27/04/2025
হাম, মাম্পস ও রুবেলা এই তিনটিই ভাইরাস জনিত রোগ, এবং বছরের এই সময় এদের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। এই রোগ গুলো সম্বন্ধে খুব সাধারণ কিছু তথ্য দেওয়া হল
হাম (Measles):
হাম একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যেখানে প্রথমে জ্বর, সর্দি, কাশি হয়, পরে পুরো শরীরে লালচে দানার মতো র্যাশ বা চর্মরোগ দেখা দেয়। চোখ লাল হয় এবং রোগী খুব দুর্বল বোধ করে।
মাম্পস (Mumps):
মাম্পসও একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এতে মুখের দুপাশে থুতু গ্রন্থিগুলো ফুলে যায়, বিশেষ করে কানের নিচে। সাথে জ্বর, মাথাব্যথা ও খাওয়া-দাওয়ায় কষ্ট হয়।
রুবেলা (Rubella):
রুবেলা, যাকে আমরা জার্মান হাম বলি, এক ধরনের হালকা ভাইরাস সংক্রমণ। শরীরে হালকা গোলাপি র্যাশ হয়, সামান্য জ্বর থাকে, আর গলা বা কানের পাশের গ্রন্থি ফুলে যায়। গর্ভবতী মায়ের জন্য এটি অনেক বিপজ্জনক, কারণ গর্ভের শিশুর জন্মগত সমস্যা হতে পারে।
🔹এই রোগ গুলো কখন বেশি হয়:
হাম: সাধারণত শীতের শেষে এবং বসন্তের শুরুতে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) বেশি দেখা যায়।
মাম্পস: বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে (মার্চ থেকে জুন) মাম্পসের প্রকোপ বেশি হয়।
রুবেলা: বছরের যে কোনো সময় হতে পারে, তবে বসন্তকালে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বেশি দেখা যায়।
🔹কিভাবে সংক্রমণ হয়:
সংক্রামিত ব্যক্তি যদি মুখ ঢেকে না কাশি বা হাঁচি দেয়, তাহলে তার কাছাকাছি থাকা অন্যরাও সহজে আক্রান্ত হয়।
কখনো কখনো ভাইরাস লেগে থাকা কোনো জিনিস (যেমন: দরজার হাতল, লিফটের বাটন, টাকা, খেলনা ইত্যাদি) স্পর্শ করে মুখে হাত দিলেও সংক্রমণ হতে পারে।
হাম সবচেয়ে বেশি সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে একটি। আক্রান্ত একজন ব্যক্তি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনকে সংক্রমিত করতে পারে।
🔹রোগের উপসর্গ:
হাম:
৩-৪ দিন জ্বর, খুসখুসে কাশি, সর্দি, চোখ লাল হওয়া
মুখের ভেতরে সাদা দাগ
সারা শরীরে লালচে র্যাশ ছড়িয়ে পড়া
মাম্পস:
মুখের পাশ ফুলে ওঠা (থুতু গ্রন্থি)
গলা ব্যথা, জ্বর, মাথাব্যথা
খাওয়া, কথা বলা বা গিলতে ব্যথা হওয়া
রুবেলা:
হালকা জ্বর
ছোট ছোট গোলাপি র্যাশ
গলার লিম্ফ গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে ভয়ংকর (শিশুর অন্ধত্ব, হৃদরোগ, বধিরতা হতে পারে)
🔹প্রতিকার ও প্রতিরোধ:
১. টিকা নেওয়া (MMR Vaccine):
হাম, মাম্পস ও রুবেলার জন্য একটি মাত্র টিকা আছে, যার নাম এমএমআর (MMR) টিকা। এটি সাধারণত শিশুদের দুইবার দেয়া হয়: প্রথম ডোজ ১২-১৫ মাসে এবং দ্বিতীয় ডোজ ৪-৬ বছর বয়সে। টিকা নিলে ৯৫%-৯৮% ক্ষেত্রে এসব রোগ থেকে জীবনভর সুরক্ষা পাওয়া যায়।
২. আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা:
আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্তত ৫-৭ দিন বিশ্রামে এবং অন্যদের থেকে দূরে রাখতে হবে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়।
৩. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:
হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে কাশি দিন।
নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখতে হবে।
বারবার নাকে ও মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
জটিলতা এড়াতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে। হাম আক্রান্তদের শরীরে পানি শূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) হতে পারে, তাই প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাওয়া দরকার। মাম্পসে ব্যথা কমানোর জন্য ঠাণ্ডা সেঁক দেয়া যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: হাম থেকে শিশুর নিউমোনিয়া বা মস্তিষ্কের প্রদাহ (encephalitis) হতে পারে। মাম্পস থেকে কিশোর বয়সে ছেলেদের টেস্টিকুলার (অন্ডকোষের) প্রদাহ হতে পারে, যা ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানে সমস্যা করতে পারে। রুবেলা গর্ভবতী নারীদের জন্য মারাত্মক চিন্তার কারণ, প্রথম তিন মাসে সংক্রমণ হলে গর্ভের শিশুর চোখ, কান ও হৃদপিণ্ডের বড় ক্ষতি হতে পারে।
হাম, মাম্পস ও রুবেলা—তিনটিই খুব পুরনো ও বিপজ্জনক রোগ। টিকা চিকিৎসা এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে আমরা এ রোগগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারি। তাই আসুন সচেতন থাকি নিজের ও পরিবারের স্বার্থে।
লেখক:
মিঠুন সমদ্দার
ফার্মাসিস্ট ও ডিজিটাল হেলথ পেশাদার