Dr Bashar Vascular Surgeon

Dr Bashar Vascular Surgeon রক্তনালির রোগ অর্থাৎ 'ভাস্কুলার ডিজি?

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভাসকুলার সার্জারি সেমিনারগত মাসের ১৫ তারিখে আমন্ত্রিত হয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে গিয়েছিলাম চিকিৎস...
22/01/2025

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভাসকুলার সার্জারি সেমিনার

গত মাসের ১৫ তারিখে আমন্ত্রিত হয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে গিয়েছিলাম চিকিৎসকদের সঙ্গে রক্তনালির রোগ অর্থাৎ ভাসকুলার ডিজিজ সম্পর্কে মতবিনিময় করতে। রক্তনালির একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং রক্তনালি বিশেষজ্ঞদের সংগঠন বাংলাদেশ ভাস্কুলার সোসাইটির সভাপতি হিসেবে রক্তনালির রোগ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা আমার অন্যতম দায়িত্ব। সঙ্গতকারণেই আমাদের এই অবহিতকরণ প্রচেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য চিকিৎসকসমাজ। রক্তনালির রোগীরা একজন ভাসকুলার সার্জন খুঁজে পাবার অনেক আগে খুঁজে পান একজন সাধারণ চিকিৎসককে। আগেও কয়েকটি মেডিকেল কলেজে এ ধরনের আয়োজনে অংশ নিয়েছি। অধ্যাপক ডা আবুল কালাম আজাদের আমন্ত্রণে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের আয়োজনটির কথা আজও মনে পড়ে।

এবার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের আয়োজনটিও ছিলো অসাধারণ। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা মো সাদেক আলী ও সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা আব্দুস সালাম সাহেবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চমৎকার একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় যেখানে দুই শতাধিক চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। আমি ‘Vascular Surgery in Bangladesh Today: What to Expect’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করি। প্রায় ৩৫ মিনিট দীর্ঘ এই বক্তৃতা সবাই অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে শুনেছেন, বক্তৃতা শেষে প্রশ্ন করেছেন, আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। সেমিনারে আরো বক্তৃতা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ভাস্কুলার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা সাকলায়েন রাসেল, কোষাধ্যক্ষ ডা শামীম রেজাসহ আরো অনেকে। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে চলা এই সেমিনার থেকে কাউকে উঠে যেতে দেখিনি, সৌজন্য ও শৃঙ্খলার ব্যত্যয়ও কিছু ঘটেনি।

কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের মুহূর্ত থেকে বিদায় নেয়া পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে চমৎকার আতিথেয়তার নিদর্শন রেখেছেন অধ্যক্ষ সাদেক ভাইসহ সকল শিক্ষক ও চিকিৎসকবৃন্দ। আমার ঢাকা মেডিকেল কলেজের বন্ধু অধ্যাপক ডা সাকি মোহাম্মদ জাকিউল আলম (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ) দীর্ঘ ১১ বছর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে চাকরি করেছে। জাকি অধ্যক্ষ সাদেক সাহেবকে আমার কথা বলে রেখেছিলো। সাদেক ভাইও আমাদের সমসাময়িক। মানুষ হিসেবে এমন অমায়িক যে আমি বুঝলাম জাকির সুপারিশের প্রয়োজনই ছিলো না। কলেজের সামনে চমৎকার একটি বাগান। সবাই মিলে সেই বাগানের সাথে ছবি তুলে বিদায় নেবার পর থেকে চমৎকার অতিথিবৎসল এই মানুষগুলোর জন্য মনের জমিনে অন্যরকম একটা আর্দ্রতা বোধ করছি। উত্তর বঙ্গের মানুষদের ব্যাপারে আগে থেকেই উচ্চ ধারণা পোষণ করি। এরা অত্যন্ত সহজ সরল ও অতিথিপরায়ণ হয়ে থাকেন। দিনাজপুর আমার সেই ধারণাকে আরো অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছে।

ধন্যবাদ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ!
দিনাজপুর
ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪

সঠিক সময়ে রক্ত সরবরাহ ঠিক করার সঠিক ব্যবস্থা নেয়া গেলে এই অঙ্গহানি প্রতিরোধ করা যেতো।
08/10/2024

সঠিক সময়ে রক্ত সরবরাহ ঠিক করার সঠিক ব্যবস্থা নেয়া গেলে এই অঙ্গহানি প্রতিরোধ করা যেতো।

