Dr.Rajib Ghosh FCPS, MCPS, MD

Dr.Rajib Ghosh FCPS, MCPS, MD Specialist of Medicine, Rheumatolgy and Cardiology. Assistant Professor
Alma mater: DMC & NICVD

হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক এর গল্প : ২০০ বছরের এক অভূতপূর্ব যাত্রামানব ইতিহাসে হৃদরোগ, বিশেষ করে করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD)...
29/11/2025

হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাক এর গল্প : ২০০ বছরের এক অভূতপূর্ব যাত্রা

মানব ইতিহাসে হৃদরোগ, বিশেষ করে করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD) এবং মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (MI), মৃত্যু–ঝুঁকির প্রধান কারণ। গত দুই শতাব্দীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি এই রোগকে প্রায় রহস্যঘেরা অবস্থা থেকে আধুনিক জিনগত বিজ্ঞান পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। এই যাত্রা শুধু জ্ঞান-বিস্তার নয়, বরং মানবতার বাঁচার লড়াইয়ের গল্প।

❤️ প্রাথমিক যুগ (১৭০০–১৯০০): রোগ শনাক্তকরণের শুরু

১৭৭২ সালে উইলিয়াম হেবারডেন প্রথমবারের মতো বুকে ব্যথার (অ্যাঞ্জাইনা) ক্লিনিকাল বর্ণনা দেন। পরে প্যাথোলজিস্টরা বুঝতে পারেন—এই ব্যথার মূল কারণ করোনারি ধমনীতে ক্যালসিফিকেশন ও থ্রম্বোসিস।
১৯১২ সালে জেমস হারিক প্রথম “মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন” ধারণা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং বিশ্রাম-ভিত্তিক চিকিৎসা প্রচলন করেন। ১৯১৯ সালে ECG-এর আবির্ভাব MI নির্ণয়ে বিপ্লব আনে।

❤️ রোগতত্ববিদ্যা ও ঝুঁকি উপাদান (১৯৪০–১৯৬০) সনাক্ত

১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া ফ্রেমিংহাম হার্ট স্টাডি প্রথম দেখায়
উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ধূমপান—এগুলোই CAD-এর মূল ঝুঁকি।
এসময় থেকেই বিশ্ব বুঝে যায়, CAD কোনো নিয়তি নয়, বরং প্রতিরোধযোগ্য।

❤️ করোনারি কেয়ার ইউনিটের বিপ্লব (১৯৬০ এর দশক)

১৯৬০-এর আগে হার্ট অ্যাটাকে হাসপাতালে মৃত্যুহার ছিল ৩০% পর্যন্ত।
১৯৬১ সালে ডেসমন্ড জুলিয়ান “Coronary Care Unit (CCU)” চালু করেন—যেখানে ECG মনিটরিং, CPR, এবং তাত্ক্ষণিক ডিফিব্রিলেশন একত্রে করা সম্ভব হয়।
এর ফলে মৃত্যুহার অর্ধেকেরও বেশি কমে যায়।

❤️ ইনভেসিভ কার্ডিওলজি ও ইন্টারভেনশন (১৯৫০–১৯৮০)

১৯২৯: ফোরসম্যান নিজের শরীরে প্রথম হৃদযন্ত্রে ক্যাথেটার ঢোকান।

১৯৫৮: সোনেস করোনারি আর্টেরিওগ্রাফি আবিষ্কার করেন।

১৯৬৯: ফাভালোরো CABG সার্জারি চালু করেন।

১৯৭৭: গ্রুনৎজিগ প্রথম অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করেন — যার উপর দাঁড়িয়ে PCI আজকের রূপ পেয়েছে।

কার্ডিওলজি তখন থেকে আর শুধু চিকিৎসা নয়—একটি বহুবিভাগীয় প্রযুক্তিগত বিজ্ঞান।

❤️ আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা (১৯৭০–২০০০)

