
13/11/2021
লিভার ভালো রাখতে করণীয়ঃ
লিভার হলো আমাদের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা---
গৃহীত খাবার বিপাক, প্রসেস, মজুদ করে এবং প্রয়োজনীয় অংশ শরীরের ক্ষয়পূরণ, গঠন, বৃদ্ধি ও চালিকা শক্তিতে কাজে লাগায়;
গৃহীত খাবারের সাথে আগত রোগ জীবাণু ধ্বংস করে ;
গৃহীত খাবারের সাথে আগত বিভিন্ন রাসায়নিক, বিষাক্ত পদার্থ নির্বিষ করে ;
গৃহীত ওষুধ প্রসেস করে দূরবর্তী ক্ষতস্থানে প্রেরণ করে এবং রোগ নিরাময় করে ;
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ব্যাপভিত্তিক ভূমিকা পালন করে।
তাই লিভার সুস্থ রাখার গুরুত্ব অপরিসীম।
লিভার সুস্থ রাখতে আমরা নিম্নোক্ত দিক নির্দেশাসমূহ মেনে চলতে পারি --
১) দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুমানো (অন্তত ৭-৮ ঘন্টা);
২) অনিদ্রা পরিহার করা, অধিক রাত না জাগা, দিনের বেলা শোওয়া যাবে না ;
৩) প্রত্যহ নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা ;
৪) পরিমিত বিশুদ্ধ ও সুষম খাবার গ্রহণ ;
৫) বাজে তেল ও অধিক শর্করাযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, প্রসেসড খাবার, এনার্জি ড্রিংকস, স্ট্রিট ফুড, ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি বদঅভ্যেস পরিহার করা ;
৬) শরীরের স্থূলাকৃতি ও বাড়তি ওজন কমিয়ে নির্দিষ্ট ওজন বজায় রাখা ;
৭) ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্ত চাপের সঠিক যথোপযুক্ত চিকিৎসা করা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৮) সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখার অভ্যাস তৈরি করা;
৯) মানসিক উদ্বেগ অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে হাসি খুশি, উৎফুল্ল ও উদ্দীপনাময় জীবন যাপন করা।
১০) ধর্মীয় ও সৃজনশীল কাজের চর্চা করা এবং পরহিত ব্রতে নিজেকে নিয়োজিত রাখা ;
১১) নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের ব্যবস্থা করা ;
১২) জীবাণুমুক্ত সূঁচ, সুতা, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, ডেন্টাল যন্ত্রপাতি, বিউটি পার্লারে নাক কান ফোঁড়ানো বা উল্কি আঁকার কাজে ব্যবহৃত জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রচলন করা ;
১৩) ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকসেবিদের ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা ;
১৪) গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের যথোপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া;
১৫) হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই ১২ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিয়ে দিতে হবে ;
১৬) হেপাটাইটিস বি কিংবা সি ভাইরাসে আক্রান্ত স্বামী কিংবা স্ত্রী দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহার করবেন ও অতি সত্বর আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নিবেন এবং অপরজন আক্রান্ত না হলে টিকা নিয়ে নিবেন।
১৭) অনৈতিক যৌন মিলনে বিরত থাকতে হবে ;
১৮) সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ড সম্পন্ন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে এবং ধর্মীয় অনুশীলনগুলো মেনে চলার অভ্যাস তৈরি করতে হবে ;
১৯) সার্বজনীননভাবে সবার হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে কি না তা পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে হবে এবং যার নেই তাকে অবিলম্বে টিকা বা ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে হবে ;
২০) দীর্ঘ মেয়াদে ব্যথা নাশক ওষুধ যেমন Methotrexate গ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে ;
২১) ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে ;
২২) সর্বদা সাবান পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে ;
২৩) কোন কিছু খাবার আগে এবং টয়লেট সেরে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে ;
২৪) স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে ;
২৫) সুপেয় ও জীবাণুমুক্ত পানি খাওয়া ও ব্যবহার করা ;
২৬) পৌর নগরে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত পানি অবশ্যই উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটিয়ে কিংবা জীবাণুমুক্ত করে পান করা এবং ব্যবহার করা।
২৭) স্ট্রিট ফুড (রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর মুখরোচক খাবার যেমন চটপটি, ফুচকা, দই ফুচকা, আচার, চাটনি, ঝালমুড়ি, ভেলপুরি, কাবাব, বিরিয়ানি, ফলের জুস, আখের রস, বিভিন্ন প্রকার শরবত ইত্যাদি) পরিহার করা।
২৮) বিয়ে বাড়ি, মেজবানির সালাদ কিংবা বোরহানি খেতে সতর্ক থাকা।
২৯) প্রতিরোধী ব্যবস্থা হিসেবে হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণ করা।
ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ;
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