অক্টোবর ০১, ২০২৪ থেকে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি। পূর্বসূরি অ...
05/10/2024

অক্টোবর ০১, ২০২৪ থেকে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি। পূর্বসূরি অধ্যাপক ডা মো. ফিদাহ হোসেনের অবসরের পর আমার দায়িত্ব গ্রহনের ব্যাপারটি ছিলো স্বাভাবিক এক প্রক্রিয়া। খুব উচ্ছ্বসিত বোধ করছি এমন নয়, উচ্ছ্বসিত হবার মত কিছু ঘটেছে বলে মনেও করি না বরং মৃদু বিষন্নতার একটা অনুভূতি যেন টের পাচ্ছি। মনে হচ্ছে কেউ যেন বেলাশেষের গান গাইছে আমার কানে কানে।
কবি বলেন-
'বিন্দু বিন্দু করে জীবনের মোম গলে যায় পৃথিবীর গহবরে (Life melts drip by drip in the hollows of earth)'. মোম গলছে, মোমবাতিটি ছোট হয়ে আসছে, একসময় ফুরিয়ে যাবে। আলো বিতরণ করাই মোমবাতির কাজ। ফুরিয়ে যাবার আগে এই কাজ সে কতটুকু করে যেতে পারলো- আসল কথা সেটাই।

জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগটি এখন অনেক বড়। রোগীদের জন্য শতাধিক শয্যা এবং ১২ শয্যার নিজস্ব আইসিইউ সুবিধা সম্বলিত এই বিভাগটি দেশের মধ্যে সবচাইতে বড় তো বটেই এশিয়ার মধ্যেও অন্যতম বৃহৎ। এরপরও যখন প্রতিদিন বহির্বিভাগে রোগীর ভীড় ও ভর্তির জন্য অপেক্ষমান রোগীর লম্বা সারি দেখি, তখন বুঝি চাহিদার তুলনায় এ আয়োজনও অপ্রতুল। আরো বুঝি- দেশে রক্তনালির রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। সারা দেশ থেকে রক্তনালির রোগীদেরকে এখানে পাঠানো হয়। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ছাত্রজনতার চিকিৎসায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগ। নজিরবিহীন এক আয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে শতাধিক আহত ছাত্রজনতার চিকিৎসাসেবা প্রদান করে তাদের জীবন রক্ষা ও অঙ্গহানি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের রক্তনালির রোগ চিকিৎসার ইতিহাসে এ এক উজ্জ্বল মাইলফলক। কেউ হাততালি দেয়নি, হাততালির অপেক্ষায় রয়েছি এমনও নয়, স্রেফ মানবিকতা ও পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে সবাই মিলে সংকটের মোকাবিলা করেছি।

আমি বাংলাদেশ স্পেশ্যালাইজড হাসপাতালেও কাজ করি, তবে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালই আমার মূল কর্মক্ষেত্র। যতদিন সরকারি চাকুরিতে আছি ততদিন ব্যাপারটা এরকমই থাকবে। ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় আমরা বিশ্বের সাম্প্রতিকতম প্রযুক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আমাদের এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। আমাদের সম্পদ সীমিত কিন্তু স্বপ্ন সীমাহীন। জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান এবং বাংলাদেশ ভাস্কুলার সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দেশের রক্তনালি রোগীদের চিকিৎসাসেবার আধুনিকায়নে নেতৃত্ব দিতে চাই। সবার সহযোগিতা ও দোয়াপ্রার্থী।

ঢাকা
অক্টোবর ০৫, ২০২৪

My recent online talk at the 23rd annual congress of the Asian Society for Vascular Surgery.
07/11/2022

My recent online talk at the 23rd annual congress of the Asian Society for Vascular Surgery.

