08/03/2025
❖ পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব কী?
পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব হলো এমন একটি শারীরিক সমস্যা, যেখানে একজন পুরুষের স্পার্মের সংখ্যা, গুণগত মান বা গতিশীলতা কম থাকায় সে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা হারায়। এটি দম্পতির মধ্যে গর্ভধারণের সমস্যার একটি বড় কারণ।
পুরুষ বন্ধ্যাত্ব সাধারণত বিভিন্ন কারণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত করা যায়। প্রধানত এটি দুই ধরনের হতে পারে:
১. প্রাথমিক বন্ধ্যাত্ব (Primary Infertility)
যখন কোনো পুরুষ কখনও কোনো নারীকে গর্ভধারণে সহায়তা করতে পারেনি, তখন একে প্রাথমিক বন্ধ্যাত্ব বলা হয়।
এটি জন্মগত শারীরিক ত্রুটি, স্পার্ম উৎপাদনের সমস্যা বা অন্যান্য জটিলতার কারণে হতে পারে।
২. গৌণ বন্ধ্যাত্ব (Secondary Infertility)
যদি একজন পুরুষ আগে সন্তান জন্মদানে সক্ষম ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে সক্ষমতা হারান, তখন এটি গৌণ বন্ধ্যাত্ব হিসাবে বিবেচিত হয়।
এটি জীবনধারা, অসুস্থতা বা পরিবেশগত কারণের জন্য হতে পারে।
বন্ধ্যাত্বের অন্যান্য ধরন (কারণভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস)
১. হরমোনজনিত বন্ধ্যাত্ব (Endocrine Infertility)
শরীরের হরমোন ভারসাম্যহীনতা (যেমন টেস্টোস্টেরনের অভাব) স্পার্ম উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়।
এটি পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যার কারণে হতে পারে।
২. শুক্রাণু উৎপাদনজনিত বন্ধ্যাত্ব (Spermatogenic Infertility)
যখন শুক্রাণু কম উৎপন্ন হয় বা একেবারেই উৎপন্ন হয় না।
সাধারণত জেনেটিক সমস্যা, টেস্টিকুলার ইনফেকশন, বা কেমোথেরাপির ফলে হতে পারে।
৩. শুক্রাণু পরিবহনজনিত বন্ধ্যাত্ব (Obstructive Infertility)
শুক্রাণুর প্রবাহে বাধা থাকলে এটি ঘটে।
ভ্যাস ডিফারেন্স (Vas Deferens) ব্লকেজ, সার্জারি বা জন্মগত ত্রুটি এটি সৃষ্টি করতে পারে।
৪. ইমিউনোলজিক্যাল বন্ধ্যাত্ব (Immunologic Infertility)
যখন শরীর নিজেই শুক্রাণুকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে।
আঘাত, সংক্রমণ বা অস্ত্রোপচারের ফলে হতে পারে।
৫. যৌন কার্যক্ষমতা-সংক্রান্ত বন্ধ্যাত্ব (Sexual Dysfunction-Related Infertility)
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (ED), প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন, বা যৌন অক্ষমতা থাকলে এটি হতে পারে।
মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস বা নার্ভ সমস্যার কারণে হতে পারে।
৬. অজানা কারণে বন্ধ্যাত্ব (Unexplained Infertility)
অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসক নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পান না।
এটি সাধারণত ১০-১৫% পুরুষ বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে ঘটে।
❖ পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের কারণসমূহ
১. শারীরিক কারণ
✔ লো স্পার্ম কাউন্ট (Oligospermia): যদি প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ১৫ মিলিয়নের কম শুক্রাণু থাকে, তবে তা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
✔ নো স্পার্ম (Azoospermia): কিছু পুরুষের বীর্যে একেবারেই স্পার্ম থাকে না, যা বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে।
✔ স্পার্মের গুণগত মান খারাপ: যদি স্পার্মের গঠন (Morphology) বা গতিশীলতা (Motility) ঠিক না থাকে, তবে তা ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে পারে না।
✔ ভারিকোসিল (Varicocele): অণ্ডকোষের শিরাগুলো বড় হয়ে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা স্পার্ম উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
✔ হরমোনাল সমস্যা: টেস্টোস্টেরন বা অন্যান্য প্রজনন-সম্পর্কিত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করতে পারে।
২. জীবনধারা ও পরিবেশগত কারণ
✔ ধূমপান ও অ্যালকোহল: ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান স্পার্ম কাউন্ট ও গুণগত মান কমিয়ে দিতে পারে।
✔ ওজন বেশি বা কম: স্থূলতা বা অত্যধিক ওজনহীনতা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা স্পার্ম উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে।
✔ অতিরিক্ত মানসিক চাপ: দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস হরমোনের উপর প্রভাব ফেলে এবং স্পার্ম উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।
✔ অতিরিক্ত গরম পরিবেশ: দীর্ঘ সময় ল্যাপটপ কোলে রাখা, গরম জলে স্নান করা বা টাইট অন্তর্বাস পরা অণ্ডকোষের তাপমাত্রা বাড়িয়ে স্পার্মের সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
✔ নিয়মিত স্টেরয়েড বা কিছু ওষুধ সেবন: কিছু বডি বিল্ডিং স্টেরয়েড ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
✔ বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভারী ধাতুর সংস্পর্শ: কীটনাশক, লেড বা অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শ স্পার্ম উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।
❖ পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের জটিলতা
✔ সন্তান জন্ম দেওয়ার অক্ষমতা: এটি পারিবারিক ও মানসিক চাপে পরিণত হতে পারে।
✔ দাম্পত্য জীবনে সমস্যা: সন্তান না হওয়ার কারণে অনেক দম্পতির মধ্যে মানসিক ও সম্পর্কজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
✔ কম আত্মবিশ্বাস ও হতাশা: বন্ধ্যাত্ব অনেক পুরুষের মধ্যে হতাশা, স্ট্রেস ও আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করে।
✔ হরমোনজনিত সমস্যা: অনেক সময় বন্ধ্যাত্বের পেছনে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি থাকতে পারে, যা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
✔ অন্য স্বাস্থ্য জটিলতা: কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব শরীরের অন্য বড় কোনো সমস্যা, যেমন—ক্যানসার বা জিনগত ত্রুটির লক্ষণও হতে পারে।
❖ পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা ও প্রতিকার
১. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন
✔ স্বাস্থ্যকর খাবার খান (প্রোটিন, ভিটামিন সি, জিঙ্ক, ফোলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার)।
✔ ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
✔ নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে অতিরিক্ত নয়।
✔ মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুম নিন।
✔ ভারী রাসায়নিক ও দূষণ থেকে দূরে থাকুন।
২. চিকিৎসা
সম্পূর্ণ আরোগ্য হতে স্বদৃশ বিধান মতে চিকিৎসা নিতে পারেন।