
21/08/2022
জন্ডিস (ফাকিবাজি চিকিৎসা) আধুনিক চিকিৎসা ও হোমিওপ্যাথি,
আসসালামু আলাইকুম
আমার আর্টিকেল এর হেডলাইন দেখে অনেকেই একটু নড়েচড়ে বসেছেন তাই না? ফাকিবাজি চিকিৎসা এটা আবার কি? তাও আবার জন্ডিস এর চিকিৎসায়।
ধৈর্য সহকারে পোষ্ট টি পড়বেন ইন সা আল্লাহ খুব সহজেই বুঝে যাবেন।
আগে বলে নেই জন্ডিস কি?
জন্ডিস হল যদি কোন কারনে আমাদের দেহের সবচেয়ে সাদা স্থান (যেমন চোখের সাদা অংশ বা sclear. হাতের তালু, পায়ের তালু, মুখের মিউকাস মেব্রেন) হলুদ আকার ধারন করে তখন তাকে জন্ডিস বলে। ইহা কোন রোগ নয়, রোগের কারন।
সাধারণত রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়,
বিলিরুবিন এর নরমাল মাত্রা
০.৩-১.৩ গ্রাম/ ডেসিলিটার।
যদি কোন কারনে এই মাত্রা ১.৩ গ্রাম/ডেসিলিটার অতিক্রম করে তখন জন্ডিস এর সূত্রপাত হয়।
এবং বিলিরুবিন এর মাত্রা যদি ৩ গ্রাম/ ডেসিলিটার ক্রস করে তখন তাকে সিভিয়ার জন্ডিস বলে।
🖐️🖐️🖐️এখন আসি বিলিরুবিন কাকে বলে?
বিলিরুবিন হল একটি রঞ্জক (রঙিন) পদার্থ যার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারনে স্কিন হলুদ হতে থাকে,
এই বিলিরুবিন হল আমাদের দেহের লৌহিত রক্ত কনিকার বজ্য পর্দাথ, কঠিন লাগছে?
আচ্ছা সহজ করে দিচ্ছি,
আমাদের দেহের লৌহিত রক্ত কনিকা ১২০ দিন বাচে এর পর সে বুড়ো হয়ে যায় এবং মারা যায় যাকে (death RBC) বলা হয়, এই মৃত লৌহিত কনিকা
আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ Spleen(প্লীহা) এর ভিতর চলে আসে প্লীহার ভিতর অনেক বড় সাইজের কোষ থাকে যাদেরকে Macrophage কোষ বলা হয়।
এই Macrophage কোষ সমূহ মৃত লৌহিত কনিকা সমুহ কে খেয়ে ফেলে এবং সেখান থেকে আয়রন এবং বিলিরুবিন তৈরী করে। বিলিরুবিন এবং আয়রন লিভারে চলে আসে, আয়রন থেকে নতুন লৌহিত কনিকা তৈরী হয় এজন্য আয়রন বোন ম্যারু তে চলে আসে।
আর বিলিরুবিন লিভারে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন প্রসেসিং এর মাধ্যমে পিত্তরস এ রুপান্তর হয়ে পিত্ত নালি হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে এখন খাবার হজম করতে সাহায্যে করে এমবং পরিপাকের বজ্যে পর্দাথের সাথে ( মলের) সাথে বেড়িয়ে যায়।
💪💪এখন আমরা জানার চেষ্টা করব জন্ডিস এর কারন এবং প্রকার কি কি?
