01/03/2025
রোজা রাখা অবস্থায় হিজামা করানো হলে রোজার কোন ক্ষতি হয়না। নিচে বিস্তারিত ব্যখ্যা করা হল:
হযরত আনাস ইবনু মালেক রাযিঃ থেকে বর্নিত- তিনি বলেন, সর্বপ্রথম হিজামা অপছন্দ করা হয় রোজাদারের জন্য। একবার হযরত জাফর ইবনু আবু তালিব রাযিঃ রোজা অবস্থায় হিজামা নিলেন। তখন পাশ দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাচ্ছিলেন, তাদের দেখে তিনি বললেন, উভয়ের রোজা ভেঙ্গে গেছে। পরবর্তিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাদারের জন্য হিজামা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তাছাড়া হযরত আনাস রাযিঃ রোজা অবস্থায় হিজামা নিয়েছেন। [দারা কুতনি]
ইমাম বুখারী হতে মুআল্লাক সনদে বর্নিত, ইবনু উমর রাযিঃ রোজা অবস্থায় হিজামা নিতেন। পরবর্তীতে তিনি এই অভ্যাস পরিত্যাগ করেন এবং রাতে হিজামা নেন।
[মিশকাতঃ ২০১৭, মুয়াত্তা মালেকঃ ৬৬৪]
হযরত আনাস রাযিঃ বলেন, আমরা রোজাদারদের কেবল কষ্টের দিকে লক্ষ্য করে হিজামা নিতে বারণ করতাম।
[আবু দাউদ ২৩৭৫]
হযরত হিশাম ইবনু উরওয়াহ থেকে বর্নিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ননা করেনঃ তিনি রোজা অবস্থায় হিজামা নিতেন, কিন্তু তারপর তিনি রোজা ভাঙতেন না। তিনি বলেন, “আমি কেবল তাকে রোজা অবস্থায়ই হিজামা নিতে দেখেছি।”
ইমাম মালেক রহঃ বলেনঃ “কেবল দূর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকায়ই রোজাদারদের জন্য হিজামা গ্রহণ করা অপছন্দনীয় মনে করা হতো। যদি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা না থাকে তাহলে তা অপছন্দনীয় হতো না। সুতরাং, যদি কোন ব্যক্তি রমজানে হিজামা গ্রহণ করে এবং রোজা ভেঙ্গে ফেলা থেকে নিরাপদ থাকে, তাহলে তার জন্য রমজানে হিজামা গ্রহণে কোন অসুবিধা মনে করিনা। এমনকি যেদিন সে হিজামা নিয়েছে, সেদিনের রোজা কাজা করতেও আদেশ করিনা। কেননা, রোজাদারের জন্য হিজামা গ্রহণ করা কেবল তখনই অপছন্দনীয় হবে যখন তার রোজা শংকায় পড়বে। সুতরাং যে হিজামা গ্রহণ করবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা ভেঙ্গে ফেলা থেকে নিরাপদ থাকবে, তাহলে আমি তার জন্য কোন সমস্যা মনে করিনা এবং সেদিনের রোজাও তার জন্য কাজা করতে হবেনা।”
[মুয়াত্তা মালেকঃ ৬৬৬]
আবু সাইদ খুদরি রাযিঃ থেকে বর্নিত; তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “তিনটি বিষয় রোজাদারের রোজা নষ্ট করেনা- হিজামা, বমি এবং স্বপ্নদোষ।”
[তিরমিযীঃ ৭১৯, আবু দাউদঃ ২৩৭৬]
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিতঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রো্যা অবস্থায় হিজামা করিয়েছেন।”
[বুখারীঃ ১৯৩৯, ৫৬৯৪, তিরমিযীঃ ৭৭৫, ৭৭৬, ৮৩৯]
#কিছু কথাঃ
রোজা ভঙ্গের কারণ গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো কোনো খাবার বা পুষ্টিকর উপাদান খেয়ে ফেলা অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে নেয়া। হিজামাতে এর কোনোটিই হয়না। কারন এতে শরীরের ভেতরে কোন খাদ্য উপাদান প্রবেশ করেনা, বরং শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে রোগ সৃষ্টিকারী উপাদান বের করে আনে। তাই হিজামা করানো হলে রোজার কোন ধরনের সমস্যা হবেনা।
আবার অনেক রোগী আছেন যারা হিজামা করানোর পর দুর্বলতা অনুভব করেন। তাদের জন্য রোজা রাখা অবস্থায় হিজামা না করানোই ভাল। তারা চাইলে ইফতারের পর অর্থাৎ রাতের বেলা হিজামা করাতে পারেন। হিমোগ্লোবিন কম কিংবা রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। রোযা রেখে হিজামা করাতে চাইলে যোহরের মধ্যেই হিজামা সমাপ্ত করে ফেললে নিরাপদ হবে।