GISSI ও ISIS-2 ট্রায়াল: ফাইব্রিনোলাইসিস + অ্যাসপিরিন মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য কমায়।

PCI ও স্টেন্ট চিকিৎসাকে নতুন যুগে নেয়।

ACE inhibitor, β-blocker, statin, aldosterone blocker—রোগীর আয়ু বাড়িয়ে দেয়।

ICD, CRT, LVAD হৃৎপিণ্ডের ব্যর্থতা চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটায়।

SERCA2a জিন থেরাপি ভবিষ্যৎ চিকিৎসার আভাস দেয়।

❤️ অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের জৈবিক ভিত্তি

অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস আর কেবল “চর্বি জমা” নয়—এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ।
প্ল্যাক রাপচার → থ্রম্বাস → MI: এটাই মূল যন্ত্রণা।

নাইট্রিক অক্সাইড আবিষ্কার (ফারচট, ইগ্নারো, মুরাদ) → রক্তনালী প্রসারিত করার ঔষধ এর সূচনা।

LDL রিসেপ্টর আবিষ্কার (ব্রাউন ও গোল্ডস্টেইন) → স্ট্যাটিন যুগের সূচনা।

এই গবেষণা মেডিসিনে নোবেল পর্যন্ত নিয়ে যায়।

❤️ জিনগত ও মলিকিউলার যুগ (২০০০–বর্তমান)

জিনোমিক্স ও ফার্মাকোজেনোমিক্স চিকিৎসা ব্যক্তিভেদে সাজানোর সুযোগ তৈরি করেছে।

CYP2C19 সম্পর্কিত ক্লোপিডোগ্রেল রেজিস্ট্যান্স, ওয়ারফারিন জিন-ভিত্তিক ডোজিং এখন বাস্তব।

CAD সংশ্লিষ্ট নতুন জিন প্রতিদিন আবিষ্কৃত হচ্ছে।

স্টেম সেল থেরাপি ও হৃদযন্ত্র পুনর্জন্ম এখনো প্রাথমিক স্তরে, কিন্তু আশাব্যঞ্জক।

❤️ বৈশ্বিক হৃদরোগের চিত্র

করোনারি রোগ এখনো বিশ্বের ১ নম্বর ঘাতক।
মূল কারণ—বার্ধক্য, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, কম চলাফেরা।
সমাধান—প্রতিরোধ, শিক্ষা, সাশ্রয়ী চিকিৎসা ও বিশ্বব্যাপী সমন্বয়।

❤️ উপসংহার

গত ২০০ বছর আগে হার্ট অ্যাটাক চিকিৎসা হতো রক্তপাত থেরাপি দিয়ে যা এখন জিন থেরাপি পর্যন্ত পৌঁছেছে।
তবুও লড়াই শেষ হয়নি।
হৃদরোগ প্রতিরোধ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সামাজিক সমতা—এগুলোই ভবিষ্যতের মূল যুদ্ধক্ষেত্র।

মানবতার হৃদয়কে সুস্থ রাখতে এই যাত্রা চলবে আরও বহু দূর।

লিংক: https://www.nejm.org/doi/full/10.1056/NEJMra1112570

উচ্চ রক্তচাপ ও Primary Hyperaldosteronism: Hypertension বা উচ্চ রক্তচাপের এক গুরুত্বপূর্ণ ও উপেক্ষিত কারণ হলো Primary Hy...
26/11/2025

উচ্চ রক্তচাপ ও Primary Hyperaldosteronism:

Hypertension বা উচ্চ রক্তচাপের এক গুরুত্বপূর্ণ ও উপেক্ষিত কারণ হলো Primary Hyperaldosteronism। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়—ব্যবহৃত স্ক্রিনিং পদ্ধতি অনুযায়ী এর প্রকোপ ভিন্ন হলেও, মোট উচ্চ রক্তচাপের রোগীর প্রায় ১০%–এ এই রোগ থাকতে পারে। হাইপোক্যালেমিয়া এমনকি থায়াজাইড নিচ্ছেন এমন ক্ষেত্রেও, অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ, ট্রিটমেন্ট রেসিস্টেন্ট হাইপারটেনশন ইত্যাদি অবস্থায় রোগটিকে সন্দেহ করা জরুরি।

