22/01/2025
সাইফুল ইসলাম নামের এই পেশেন্ট গ্রাম সূত্রে আমার মামা হন- ওনার হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে কয়েক মাস আগে। উনি কোথাও ভরসা না পেয়ে গাজীপুরে আসতে চেয়েছেন এই ভেবে যে "আমার ভাগ্নি আছে, ভাগ্নির স্যাররা ভালো। আমি ওইখানে দেখাবো"। ওকে ফেয়ার ইনাফ, উনি গাজীপুর এসেছিলেন গতকাল। আমার মেডিকেলের কার্ডিওলজিস্ট সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমির হোসেন স্যার- স্যার আমার আব্বুকে গত বছর থেকে চিকিৎসা করেন (আমার আব্বুরও ব্লক আছে)। স্যার অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। স্যারের মতো ওয়েল-বিহেভড মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। আমার আব্বু তো ওনার বিগ ফ্যান :3
যাই হোক আব্বুকে যত বার-ই আমি দেখিয়েছি স্যার ভিজিট নেন নাই, আমার কোনো সিরিয়াল লাগেনি। ইভেন ইকো করার জন্য আব্বুকে বাহিরে পর্যন্ত স্যার ওয়েট করাননি; নিজের রুমে বসিয়েছিলেন। আব্বু চা-কফি বা স্ন্যাক্স খাবে কিনা স্যারের এসিস্টেন্সট আপুকে দিয়ে সেটার খোঁজ নিয়েছেন। তো এবার যেহেতু আমার সরাসরি সম্পর্কের কেউ না, তাই আমি স্যারকে কল না দিয়ে সিরিয়ালে ওয়েট করে ভিজিট পে করে স্যারকে দেখানোর জন্য গিয়েছি স্যারের প্রাইভেট চেম্বারে।
চেম্বারে ঢুকেই আমি বলেছি, স্যার উনি আমার মামা হন গ্রাম সূত্রে। এখানে এসেছেন আপনাকে দেখাতে। স্যার আমাকে প্রথম যে প্রশ্নটা করেছেন- 'নূরা তুমি কি টাকা পে করেছো?'
আমি- জ্বি স্যার
স্যার- ওহ হো, আসলে মেয়েটা তো জানেনা তুমি আমার স্টুডেন্ট তাই ও টাকা নিয়েছে। এটা বলেই স্যার ৭০০ টাকা আমাকে ফেরত দেয়ার জন্য বের করেছেন! আমি একদম অবাক হয়ে গেছি। এরপর আমি বলেছি- না না স্যার, কোনো সমস্যা নেই। টাকাটা আপনি রাখেন প্লিজ।
আমার মামা বললেন- 'স্যার আপনি টাকা রাখেন, আমি ওর অনেক দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আপনি রাখেন স্যার, কোনো সমস্যা নেই'
এরপরে স্যার যে কথা গুলো বলেছেন খুব সম্ভবত আমি আজীবন এই কথাটা মনে রাখবো। স্যার বললেন- " আমি যে এই টাকাটা নিলাম না এটা ওর জন্য একটা শিক্ষা। আজকে আমি নিচ্ছি না, কালকে ও ওর জুনিয়রদের থেকে নিবেনা ইন শা আল্লাহ। ওকে সম্পর্কের ভ্যালু শিখানোটাও একজন শিক্ষক হিসেবে আমার দায়িত্ব। আর দূর সম্পর্ক আবার কী? সম্পর্ক সম্পর্ক-ই, সম্পর্কের দূরে কাছে নাই। সব সম্পর্কই ভ্যালুএবল"।
আমি জানিনা কেনো, ওই ৭০০ টাকা না নেয়ার জন্য তখন একজন র্যান্ডম স্টুডেন্ট হিসেবে স্যারের প্রতি আমি এত্ত প্রাউড ফিল করেছি। এই ডাক্তারি প্রফেশনটার চার্ম আসলে এখানেই।