জন্ডিসের কারন
১) হেলোলাইটিক জন্ডিসঃঅর্থাৎ রক্তের কোন সমস্যায় যদি রক্তে বলিরুবিন এর মাত্রা বাড়তে থাকে তখন তাকে হিমোলাইটিক জন্ডিস বলে। সাধারনত যদি সময়ের আগেই লৌহিত রক্ত কনিকা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ভেংগে যায় তখন হিমোলাইটিক জন্ডিস দেখা যায়। কারন সমুহ হলঃ
ক) ম্যালেরিয়া
খ) থ্যালাসেমিয়া।
গ) এপ্লাস্টিক এনিমিয়া।
ঘ) সাপের বিষ।
ইত্যাদি কারন সমূহ লৌহিত কনিকা ভাংগার পিছনে অন্যতম ভুমিকা পালন করে, তখন রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা বেড়ে যায়।
২) হেপাটোসেলুরার জন্ডিসঃ বিলিরুবিন কে লিভার পিত্ত রসে রুপান্তর করে, যদি কোন কারনে লিভারে সমস্যা শুরু হয়, তখন বিলিরুবিন কে পিত্ত রসে রুপান্তর করতে পিত্ত থলি ব্যর্থ হয়, তখন জন্ডিস দেখা যায় একে হেপাটোসেলুরার জন্ডিস বলে।
কারন সমূহ হল
ক) হেপাটাইটিস ( viral hepatitis A,B,C,D,E) এর মধ্যে হেপাটাইসিস A,D,E মেডিসিন খেলে ৭ দিন না খেয়ে একসপ্তাহে ভালো হয়, কিন্তু হেপাটাইটিস B,C লাইফথ্রেটিং কন্ডিশন চিকিৎসা না করালে, লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার পযন্ত হতে পারে।
খ) লিভার সিরোসিস
গ) লিভার ক্যান্সার
ঘ) ইয়েলো ফিভার ইত্যাদি।
৩) অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসঃ যদি কোনো কারনে লিভারে উৎপাদিত পিত্তরস পিত্তথলি এবং পিত্ত নালী দিয়ে ঠিক মত সরবারহ হতে না পারে তখন তাকে অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস বলে, কারন সমূহ হল।
ক) পিত্ত থলীতে পাথর
খ) পিত্ত থলিতে ক্যান্সার,
গ) পিত্ত নালীতে পাথর ইত্যাদি,
পরীক্ষা নিরিক্ষাঃ
যেহেতু জন্ডিসের স্পেসেফিক কোন কারন নেই তাই জন্ডিস এর সাথে প্রেসেন্ট যে অসুস্থতা থাকবে তার উপর পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে হবে যেমন,
জন্ডিস এর সাথে যদি লৌহিত রক্ত কনিকা কমে যেতে থাকে এটা হিমোলাইটিক জন্ডিস এর লক্ষন তখন, হিমোলাইটিক জন্ডিস কে ইন্ডিগেটিং কারন খুজে বের করতে হবে।
চিকিৎসা ঃ
জন্ডিস চিকিৎসা কুসংস্কার ও ফাকিবাজি চিকিৎসাঃ
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জন্ডিস হলো ডাব পড়া খাচ্ছেন, মাথা চুন পানি দিয়ে ধোয়াচ্ছেন এবং লেবু পড়া খাচ্ছেন, যা সম্পুর্ন অবৈজ্ঞানিক,
মুলত তারা ভাইরাল হেপাটাইটিস বা (ADE) এর ক্ষেত্রে ম্যাজিক দেখান এবং রোগিরা তার পিছনে লাইন দেন, কারন এই সকল ক্ষেত্রে মেডিসিন না খেলে ও রোগি ৭ দিন বা এক সপ্তাহে ভালো হয়ে যান।
আর আমাদের দেশে পানি বাহিত রোগের মধ্যে
ভাইরাল হেপাটাইটিস কমন তাই মেক্সিমাম রোগি তাদের কাছে যান।
এটা সম্পুর্ন বোকামী বাসায় বিশ্রাম নিলেই আপনি সুস্থ্য হবে যাবেন,
কিন্তু আন্ডার লাইং যে কারন গুলী আছে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দক্ষ চিকিৎসক এর পরামর্শ না নিলে মৃত্যুর ঝুকি থাকবেই।
আলহামদুলিল্লাহ হোমিওপ্যাথি তে আন্ডারলাইং কারনের অনেক ভাল চিকিৎসা আছে।
রেজিস্ট্রার ডাক্তার এর পরামর্শ নিন সুস্থ্য থাকেন।