22/08/2022                                                                            
                                    
                                                                            
                                            চিকিৎসকের সঠিক সেবা পেতে কী করবেন - কী করবেন না?
পরামর্শ ১ঃ 
আপনি কি নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসক এর পরামর্শ চাচ্ছেন না সন্তোষজনক চিকিৎসা চাচ্ছেন তা আগে ঠিক করে নিন। নির্দিষ্ট চিকিৎসক হলে তার সাথে যোগাযোগ করুন। তা না হলে, ছোটখাটো জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা বা কয়েক দিনের রোগের জন্য এমবিবিএস চিকিৎসকদের দেখান, তারাই যথেষ্ট। অযথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রোগীর চাপ বাড়াবেন না। প্রয়োজনে এমবিবিএস চিকিৎসকরাই আপনাকে সঠিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাবেন। নইলে এমনও হতে পারে আপনি অযথা বেশি সময় ও অর্থের অপচয় করছেন। চিকিৎসার যে কোন বিষয়ে পরামর্শ চিকিৎসক ব্যাতিত অন্য কারো কাছ হতে নিলে আপনি নিশ্চিত ভাবে কোন না কোন আর্থিক ক্ষতি বা ভূল চিকিৎসার স্বীকার হবেন।
পরামর্শ ২ঃ 
পছন্দের বিশেষজ্ঞ সম্পর্কে আগেই খোঁজ নিয়ে যাবেন। উনি খুব ব্যস্ত কিনা সেটাও জেনে যাবেন। তিনি আপনাকে বেশি সময় দিতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি মেনে নিয়ে তার চিকিৎসায় আস্থা রাখুন। সময় পেলাম না বলে মন খারাপ করবেন না, আপনার দরকার সুস্থতা। আর বেশি সময় চাইলে কম ব্যাস্ত চিকিৎসক এর কাছে যান। তিনি আপনাকে সব কিছু সময় নিয়ে বুঝিয়ে বলবেন। মনে রাখবেন চিকিৎসক এর চেম্বারে বেশি রোগী মানেই সে ভালো চিকিৎসক তা নাও হতে পারে। বেশি রোগি হবার অনেক অসত উপায়ও কিছু হাসপাতাল বা চিকিৎসক অবলম্বন করতে পারে।
পরামর্শ ৩ঃ 
আপনার রোগীর সিরিয়াল এগোবার জন্য বচসা করবেন না। মনে রাখবেন বিনয়ী ব্যক্তি সর্বত্র আদরণীয়। রোগীর বেশি কষ্টে থাকলে চিকিৎসক এর সাহায্যকারীকে অনুরোধ করতে পারেন বা চিকিৎসক বরাবর একটি ছোট চিঠি পাঠিয়ে দিন "স্যার, আমার রোগীটির অবস্থা মুমূর্ষু, আপনার সহৃদয় সহযোগিতা কামনা করছি"। অন্য কোন সমস্যায় না থাকলে এবং আপনার রোগী অন্য সকল রোগীর চেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকলে তিনি অবশ্যই ডেকে নেবেন। অনুরোধ গ্রহণ না করলে বুঝবেন তিনি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ রোগীর সেবা দিচ্ছেন। অতএব ধৈর্য ধরুন। আর সবসময় মনে রাখবেন আপনি যেমন আপনার রোগীর কষ্টের কথা চিন্তা করে আগে দেখাতে চাচ্ছেন, তেমনি অপেক্ষমান অন্য সকল রোগীই কোন না কোন পারিবারিক বা অন্য সমস্যা নিয়েই অপেক্ষা করছেন।
পরামর্শ ৪ঃ 