এরপরে স্যার এনজিওগ্রাম করিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মামাকে ২টা রিং পড়াতে হবে। স্যার নিজে কল দিয়ে আমাকে পুরো ট্রিটমেন্ট প্ল্যান বলেছেন। একটু আগে আলহামদুলিল্লাহ মামার অপারেশন হয়েছে, সাকসেফুল। স্যার সহ আরো ২ জন ডাক্তার ছিলেন, মামার হার্টের অবস্থা এত বাজে ছিলো যে মোটামুটি সব আর্টারি-ই ব্লক ছিলো! আব্বু আমাকে ফোন দিয়ে স্যার ব্যাবহারের প্রশংসা করতেই আছে, করতেই আছে (told ya, abbu is a big fan xD)
এরপর আমি স্যারকে কল দিয়েছি, স্যার ফোন ধরেই বলতেছেন "হ্যা নূরা আমি ভাবছিলাম তোমাকে কল দিয়ে কলংগ্র্যাচুলেট করবো। আলহামদুলিল্লাহ & কংগ্র্যাচুলেশনস! তোমার মামার অপারেশন আল্লাহর ইচ্ছায় সাকসেসফুল হয়েছে।"
আমি: জ্বী স্যার আব্বু কল দিয়েছিলো। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার।
স্যার: না না, ধন্যবাদ আল্লাহকে দিতে হবে। এরপরে দিলে আমার টিমকে, এটা তো একটা টিম ওয়ার্ক। ওনার হার্টের কন্ডিশন এত খারাপ ছিলো আমি তো ওটিতে ঘামতেছিলাম। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমত সব কিছু আমরা স্মুথলি করতে পেরেছি। আর তোমার ইফোর্টের জন্য তোমাকেও ধন্যবাদ। মানুষকে হেল্প করতে হয়, আল্লাহর রহমত বাড়ে। সুযোগ পেলেই মানুষকে হেল্প করবা।"
Bhai, this was it. I cried, legit I cried. আমার তখন সেই ২০১৩ সালে দেখা "ডাক্তার" হওয়ার স্বপ্নকে কিছুটা হলেও ওর্থ ইট মনে হচ্ছিলো। এই প্রফেশনের মানুষ গুলো আসলেও মানবিক। স্যার এর মতো এত ডেডিকেটেড একজন ডাক্তার হতে পারাটা আসলেই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার আলহামদুলিল্লাহ। ৭০০ টাকা হয়তো আমাদের কাছে কোনো ব্যাপার না কিন্তু এইযে এই সম্মান গুলো এগুলো ম্যাটারস আ লট যেখানে আমি সামান্য একজন স্টুডেন্ট! সেইম বিহ্যাভিয়র আমি লাস্ট ২.৫ বছর ধরে আমার মেডিকেলের ইউরোলজিস্ট ডা. খাইরুজ্জামান স্যারের কাছ থেকেও পেয়ে আসতেছি। আমি একজন পেশেন্টের ফ্যামিলি মেম্বার হিসেবে এই দুজন ডাক্তারের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো ইন শা আল্লাহ। শুধু আমির স্যার বা খাইরুজ্জামান স্যার-ই নয়, আমার স্যাররা সবাই অনেক আন্তরিক আলহামদুলিল্লাহ হোক সেটা আমার প্রতি বা আমার বাবা-মার প্রতি বা অন্যান্য রোগীর প্রতি। এনাদের দেখলে আমারো একটু ডাক্তার হয়ে মন চায় 🤏 প্রে ফর মি ফ্রান্স!
সব প্রফেশনেই খারাপ-ভালো দুটাই আছে, থাকবেই। যেকোনো প্রফেশন, তাই আলাদা করে গুটি কয়েক খারাপ মানুষের জন্য এনাদের মতো মানবিক মানুষদের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন করাটা আসলেই বোকার মতো কাজ।
©