Primary vs Secondary Hyperaldosteronism

❤️ Primary Hyperaldosteronism

এটি অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের নিজস্ব সমস্যার কারণে অতিরিক্ত aldosterone তৈরি হওয়ার ফল।
ফলে দেখা যায়—

Aldosterone বেশি কিন্তু Renin কম (suppressed)

প্রধান কারণগুলো:

Bilateral adrenal hyperplasia (সবচেয়ে সাধারণ)

Aldosterone-producing adenoma (APA) → Conn syndrome

Glucocorticoid-suppressible hyperaldosteronism → ACTH–নির্ভর aldosterone সিক্রেশন

খুবই বিরলভাবে: Mineralocorticoid receptor pathway activation (low Aldosterone, কিন্তু effect বেশি)

❤️ Secondary Hyperaldosteronism

Renal hypoperfusion বা hypotension-এর কারণে renin বেড়ে aldosterone বাড়ে।
এখানে:

Renin ↑

Aldosterone ↑

Sodium সাধারণত কম থাকে

❤️ ক্লিনিকাল বৈশিষ্ট্য

Primary hyperaldosteronism-এ অধিকাংশ রোগীর কোনো বিশেষ উপসর্গ থাকে না। তবে নিচেরগুলো দেখা যেতে পারে—

১. Sodium retention →হালকা oedema

২. BP elevation (তবে malignant/accelerated phase hypertension খুব কম)

৩. Potassium loss → Hypokalaemia → পেশি দুর্বলতা

পেশি পক্ষাঘাত (বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ানদের মাঝে বেশি)

৪. Polyuria (nephrogenic DI)

৫. Tetany (metabolic alkalosis + low ionized Ca)

❤️ জটিলতা

চিকিৎসা না করলে—

Resistant hypertension

LV hypertrophy

CKD progression

Arrhythmia (hypokalaemia-induced)

❤️ Investigation (নির্ণয়)

1) Routine labs

Hypokalaemic metabolic alkalosis

Sodium normal/high

Secondary hyperaldosteronism-এ: sodium সাধারণত কম থাকে

2) Aldosterone–Renin Ratio (ARR) → প্রধান স্ক্রিনিং টেস্ট

✔ সমস্যা:

বেশিরভাগ antihypertensive ওষুধ ARR পরিবর্তন করে—

β-blocker → renin কমায় → ARR বাড়ায় (false positive)

Diuretic → renin বাড়ায় → ARR কমায় (false negative)

ACEi/ARB → renin বাড়ায়, aldosterone কমায় → ARR কমে

➡ তাই ARR পজিটিভ হলে বেশিরভাগ antihypertensive ৪ সপ্তাহ বন্ধ করে পুনরায় টেস্ট করা লাগে।
যদি ACEi/ARB চালিয়েও ARR উচ্চ থাকে, অনেক সময় stop প্রয়োজন হয় না।

✔ Hypokalaemia নিজেরাই renin suppress করে → ARR ভুল হয়

➡ তাই টেস্টের আগে potassium ঠিক করতে হয়।

3) Confirmatory tests

Saline suppression test

Fludrocortisone suppression test

4) Imaging (Localization)

CT/MRI → APA শনাক্ত করতে সাহায্য করে
কিন্তু ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে—

ছোট (

23/11/2025
২০২৫ কোলেস্টেরল গাইডলাইন: চিকিৎসকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ আপডেট সংক্ষেপ২০২৫ সালের আপডেটেড কোলেস্টেরল গাইডলাইন–এ আগের তুলনায় আর...
23/11/2025

২০২৫ কোলেস্টেরল গাইডলাইন: চিকিৎসকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ আপডেট সংক্ষেপ

