20/07/2025
"কিডনি চুপচাপ কাজ করে, কিন্তু একবার চুপ হলে জীবনই থেমে যায়!"
কিডনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্তের মধ্যে থেকে অতিরিক্ত পানি, লবণ, গ্যাস, বিষাক্ত পদার্থ এবং অব্যবহৃত পদার্থ ফিল্টার করে রক্তকে বিশুদ্ধ রাখে। কিডনি দুটি হয়, যা আমাদের পিঠের দুই পাশে থাকে, মেরুদণ্ডের নিচে, কডমের কাছে। কিডনির স্বাভাবিক কার্যকলাপ অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, তবে কিডনি যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কিডনির প্রধান কাজ:
1. ফিল্টারিং রক্ত: কিডনি রক্তে থাকা অপ্রয়োজনীয় পদার্থ যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, অতিরিক্ত লবণ এবং জল বের করে দেয়। এই পদার্থগুলো মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
2. প্রতিরক্ষা: কিডনি রক্তে অতিরিক্ত অ্যাসিড বা বেস-এর ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি শরীরের pH স্তর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
3. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি রক্তের ভলিউম এবং সল্টের পরিমাণের উপর কাজ করে।
4. হরমোন নিঃসরণ: কিডনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে, যেমন:
এরিথ্রোপয়েটিন (Erythropoietin), যা রক্ত কোষ উৎপাদনে সহায়তা করে।
রেনিন (Renin), যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
5. ভিটামিন D সক্রিয় করা: কিডনি ভিটামিন D-কে সক্রিয় রূপে পরিণত করে, যা ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।
কিডনি সমস্যার সাধারণ কারণসমূহ:
1. ডায়াবেটিস: দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তে চিনি কিডনি নষ্ট করতে পারে, যা কিডনি রোগের প্রধান কারণ।
2. উচ্চ রক্তচাপ: দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে কিডনি নষ্ট হতে পারে।
3. কিডনি স্টোন: কিডনির ভিতরে কঠিন পাথর বা স্টোন জমে গেলে তা কিডনির কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
4. ইনফেকশন: মূত্রনালীর সংক্রমণ বা কিডনি সংক্রমণ (যেমন পাইলোনেফ্রাইটিস) কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
5. গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস: এটি একটি কিডনির প্রদাহজনিত রোগ, যা কিডনির সেলগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং রক্ত ফিল্টারিং ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ:
মূত্রে রক্ত দেখা
পা, হাত বা চোখের পাতা ফোলা
মূত্রের পরিমাণে পরিবর্তন (অনেক কম বা অনেক বেশি)
ক্লান্তি ও দুর্বলতা
যন্ত্রণা বা অস্বস্তি পিঠের নিচে বা পেটের পেছনে
উচ্চ রক্তচাপ
শ্বাসকষ্ট বা বুকের যন্ত্রণা
কিডনি রোগের প্রতিকার এবং চিকিৎসা:
1. ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: কিডনি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
2. পুষ্টিকর খাবার: কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং চর্বি কম খাওয়া উচিত।
3. পানি বেশি খাওয়া: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে কিডনির কাজ সহজ হয়, এবং মূত্রের মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ বের হতে সাহায্য করে।
4. কিডনি ফাংশন টেস্ট: ক্রিয়েটিনিন, গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট (GFR), এবং ইউরিয়া টেস্টের মাধ্যমে কিডনির ফাংশন যাচাই করা যায়।
5. ডায়ালাইসিস: কিডনি যদি সঠিকভাবে কাজ না করতে পারে, তবে ডায়ালাইসিস (যাতে মেশিন রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ ফিল্টার করে) ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘমেয়াদী কিডনি বিকল হলে কিডনি প্রতিস্থাপনও প্রয়োজন হতে পারে।
কিডনি প্রতিস্থাপন:
কিডনি প্রতিস্থাপন তখনই করা হয় যখন একজন রোগীর কিডনি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যায় এবং ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে তার জীবন চালানো সম্ভব নয়। প্রতিস্থাপিত কিডনি সাধারণত দীর্ঘ সময় ভালো কাজ করে, তবে এর জন্য একজন ডোনার প্রয়োজন হয়, যিনি কিডনি দান করেন।
কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য কিছু টিপস:
নিয়মিত চেক-আপ করান, বিশেষ করে যদি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন — নিয়মিত ব্যায়াম এবং পুষ্টিকর খাবার খান।
অতিরিক্ত পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
ধূমপান এবং মদ্যপান পরিহার করুন, কারণ এগুলো কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
কিডনি স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই আমাদের অবশ্যই কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।