24/05/2024
উচ্চ রক্তচাপঃ নীরব ঘাতক, জেনে নিন কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ কে বলা হয় নীরব ঘাতক। রোগটি যেন ক্রমশ মহামারীর মতন ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপার টেনশন এ ভুগছেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষই উচ্চ রক্তচাপ এ আক্রান্ত। ১৭ই মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এই দিনে চলুন জেনে নেই এই রোগের কারণ, পথ্য ও প্রতিকার।
হাইপারটেনশন কি?
হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ/হাই ব্লাড প্রেশার বা হাইপারটেনশন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারো রক্তচাপের মাত্রা যদি ১৪০/৯০ এর চেয়ে বেশি থাকে তখন সেই শারীরিক অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে তখন সেই অবস্থাকে লো ব্লাড প্রেশার বলা যায়। তবে বয়সভেদে এই মানে ভিন্নতা দেখা দিতে পারে।
হাইপারটেনশন এর কারনঃ
খাবারে অতিরিক্ত বা আলগা লবন গ্রহণ, প্রতিদিন ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি লবণ খেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে
অতিরিক্ত দৈহিক ওজন বা স্থুলতা
লবনাক্ত খাবার বেশি গ্রহণ, যেমনঃ চানাচুর, চিপস, আচার ইত্যাদি
অতিরিক্ত রেড মিট অর্থাৎ গরু বা খাসির মাংস
অতিরিক্ত পরিমাণে সামুদ্রিক মাছ বা শুঁটকি
প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড যেমনঃ সিঙ্গারা, সমুচা, কাবাব, গ্রিল, চপ, যেকোনো প্যাকেতজাত খাবার ইত্যাদি
চিজ, মাখন, পেস্ট্রি ও কেক এ অতিরিক্ত পরিমাণ সোডিয়াম থাকে তাই এসব খাবার খেলে অনেক সময় ব্লাড প্রেশার বেড়ে যেতে পারে
অতিরিক্ত চা বা কফি, কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন রক্তনালি সরু করে দিতে পারে, ফলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে
বয়স যেমন ৪০ বছরের পর থেকে রক্ত চাপের ঝুঁকি বাড়ে
এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, শারীরিক-মানসিক দুশ্চিন্তা, দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি কারণে হাইপারটেনশন দেখা দিতে পারে।
লক্ষণঃ
মাথা ব্যথা
ঘাড়ে ব্যথা
বমি বমি ভাব, বমি
শরীর কাঁপতে থাকা
রাতে ঘুম কম হওয়া
জ্ঞান হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি
শারীরিক ঝুঁকিঃ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে না থাকলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন-
হৃদরোগ, যেমনঃ দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হৃদপিণ্ডের রক্ত নালি সরু হয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে এছাড়াও উচ্চ রক্ত চাপের ফলে হৃদপিণ্ডের পেশি সরু হয়ে হার্ট ফেইলিউর এর মতন মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে
অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের রোগীদের কিডনি জনিত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
মস্তিষ্কের রক্ত নালি সরু হয়ে স্ট্রোক এর মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে
রেটিনায় রক্ত ক্ষরণ হয়ে দৃষ্টিশক্তি জনিত বিভিন্ন সমস্যা এমনকি অন্ধত্বও দেখা দিতে পারে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়ঃ খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপের ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাদ্যাভ্যাসঃ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে যেসব খাবার খাবেন-
প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি যেমনঃ পালংশাক, ফুলকপি, শসা, লাউ, মটরশুঁটি, কলমি শাক, বাঁধাকপি, টমেটো, কুমড়া, বেগুন ইত্যাদি
পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন ফলমূল যেমনঃ আমলকি, নাশপতি, পেঁপে, বেদানা, পেয়ারা ইত্যাদি। এছাড়াও দেশীয় মৌসুমি ফল যা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যেমনঃ লেবু, কমলা, পেয়ারা, আমড়া ও আমলকী।
পটাশিয়াম যুক্ত খাবার যেমনঃ কলা, ডাবের পানি, টমেটো ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়াও ছোট মাছ, রসুন, বাদাম, ওটস ইত্যাদি খাদ্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে।
উচ্চ রক্তচাপে প্রতিদিন একটি দেশি মুরগির ডিম ও এক কাপ সর ছাড়া দুধ খাওয়া যাবে।
যেসব খাবার বাদ দিবেন-
অতিরিক্ত বা আলগা লবন
লবনাক্ত খাবার যেমনঃ চানাচুর, চিপস, আচার
রেড মিট অর্থাৎ গরু বা খাসির মাংস
মাখন, পেস্ট্রি, কেক ইত্যাদি অতিরিক্ত কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার।
লাইফস্টাইল-
নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪০ মিনিট হাঁটতে হবে
পরিমিত পরিমাণে ঘুমাতে হবে, প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা।
তামাক ও তামাক জাতীয় বস্তু পরিত্যাগ করতে হবে
নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে হবে
ব্লাড স্যুগার নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে
ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে হবে
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নির্দেশনা মোতাবেক ওষুধ গ্রহণ বা বর্জন করতে হবে।
গত ১৭ই মে ছিল বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগ 2024 সালের বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের থিম হিসাবে "আপনার রক্তচাপ সঠিকভাবে পরিমাপ করুন, এটি নিয়ন্ত্রণ করুন, দীর্ঘ দিন বাঁচুন " ঘোষণা করেছে।
সাদিয়া শাহরিণ শিফা
নিউট্রিশনিস্ট
আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার