23/09/2022                                                                            
                                    
                                                                            
                                            ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বা ঔষধ লিখে কোম্পানি থেকে ডাক্তারদের কমিশন গ্রহণ করা
ইদানীং প্রায় শোনা যাচ্ছে বা আমরা জানতে পারছি যে,   নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তাররা রুগীকে রেফার করলে সেই ডাক্তারদেরকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্দিষ্ট অংকের টাকা কমিশন হিসেবে দিয়ে থাকে। এমনকি নির্দিষ্ট ঔষধ কোম্পানির ঔষধ লেখার কারণেও ডাক্তারবৃন্দকে কমিশন দেওয়া হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন  হল, এগুলো হারামের মধ্যে পড়বে নাকি হালালের মধ্যে?
আসুন, আগে জেনেনিই ডাক্তারের কাজ কি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাজ কি?
ডাক্তারের কাজ হল রুগীর রোগ অনুপাতে চিকিৎসা দেওয়া এবং সেই চিকিৎসার জন্য বিনিময় নেওয়া।
ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাজ হল রুগীর রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া। যেন ডাক্তারদের বুঝতে সুবিধা হয়।।আর এই পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত শ্রমের বিনিময়ে টাকা-পয়সা নেওয়া।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম যে, ডাক্তার রোগীর রোগের চিকিৎসা দেওয়া বাবদ পয়সা নিয়ে থাকে। আর এ কাজে অনেক সময়  ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট তাকে সাহায্য করে থাকে।
 #কিন্তু সমস্যা হল,  ডাক্তার যদি নির্দিষ্ট কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রুগীকে রিপোর্ট আনতে রেফার করে, তখন সেই সেন্টারের মালিকরা যেহেতু পূর্বেই ডাক্তারের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকে তাই তারা রোগীর থেকে অতিরিক্ত টাকা রাখে। যেমন - ধরুন, একটা টেস্ট করাতে রুগীর খরচ পড়ল ১০০০ টাকা। অথচ এখানে সেন্টারের মূল খরচ ৬০০/৭০০ টাকা। বাকিটা মাস শেষ যে ডাক্তার রেফার করেছে তাকে   কমিশন হিসেবে দিয়ে থাকে। 
এটা ডাক্তারের জন্য  ঘুষ বা উৎকোচ হিসেবে গণ্য হয়।
কেন ঘুষ হিসেবে গণ্য হবে? কারণ উল্লেখ করছি,
  তবে  আসুন ঘুষের বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেছেন আগে জেনেনিই । 
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لعنةُ اللهِ على الرّاشِي والمُرْتَشِي
" ঘুষ দাতা ও গ্রহীতার ওপর আল্লাহর লা'নত।"
(সুনানে আবি দাউদঃ ৩৫৮০,   সুনানে তিরমিজি ঃ ১৩৩৭, ইবনে মাযাঃ ২৩১৩  )
 #এভাবে কমিশন নেওয়া ঘুষ বলে গণ্য হবে?
আল্লামা শামী (রাহি) "রদ্দুর মুহতার" কিতাবে লিখেছেন, 
إنْ دَلَّنِي عَلَى كَذَا فَلَهُ كَذَا فَدَلَّهُ فَلَهُ أَجْرُ مِثْلِهِ إنْ مَشَى لِأَجْلِهِ مَنْ دَلَّنِي عَلَى كَذَا فَلَهُ كَذَا فَهُوَ بَاطِلٌ وَلَا أَجْرَ لِمَنْ دَلَّهُ إلَّا إذَا عَيَّنَ الْمَوْضِعَ