২০২৫ সালের আপডেটেড কোলেস্টেরল গাইডলাইন–এ আগের তুলনায় আরও আগ্রাসী LDL লক্ষ্য, নতুন ঝুঁকি–শ্রেণিবিন্যাস এবং আধুনিক লিপিড–লোয়ারিং ওষুধের ব্যবহার সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল বার্তা হচ্ছে—

“LDL যত কম, তত ভালো—এবং যত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তত দীর্ঘমেয়াদি উপকার।”

এই প্রবন্ধে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ৫০টি মূল বার্তা সহজ ভাষায় তুলে ধরা হলো।

❤️‍🔥১. উচ্চ LDL (Severe Hypercholesterolemia)

1. LDL ≥ 190 mg/dL, বয়স ≥20 বছর হলে → সরাসরি high-intensity statin শুরু।

2. LDL ≥ 160 mg/dL + strong family history থাকলে → ৪০ বছরের নিচেও চিকিৎসা শুরু করা যায়।

3. Moderate risk রোগীর লক্ষ্য LDL

21/11/2025

An 89-year-old woman with severe tricuspid regurgitation presented with fever and cough after a recent diagnosis of influenza. Prominent forehead venous pulsations were noted on examination.

The New England Journal of Medicine
19 November 2025

এক নজরে 2025 ACC/AHA Hypertension Guideline
19/11/2025

এক নজরে 2025 ACC/AHA Hypertension Guideline

এই শতকের ওয়ান অব দ্যা বিগ সেলার ড্রাগস হতে যাচ্ছে ওবেসিটির ওষুধ যেমন নোভো নরডিস্কের ওজেম্পিক কিংবা উইগোভি অথবা ইলাই-লিলি...
18/11/2025

এই শতকের ওয়ান অব দ্যা বিগ সেলার ড্রাগস হতে যাচ্ছে ওবেসিটির ওষুধ যেমন নোভো নরডিস্কের ওজেম্পিক কিংবা উইগোভি অথবা ইলাই-লিলির মুনজারো। কেন এগুলো মাল্টি বিলিয়ন ডলার বিজেনস করবে সেটা বলছি একটু পরেই। তার আগে জেনে নেই স্থুলতার কমানোর এই ম্যাজিক আমরা পেলাম কিভাবে? বেয়ার উইদ মি 😊

১৯০৬ সালের এক শরতের দিনে লিভারপুলের কিছু বিজ্ঞানী খরগোশের ওপর পরীক্ষা করতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলেন। প্রাণীর অন্ত্র থেকে তৈরি একটা রাসায়নিক পদার্থ খরগোশের রক্তে ইনজেক্ট করতেই রক্তে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে গেল। তখনো ইনসুলিন আবিষ্কৃত হয়নি তাই গবেষকরা বুঝতে পারেননি প্রানীর অন্ত্রে এমন কী আছে যা রক্তের গ্লুকোজ কমাতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে একযুগেরও বেশি ।

১৯২১ সালে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ সার্জন ফ্রেডেরিক বেন্টিং এবং তার সহকারী চার্লস বেস্ট কুকুরের অগ্ন্যাশয় নিয়ে গবেষনা করছিলেন । তারা কিছু কুকুরের অগ্ন্যাশয় সার্জারি করে রিমুভ করে দেখলেন কুকুরদের শরীরে গ্লুকোজ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে অর্থাৎ ডায়াবেটিক হয়ে যাচ্ছে। এই দল তখন সুস্থ কুকুরের অগ্ন্যাশয় থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে সেই ডায়াবেটিস আক্রান্ত কুকুরদের শরীরে ইনজেক্ট করলেন এবং অদ্ভুত ভাবে ডায়াবেটিক কুকুরদের রক্তে গ্লুকোজ নাটকীয়ভাবে কমে গেল।