প্রসঙ্গ কেমোপোর্ট (Chemoport)ক্যান্সারের রোগীদেরকে শিরার মাধ্যমে কেমোথেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হয়। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রদা...
01/05/2022

প্রসঙ্গ কেমোপোর্ট (Chemoport)
ক্যান্সারের রোগীদেরকে শিরার মাধ্যমে কেমোথেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হয়। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রদাহের কারণে হাতের শিরাগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায় যা পরবর্তীতে অনেক ধরনের অসুবিধার কারণ হয়। কেমোথেরাপির জন্য হাতের শিরার অধিকতর সুবিধাজনক বিকল্প হিসেবে বুকের উপরের দিকে চামড়ার নিচে একটি 'পোর্ট' স্থাপন করা হয়। এই পোর্টের সাথে সংযুক্ত একটি নল চামড়ার নিচ দিয়ে ঘাড়ের মোটা শিরার (Jugular vein) মাধ্যমে হার্টে প্রবেশ করে। পোর্টের পর্দার ভেতরে স্যালাইনের (infusion) মাধ্যমে দেয়া ওষুধ এর সাথে সংযুক্ত নলের মাধ্যমে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে। উল্লেখ্য পোর্টটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। উন্নত বিশ্বে কেমোথেরাপির জন্য হাতের বা পায়ের শিরা নয়, কেমোপোর্ট ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও ভাস্কুলার সার্জনরা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনে কেমোপোর্ট স্থাপনের কাজ করে থাকেন।

রাইসার বয়স ৮। নেফ্রোটিক সিনড্রোম (Nephrotic Syndrome) নামের জটিল এক কিডনির রোগে ভুগছে সে। ৪/৫ দিন আগে তার ডান পা'টি হঠাৎ...
03/02/2022

রাইসার বয়স ৮। নেফ্রোটিক সিনড্রোম (Nephrotic Syndrome) নামের জটিল এক কিডনির রোগে ভুগছে সে। ৪/৫ দিন আগে তার ডান পা'টি হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে ব্যথা করতে শুরু করে। সমস্যাটি যে জমাট রক্ত (blood clot) দিয়ে হঠাৎ তৈরি হওয়া পায়ের ধমনীর ব্লক- সেটি উদঘাটন হতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলাফল ভয়াবহ। রাইসার ডান পা'টি হাটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দিতে হয়েছে। রোগের নাম Acute Limb Ischemia.

17/01/2022

রগ কী, রগের সমস্যা নিয়ে কোথায় যাবেন? রগ সম্পর্কে মৌলিক ধারণা- রগ সমাচার।

#হেলথ_টিভি ধন্যবাদ।

Abul Hasan Muhammad Bashar

04/11/2021

স্ট্রোক (Stroke) মস্তিষ্কের রোগ, হৃৎপিন্ডের নয়। মস্তিষ্কের ভেতরের রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হলে (Brain Hemorrhage) অথবা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ধমনী (Carotid Artery) বা এর কোন শাখা জমাট রক্তপিন্ড দিয়ে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে স্ট্রোক হয়। স্ট্রোক চিকিৎসায় স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞগণই মূল ভূমিকা পালন করে থাকেন, তবে ভাসকুলার সার্জনরাও স্ট্রোক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। স্ট্রোক সম্পর্কে মৌলিক ধারণা, এর প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়েছিলাম ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজিস্ট ডা. শহীদুল্লাহ সবুজের সাথে। উপলক্ষ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস- ২৯ শে অক্টোবর।
https://www.facebook.com/healthtv.press/videos/972597826938032/

রক্তনালি রোগের জরুরি চিকিৎসা সেবা (Vascular Emergency)গল্প:১।শরীরে গহনা ব্যবহারের শখ আছে নরসিংদীর গৃহবধূ কান্তার। সেদিন ...
21/10/2021

রক্তনালি রোগের জরুরি চিকিৎসা সেবা (Vascular Emergency)

গল্প:
১।
শরীরে গহনা ব্যবহারের শখ আছে নরসিংদীর গৃহবধূ কান্তার। সেদিন জরুরি কাজে বাইরে যেতে হয়েছিলো কান্তাকে। বাম হাতে সোনার চুরি ছিলো। ফেরার পথে রিক্সায় একটু অন্যমনষ্ক ছিলেন। হঠাৎ বাম হাতে একটা হ্যাচকা টান অনুভব করলেন, সেই সাথে কব্জির একটু উপরে তীব্র ব্যথা। রিক্সা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। মাথা তুলে দেখতে পেলেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। বাম কব্জি থেকে রক্ত ছুটছে তীব্র বেগে। চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন কান্তা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা গেলো তার বাম হাতটা কব্জির কাছ থেকে কেটে গিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সামান্য একটু চামড়া দিয়ে ঝুলছে। কান্তাকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ভাস্কুলার ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে আসতে প্রায় ৫ ঘন্টা সময় লেগে যায়। মাঝখানে পঙ্গু হাসপাতালে কব্জির দ্বিখন্ডিত হাড় জোড়া লাগাতে হয়েছে। হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা দেখতে পান কান্তার হাতে রক্ত সরবরাহকারি দু'টো রক্তনালিই সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দ্রুত রক্তনালি মেরামতের মাধ্যমে হাত টিকিয়ে রাখার কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হলেন ভাস্কুলার সার্জনরা।