فَالْإِجَارَةُ بَاطِلَةٌ؛ لِأَنَّ الدَّلَالَةَ وَالْإِشَارَةَ لَيْسَتْ بِعَمَلٍ يُسْتَحَقُّ بِهِ الْأَجْرُ، وَإِنْ قَالَ عَلَى سَبِيلِ الْخُصُوصِ بِأَنْ قَالَ لِرَجُلٍ بِعَيْنِهِ: إنْ دَلَلْتَنِي عَلَى كَذَا فَلَكَ كَذَا إنْ مَشَى لَهُ فَدَلَّهُ فَلَهُ أَجْرُ الْمِثْلِ لِلْمَشْيِ لِأَجْلِهِ؛ لِأَنَّ ذَلِكَ عَمَلٌ يُسْتَحَقُّ بِعَقْدِ الْإِجَارَةِ إلَّا أَنَّهُ غَيْرُ مُقَدَّرٍ بِقَدْرٍ فَيَجِبُ أَجْرُ الْمِثْلِ، وَإِنْ دَلَّهُ بِغَيْرِ مَشْيٍ فَهُوَ وَالْأَوَّلُ سَوَاءٌ
"যদি আমাকে কেউ এমন পথ বাতলে দেয়,  তবে সে এত পারিশ্রমিক পাবে-------- এমন ইজারার চুক্তি বাতিল। কেননা, পথ দেখানো বা ইশারা করা এমন কোন শ্রম না যে কেবল এর জন্য সে বিনিময়ের হকদার হবে। 
 যদি সে বিশেষভাবে বলে থাকে, যেমন সে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে বলল, যদি তুমি আমাকে এমন পথের খোঁজ দেও , তবে তুমি  এত টাকা পাবে। সেই গাইড যদি তার সাঙ্গে তাকে পথের সন্ধান দিতে কিছু কদম চলে এবং তাকে পথের সন্ধান দেয়, তবে সে হাটার কারানে উক্ত পারিশ্রমিক পাবে। কেননা, হাটা এমন একটি আমল যার কারনে  ইজারা চুক্তির  মাধ্যমে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের হকদার সে হতে পারবে। ---------। 
(রদ্দুল মুহতারঃ ৯/১৩০)
এই একি ফাতাওয়া হানাফী মাযহাবের সকল প্রাচীন ও আধুনিক  ফাতাওয়ার কিতাবে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সমকালীন আরব আলেমগণও একি ফাতাওয়া দিয়েছেন।
দেখুন, ইমদাদুল ফাতাওয়া ঃ ৩/৪১০,  আহসানুল ফাতাওয়া ঃ ৭/৩০৭, কিতাবুল নাওয়াযিলঃ ১২/ ৩৫৪-৩৫৮, ইসলামি ওয়েবঃ ১৯৮৩২৯ নং ফাতাওয়া। 
 #ঔষধ কোম্পানি থেকে তাদের ঔষধ লেখার কারণে ডাক্তারদেরকে যে কমিশন দেওয়া হয়ে থাকে তা 'সাদ্দুর যারায়েব' বা  রুগীদেরকে ক্ষতি থেকে বাঁচানো এবং  ডাক্তারদেরকে অসৎ পথ অবলম্বন করা থেকে ফেরানোর জন্য হারাম বলা হয়েছে। ইসলামি ওয়েবে বিস্তারিত কারন সহকারে লেখা হয়েছে।
দেখুন,
وقد بينا العلة وهي أنه لو فتح هذا الباب لعم الفساد ولتنافست الشركات في اجتذاب الأطباء... والمتضرر من هذه المنافسة هو المريض أولاً وآخراً، فيتضرر بأن يوصف له دواء وغيره أفضل منه، ويتضرر كذلك بارتفاع ثمن الدواء، لأن ما يأخذه هؤلاء الأطباء يتحمله في النهاية المريض، ولو سلم طبيب من ذلك الغش وكان لا يصف الدواء إلا إذا كان أفضل من غيره ولمن يحتاجه فغيره لن يراعي ذلك، فيمنع الجميع سدا للذريعة، وأصل سد الذرائع الذي هو منع الأمر المباح في الأصل أو الظاهر لكونه يتوصل به إلى حرام أو يؤول إليه، إنما ينظر فيه إلى الغالب، فالله عز وجل منع سب آلهة المشركين لئلا يسبوا رب العالمين؛ وإن كان هذا قد يحصل من بعض ولا يحصل من غيره، قال تعالى: وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ {الأنعام:108
(ইসলামি ওয়েবঃ ১৯৮৩২৯ নং ফাতাওয়া )
নোটঃ কেউ যদি  আগে ভুল করে বা না জেনে এমন পথে অর্থ ইনকাম করে থাকে, তবে তার উচিত খালেস দিলে তাওবা করা এবং উক্ত মূল্য কত হতে পারে? অনুমান করে সেই পরিমান গরীবদেরকে দান করে দিবে।------------------- (আল্লাহু আ'লাম বিস সাওয়াব)
©