02/01/2023
ACT Basic Club Foot Training, CRP, Mirpur-14, Dhaka.
ক্লাবফুট কি?
ক্লাবফুট বা বাঁকানো পায়ের পাতা শিশুদের একটি জন্মগত শারিরীক প্রতিবন্ধকতা যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘congenital talipes equino varus’ (CTEV)। সাধারণত শিশুর পায়ের পাতা গোড়ালি হতে ভেতরের দিকে বাঁকানো অবস্থাকেই ক্লাবফুট বলা হয়।পায়ের একটি বা দুটি পাতা গোড়ালির অস্থিসন্ধির হাড়ের অবস্থাগত তারতম্যের জন্য ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে, যা গলফ খেলার স্টিক বা ক্লাবের মতো দেখায়। তাই এর নামকরণ হয়েছে ক্লাব ফুট। রোগটি মুগুর পা বা জন্মগত পায়ের পাতা বাঁকা নামেও বিভিন্ন এলাকায় পরিচিত।
বাংলাদেশে ক্লাবফুট এর ব্যাপকতা:
গ্লোবাল ক্লাব ফুট ইনিশিয়েটিভের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজারের মতো শিশু ক্লাব ফুট (বাঁকা পা) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।চিকিৎসা না করালে এটি আজীবন বিকলাঙ্গতা বা পঙ্গুত্ব বয়ে নিয়ে আসে। ফলে, এসব শিশু পরবর্তীতে পরিবারের বোঝা হয়ে যায়, যা দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ। পরবর্তী জীবনে এরা অন্য কোন পেশায় যোগ দিতে না পেরে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য হয়। এ কারণে বাংলাদেশের ভিক্ষুকদের উল্ল্যেখযোগ্য অংশ ক্লাবফুটধারী।
বড় শিশু বা বয়স্কদের ক্লাবফুট – এর চিকিৎসার জন্য অর্থোপেডিক অস্ত্রোপচারই একমাত্র ভরসা; কিন্তু এটি অনেক ব্যয়বহুল যা আমাদের দেশের সাধারণ দরিদ্র মানুষের পক্ষে মেটানো সম্ভব হয় না। তবে ছোট শিশুরা পনসেটি পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে। এটি অত্যন্ত কার্যকর, সুলভ এবং স্থায়ী ব্যবস্থা। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুর পায়ের পাতার নরম বাঁকা অংশ ধীরে ধীরে ভাল হয়ে যায়।
কারণ
জন্মগত বাঁকা পা নিয়ে শিশু ভুমিষ্ঠ হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে কিছু বিষয়তে দায়ী করা হয়। যেমন—
গর্ভকালীন রোগ ও সংক্রমণ : গর্ভকালীন বিভিন্ন সংক্রমণ, বিশেষ করে রুবেলা বা জার্মান মিজলস, সাইটোমেগালো ভাইরাস, টক্সোপ্লাজমা ইত্যাদি জীবাণুর সংক্রমণ হলে অনাগত শিশুটি বাঁকা পা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সাধারণ জলবসন্তও বাড়িয়ে দিতে পারে ঝুঁকি। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, বংশগত, পুস্টীহীনতা, গর্ভকালীন জটীলতা, নেশার প্রভাব বা অন্য কোনো জটিল রোগ থাকলে ক্লাব ফুট শিশু হতে পারে।
লক্ষণ ও জটিলতা
ক্লাব ফুট শিশুদের পায়ের পাতা ও হিলও সামনের দিক থেকে ভেতরের দিকে বেঁকে যায়। চারটি লক্ষণ দ্বারা ক্লাব ফুট বোঝা যায়, যাকে সংক্ষেপে CAVE বলে। C = cavus, A = Adductus, V = Varus, E = Equinus. পায়ের ব্যথার কারণে ক্লাব ফুট শিশুরা বেশিক্ষণ হাঁটতে পারে না।
চিকিৎসা
আগে জন্মগত বাঁকা পায়ের তেমন কোনো চিকিৎসা ছিল না, মানুষও তেমন গুরুত্ব দিত না। তবে এখন এই সমস্যার উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। এই চিকিৎসা শুরু করা উচিত জন্মের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই। মনে রাখতে হবে, যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে সফলতার হার তত বেশি হবে।
বেষ্ট চিকিৎসা পদ্বতি হল-
পনসেটি মেথড
জন্মের দুই সপ্তাহের মধ্যে প্লাস্টার করে পা সোজা করা যায়, যাকে বলে ‘পনসেটি মেথড’। এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়, যা ক্লাব পায়ের আন্তর্জাতিক মানের বা স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসা। এটি এমন এক কৌশল, যা শল্যচিকিৎসা ছাড়াই জন্মগত ক্লাব পা ঠিক করে। আমেরিকান অর্থোপেডিক সার্জন ‘ডা. ইগনেসিও ভি পনসেটি’ বহু গবেষণার মাধ্যমে এ পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন বলে ‘পনসেটি মেথড’ বলা হয়।
পনসেটি পদ্ধতিতে একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপীস্ট দ্বারা তিন সপ্তাহের জন্য পায়ে পাঁচ-সাতটি প্লাস্টার করে দেওয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে প্লাস্টার পরিবর্তন ও ফলোআপ করা হয়।এর পরে প্রয়োজন হলে পেডিয়াট্রিক বা অর্থপেডিক সার্জন দ্বারা পারকিউটেনিয়াস টেনোটমী করা হয়। পা ভালো হয়ে যাওয়ার পর সেই ভালো অবস্থান ধরে রাখার জন্য প্রথম তিন মাস ২৩ ঘণ্টা এবং পরবর্তী সময়ে শুধু রাতে ১২ ঘণ্টা করে পা ঢেকে রাখার জন্য Foot Abduction Brace (FAB) বা বিশেষ জুতা পরিধান করতে হয়। তবে নিয়ম মেনে চললে চার বছরের পর আর সেই বিশেষ জুতা পরতে হয় না। নিয়ম না মানলে বা সেই বিশেষ জুতা না পরলে পা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। এটা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা বিধায় অভিভাবকের উচিত ধৈর্য ধরে চালিয়ে নেওয়া।
মোঃ তৌহিদুল ইসলাম
ফিজিওথেরাপীস্ট (বিপিটি-ডি ইউ)