এইবার মানুষের শরীরে টেস্ট করার পালা। কিন্তু নিরাপদ হবে কি না এইভেবে বেন্টিং ও তার দল সাহস পেল না। এরপর দলে যোগ দিলেন বায়োকেমিস্ট জে.বি. কলিপ। ( আমি নিজেও বায়োকেমিস্ট্রি পড়েছি বলে একটু বায়াসড হয়ে তার প্রসংগ আনলাম 😀)। তিনি সেই অপরিশোধিত রাসায়নিক পদার্থ কে পিউরিফাই বা পরিশোধন করে মানবদেহে ব্যবহারের উপযোগী করলেন। ১৯২২ সালের জানুয়ারিতে টরেন্টো হাসপাতালে মাত্র ১৪ বছরের এক ডায়াবেটিক ছেলে লিওনার্ড থম্পসন কে বেছে নেয়া হল প্রথমবার সেই বিশুদ্ধ ইনসুলিন দেওয়ার জন্য । তার রক্তে ছিল অস্বাভাবিক মাত্রার গ্লুকোজ। বাচার শেষ চেষ্টা হিসেবে দেয়া হল ইনসুলিন। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার রক্তের বিপজ্জনক মাত্রার গ্লুকোজ স্বাভাবিকের কাছাকাছি নেমে এল। এরপর সেই ইনসুলিন হয়ে গেল ইতিহাস। ইনসুলিনের আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক সমাজে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল। ১৯২৩ সালে বেন্টিং এবং ম্যাকলিওড নোবেল পুরস্কার পেলেন। তারা পুরস্কার অর্থের অর্ধেক ভাগ বেস্ট এবং কলিপের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন। অল্প কিছুদিন পরেই আমেরিকার ওষুধ কোম্পানি Eli Lilly বৃহৎ আকারে ইনসুলিন উৎপাদন শুরু করল। এত দ্রুত উৎপাদন বাড়লো যে কিছুদিনের মধ্যেই পুরো উত্তর আমেরিকা মহাদেশে ইনসুলিন সরবরাহ করা সম্ভব হলো। এরপরের দশকগুলিতে তৈরি হলো আরও ধীরগতিসম্পন্ন ও দীর্ঘস্থায়ী ইনসুলিন। ১৯৩৬ সালে Novo Nordisk প্রথমবারের মতো সেই ধীর-কার্যকরী ইনসুলিন বাজারে আনল। এরপর ডেনমার্কের অর্থনীতিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এমন কি কোভিডের সময়ও তাদের অর্থনীতি এগিয়েছে অন্যদের চেয়ে ঢের বেশি।

যাইহোক , ষাটের দশকে গবেষকরা লক্ষ্য করলেন গ্লুকোজ যখন মুখ দিয়ে (oral) দেওয়া হয়, তখন শরীর প্রচুর ইনসুলিন তৈরি করে। কিন্তু একই গ্লুকোজ সরাসরি শিরায় দিলে সেই ইনসুলিন সেইভাবে বেড়ে যায় না। এর অর্থ হচ্ছে আমাদের শরীরের অন্ত্রের ভেতরে এমন কিছু আছে যা গ্লুকোজ খেলে এমন এক সংকেত পাঠাচ্ছে যাতে ইনসুলিন বেড়ে যায়। এই সংকেত পাঠানোর কাজটি কে করে তখনো জানা যায়নি। আশির দশকে জোয়েল হাবেনার নামের এক আমেরিকান গবেষক গ্লুকাগন জিন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে খুঁজে পেলেন এই জিনটা শুধু গ্লুকাগনই তৈরি করে না বরং আরও দুই-তিনটি পেপটাইড তৈরি করে। এদের মধ্যে একটি বিশ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা নিউক্লিয়োটাইড সিকোয়েন্স যার নাম দেয়া হল GLP-1 সেই সময়ে কেউই জানত না GLP-1 কী করে, অনেকেই ভাবত এটা হয়তো জিনের “অপ্রয়োজনীয় অংশ” ।

