইকো করার পর Ischaemic cardiomyopathy আসল। ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেসারের রোগীর বছরে অন্তত একবার এবং বুকে যে কোন সমস্যা হলে ECG করা উচিত। কারন Heart attack বয়স্ক এবং ডায়াবেটিসের রোগীর বুকে কোন ব্যাথা ছাড়াই হতে পারে।
আমার নন-মেডিকেল বন্ধুদের বলছি কেউ যদি এসব টেস্ট (CBC, RBS, S. creatinine, Urine R/E, ECG) করেন, তাহলে ভাববেন না আর জীবনেও এসব করা লাগবে না, আপনি যদি আজ সব টেস্ট করেন আর কালকেই যদি আপনার বুকে ব্যাথা হয় তবে আবারো ECG করতে হবে। দয়া করে ভুল বুঝবেন না। ডাক্তার যে টেস্ট করতে দেন তা আপনার জন্যই, আপনার চিকিতসার জন্যই।
আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের বলছি, তোমরা কোন রোগীকে চিকিতসা দেবার আগে সবসময় চেষ্টা করবে রুটিন পরীক্ষাগুলো করাতে, কারন একটা জিনিস মনে রাখবে, মেডিকেল সাইন্সে হিরো কখনই তুমি হতে পারবেনা, কিন্তু তোমার এক ভুলে তুমি জিরো হয়ে যাবে। রোগী গরীব বা ধনী সবাইকে আইডিয়াল এপ্রোচ করবে, যে টেস্ট লাগবে তা রোগীকে করতে বলবে, রোগি যদি করতে না চায় তবে নোট লিখে রাখবে এবং চিকিতসা দিবে; রোগী ভালো না হলে তোমাকে বেশি চার্জ করবে না, কারন চিকিতসার জন্য দরকা্রি পরিক্ষাতো তারা করান নাই। কিন্তু তুমি যদি পরীক্ষা না করাতে দাও আর রোগীর উন্নতি না হয় বা ঔষধের কোন সাইড ইফেক্ট হয় তবে তোমার ঘাড় ধরে বলবে আপনি কেন পরীক্ষা না করিয়ে চিকিতসা দিলেন??
সবার জন্য বলছি আপনি আপনার টিভি, ফ্রিজ, বাইক, গাড়ি মাঝে মাঝে চেক করেন, সার্ভিসিং করেন, নিজের শরীরটার বছরে ১ বার সার্ভিসিং করেন, বছরে ১ বার CBC, RBS, S. creatinine, Urine R/E, ECG, Fasting lipid profiles করে একজন ফিজ়িশিয়ানকে দেখান। এসবের জন্য ২০০০-২৫০০ টাকার বেশি খরচ হবে না। নিজের জন্য বছরে অন্তত এই টাকাটা খরচ করুন, তাহলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো থাকবেন।
.............................................
ডাঃ রতীন্দ্র নাথ মণ্ডল
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
রংপুর স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
প্রতিষ্ঠাতা- ডাক্তারখানা।