28/07/2021
সেই ছোট বেলা থেকে খুব কমন একটা বিষয় দেখে আসছি।সবাই জীবনে কম বেশি এই বিষয়ের সাথে পরিচিত। তা হলো "কারো সাথে তুলনা করা"।আমাদের সমাজ ও পরিবার এ এটা খুব স্বভাবিক ভাবেই হয়ে আসছে।কিন্তু আসলেই কি এটা স্বাভাবিক??
একটা ছোট বাচ্চা যখন একটু বেশি চঞ্চল হয়, একটু বুঝতে শিখে তখন থেকেই আমরা শুরু করি তুলনা করে কথা বলা,যেমন ঃতুমি দুষ্টু, তুমি পঁচা, তোমার বোন অথবা ভাই ভালো। হয়তো মজার ছলেই বলা হয় কথাটা।হয়তো এটা ভেবে বলা হয় যদি সে দুষ্টুমি কমিয়ে দেয়।আবার যখন সে স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন সেখানেও তুলনা," তুমি স্কুলে যেতে চাওনা,কিন্তু দেখো তোমার বন্ধু স্কুলে যায়।তুমি পড়তে চাওনা,তোমার বন্ধুরা কত্তো ভালো রেজাল্ট করে।এরপর শুরু হয় তার জীবনের কঠিন সময়।সব জায়গায় তার বাবা মা,তার আত্নীয় স্বজন তুলনা করা শুরু করে দেয়।লেখাপড়া, খাওয়া দাওয়া,সখ,ঘরের কাজ সব বিষয়ে চলে তুমুল তুলনা করা। অভিভাবকেরা মনে করেন এটাই বুঝি সঠিক উপায়।তারা মনে করেন এভাবে তুলনা করলে বুঝি সন্তান সঠিক টি করবে।সন্তান ভুল করা বন্ধ করবে।আসলে যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে।কিন্তু আসলেই কি তাই?? একবার ভেবে দেখুন তো এই যে তুলনা করে করে তাকে জীবনে কতটা সাফল্য এনে দিতে পেরেছেন??তুলনা করতে করতে তার আত্নবিশ্বাস যে ধ্বংস করে দিয়েছেন তা কি বুঝতে পারছেন?? সে দিন দিন তার আত্নবিশ্বাস হারিয়েছে।সে দিন দিন আরো সংকটে ভুগেছে।সে দিন দিন তার প্রতিভা হারিয়েছে,হারিয়েছে আত্নমর্যাদা।তখন ছোট ছোট কাজ ও সে ভুল করছে।কারন সে বিশ্বাস করেই নিয়েছে তার দ্বারা কিছু হবে না।সে বিশ্বাস করে নিয়েছে সে অন্যের চাইতে অক্ষম।তার সারাক্ষণ এই বুঝি ভুল হলো এই বুঝি ভুল হলো চিন্তা তাকে কোন কাজ সঠিক ভাবে করতেই দেয়নি।সারাক্ষণ তার যোগ্যতা কে অন্যের সাথে তুলনা করায় সে নিজের কাছেও নিজে অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়।মৃত্যু হয় একটা প্রতিভার।
অথচ অভিভাবক রা মনে করেন এভাবে প্রতিনিয়ত তার ভুল গুলো অন্যের করা সঠিক কাজের সাথে তুলনা করলে সন্তান ঠিক হবে।মানুষ হবে।আরেকজনের টা দেখে যদি ভালো কিছু শিখে।কিন্তু সব মানুষ কি সমান হয়?? সবার মাঝেই কম বেশি মেধা আছে।কেও অল্পতেই তার প্রকাশ করতে পারে,কারো করতে হয় কঠিন পরিশ্রম। অথচ আমরা সেই পরিশ্রম এ সাহস না দিয়ে, অনুপ্রেরণা না দিয়ে তাকে দেই লাঞ্চনা।তাকে অনবরত ভুল ধরিয়ে দেই।বলে দেই তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না।
আপনার সন্তানের সত্যি ভালো যদি চেয়ে থাকেন তাহলে আজ ই এই তুলনা করা বাদ দিন।আজ থেকেই শুরু করুন তার প্রশংসা।আগে তার ভালো কাজের বাহবা দিন,এরপর ভুল গুলো বলুন।তাকে তার মতো করে বিচার করুন।প্রত্যেক টা মানুষ আলাদা,তাকে আলাদা মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করুন।তাকে আত্নবিশ্বাসী করে গরে তুলুন।তাকে মর্যাদা দিন,দেখবেন সে একদিন সত্যি সুন্দর কিছু করে ফেলেছে।
লামিয়া রশীদ
সাইকোলজিস্ট