একই সময়ে রকফেলার ইউনিভার্সিটির ব্রুস মেরিফিল্ডের ছাত্রী স্ভেতলানা ময়জভ আবিস্কার করলেন কীভাবে অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে হরমোন তৈরি করতে হয়। ময়জভ হাতে পেন্সিল-কলম নিয়ে GLP-1 সিকোয়েন্সে একটি তীর চিহ্ন এঁকে ল্যাবে পেপটাইডটি তৈরি করলেন। পরীক্ষা করে দেখা গেল এই পেপটাইডের ৭–৩৭ অ্যামিনো অ্যাসিডের ছোট অংশটি শরীরে ইনসুলিন বাড়ায় । ঠিক এইটিই ছিল সেই সংকেত পাঠানো মলিকিউল “ইনক্রেটিন।”একই সময়ে নতুন সব প্রযুক্তি গবেষকদের হাতে এল- যেমন রেডিওইমিউনোঅ্যাসে, জিন ক্লোনিং, পেপটাইড কেমিস্ট্রি। এই সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকরা নিশ্চিত হলেন GLP-1 মানবদেহের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে। কিন্তু সমস্যা রয়ে গেল। GLP-1 রক্তে দুই মিনিটের বেশি থাকে না। এটিকে ওষুধ বানানো সম্ভব ছিল না। মহা সমস্যা। কিন্তু এজন্যই সায়েন্টিস্টরা আছেন। যত বেশি অসুবিধা, তত বেশি সুযোগ। যত প্রশ্ন, ততই উত্তর পাওয়ার জন্য গবেষণা।

