01/09/2025
আমাদের দেশে পেশা হিসাবে পুষ্টিবিদ খুব বেশি সুখের না। কারন আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টিবিদ সম্পর্কে ধারনা খুবই অস্পষ্ট।
তবে আনন্দের বার্তা হচ্ছে, দেশের মানুষ এখন পুষ্টিবিদ সম্পর্কে ধীরেধীরে জানতে শুরু করেছে। আমরা সবসময় আশাকরি, ভবিষ্যতে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিবিদরা খুব ভালো ভুমিকা রাখবেন।
বর্তমান সময়ে আমাদের সম্মানিত ডাক্তাররাও তাদের রোগীকে, প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের কাছে রেফার করেন। অনেক ব্যস্ত এবং সিনিয়র স্যারদের রেফার করা রোগীও আমরা পেয়ে থাকি। এটা আমাদের পেশার জন্য অত্যন্ত পজেটিভ এবং আনন্দদায়ক বিষয়। মানে একজন ডাক্তারও চান, পুষ্টিবিদরা হেলথ সেক্টরে ভুমিকা রাখুক, তাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করুক।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমরা পুষ্টিবিদরাই আমাদেরকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক পুষ্টিবিদ আছেন, যারা ডায়েট চার্টে অনেক দামি সাপ্লিমেন্টারী সাজেস্ট করেন, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয়।
এক্ষেত্রে আমরা ধীরেধীরে ডাক্তারদের আস্থা হারাচ্ছি, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। একজন ডাক্তার হয়ত রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী এক দুই হাজার টাকার ঔষধ সাজেস্ট করছেন। কিন্তু একজন পুষ্টিবিদ পাঁচ দশ হাজার টাকার অপ্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট সাজেস্ট করছেন।
দেশে আমাদের কোন আইনগত বৈধতা নেই আবার অবৈধতাও নেই। আমরা যদি এমন আচরন চালিয়ে যেতে থাকি, তাহলে ভবিষ্যতে ডাক্তার হাসপাতালগুলোও আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
কিছুদিন আগে, একটি মেয়ে আমার থেকে অনলাইন এপোয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন। উনার সাথে কথা বলার শুরুতেই উনি আমাকে জানালেন যে, উনার হাজবেন্ড খুব গরীব। আমি যেন এই কথা মাথায় রেখে উনার ডায়েট প্ল্যান তৈরী করি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনার হাজবেন্ড কি করেন?? উত্তরে উনি জানালেন উনার হাজবেন্ড মেজর!! জ্বী ঠিকই শুনেছেন, উনার হাজবেন্ড একজন মেজর। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মেজর হলে গরীব হয় কিভাবে? উত্তরে উনি যেটা বল্লেন তাতে আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করেছিলাম।
উনি এর আগেও একজন জনপ্রিয় পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েছিলেন। কিন্তু উনার একমাসের ডায়েট চার্ট মেইন্টেন করতে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকার ডিব্বার সাপ্লিমেন্ট কিনতে হয়। উনি আমাকে ডায়েট চার্টের ছবিও পাঠালেন, দেখলাম ঘটনা সত্যি। উনি একমাস মেইন্টেন করেও কোন পজেটিভ রেজাল্ট না পেয়ে হতাশ হয়েছেন।
ছবির যে ডিব্বাটা দেখছেন, সেটাও একজন রোগী গতসপ্তাহে সাথে করে আমার চেম্বারে নিয়ে এসেছেন। এটার দাম প্রায় দুই হাজার টাকা। পুষ্টিবিদ প্রতিদিন তিনটা করে খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। সেই হিসাবে মাসে দুই ডিব্বা লাগবে, যার দাম চার হাজার টাকা। এটাও উনি খেয়েছেন, কিন্তু ফলাফল জিরো।
ফুড সাপ্লিমেন্ট হচ্ছে ইমার্জেন্সি ফুড। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলোর প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমরা এটার সঠিক ব্যাবহার করি না। আমাদের চিন্তাভাবনা যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে এই পেশায় হয়ত একসময় টিকে থাকা মুশকিল হবে।
মোঃ ইকবাল হোসেন
জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল