05/10/2025
"যেদিন মায়া নিজের সাথে দেখা করলো"
মায়া শহরের ব্যস্ত জীবনের এক সাধারণ মানুষ। সকাল শুরু হয় ফোনের অ্যালার্মে, আর দিন শেষ হয় সোশ্যাল মিডিয়ার আলোয়।
অফিসে ইমেইল, মিটিং, মেসেজ — সবকিছুতেই সে ছিল অনলাইন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, তার মন যেন অফলাইন হয়ে যাচ্ছিল।
প্রতিদিনই মায়া ক্লান্ত থাকত। বন্ধুর সঙ্গে কফিশপে গেলেও, কথার চেয়ে বেশি সময় কাটত ফোনের পর্দায়।
একদিন তার ছোট ভাই রনি হেসে বলল, “আপু, তোমার চোখে আলো আছে, কিন্তু দৃষ্টি যেন সবসময় স্ক্রিনে আটকে থাকে।” এই কথাটা মায়ার বুকের ভেতর কেমন একটা শূন্যতা ছুঁয়ে গেল।
পরের দিন সকালে হঠাৎ সে সিদ্ধান্ত নিল —
একদিনের জন্য ফোন, ল্যাপটপ, টিভি কিছুই ব্যবহার করবে না। একেবারে “ডিজিটাল ডিটক্স ডে”।
প্রথমে সবকিছু অস্বস্তিকর লাগছিল।
বারবার ফোনের দিকে হাত বাড়াচ্ছিল, যেন কিছু একটা হারিয়ে গেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সে শুনল— বারান্দার গাছের পাতায় পাখির ডাক, চায়ের কাপে ধোঁয়ার ভাঁজ,
মায়ের কণ্ঠে গান।
সে হঠাৎ বুঝল, এতদিন সে কত কিছু মিস করেছে!
সেদিন দুপুরে সে মায়ের সঙ্গে রান্না করল, বিকেলে বৃষ্টিতে হাঁটল, আর রাতে জানালার পাশে বসে তারাদের গুনল।
বহুদিন পর তার মনে হলো— “জীবন আসলে এত শান্ত, শুধু আমি শব্দে হারিয়ে গিয়েছিলাম।”
রাতে ঘুমানোর সময় মায়া ফোনটা টেবিলের উপর রেখে বলল, “তুমি কাল পর্যন্ত বিশ্রামে থাকো।” সেই রাতে তার ঘুম হলো গভীর, নির্ভার, আর প্রশান্ত।
পরের দিন অফিসে গিয়ে সে অবাক হয়ে দেখল— মাথা পরিষ্কার, কাজের আগ্রহ দ্বিগুণ, মনটা যেন নতুন করে জেগে উঠেছে।
এরপর থেকে মায়া ঠিক করল— প্রতি রবিবার হবে তার “ডিজিটাল নীরবতা দিবস”, যেদিন সে নিজেকে, প্রকৃতিকে, আর প্রিয় মানুষগুলোকে সময় দেবে।