07/11/2022
কোন দেশ আইসিসি চালায়, কোন দেশ ফিক্সিং করে জিতে এসব ইউজলেস, ইলজিক্যাল তর্ক করতে করতে আমরা কখনো এই ফ্যাক্টটা বুঝতে পারি না- যে ১১ জন দেশের জার্সিতে খেলছে, তারা অবশ্যই দেশের বেস্ট ইলাভেন না।
দেশের বেস্ট ইলাভেন যেটা হবার কথা, তারা সাবস্টিটিউট বেঞ্চ, এ টিম, আন্ডার নাইন্টিন তো দূরে থাক... বিকেএসপি'তেও নেই। সেই বেস্ট ইলেভেন এর কেউ কলেজ ইউনিভার্সিটিতে, কেউ কাপড়ের দোকানদার কিংবা কেউ দিনমজুর।
এটা বেস্ট দেশের ইলাভেন হলে দেশের স্কুল ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যায় না, এলাকায় টেপ টেনিস দিয়ে বাতাসে বল সুইং করাতে পারা ছেলেটা শুধু এলাকার'ই বোলার হয়ে থেকে একদিন খেলা ছেড়ে দিতো না। দেশের হয়ে খেলতে যাওয়া ইলাভেন এর চেয়ে অনেক অনেক ভালো হার্ড হিটার আসরের আজানের পরে খেলতে আসা মাদ্রাসা ছাত্রদের ভেতর আছে।
রাহুল দ্রাবিড় ভারতের সিনিয়র টিমের কোচ এখন, যাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার রান ১৩ হাজার, ওডিআই ১০ হাজার, ফার্স্ট ক্লাস ২৩ হাজার এবং লিস্ট এ ১৫ হাজার। ডাক নাম 'দ্য ওয়াল'। জ্বর নিয়ে খেলতে নেমে ইডেন টেস্টে ফলো অনে ১৮০ করে অস্ট্রেলিয়াকে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন যিনি, সেই রাহুল দ্রাবিড়। বর্তমানে যেসব সাবেক প্লেয়ার নানান টুর্নামেন্ট এবং সিরিজের সময় টিমের সাথে নির্লজ্জের মতোন বিদেশ ঘুরতে যান, তাদের সবার সর্বমোট রানের চেয়ে যার একার ওয়ানডে রান বেশি, সেই দ্রাবিড়।
দ্রাবিড় ক্রিকেট থেকে রিটায়ারমেন্টের পর থেকে গত কয়েক বছরে ইয়ুথ নিয়ে কাজ করেছেন... শ্রেয়াস আইয়্যার, পৃথ্বী শ, স্যামসন, গিল, মাভি, যশশ্বী'দের মতো প্লেয়ার তুলে দিয়েছেন টিমে, আরো দিতে থাকবেন অনাগত দিনে। এই প্লেয়ারগুলো আইপিএল, রঞ্জি, দুলীপ, বিলেটেরাল, ট্রাই নেশন সিরিজে পারফর্ম করেও ওয়ার্ল্ডকাপ স্কোয়াডে চান্স পায় না।
ওরা একের পর এক প্লেয়ার তুলবে, আমরা তাকিয়ে দেখবো।
ধোনী'র স্কুল টিমের গোলকিপার থেকে উইকেট কিপার হবার গল্প সবার জানা, কি পরিমাণ স্ট্রাগল করে তাকে টিমে ঢুকতে হয়েছে... সেটা এখন গোটা বিশ্ব জানে। বিরাট কোহলি একের পর এক পারফর্ম করার পরও স্টেট লেবেলের টিমে খেলার জন্য তার বাবার কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন এক কর্মকর্তা। বিরাটের বাবা ঘুষ দেন নি... বলেছিলেন, "সিলেকশন হলে এমনিতেই হবে। আর না হলে প্রয়োজন নেই।"
ফলে বিরাটের টিমে সিলেকশন হয় নি। বিরাট ভেঙ্গে না পড়ে এতোই বেশি ফোকাসড হয়ে রান করা শুরু করেছিলেন, তাকে আর আটকে রাখা যায় নি। সেই বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনেও মাঠে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন বিরাট। একশ কোটি মানুষের দেশের টিমের ১২ জনের ১ জন হওয়ার মূল্য বুঝেছিলেন বলেই নিজেকে ট্রান্সফর্ম করে ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রেনিং এর পিছনে ব্যয় করে হয়ে উঠেছেন আজকের বিরাট। এটাই প্রফেশনালিজম, গেইমের প্রতি ডেডিকেশন।
দেশপ্রেম শব্দটার সাথে দায়িত্ব জুড়ে থাকে, ক্রিকেটারদের দেশপ্রেমিক হতে হবে... এই ধরণের দাবি করার কোন প্রয়োজন নেই, করবেন না। ক্রিকেটাররা বেতন এবং কন্ট্রাক্টভুক্ত কর্মচারী।
এই কর্মচারীদের শুধু প্রফেশনাল হলেই চলে।
আইসিসি টুর্নামেন্টে একে ওকে সুবিধা দিচ্ছে, এই স্টুপিড রব না তুলে নিজেদের ঘরোয়া ক্রিকেটে, আম্পায়ারিং এ, সিলেকশন এ কেনো বছরের পর বছর ফিক্সিং হচ্ছে... সেটা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেন। বোর্ড কেনো ৯০০ কোটি টাকা হাতে নিয়েও কোথাও একটা পাওয়ার হোল্ড বানাতে পারছে না, কেনো বিপিএল একটা জঘন্য টুর্নামেন্ট হিসেবে চলছে.... সেই প্রশ্ন তুলেন।
আগামী বিশ্বকাপে আশা করি আর অন্যের আবর্জনা ঘেঁটে স্বান্তনা পেতে হবে না।