২।
মিসেস সালেহা খানম অ্যাজমা রোগী। শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এক পর্যায়ে করোনা টেস্টে পজিটিভ হলেন। করোনার চিকিৎসা চলতে চলতেই একদিন হঠাৎ বাম পায়ে তীব্র ব্যথা অনুভব করলেন। মনে হলো কেউ যেন ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করেছে। না, আঘাতের কোন চিহ্ন দেখা গেলো না, কিন্তু তিনি খেয়াল করলেন পা'টা খুব ঠান্ডা হয়ে গেছে। গরম তেল দিয়ে হাত মালিশ করলেন, মোজা পরে কম্বলের তলায় পা ঢুকিয়ে রাখলেন, কিন্তুু কিছুতে কিছু হলো না, ব্যথা বেড়েই চললো। পরদিন ভাস্কুলার ডপ্লার পরীক্ষায় ধরা পড়লো বাম পায়ে রক্ত সরবরাহকারি মূল ধমনীটি কুচকির কাছ থেকে অর্থাৎ প্রায় গোড়া থেকে জমাট রক্ত দিয়ে বন্ধ। ততক্ষণে পায়ের নাড়াচাড়ার ক্ষমতা ও বোধশক্তি প্রায় পুরোপুরি লোপ পেয়েছে, পা কালো হয়ে যেতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপারেশনের মাধ্যমে জমাট রক্ত বের করে ধমনী চালু করলেন ভাস্কুলার সার্জনরা।

৩।
হৃদরোগ হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে থাকা শিহাবকে দেখে মনে হয় না সে অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট। হবেই বা কী করে? পড়াশোনা জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে এখন তার এক পৃথিবীর দূরত্ব। মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলো শিহাব। শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নিতো সে। বারবার সুঁচের খোঁচায় এক পর্যায়ে কুচকির কাছের বড় ধমনীটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হওয়াতে হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে আসা হয় তাকে। শিহাবের ছোট ভাইও মাদকাসক্ত ছিলো। মাদকের সুচের আঘাতে তারও ডান কুচ্কির কাছের ফিমোরাল ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। সময়মতো মেরামত না হওয়াতে পা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো তার, হাটুর উপর থেকে কেটে বাদ দিতে হয় সেই পা। মাত্র ২৫ বছর বয়সে পঙ্গুত্ব বরণ করে ছেলেটি। শিহাব ভাগ্যবান। তার রক্তনালি মেরামতের জরুরি অপারেশনটি সফল হয়েছিলো।

কান্তা, সালেহা, শিহাবদের গল্পগুলো সত্যি। কেবল স্থানকালপাত্রের এদিক ওদিক। ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার ইমার্জেন্সি বিভাগে প্রতিদিন এরকম বহু কান্তা, সালেহা, মুরাদদের সমাগম ঘটে থাকে। অল্প একটু জায়গা- মাঝে মাঝে রোগী, রোগীর মা বাবা, আত্মীয় স্বজনদের ভীড়ে সেখানে পা ফেলার জায়গা থাকে না।

