14/11/2025
মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং কী এবং কেন এটি নেওয়া জরুরি?
মানুষ হিসেবে আমরা সবাই কখনো না কখনো মানসিক চাপ, দুঃখ, ভয় বা উদ্বেগের মুখোমুখি হই। জীবনের বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের মনকে গভীরভাবে আঘাত করে -যেমন সম্পর্কের সমস্যা, কর্মক্ষেত্রের চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, বা জীবনের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলা। এসব পরিস্থিতিতে অনেকেই একা একা সব সামলে নিতে চেষ্টা করেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো -মানসিক যন্ত্রণা একা বহন করা সহজ নয়। এখানেই আসে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং বা Mental Health Counseling এর গুরুত্ব।
মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং কী?
মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং হলো এমন এক সহায়ক প্রক্রিয়া যেখানে একজন প্রশিক্ষিত কাউন্সেলর বা থেরাপিস্ট আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, আপনাকে বিচার না করে বোঝার চেষ্টা করেন, এবং আপনার আবেগ, চিন্তা ও আচরণ সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করেন। এটি শুধুমাত্র “সমস্যা বলার জায়গা” নয় — বরং এটি এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ যেখানে আপনি নিজের মনের কথা খুলে বলতে পারেন, নিজেকে নতুনভাবে চিনতে পারেন এবং সুস্থভাবে সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে পারেন।
কেন মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং নেওয়া উচিত?
1. নিজেকে বোঝার সুযোগ:
কাউন্সেলিং আপনাকে নিজের ভেতরের জগৎ সম্পর্কে জানার সুযোগ দেয়। আপনি কেন রাগান্বিত হন, কেন দুঃখ পান, বা কেন সম্পর্কগুলোতে বারবার একই ভুল করেন -এগুলোর পেছনের কারণগুলো আপনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন।
2. মানসিক চাপ কমায়:
নিয়মিত কাউন্সেলিং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাউন্সেলর বিভিন্ন টুল ও কৌশল শেখান, যেমন রিলাক্সেশন টেকনিক, মাইন্ডফুলনেস বা কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল স্ট্রাটেজি, যা মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।
3. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়:
নিজের আবেগকে চেনা ও সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। ফলে জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নিতে সহজ হয় এবং নিজেকে আরও শক্তিশালী মনে হয়।
4. সম্পর্ক উন্নয়ন:
কাউন্সেলিং শেখায় কীভাবে যোগাযোগ করতে হয়, কীভাবে সীমা তৈরি করতে হয় এবং কীভাবে সহানুভূতিশীল হয়ে সম্পর্ক রক্ষা করা যায়। এতে পারিবারিক, দাম্পত্য বা বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও গভীর ও সুস্থ হয়।
5. মানসিক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক:
সময়মতো কাউন্সেলিং নিলে ছোটখাটো মানসিক সমস্যা বড় আকার ধারণ করার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এটি ডিপ্রেশন, এংজাইটি, বার্নআউট বা ট্রমা থেকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখনো আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, কাউন্সেলিং মানে “পাগলদের চিকিৎসা”-যা সম্পূর্ণ ভুল। কাউন্সেলিং হলো মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। যেমন আমরা শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসকের কাছে যাই, তেমনি মানসিক কষ্টে কাউন্সেলরের কাছে যাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয়।
আমাদের মনে রাখা উচিত সাহায্য চাওয়া দুর্বলতা নয়, বরং এটি আত্ম-সচেতনতা ও সাহসের প্রকাশ।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, কারণ একটি সুস্থ মনই পারে একটি সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে।
✍️ লেখক: মাহমুদা আপা।