15/07/2025
ভুল জীবনযাপনই ডেকে আনছে নীরব ঘাতকদের:
মুক্তি মিলবে সঠিক জীবনব্যবস্থা পরিবর্তনেই।
আজকের দিনে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার ও কিডনি রোগ সহ ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগগুলো যেন ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে। অথচ একটু গভীরভাবে ভাবলেই বোঝা যায়, এসব রোগের মূলে রয়েছে আমাদের ভুল জীবনযাপন। এগুলো কোনো জীবাণুর আক্রমণে হয় না, বরং দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারাই ধীরে ধীরে শরীরকে দুর্বল করে তোলে। জীবাণুর বিরুদ্ধে ওষুধ থাকলেও, জীবনযাত্রার কারণে সৃষ্ট এই রোগগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকরী ওষুধ নেই বললেই চলে।
এ কারণেই যারা এই রোগগুলোর চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের ওষুধের তালিকা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু রোগ মুক্তি মিলছে না। অথচ একটু সচেতন হলেই, জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তন আনলেই এই রোগগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসুন, সেই মুক্তির পথগুলো জেনে নেওয়া যাক:
📗১. স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ: সুস্থ জীবনের প্রথম শর্ত হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস। জেনে বুঝে স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের শর্করাযুক্ত খাবার কমিয়ে প্রোটিন, ফ্যাট এবং শাকসবজি বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের খাবারের উৎপাদন ব্যবস্থায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পরিহার করে প্রাকৃতিক চাষাবাদ নিশ্চিত করতে হবে।
📗২. পেটের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মনোযোগ: আমাদের শরীরের সুস্থতার চাবিকাঠি লুকানো থাকে পেটের স্বাস্থ্যেই। কফি এ্যানিমা, বেকিং সোডা, ভিনেগার মেশানো লেবু পানি, পর্যাপ্ত ফাইবার ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে পেটের স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখা অপরিহার্য।
📗৩. ফাস্টিং ও রোজা পালনের অভ্যাস: নিয়মিত ফাস্টিং বা উপবাস এবং রোজা রাখা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি শরীরের জন্য এক অসাধারণ ওষুধ। এটি আমাদের হজমক্ষমতাকে বিশ্রাম দেয় এবং শরীরকে পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
📗৪. সঠিক ও স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন: পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, তবে রাতের দশটার আগে ঘুমাতে যাওয়া সবচেয়ে ভালো।
📗৫. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম: যারা দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক পরিশ্রম করেন বা খেলাধুলায় যুক্ত থাকেন, তাদের আলাদা করে ব্যায়ামের প্রয়োজন না হলেও, যারা অলস জীবনযাপন করেন তাদের সপ্তাহে অন্তত চার-পাঁচ দিন এক ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত। এর পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি।
📗৬. মানসিক শান্তির চর্চা: সুস্থ থাকতে হলে মনের শান্তি অপরিহার্য। নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন, আল্লাহর উপর ভরসা রাখা, সকালে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা, অন্যের কল্যাণে কাজ করা, নিয়মিত নামাজ পড়া, শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়া এবং আখেরাতমুখী চিন্তাভাবনা মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে।
📗৭. নিয়মিত রোদ ও আলো-বাতাস গ্রহণ: দিনের আলোয় কিছুক্ষণ সময় কাটানো এবং শরীরে রোদ লাগানো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট রোদ লাগানো উচিত। ভিটামিন ডি এর মাত্রা ৯০ থেকে ১০০ এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করা উচিত।
📗৮. প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন: প্রকৃতি আমাদের মন ও শরীরকে শান্তি এনে দেয়। তাই মাঝে মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া উচিত। সকালে সূর্যোদয় দেখা, সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখা, আকাশের তারা পর্যবেক্ষণ করা এবং গ্রাম, নদী, পাহাড়ে ভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা উচিত।
📗৯. সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি: স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির নিবিড় সম্পর্ক মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়, যা সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।
📗১০. জ্ঞান অর্জন ও সচেতন জীবনযাপন: জীবনে চলার পথে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্জিত জ্ঞানের আলোকেই আমাদের জীবন পরিচালিত হওয়া উচিত, তা না হলে পদে পদে হোঁচট খেতে হবে। তাই স্বাস্থ্য ও জীবনযাপন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।
📗১১. জীবনের সকল ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা: সুস্থ ও সুখী জীবন যাপনের জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা শিখতে হবে। দেহ-মন-আত্মা, চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়া, চলাফেরা, আয়-ব্যয়, খাওয়া-দাওয়া, পরিশ্রম-বিশ্রাম, ভোগ-বিলাসিতা এবং রাগ-অভিমান ও ভালোবাসার মধ্যে সঠিক সমন্বয় ঘটাতে হবে। মাটি, প্রকৃতি, বিজ্ঞান ও আধুনিকতার জ্ঞানকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, একটু সচেতন হলেই এবং উপরোক্ত নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চললে একটি সুস্থ, সুন্দর ও ওষুধমুক্ত জীবন লাভ করা সম্ভব। আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন করি এবং সুস্থ জীবনের পথে এগিয়ে যাই।
©️©️©️