
15/06/2025
সতর্কতার বার্তা: স্ক্যাবিস যখন মহামারীর রূপ নেয়
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে স্ক্যাবিস রোগটি উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। এই সময়ে আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। তাই নিজেরা সতর্ক হই এবং অন্যদেরও সতর্ক করি। আপনার সন্তানের ত্বকে যদি চুলকানি বা স্ক্যাবিসের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে এই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং এর মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করুন।
স্ক্যাবিস: একটি সংক্রামক চর্মরোগ
স্ক্যাবিস (Scabies) হলো সারকোপ্টেস স্ক্যাবিআই (Sarcoptes Scabiei) নামক এক প্রকার ক্ষুদ্র পরজীবী মাইট (Mite) দ্বারা সৃষ্ট একটি তীব্র সংক্রামক চর্মরোগ। এর প্রধান উপসর্গ হলো অসহনীয় চুলকানি।
স্ক্যাবিসের ভয়াবহতা
১. চরম চুলকানি: স্ক্যাবিসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এর তীব্র চুলকানি, যা বিশেষত রাতে বৃদ্ধি পায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। অনেক শিশু চুলকাতে চুলকাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করে।
২. ত্বকে ফুসকুড়ি ও ক্ষত: চুলকানি এবং ঘর্ষণের ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, ঘা এবং সংক্রমণ হতে পারে। কখনো কখনো ত্বকের নিচে পুঁজও জমতে দেখা যায়।
৩. পরিবারে দ্রুত বিস্তার: এই রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে তার সংস্পর্শে আসা অন্য সদস্যরাও সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।
৪. দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা: যদি স্ক্যাবিসের সঠিক চিকিৎসা না হয়, তবে এটি ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, সেলুলাইটিস এমনকি শিশুদের ক্ষেত্রে কিডনি সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। তাই সময়মতো সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
৫. মানসিক অস্বস্তি: অতিরিক্ত চুলকানি ও শারীরিক অস্বস্তি শিশুর মনে চাপ এবং অস্থিরতা তৈরি করে।
স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায়
১. চিকিৎসা:
* পারমেথ্রিন - ৫% (Permethrin - 5%) ক্রিম: এটি স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর। শরীরের গলা থেকে পা পর্যন্ত এই ক্রিম ভালোভাবে লাগিয়ে ১০-১২ ঘণ্টা রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে হয়। এই নিয়মে সামান্য ভুল করলেও স্ক্যাবিস শরীর থেকে যাবে না এবং মাসাধিক কাল ধরে এর অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হতে পারে। শরীরের এক ইঞ্চি জায়গাও যেন বাদ না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। রাতে যদি ওয়াশরুমে যান এবং ওষুধ ধুয়ে যায়, তবে পুনরায় প্রয়োগ করুন। যদি প্রথমবারে নিরাময় না হয়, তবে ৭ দিন পর একই নিয়মে পুনরায় ব্যবহার করুন। ব্যবহারের পরদিন সকালে পরিধেয় পোশাক, বিছানার চাদর, বালিশের কভার—সবকিছু গরম পানিতে ৩০ মিনিট সিদ্ধ করে ধুয়ে ফেলুন। নিজেও গরম পানি ও বডি ওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে শরীর ঘষে গোসল করুন।
* অন্যান্য ক্রিম ও সলিউশন: আপনার শিশুকে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর পর তার পরামর্শ অনুযায়ী (Permethrin - 5% + Crotamiton) Combined Cream বা Monosulfuram - 25% Solutions ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
* আইভারমেকটিন (Ivermectin) ওষুধ: কিছু জটিল বা বারবার সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞ আপনার শিশুকে খাওয়ার আইভারমেকটিন ওষুধ দিতে পারেন।
* অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট/সিরাপ: চুলকানি কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কার্যকর। শিশুদের জন্য সিরাপ এবং বড়দের জন্য ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
* আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক, বিছানার চাদর, তোয়ালে গরম পানিতে ৩০ মিনিট ধরে সিদ্ধ করে ধুয়ে কড়া রোদে শুকাতে হবে।
* রোগ সৃষ্টিকারী মাইট ২-৩ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, তাই আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ৩ দিন পর্যন্ত অন্য সবার থেকে দূরে রাখতে হবে।
৩. একসাথে চিকিৎসা:
* পরিবারের সকল সদস্যের, এমনকি যাদের উপসর্গ নেই তাদেরও, একসাথে চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এটি রোগ নির্মূলে খুব সহায়ক।
৪. নিয়মিত হাত ধোয়া ও শরীর পরিষ্কার রাখা:
* বাইরে থেকে বাসায় ফিরে সবার আগে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। এতে পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়।
বিশেষ সতর্কতা
শিশুদের জন্য শিশু বিশেষজ্ঞ এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক, কারণ কিছু ঔষধ শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
স্ক্যাবিসকে সাধারণ রোগ ভাবা ভুল। এর ভয়াবহতা অনেক। তাই এ বিষয়ে সবসময় সচেতন থাকুন। যারা একবার আক্রান্ত হয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন, তারাও প্রতি মাসে একবার করে পরিবারের সবাই একসাথে পারমেথ্রিন ৫% ক্রিম ব্যবহার করুন এবং পরিধেয় পোশাক ও বিছানার চাদর গরম পানিতে ধুয়ে নিন।
ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন। সাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু জানতে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন আমাদের হেলথ চ্যানেল
https://youtube.com/?si=HVDcaZI4Kufaq5Oa
ডা মো আশরাফ উদ্দিন আহমেদ
সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন), জেরিয়াট্রিশিয়ান, প্যালিয়েটিভ কেয়ার স্পেশালিষ্ট
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল
Email: ashrafbirdem2022@gmail.com
ডা: মোঃ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ এম বি বি এস, এফ সি পি এস (মেডিসিন) ট্রেইনড ইন জেরিয়াট্রিক মেডিসিন (ইউ কে) মেডিসিন ও ডায়াবেট.....