15/06/2022
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন-
ভারী লাগছে পা।
তাকিয়ে দেখলেন পাটি যেন ফোলা ফোলা। অথবা পায়ের গোড়ালি ব্যথা করছে, হাঁটু ফুলে গেছে, উরুতে ব্যথা। জুতা পরেছেন, টাইট লাগছে মোজা, হাঁটতে গেছেন- শুরু হলো ব্যথা।
কখনো কখনো এমন পা ফুলে যেতে পারে। পায়ের এমন ফুলে যাওয়া কয়েক দিন পর নিজে নিজে চলে যেতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সহজে যায় না। বিশেষ করে বয়সি লোকদের। কম বয়সি কিংবা তরুণদেরও এমন পা ফুলে যেতে পারে অনেক কারণে। কম বয়সিরা এসব সমস্যাকে অবহেলা করে। কিন্তু এমনটি করা উচিত নয়। কারণ, আপনার এমন হঠাৎ পা ফুলে যাওয়ার পেছনে শরীরের কোনো না কোনো সমস্যা দায়ী। সাময়িক এই আসা-যাওয়া আড়ালের সমস্যাকেই ইঙ্গিত করে। তাই জেনে নিন কেন এমন পা ফুলে যায়, এমন হলে কী করবেন, কী করবেন না, চিকিৎসাই বা কী?
লম্বা জার্নিতে এমন পা ফুলে যাওয়া খুব কমন। পেস্ননে, ট্রেনে, বাসে লম্বা জার্নির পর দেখবেন পা যেন ফোলা ফোলা। কারণ- অনেকক্ষণ পা নড়াচড়াবিহীন থাকায় পায়ের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল কমে গিয়ে পায়ে পানি জমতে থাকে। যারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রেও এমন হয় দিন শেষে। এজন্য ভ্রমণে মাঝে মধ্যে সিট থেকে উঠে হাঁটা-চলা করবেন, হাত পা নড়ার সুযোগ দেবেন শরীরকে। এক নাগাড়ে কোথাও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে বিশ্রামের সুযোগ দেবেন শরীরকে।
লোকে এমন পা ফুলে যাওয়াকে বলে পায়ে পানি আসা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে - ঙবফবসধ (ইডেমা)। শরীরের কোথাও পানি কিংবা জলীয় কিছু জমে গিয়ে ফুলে ওঠাকে বলে- ইডেমা। শরীরের অনেক অংশেই এমন পানি জমতে পারে। মুখ, চোখের নিচের অংশ, পেট, হাত, কোমর, এবং সর্বশেষে পায়ের যে কোনো অংশে। তবে শরীরের কোথাও পানি জমলে সবচেয়ে বেশি পানি জমে পায়ে। বিশেষ করে পায়ের গোড়া, পায়ের পাতা, হাঁটু, পায়ের মাংসল অংশে। কারণ, পানি বা জলীয় পদার্থ শরীরের কোথাও জমা হলে পৃথিবীর গ্রাভিটির আকর্ষণের কারণে শরীরের নিচের দিকে নামতে থাকে বেশি। অনেক কারণেই এমন পা ফুলে যায়। এই কারণগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ইডেমা, ২. ইনফ্লামেশন
শরীরের যে অংশগুলোতে সমস্যা দেখা দিলে ইডেমা হয়ে পা ফুলে যায়, প্রধান সেগুলো হলো : হার্ট, কিডনি, রক্তনালি। এর বাহিরে কিছু ওষুধ খেলে সাইড ইফেক্ট হিসেবে ইডেমা হয়ে পা ফুলে যায়। প্রেগন্যান্ট মায়েদের প্রসূতিকালীন থার্ড ট্রাইমেস্টারের সময়ে এমন ইডেমা দেখা দিতে পারে।
শরীরের কোথাও কোনো ক্ষতের, ইনফেকশনের, ইমিউনিটির সমস্যা দেখা দিলে শরীর স্থায়ীভাবে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আশপাশে ইনফ্ল্যামেশনের মাধ্যমে কোষের ভেতর বাহিরে পানি বা জলীয় পদার্থের সমাবেশ ঘটায়। ফলশ্রম্নতিতে পা কিংবা শরীরের জয়েন্টগুলোতে পানি জমে ফুলে যায়।
হার্টের কাজ শরীরে রক্ত পাম্প করা। কিন্তু এই কাজটি ঠিকমতো করতে না পারলে পা ফুলে যায়। বিশেষ করে হার্ট ফেইলিউর, নির্দিষ্ট করে বললে কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর। এমন হার্ট ফেইলিউর হলে হার্টের পেশিগুলো বেশ দুর্বল হয়ে ঠিকমতো রক্তকে সারা শরীরে পাম্প করতে পারে না, তখন এমন পানি জমে পা ফুলে যায়। সঙ্গে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়, দুর্বল লাগতে পারে।