ভাস্কুলার ইমার্জেন্সি কী?
মানবদেহের রক্ত চলাচলের রাস্তা তথা ধমনী ও শিরার সমস্যা নিয়ে কাজ করে ভাস্কুলার সার্জারি। এটি এমন একটি বিষয় যেখানে রক্তনালির রোগের নিয়মিত চিকিৎসার পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা সেবার আবশ্যকীয়তা রয়েছে। 'ভাস্কুলার ইমার্জেন্সি' জীবন ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রক্ষাকারী একটি সেবা। কখন প্রয়োজন হতে পারে এই সেবা- উপরের গল্পগুলোতে সে সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়া হয়েছে। তবে এগুলো ছাড়াও আরো অনেক কারণে রক্তনালির জরুরি সেবা প্রয়োজন হয়। সড়ক দুর্ঘটনা বা সহিংসতায় হাড্ডি মাংসের ক্ষতির সাথে ধমনী ও শিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ধমনী ও শিরার মারাত্মক ক্ষতি জীবন ও অঙ্গহানির কারণ হয়ে থাকে। কখনো বা জমাট রক্ত দিয়ে রক্তনালি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। হার্টের ভাল্বের সমস্যা বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এর অন্যতম কারণ। করোনা সংক্রমণের কারণেও রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না গেলে এসব ক্ষেত্রে অঙ্গহানি অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। আর এসবই ভাস্কুলার ইমার্জেন্সি বা রক্তনালির জরুরি চিকিৎসা সেবার আওতাভুক্ত।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে রক্তনালির জরুরি সেবা:
ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালকে অনেকে কেবলই হার্ট অর্থাৎ হৃৎপিন্ডের রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র বলে ধারণা করে থাকেন। ধারণাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। এখানে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের হৃদরোগ চিকিৎসার পাশাপাশি মানবদেহের রক্ত চলাচল সংক্রান্ত সমস্যার চিকিৎসার জন্য রয়েছে ’ভাস্কুলার সার্জারি’ নামে আলাদা বিভাগ, স্বতন্ত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা। যদিও হার্ট ও রক্তনালিকে বৃহত্তর কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমের দুই অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চিন্তা করবার ভেতরে কোন ভুল নেই, তবু চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়নের স্বার্থে উন্নত বিশ্বের আদলে এদেরকে আলাদা বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বলা বাহুল্য, দেশের বৃহত্তম রক্তনালি চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালেই বিদ্যমান। এখানে রক্তনালি রোগের সব ধরনের আধুুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল দিনরাত ২৪ ঘন্টা রক্তনালির জরুরি চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। করোনা মহামারির ভেতরেও এখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে রক্তনালির জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে।
গত বছর মার্চ থেকে এ বছর জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত এখানে প্রায় দুুই হাজার ইমার্জেন্সি ভাস্কুলার সার্জারি অর্থাৎ রক্তনালির জরুরি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালির রোগী যেমন ছিলো, তেমনি ছিলো সহিংসতার কারণে রক্তনালি ছিঁড়ে কেটে যাওয়া রোগী। লক ডাউনের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালি রোগীর সংখ্যা কমলেও সহিংসতায় রক্তনালি নষ্ট হয়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা কমেনি। এছাড়াও ছিলো শিরায় মাদক ব্যবহাকারী রোগী, ডায়ালাইসিসের ফিস্টুলা ফেটে যাওয়া রোগী, অন্য কোন চিকিৎসায় ব্যবহৃত ক্ষতিগ্রস্ত রক্তনালির রোগী। আবার করোনা ভাইরাসের কারণে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে রক্তনালি বন্ধ হয়ে হয়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যাও কম নয়। রক্তনালির জরুরি সেবার ফলাফলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হলো 'সময়'। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েক ঘন্টার মধ্যে রক্তনালী মেরামত করে রক্ত সঞ্চালন ঠিক করা না গেলে অঙ্গহানি এড়ানো সম্ভব হয় না। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোগীকে ইমার্জেন্সি ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগে নিয়ে আসতে পারা না পারার উপরে চিকিৎসার ফলাফল বহুলাংশে নির্ভর করে। আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে রক্তনালির এ ধরনের রোগীরা ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগ পর্যন্ত আসতে অনেক বেশি সময় নিয়ে থাকেন। লক ডাউনের দিনগুলোতে সময় লেগেছে আরো বেশি। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে করোনাকালে রক্তনালির জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে অঙ্গহানির হার করোনাপূর্ব সময়ের চাইতে কিছুটা বেশি।
চলমান মহামারিতে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের এক চতুর্থাংশ চিকিৎসক করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। এই বিভাগে কর্মরত সেবিকা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীগণের মধ্যে সংক্রমণের হার আরো বেশি। এতদসত্ত্বেও করোনাকালে এই বিভাগে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়নি। কোভিডকালে রক্তনালির জরুরি চিকিৎসা সেবার রূপরেখা নিয়ে গাইডলাইন তৈরি করে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করেছেন এই বিভাগের চিকিৎসকগণ। এই রূপরেখায় রক্তনালির জরুরি সেবাকে রোগ ও অবস্থার গুরুত্ব অনুযায়ী পাঁচটি স্তরে বিন্যস্ত করে প্রতিটির জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের সীমিত সম্পদ ও লোকবলকে বিবেচনায় নিয়ে তৈরি এই রূপরেখা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেডিকেল সংস্থার করোনাকালের নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

দেশে রক্তনালির রোগ চিকিৎসা ব্যবস্থার বর্তমান চিত্র:
দেশে রক্তনালির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। রাজধানীর বাইরে রক্তনালি চিকিৎসা সেবা প্রায় নেই বললেই চলে। সরকারি পর্যায়ে কেবল চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নামমাত্র এই সেবা চালু আছে। তবে সেখানেও জরুরি সেবা অর্থাৎ ভাস্কুলার ইমার্জেন্সির কোন ব্যবস্থা নেই। ঢাকাতে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি কিছু হাসপাতাল রক্তনালির নিয়মিত ও জরুরি চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের মত একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠির জন্য এটি একেবারেই যথেষ্ট নয়। মূলত ইমার্জেন্সি ভাস্কুলার রোগীদের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় এসে চিকিৎসা নেবার বাধ্যবাধকতাটাই অঙ্গহানি ও প্রাণহানির অন্যতম প্রধান কারণ। এতে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, ইমার্জেন্সি রক্তনালি রোগীদের জন্য যা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও ভাস্কুলার সার্জারি এদেশের চিকিৎসা সেবার একটি দ্রুত বিকাশমান শাখা। একটু একটু করে হলেও সাধারন জনগনের মধ্যে রক্তনালির রোগ বা ’ভাস্কুলার ডিজিজে’র ব্যপারে সচেতনতা বাড়ছে। সরকারের তরফ থেকেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ এই শাখার বিকাশে দৃশ্যমান উদ্যোগ রয়েছে। ’ভার্টিকাল এক্সটেনশনে’র মাধ্যমে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের কলেবর বৃদ্ধির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বলা বাহুল্য, এতে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের মত ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগও উপকৃত হবে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এ ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে জনগনের মধ্যে রক্তনালি রোগের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। অন্যথায় রক্তনালির ক্ষতি অঙ্গহানি ও প্রাণহানির কারণ হতেই থাকবে। এক্ষেত্রে এই ক্ষতির সবচাইতে বড় শিকার যুব সমাজ- একটি পরিবার, সমাজ ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য যা এক অশনি সংকেত।

শেষ কথা:
করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা সেবার ধরনে পরিবর্তন এসেছে। মহামারি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে জরুরি চিকিৎসা সেবাকে প্রাধান্য দেয়া, চিকিৎসক ও সেবিকাসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ও জরুরি নয় এমন সেবা সীমিতকরণ পরিবর্তিত এই সেবার মূলনীতি। এর আলোকে ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগও তাদের তৈরি নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী সেবা দিয়ে আসছে। গত বছরের শেষের দিকে এদেশে মহামারির প্রকোপ কমে আসলে এই বিভাগে জরুরি সেবার পাশাপাশি স্বাভাবিক কর্মকান্ড শুরু করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর বাংলাদেশ করোনা মহামারির ’তৃতীয় ঢেউ বা থার্ড ওয়েভ’ও মোকাবিলা করেছে। তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু- দু’টোই বেড়েছিলো যা এখন নিয়ন্ত্রণে। ভাসকুুলার সার্জারি বিভাগ এখন রক্তনালির জরুরি সেবাসহ অন্যান্য সেবাসমূহ আবারও পুরোপুরি শুরু করেছে। হৃদরোগ হাসপাতালের ভাস্কুলার ইমার্জেন্সি’ বিভাগটিতে বিছানা সংখ্যা মাত্র ৮ টি। এলাকাটি যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। লোকবলও সীমিত। এখানে কর্মরত সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করে এই সেবা অব্যাহত রাখতে হলে রোগীর স্বজন ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে ।

ডা. আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার
সহযোগী অধ্যাপক (ভাস্কুলার সার্জারি)
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
কনসালট্যান্ট ভাস্কুলার সার্জন
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা।
ই-মেইল: ahmbashar@gmail.com

Address

Bangladesh Specialized Hospital, 21, Mirpur Road, Shaymoli
Dhaka

Opening Hours

Monday 16:00 - 21:00
Tuesday 16:00 - 21:00
Wednesday 16:00 - 21:00
Saturday 16:00 - 21:00
Sunday 16:15 - 21:00

Telephone

+8809666700100

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dr Bashar Vascular Surgeon posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Dr Bashar Vascular Surgeon:

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram

Category