এই আবিষ্কারে এবার অদ্ভুত এক জিনিস যুক্ত হল।

মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে এক অদ্ভুত রেপ্টাইল বা সরীসৃপ বাস করে যার নাম গিলা মনস্টার (নীচের ছবি)। ধীর গতির কিন্তু গুই সাপ আকৃতির এই প্রানী জীবনের ৯৫% সময় মাটির নিচে থাকে, বছরে দু-তিনবার খাবার খায়। এত দীর্ঘ উপোসের মধ্যেও তার রক্তে গ্লুকোজ ওঠানামা করে না। বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন এইটা ঠিক কীভাবে সম্ভব? গবেষকদের সন্দেহ হলো প্রাণীটির বিষের ভেতর হয়তো কোনো বিশেষ পেপটাইড আছে যা তার বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ সেন্টারের ডঃ জন এং ও তার সহকর্মীরা পরীক্ষা করতে গিয়ে পেলেন এক্সেন্ডিন-৪ (exendin-4) নামে এক পেপটাইড যা GLP-1 এর মতোই কাজ করে কিন্তু অনেকক্ষন ধরে স্থায়ী হয় । যেখানে মানব GLP-1 দুই মিনিটে ভেঙে যায় সেখানে এক্সেন্ডিন-৪ সক্রিয় থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিবর্তননের ধারাবাহিকতায় গিলা মনস্টার নিজের জন্য বিশেষভাবে একটি সুপার-GLP-1 তৈরি করেছে। কিন্তু বড় কোম্পানিগুলো “বিষাক্ত সরীসৃপের হরমোন” নিয়ে কাজ করতে চাইছিল না। ডঃ এং অবশেষে একটি ছোট কোম্পানি Amylin Pharmaceuticals-কে রাজি করালেন। তারা কৃত্রিম exendin-4 তৈরি করে ডায়াবেটিক ইঁদুরে দিলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত ঠিক হয়ে গেল। পরে মানবদেহেও এটি একইভাবে কাজ করল। ২০০৫ সালে Byetta নামে এটি FDA অনুমোদন পেল ডায়াবেটিক চিকিৎসায় । কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অনেক রোগীর ওজনও কমতে শুরু করল। কেউ কেউ ৫% এরও বেশি ওজন হারালেন। এদিকে ওজন কমানোর উপকারিতা দেখে ডেনমার্কের Novo Nordisk কোম্পানি GLP-1 নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিল। তারা ভাবল যদি শরীরে দীর্ঘস্থায়ী করা যায় তবে GLP-1 শুধু ডায়াবেটিস নয়, স্থূলতাও জন্য বিশাল বাজার সৃস্টি করবে । তারা GLP-1 এর সাথে ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত করে এমন সংস্করণ বানালেন যা রক্তে অ্যালবুমিনে আটকে থাকে এবং ধীরে ধীরে কাজ করে। এর ফল হলো liraglutide (Victoza), যা প্রতিদিন ইনজেকশন দিলেও রক্তে চিনি কমানোর পাশাপাশি ক্ষুধা কমায় এবং ওজন কমায়।কিন্তু মানুষতো প্রতিদিন ইনজেকশন নিতে পছন্দ করে না। তাই Novo Nordisk বানাল semaglutide যা সপ্তাহে একবার নিলেই হয়। ২০১৭ সালে Ozempic নামে এটি অনুমোদন পেল। এর বড় সংস্করণ Wegovy ২০২১ সালে স্থূলতা চিকিৎসার জন্য আলাদা অনুমোদন পেল। ওজন কমে গড়ে ১৫% যা এর আগে কোনো ওষুধে দেখা যায়নি। এর সেফটি প্রোফাইলও তুলনামূলক ভালো তাই বিশ্বব্যাপী চাহিদা রেকর্ড ছাড়াল।বিজ্ঞানীরা পরে বুঝলেন GLP-1 শুধু অগ্ন্যাশয়ে কাজ করে না, মস্তিষ্কেও করে। ক্ষুধা, তৃপ্তি, খাবারের প্রতি আকর্ষণ—এই সবই মস্তিষ্কের GLP-1 রিসেপ্টরের নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘস্থায়ী GLP-1 ওষুধ মস্তিষ্কে বেশি পৌঁছায়, ফলে ক্ষুধা কমে এবং পেট ধীরে খালি হয় যার ফলে মানুষ কম খায়, কম ক্ষুধা পায়, আর ওজন দীর্ঘমেয়াদে কমে। বিজ্ঞানীরা দেখলেন GIP নামের অন্য ইনক্রেটিনও কাজে লাগানো যায়। GLP-1 ও GIP—দু’টিকে একসাথে সক্রিয় করে তৈরি হলো tirzepatide (Mounjaro/Zepbound) যা ১৮% পর্যন্ত ওজন কমায়। এখন triple-agonist retatrutide ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ২৪% ওজন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট সূত্র, ১৯০৬ সালের রহস্যময় জৈব এক্সট্র্যাক্ট, GLP-1 এর লুকানো অংশের সন্ধান, মরুভূমির নিচে লুকিয়ে থাকা বিষাক্ত গিলা মনস্টারের বিবর্তনগত কৌশল, আর আধুনিক পেপটাইড প্রকৌশল—সব মিলিয়ে তৈরি হলো এক নতুন চিকিৎসা-বিপ্লব। দামের কারণে এতদিন এই ওষুধগুলো শুধু সেলিব্রেটিরাই এফোর্ট করতে পারতেন ।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প এডমিনিস্ট্রেশন ঘোষণা দিয়েছে এমেরিকানরা এখন থেকে সরকারি পয়সায় এইসব ওষুধ পেয়ে যাবেন । সেইসাথে শুধু ডায়াবেটিক নয়, স্থুলতায় আক্রান্তরাও এটি নিতে পারবেন । আর জানেন তো এমেরিকায় কত মানুষ এই ওবেসিটি বা স্থূলতায় আক্রান্ত ? প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোক ! এবার নিশ্চয়ই জেনে গেছেন কেন এই ওষুধগুলো এখন হয়ে যাবে বেস্ট সেলিং ড্রাগ...!!

