15/07/2025
নিশব্দে বিদায় নিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঞ্জু...
ভালো বাংলা বলতে পারতেন না তিনি—চা শ্রমিক পরিবারের মেধাবী ছেলে সঞ্জয় বড়াইক। এই ‘ভালো না পারা’র মূল্য তাকে দিতে হয়েছে শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, ব্যক্তিজীবনেও। হারিয়েছিলেন টিউশনির মতো প্রয়োজনীয় আয়। কিন্তু তার সংগ্রাম শুধু ভাষাগত সীমাবদ্ধতায় থেমে ছিল না। অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী, তবুও কাউকে বুঝতে দিতেন না কিছুই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থীর বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের আমু চা বাগানের সাওতার লাইন এলাকায়। তার নিঃশব্দ লড়াইয়ের গল্প শেয়ার করেছেন বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন।
এক স্মৃতিচারণায় তিনি লিখেছেন,
‘একদিন জানাল, তার টিউশনি চলে গেছে। কারণ, সে ভালো বাংলা বলতে পারে না। তার মাতৃভাষা তো বাংলা নয়। তাহলে কেন আমরা তার কাছ থেকে বাংলা ভাষার শুদ্ধতা আশা করব? সে তো এসেছে এক ভিন্ন ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে, যেখানে তার ভাষার স্বরেই সে গড়ে উঠেছে।’
কিন্তু ভাষার সীমাবদ্ধতার বাইরে আরও এক গভীর সংকট ছিল সঞ্জুর—অর্থনৈতিক টানাপোড়েন।
ড. জোবাইদা লিখেছেন,
‘ওদের ব্যাচের কোর্স কো-অর্ডিনেটর ছিলাম। যেসব শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়েছিল, তাদের তালিকায় সঞ্জু ছিল না। পরে সিআর জানাল, ওদের মধ্যে সবচেয়ে সংকটে আছে সঞ্জু। কিন্তু সঞ্জু সেটা প্রকাশ করতে চায়নি।’
সঞ্জু সবসময় নিজের কষ্ট ঢেকে রাখতেন এক মৃদু হাসির আড়ালে। ক্লাসে দেখা হলে বিনয়ের হাসি দিয়ে বলতেন,
‘ওটুকুতেই হবে, ম্যাডাম।’
‘হয়তো সেই “ওটুকু”তেই সে খুশি থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ সেই “ওটুকু”ই তার হাত ফসকে পড়ে গিয়েছিল। আর সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি জীবনের তাগাদায়।’
শেষে অধ্যাপকের আর্তি—
‘শুধু আফসোস করতেই পারছি, সঞ্জু— তোমার সেই “ওটুকু” নড়ে গিয়েছিল কীভাবে? কেন আমরা সেটা ফিরিয়ে দিতে পারলাম না? হয়তো তোমাকে ততটা ভালোবাসতে পারিনি, যতটা তোমার প্রয়োজন ছিল।’
সঞ্জু আজ নেই। কিন্তু তার নীরব সংগ্রামের গল্প প্রশ্ন তোলে আমাদের দিকে—ভালোবাসা, সমান সুযোগ আর সহমর্মিতার যে দায়, সেটা আমরা কতটা পালন করি?
তথ্যসুত্র: ডেইলি ক্যাম্পাস