26/08/2025
৩ বছরের শিশুর দুষ্টুমি আসলে তার স্বাভাবিক **মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের** একটি অংশ।
# # # সাইকোলজি যা বলে
1. **এরিকসনের মনোসামাজিক বিকাশ (Psychosocial development)**
* ২–৩ বছর বয়সে শিশু থাকে *Autonomy vs. Shame & Doubt* পর্যায়ে।
* সে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করতে চায়—যেমন জামা পরা, খেলনা নেওয়া, না মানা ইত্যাদি।
* বাবা–মা যদি সবসময় বকাঝকা করে, তবে শিশুর মনে লজ্জা, ভয় বা হীনমন্যতা তৈরি হতে পারে।
2. ** কগনিটিভ বিকাশ (Cognitive development)**
* শিশু থাকে *Preoperational stage* (২–৭ বছর)।
* কল্পনা বেশি কাজ করে, কারণ–ফলাফল পুরোপুরি বোঝে না।
* সে "না" বলা, নিজের ইচ্ছা জোর করে বসানো—এসব আচরণ তার চিন্তাশক্তির বিকাশেরই লক্ষণ।
3. **ব্যবহারিক মনোবিজ্ঞান (Behavioral psychology)**
* শিশুরা যেটাতে বেশি মনোযোগ পায়, সেটা বারবার করতে চায়।
* যদি দুষ্টুমি করে বেশি রিঅ্যাকশন পায় (চিৎকার, বকুনি, বা অতিরিক্ত মনোযোগ), তবে সেটা আরও বাড়তে পারে।
# # # দুষ্টুমি আসলে কী বোঝায়?
* শিশুর **কৌতূহল** বেড়েছে।
* সে **সীমা (boundaries)** টেস্ট করছে।
* নিজের **ইচ্ছাশক্তি (willpower)** প্রকাশ করছে।
* সঠিকভাবে গাইড না করলে এটা জেদে রূপ নিতে পারে।
# # # অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ
* সবসময় বকা না দিয়ে **ধৈর্য ধরে বোঝানো**।
* নিয়ম (rules) ছোট করে ও সহজভাবে শেখানো।
* ভালো কাজ করলে **পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট** দেওয়া (প্রশংসা, আলিঙ্গন, ছোট পুরস্কার)।
* দুষ্টুমিকে পুরোপুরি থামানোর চেষ্টা না করে, বরং **সঠিক দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া**।
* নিরাপদ সীমার মধ্যে শিশুকে **এক্সপ্লোর করতে দেওয়া**।
👉 তাই ৩ বছরের শিশুর দুষ্টুমি মানে “খারাপ” কিছু নয়, বরং তার **স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের** এক ধাপ।
ধরা যাক আপনার ৩ বছরের বাচ্চা বারবার খেলনা ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে।
🔹 **সাধারণ প্রতিক্রিয়া:**
বেশিরভাগ বাবা–মা তখন রেগে গিয়ে বলে – *“খেলনা ফেলা যাবে না, দুষ্টুমি করছো!”*
এতে শিশু হয়তো চুপ করবে, কিন্তু আবারও সেটা করবে, কারণ ও বুঝছে না কেন এটা ভুল।
🔹 **সাইকোলজি ভিত্তিক প্রতিক্রিয়া (প্র্যাকটিক্যাল উপায়):**
1. **মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়া:**
* আপনি বলতে পারেন – *“খেলনা ফেলার বদলে আমরা খেলনা গুছিয়ে রাখি দেখি কে আগে শেষ করতে পারে!”*
* এতে ওর শক্তি ও কৌতূহল সঠিক কাজে ব্যবহার হলো।
2. **ভালো আচরণে প্রশংসা:**
* যখন সে খেলনা গুছিয়ে রাখবে, তখন বলবেন – *“ওয়াও! তুমি কত সুন্দরভাবে খেলনা গুছিয়েছো, তুমি তো অনেক স্মার্ট!”*
* এতে সে বুঝবে, ভালো আচরণ করলে বেশি প্রশংসা পায়।
3. **নিয়ম শেখানো খেলার মাধ্যমে:**
* খেলনা ছোড়ার ইচ্ছে হলে তাকে বলুন – *“চলো বল বা সফট টয় বাস্কেটে ফেলি, দেখি কয়টা যায়!”*
* এতে দুষ্টুমির শক্তি খেলার মাধ্যমে রূপান্তরিত হলো।
৩ বছরের শিশু বুঝতে পারে না জিনিসের ভ্যালু, আবার আপনার রিঅ্যাকশন দেখে সে *attention* পায়। তাই মোবাইল ছুড়ে মারা = দুষ্টুমি + মনোযোগ চাওয়া + সীমা টেস্ট করা।
# # # তখন কী করবেন (Psychology ভিত্তিক কৌশল):
# # # # ❌ যা করবেন না
* চিৎকার, বকা, বা মারবেন না → এতে ভয় পেয়ে চুপ করবে ঠিকই, কিন্তু অভ্যাস যাবে না।
* সাথে সাথেই নতুন মোবাইল বা গেম দিয়ে শান্ত করা → এতে শিখবে “আমি ছুড়লেই নতুন কিছু পাই।”
# # # # ✅ যা করবেন
1. **শান্ত থাকুন (hard but must 😅)**
* রাগ না দেখিয়ে মোবাইল কনফিস্কেট করুন।
* গম্ভীরভাবে ছোট বাক্যে বলুন → *“মোবাইল ফেলা যাবে না, এতে ভেঙে যাবে।”*
2. **পরিণতি (Natural consequence) দেখান**
* যদি কভার খুলে যায় বা লাইট বন্ধ হয়ে যায়, তাকে দেখান: *“দেখো, ভেঙে গেলে আর কাজ করবে না।”*
* ৩ বছরের শিশু ভিজ্যুয়াল জিনিস দেখে ভালো শেখে।
3. **বিকল্প দিন**
* হাতের কাছে soft ball বা পুরোনো non-breakable খেলনা রাখুন।
* বলুন → *“ফেলতে চাইলে এটা ফেলো, মোবাইল নয়।”*
4. **রাগ সামলাতে শিখান (Emotion labeling)**
* যখন ছুড়ে মারবে, জিজ্ঞেস করুন → *“তুমি রেগে গিয়েছো? তাহলে বলো, ফেলো না।”*
* এতে ও শিখবে রাগ = কথা দিয়ে প্রকাশ করা, জিনিস ছোড়া নয়।
5. **ভালো আচরণে প্রশংসা**
* যদি ও পরে বলটা ফেলে, বা শান্তভাবে বলে, সাথে সাথে প্রশংসা করুন।
* *“ভালো হয়েছে! তুমি ঠিকভাবে করেছো।”*
---
👉 সংক্ষেপে:
**মোবাইল সরিয়ে ফেলুন + বিকল্প জিনিস দিন + আবেগ বোঝান + প্রশংসা করুন।**
ধৈর্য ধরলে ধীরে ধীরে ও শিখে যাবে।
#প্যারেন্টিং #সাইকোলজি #শিশুরবিকাশ
#শিশুর #পজিটিভথাকুন #ডাক্তার #সাইকিয়াট্রি #শিশুরযত্ন #শিশুরআচরণ #