14/06/2025
মায়েদের খুব সাধারণ একটা অভিযোগ—শিশুরা খেতে চায় না। মনে রাখবেন, ছোট শিশুদের খেতে না চাওয়ার অন্যতম একটা কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য। অনেক সময় শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য মায়েরা টের পান না। দেখা যায়, পায়খানা নরম হলেও অনেক সময় তা পুরোপুরি পরিষ্কারভাবে না হওয়ার কারণে শিশুদের পেট ফাঁপা থাকে। অরুচি দেখা দেয়।
প্রথমে জানতে হবে কোষ্ঠকাঠিন্য বলতে আসলে আমরা কী বুঝি। কোনো শিশু যদি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করে, মলত্যাগের সময় যদি পেট ব্যথা করে, শক্ত মলের সঙ্গে যদি রক্ত দেখা যায়, শিশুর প্যান্টের সঙ্গে যদি তরল মলের দাগ থাকে, তবে বুঝবেন তার কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে।
যেসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ ভুল জীবনযাপন। শিশুদের পর্যাপ্ত হাঁটাচলা বা খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা।
দিনের অনেকটা সময় এখন টিভি বা মুঠোফোনে কাটায় শিশুরা। এই অচলতা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে।
প্রচুর পরিমাণে ফাস্ট ফুড, চিপস ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস।
শাকসবজি, ফলমূল এবং পানি কম খাওয়া।
স্কুলে পর্যাপ্ত পরিমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকা। এ কারণে অনেক সময় শিশুরা মল আটকে রাখে।
যেসব শিশু গরুর দুধ বেশি খায়, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
বংশানুক্রমিক কারণেও শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
শিশুদের নির্দিষ্ট কিছু রোগ, যেমন নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ, Hypothyroidism, এনাল ফিশার, কার্সপ্রাঙ্গ ডিজিজের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
সমাধান কী?
জন্মের পর পূর্ণ ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
মায়ের বুকের দুধ যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে সে জন্য একজন দক্ষ পুষ্টিবিদের পরামর্শে মায়ের খাদ্যতালিকা ঠিক করে নেওয়া উচিত।
� ছয় মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি বাচ্চার পরিপূরক খাবারে পর্যাপ্ত সলিউবল ফাইবার (যে ফাইবার পানিতে দ্রবীভূত হয়) ও পানি যেন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
� বাচ্চার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পানি আছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন দানা শস্য, ফলমূল এবং শাক-সবজি তার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন, যেমন সাগু, লাল বা বাদামি চালের ভাত, লাল চিঁড়া, ওটস, ছাতু, পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, লালশাক, পালংশাক, কলা, খেজুর ইত্যাদি। ফাইবার মল বৃদ্ধি করে, মলত্যাগের উন্নতি করে। ফাইবার সমৃদ্ধ স্ন্যাকস যেমন টুকরো করা আপেল, নাশপাতি বা গাজরও এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ফাইবার সমৃদ্ধ স্মুদিও তৈরি করতে পারেন। কলা এবং স্ট্রবেরির মতো ফল দই এবং এক চা চামচ চিয়া সীডের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। পানীয়টি আপনার শিশু উপভোগ করবে এবং এটি তার মলত্যাগের উন্নতিও করবে। প্রতিদিন সকালে আপনার শিশুকে এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান করতে দিন। এছাড়াও তাকে সারারাত ভিজিয়ে রাখা ৪-৫টি কিশমিশ খেতে দিন।
� হাইড্রেটেড রাখুন
ডিহাইড্রেশন কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার শিশু সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। হাইড্রেশন মল নরম করতে সাহায্য করে, মল ত্যাগ করা সহজ করে তোলে। পানি, তাজা ফলের রস, লেবুর শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি তার হাইড্রেশনের মাত্রা সাহায্য করবে।
� * টয়লেটের রুটিন ঠিক করে দিন
আপনার সন্তানের জন্য একটি নিয়মিত টয়লেট রুটিন ঠিক করুন। তাদের প্রতিদিন একই সময়ে টয়লেট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করুন, বিশেষ করে খাবারের পরে, যখন শরীরের ন্যাচারাল রিফ্লেক্সেস সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। আপনার শিশুকে দিনে অন্তত দুবার ১০ মিনিটের জন্য টয়লেটে বসিয়ে দিন
স্কুলে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাচ্চাদের অবশ্যই প্রতিদিন এক ঘণ্টা খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
কী কী খাবার বাদ দেব?
যেসব বাচ্চা এরই মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে, তাদের জন্য রুটি ও শক্ত ভাত, পোলাও চালের ভাত, গরুর মাংস, ফর্মুলা মিল্ক বাদ দেওয়া জরুরি।