লেখক: আহসান রহমান

https://youtu.be/RPbY48IHH2g?si=hJXekNbWGGJzQTET
05/11/2025

https://youtu.be/RPbY48IHH2g?si=hJXekNbWGGJzQTET

স্বাস্থ্য পরামর্শ - ৩৪ বিষয় : উচ্চ রক্তচাপ -(২) আজকের ডাক্তার : ডা. রাজিব ঘোষ প্রযোজনা : মো. মুহসিন সরদার বাংলাদেশ টেলি...

“অনলাইন  নারী - পুরুষের সম্পর্কের মনস্তত্ব:  কে কি নিয়ে চিন্তিত? "নারী ও পুরুষের মনে এই বিষয়ে উদ্বেগের কারণ এক নয়। এটি “...
29/10/2025

“অনলাইন নারী - পুরুষের সম্পর্কের মনস্তত্ব: কে কি নিয়ে চিন্তিত? "
নারী ও পুরুষের মনে এই বিষয়ে উদ্বেগের কারণ এক নয়। এটি “S*x-differentiated mating psychology” নামের তত্ত্ব থেকে বোঝা যায়...

নারীরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা (safety & authenticity) নিয়ে বেশি চিন্তিত,

পুরুষরা চিন্তিত থাকে বিশ্বাসঘাতকতা ও এককত্ব (fidelity & exclusivity) নিয়ে।

1. Buss, D. M. (1989).
S*x differences in jealousy: Evolution, physiology, and psychology.
— Psychological Science, 1(4), 251–255.
Buss দেখিয়েছেন: পুরুষরা “sexual infidelity”-তে বেশি ভয় পান,
আর নারীরা “emotional infidelity” বা মানসিক প্রতারণা নিয়ে বেশি ভীত।

2. Buss, D. M., & Schmitt, D. P. (1993).
S*xual Strategies Theory: An Evolutionary Perspective on Human Mating.
— Psychological Review, 100(2), 204–232.
এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, নারীরা evolutionary ভাবে এমন সঙ্গী বেছে নেয়, যিনি নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি দিতে সক্ষম।
আর পুরুষরা বেছে নেয় যিনি এককভাবে তাদের প্রতি বিশ্বস্ত।

3. Toma, C. L., & Hancock, J. T. (2010).
Looks and lies: The role of physical attractiveness in online dating self-presentation and deception.
— Communication Research, 37(3), 335–351.
এই গবেষণায় দেখা যায়, অনলাইন সম্পর্কে নারীরা ভয় পান প্রোফাইলের “বাস্তবতা” নিয়ে (authenticity concern),
আর পুরুষদের ভয় থাকে “she might be chatting with other men” — অর্থাৎ fidelity concern।

4. Guadagno, R. E., Okdie, B. M., & Kruse, S. A. (2012).
Dating deception: Gender, online dating, and exaggerated self-presentation.
— Computers in Human Behavior, 28(2), 642–647.
নারীরা অনলাইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য প্রতারণা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
পুরুষরা চিন্তিত “exclusive attention” ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা (competition) নিয়ে।

সংক্ষেপে বলা যায়:
নারী ভাবে “সে আসলেই যেমন বলছে তেমন কি? নিরাপদ তো?”

পুরুষ ভাবে “সে কি শুধু আমার সাথেই কথা বলছে?”
এ দুটো ভয়–ই evolutionary ভাবে স্বাভাবিক ও পর্যবেক্ষণযোগ্য পার্থক্য।
Gender-based cognitive and emotional difference ৩

Address

Katalganj Road
Chittagong
4000

Opening Hours

Monday 09:00 - 17:00
Tuesday 09:00 - 17:00
Wednesday 09:00 - 17:00
Thursday 09:00 - 17:00
Saturday 09:00 - 17:00
Sunday 09:00 - 17:00

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dr.Rajib Ghosh FCPS, MCPS, MD posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Dr.Rajib Ghosh FCPS, MCPS, MD:

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram

Category