10/04/2025
আমাদের বাঙালি সমাজের একটা নিয়ম আছে। যতদিন শাশুড়ী বেঁচে থাকবেন ততদিন শাশুড়ীর সংসারেই ছেলের বউকে থাকতে হবে। সে চাইলে ও আলাদা করে নিজের সংসার পাবে না। শাশুড়ীর সংসারে শাশুড়ীর কথা মতোই সব চলবে। এখানে ছেলের বউয়ের কোন স্বাধীনতা থাকবেনা। সবকিছুতেই শাশুড়ির পারমিশন লাগবে। এমনকি শাশুড়ীর সংসারে নিজের মন মতো একটা রুম ও ডেকোরেশন করা যাবে না। বেশি কিছু বললে বলে, " নিজের সংসারে যা খুশি কইরো, আমার সংসারে এসব চলবে না। "
কিন্তু দেখো, আমাদের মতো সেই অসহায় বউ গুলো নিজের সংসার বলতে যা বোঝায় তা হলো শাশুড়ীর মরার পর।
তার আগে নিজের সংসার! সেটা আবার কি!? " বুড়া মানুষ বাঁচবেই আর কয়দিন! শাশুড়ী মরলে সবই তো তোমার।" তো বউটা ও অপেক্ষা করতে থাকে, কতদিনে শাশুড়ীটা মরবে। ( শুনতে খারাপ হলেও এটাই বাস্তব সত্যি।) 😓
আর এই সংসার টা তার হবে....।
ততদিনে একটা মেয়ের আর শখ বলতে কিছু থাকে না। তখন সে আর মেয়ে থাকে না। তার বয়স পেরিয়ে ৩৫ - ৪০ এ চলে যায়। তখন তার কাছে সব কিছু কেমন দায়িত্ব বলে মনে হয়। কারো জন্য আর শখ করে কিছু রান্না করার মতো এনার্জি তার শরীরে থাকে না। তখন আর ঘর গুছানোর মতো মানসিকতা থাকেনা। তখন শুধু মাথার উপর অনেক গুলো দায়িত্ব থাকে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া, তাদের সুন্দর ভবিষ্যত এসবের চিন্তা করতে করতেই চুলে পাক ধরে যায়। সব কিছুতেই কেমন নিজেকে বোঝা বলে মনে হয়। জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে। অতীতের কথা মনে পড়ে। যখন সে তার স্বামীর কাছে নিজের জন্য একটা সংসার চায়৷ তখন তার স্বামী মেয়েটা কে বলে, " তুমি কি পারবে এই বয়স্ক মানুষ টা কে একা ফেলে চলে যেতে। " ব্যাস মেয়েটার আর কিছুই বলার থাকে না। সে চুপ হয়ে যায়। কিন্তু কি পায় মেয়েটা সেই সংসারে থেকে! যেই শাশুড়ীর জন্য নিজের শখ আহ্লাদ বিসর্জন দেয়, সেই শাশুড়ী কি আদৌও মেয়েটার কথা ভাবে?
বরং মেয়েটা সেই সংসারে থেকে দিনের পর দিন মানসিক টর্চার সহ্য করে যায়। সারাক্ষণ আতংকে থাকে কখন না জানি শাশুড়ী মা রেগে যায়। কখন না জানি তার জন্য সংসারে ঝামেলা, অশান্তি শুরু হয়ে যায়। এইভাবেই ভয়ে আতঙ্কে কখন যে মেয়েটার বয়স পেরিয়ে যায় সে নিজেও জানে না।
হটাৎ অনেক বছর পর মেয়টার মনে পরে, সংসারের ঝামেলা সামলাতে গিয়ে কখনো তার স্বামীর সাথে একটু সৃতি তৈরি হয়নি। সারাদিন কাজের পর রাতে সময় করে স্বামীর জন্য একটু শাড়ি পরে কপালে কালো টিপ লাগানো হয়নি। সংসারে সবার সাথে থেকে, লজ্জায় স্বামীর সাথে হাত ধরে একটু বৃষ্টিতে ভিজার সুযোগ হয়নি মেয়েটার।
মেয়েটার মনে পড়ে যায়, অনেক দিন হলো তার স্বামীর সাথে একান্তে বসে একটু গল্প করা হয়নি। মেয়েটা দৌরে যায় স্বামীর কাছে চাঁদনি রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে আজ জমিয়ে মনের কথা বলবে তাকে। কিন্তু হটাৎ মেয়েটা বুঝতে পারে এতোদিনে তার স্বামীর সাথে আকাশ সমান দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। গল্প করার বয়স টা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। ছেলে - মেয়েরা বড়ো হয়েছে। এখন এসব করা মানে... ছি ছি!
মেয়েটা আঁচলে মুখ গুঁজে দৌড়ে চলে যায়। নিজেকে বন্ধি করে নেয় অন্ধকার চার দেয়ালের মাঝে৷ 💔🥀
[এটা সবার বেলা না। কিন্তু অধিকাংশ পরিবারেই সেম কাহিনি। ]
কথাগুলো ভালো লাগলে একটা ফলো দিয়ে উৎসাহিত করবেন যাতে এরকম আরো বাস্তবিক না বলা কথাগুলো প্রকাশ করতে পারি। ধন্যবাদ ❤️