13/10/2025
দুজন ক্ষুধার্ত প্রাণী
—ধানমন্ডির বিক্ষুব্ধ সকাল
ধানমন্ডি আটের সে চেনা চিত্র—হীরার ন্যায় ঝলমলে বড় বড় গাড়ি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, সৌন্দর্যে মোড়ানো শহরের অঙ্গে একটু দুর্বলতা; রিকশার সারি, গল_timezone রুগ্ণ কিছু রিকশাচালক, আর টুকটাক হুড়হুড় করে চলা মানুষের ভিড়। এখানেই, শহরের কাঁচা-পাকা বিভাজনের মাঝখানে, এক অদ্ভুত যুদ্ধ চলছিল—কিন্তু অস্ত্র ছিল না, জয়ের প্রলোভনও ছিল না; ছিল কেবল ক্ষুধা।
রিকশার পাশে হঠাৎ এক রেখানে আসে এক কুকুর—রোগা, চামড়া-হাড়ের মতো, চোখে কেবল একটিই আবেদন: খিদে। সে এগিয়ে এসে রিকশাচালকের পায়ের কাছে মাথা রেখে করল অনুনয়। চারপাশের মানুষের চোখে এই দৃশ্য যেন এক অভিনব দায়—কেউ দেখছে, কেউ ভাবছে, কেউ কাঁধ ঝাঁকিয়ে দূরে সরে যায়। রিকশাচালকের কাছে কোন খাবার জিনিস ছিল না; হতাশায় তিনি তাঁর এক জুতা খুলে কুকুরটির দিকে ছুঁড়ে দিলেন — তবু কুকুরের মন জেতে না। জুতা লাফিয়ে গেল, কুকুর শুধু আরো কাছে এসে ভর করে—অত্যন্ত নির্ভরতার ভাষায়।
মানুষটি একে ধাওয়া করল; কুকুর পিছনে পিছনে ডগার ডগা করে ছুটল। এই অদ্ভুত খেলা—একজন ক্ষুধার্ত মানুষ আর এক ক্ষুধার্ত প্রাণীর মধ্যে—দর্শকেরা দেখে অবাক, অভিমান ভরা হাসি-ধ্বনি, আর মনে মনে একটা প্রশ্ন ঘোরে: ক্ষমতা এবং অভাবের এ অদৃশ্য সীমানাটিই কি আমাদের সভ্যতাকে রচনা করে?
ধনীলোকদের গাড়িগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে—ভোজন-ভ্রূণের মাঝে অচেনা। রিকশাচালকটির চোখে ক্লান্তি, কুকুরটির চোখে নিঃশব্দ আবেদন; দুজনের পায়ের তলায় ছাপ পড়ে রঙিন এই শহরের মাটিতে—একই ক্ষুধা, একই লড়াই, ভিন্ন রূপে। হয়তো এটাই শহরের সোজা সত্য: যেখানে মানুষ নিজেকে মানুষ ভাবতে ভুলে যায়, সেখানে প্রাণীর পেটের টানে মানবিকতাও মনে পড়ে।
শেষে, কুকুরটি থেমে রিকশাচালকের পায়ের কাছে মাথা রেখে শান্তি পেল—না জোড়ালো হস্তে, না ধন-সম্পদের ছোঁয়ায়; বরং এক দুর্বল কিন্তু অটল সংযোগে—একজন জীবন্তের আরেকজনের প্রতি ছোট্ট দয়ায়। আর সেই দয়া, এই কোলাহল শহরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, চুপচাপ বলে যায় যে ক্ষুধা ও করুণার একটা ভাষা আছে, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।