কিডনির কাজ শরীরে ছাঁকনির কাজ করা, শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি বের করে দেয়া। কিডনি যখন এমন ফিল্টারিংয়ের কাজ ঠিক মতো করতে না পারে, তখন অতিরিক্ত পানি জমে পা ফুলে যায়। বিশেষ করে একিউট কিডনি ফেইলিউর হলে এমন সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
রক্তনালির কাজ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত এবং বিভিন্ন জলীয় পদার্থকে পৌঁছে দেয়া। কিন্তু কোথাও রক্ত জমাট বেঁধে এই কাজে বাধা দিলে তখন আশপাশে পানি জমে যায়। বিশেষ করে পায়ের রক্তনালিতে রক্ত কোনো কারণে জমাট বেঁধে গেলে আশেপাশে পানি জমে ফুলে ওঠে পা। ডিপ ভেইন থম্ব্রোসিস হলে এমন হয়। এমনটি হলে এটি খুব ভয়ংকর। কারণ, জমাট রক্ত পিন্ড তখন হার্ট কিংবা ফুসফুসে গিয়ে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য কিছু মেডিসিন খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পা ফুলে যায়। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম চ্যানেল বকার জাতীয় ওষুধে এমন হয়। এসপিরিন, আইব্রম্নপ্রোফেন জাতীয় পেইন কিলার ধরনের মেডিসিন খেলে কারো পা ফুলে যেতে পারে। যারা নিয়মিত জন্মনিরোধ পিল খান, তাদেরও এমন পা ফুলে যায়। এমন ইডেমা হলে সেগুলো সাময়িক, ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলে চলে যায়। ডায়াবেটিসের কারণে যারা মেটফরমিন ওষুধটি নিয়মিত খান, তাদেরও কখনো কখনো ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পা ফুলে যেতে পারে। এন্টিডিপ্রেসেন্ট জাতীয় ওষুধ খেলে তখন পা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইনফ্ল্যামেশনের কারণে পা ফুলে যাওয়ার মধ্যে আর্থ্রাইটিস, বিশেষ করে রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রধান। সঙ্গে জয়েন্টের কিছু ইনফ্ল্যামেশনে এমন পা ফুলে যায়। বিশেষ করে হাঁটু এবং গোড়ালিতে এমন হয় বেশি। পা মচকালে পায়ের টেন্ডন, পেশি কিংবা লিগামেন্টে টান খেয়ে পা ফুলে যাওয়া, বিশেষ করে গোড়ালি, খেলোয়াড় থেকে সাধারণ লোকদের নিত্য একটি সমস্যা। অল্প বয়সিদের এটি দেখা যায় বেশি।
যে কোনো সমস্যার প্রথম সমাধান হলো সমস্যাটির কারণ খুঁজে বের করা। তারপর সমস্যাটির সমাধান করতে সেই সমস্যাটির সমাধান করা। কোন কারণে পা ফুলে গেলে সেটি যদি কয়েক দিনের মধ্যে না যায় নিজে নিজে, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। যত দ্রম্নত চিকিৎসা নেবেন, তত দ্রম্নত আড়ালের কারণটা প্রতিকার করতে পারবেন। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে কিছু নিয়ম মেনে চললে পা ফোলা কমে যেতে পারে।
এক. লবণ এবং লবণ জাতীয় খাবার কম খাওয়া। খাবারে লবণ কমিয়ে দেয়া।
দুই. নিয়মিত ব্যায়াম করা।
তিন. ঘুমের সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা কে একটু উঁচু করে রাখা।
+880 1715-571054
wwww.dhakaphysiobd.com
Location: https://maps.app.goo.gl/h6KuxfQ2qpLAMK8g6