24/07/2025
চিকুনগুনিয়া অতীতে পরিচিত ছিল সাধারণ ভাইরাল জ্বর হিসেবে। তবে এ বছর এটি এক বিপজ্জনক ও দ্রুত ছড়ানো ভাইরাস রোগে পরিণত হয়েছে, যার প্রধান লক্ষণ আর্থ্রাইটিসের মতো জয়েন্ট ব্যথা। এটি অ্যালফা গোত্রের একটি RNA ভাইরাস, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
🦠 ভাইরাসের কার্যপ্রক্রিয়া
চিকুনগুনিয়া অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগ থেকে কিছুটা আলাদা। এই ভাইরাসের প্রভাবে শরীরে উৎপাদিত অ্যান্টিবডিগুলো জয়েন্টের মেমব্রেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, যার ফলে বাতের মতো দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা দেখা দেয়।
অনেক সময় গায়ে ফুসকুড়িও উঠতে পারে, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সঙ্গে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
👥 কোন ধরনের রোগী বেশি ঝুঁকিতে?
- বয়স্ক রোগী
- হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাতপ্রাপ্তরা
- যাদের আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস ছিল
- যারা ভাইরাল ইনফেকশনের পরও জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করেন
🔍 চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ
✅ ব্যথা সাধারণত শরীরের নিচের অংশে বেশি, বিশেষত জয়েন্ট ও ঝিল্লিতে।
✅ গোড়ালি, কবজি, কনুই, হিপ ও পায়ের পাতা—এসব অংশে তীব্র ব্যথা দেখা দেয়, যা জ্বর চলে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে।
✅ হাত-পা ফুলে যায়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা কমেও যায়।
⚠️ ভয়াবহতা কতটা?
- চিকুনগুনিয়া জীবনঘাতী নয়, তবে জয়েন্ট ব্যথার কারণে জীবনমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- ডেঙ্গুর মতো রক্তে প্লাটিলেট মারাত্মকভাবে কমে না।
- সাধারণত মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না, তবে ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হলে ভোগান্তি বাড়ে।
🧪 পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি দরকার?
সব ক্ষেত্রে নয়, তবে...
✔️ যদি রোগীর আগে থেকেই ডায়াবেটিস, কিডনি-লিভার সমস্যা বা রক্তরোগ থাকে
✔️ উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হলে
✔️ জ্বরের পরও ব্যথা বা অস্বাভাবিকতা থেকে যায়
👉 তখন চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় টেস্ট করানো জরুরি।
💊 চিকিৎসা: কী করবেন, কী করবেন না
🚫 চিকুনগুনিয়ার কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ বা টিকা নেই।
🎯 চিকিৎসার লক্ষ্য শুধু জ্বর ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা।
✅ প্রাথমিক করণীয়
- প্যারাসিটামল (৫০০ মি.গ্রা. দিনে ৩ বার) – জ্বর ও ব্যথার জন্য নিরাপদ
- প্রচুর পানি পান করুন
❌ ব্যথানাশক ওষুধ (NSAIDs) পরিহার করুন – এতে ক্ষতি হতে পারে
🧘 ব্যথা উপশমে সহায়ক পদ্ধতি
🧊 ঠাণ্ডা ছেঁক
- প্রদাহযুক্ত জয়েন্টে প্রতি ঘণ্টায় ১৫ মিনিট বরফ প্যাক দিন
- সরাসরি বরফ না দিয়ে কাপড়ে মুড়ে ব্যবহার করুন
🌡️ উষ্ণ পানি ব্যবহার
- গরম পানি জয়েন্টে ঢাললে পেশি ও টিস্যুর চাপ কমে
- কিন্তু যাদের অস্বস্তি হয়, তারা এড়িয়ে চলুন
🏃 ব্যায়াম ও বিশ্রাম
🛌 পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম শরীরের পুনরুদ্ধারে সহায়ক
🦵 হালকা ব্যায়াম ও মোবিলাইজেশন জয়েন্ট শক্ত হওয়া রোধ করে
🧎♀️ চেয়ারে বসে পা নাড়াচাড়া, পা উঁচু করে রাখা, ভারোত্তোলন এড়ানো – এগুলো সহায়ক
🍽️ খাবারদাবার ও পুষ্টি
🥗 বেশি করে টাটকা ফলমূল, শাকসবজি
🥩 প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার
⚖️ ওজন বাড়ে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন
🍵 হারবাল চা – প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশমে সহায়ক
📈 দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা হলে করণীয়
জ্বর সেরে যাওয়ার পরও যদি ৩ মাস বা তার বেশি সময় ব্যথা থাকে, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা ও ফিজিওথেরাপি নিতে হবে।
✅ শেষ কথা
চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ ভাইরাস না হলেও এর ব্যথা উপসর্গ অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়। এজন্য শুরু থেকেই সতর্ক হওয়া জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ নয়, বরং ব্যথা কমাতে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।