সুন্দর করে নিজের কথাগুলো গুছিয়ে দুই মিনিটে বলার চেষ্টা করুন। এতে থাকবে আপনার কি কি কষ্ট, সবচেয়ে বেশি কোনটি, কতদিন ধরে? সব এক বাক্যে বলার চেষ্টা করুন। আপনার আগের কোনো পুরাতন রোগ আছে কিনা যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, যক্ষা বা হাপানি ইত্যাদির শুধু নাম ও কি ঔষধ খান তা বলুন। মনে রাখবেন চিকিৎসক কিছু জানতে চাইলে সংক্ষেপে তা বলতে পারলে আপনার চিকিৎসা ভালো হবে। যদি মনে করেন চিকিৎসক এর কাছে গিয়ে ছোট হতে বড়, গুরুত্বপূর্ণ এর সাথে সামান্য সমস্যা, মাথায় ব্যাথার কথা বলতে গিয়ে মাঝে মাঝে শরীরে চুলকানী হয়, বা মাঝে মাঝে পায়খানা কঠিন হয় জাতীয় কথা বলেন, তখন চিকিৎসকের কাছে আপনার প্রধান সমস্যা কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং প্রকৃত চিকিৎসা বিঘ্নিত হতে পারে।
পরামর্শ ৫ঃ 
প্রয়োজনীয় কথা বলুন। কোনো পুরাতন ঘটনা বা কবে কোন চিকিৎসক দেখিয়েছেন, কোন দেশ সফর করেছেন, এসব টেনে আনবেন না। অপ্রয়োজনীয় কথা বললে প্রকৃত কথা বলার সময় নাও পেতে পারেন। চিকিৎসক জানতে চাইলে কোন তথ্য গোপন করবেন না, তথ্য গোপন করা আপনার জন্য বিপদের কারন হতে পারে।
পরামর্শ ৬ঃ 
অতি চঞ্চল প্রকৃতির শিশু, ভারসাম্যহীন বয়স্ক ব্যক্তি, মদ্যপ, অপ্রকৃতস্থ, বেশি কথা বলা বা ভদ্রতা জ্ঞানের অভাব আছে এরকম মানুষদের রোগীর সাথে নিলে চিকিৎসা সহ পৃথিবীর যে কোনো সেবার মান পড়ে যায়। রোগীর সংগী নির্বাচনে সতর্ক থাকুন।
পরামর্শ ৭ঃ 
খুব জরুরি না হলে চিকিৎসক এর কক্ষে রোগীর সাথে একজন নিকটজন প্রবেশ করুন। অপ্রয়োজনীয় লোক এবং অতিরিক্ত লোকের সাথে চিকিৎসক এর কথা বলতে হলে স্বাভাবিক ভাবে রোগীর প্রতি মনোযোগ বিনষ্ট হয়। ফলে চিকিৎসার মান কমে যায়। চিকিৎসক জিজ্ঞেস না করলে আগ বাড়িয়ে কোন কথা বলবেন না, বিশেষ করে রোগী কথা বলতে পারলে রোগির স্বজনরা কথা বলবেন না। এতে চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
পরামর্শ ৮ঃ 
নারী রোগী অবশ্যই স্বামী বা নারী সঙ্গী নিয়ে যাবেন। তা নাহলে চিকিৎসক আপনাকে দেখতে বাধ্য নন। এটা মেডিকেল এথিক্সের অংশ। শিশু রোগীর সাথে মায়ের যাওয়াটাই শ্রেয়।
পরামর্শ ৯ঃ 
চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসকের বদনাম করবেন না। আপনার দূরসম্পর্কের আত্মীয় যে একজন ডাক্তার , এসব তথ্য চিকিৎসকদের চরম অপছন্দ। আপনার পরিবারের কেউ চিকিৎসক হলে অবশ্যই পরিচয় দিতে পারেন। তবে গিয়েই কাউকে ফোনে ধরিয়ে দেয়া বা বলা নিন কথা বলুন একটি চরম অভদ্রতা। আগে তার অনুমতি নিন। জানুন, কথা বলতে তার কোনো আপত্তি আছে কিনা? চিকিৎসক এর ব্যাক্তিগত বা পারিবারিক বিষয়ে কথা না তোলাই ভালো। এতে চিকিৎসক এর সময়ের অপচয় হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে বিরক্তির কারন হতে পারে।
পরামর্শ ১০ঃ 
সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ বা ক্ষমতাবান বোঝানোর জন্য কোন পরিচয় প্রদান করা হতে বিরত থাকুন, এতে চিকিৎসকরা বিরক্ত হন, অনেকক্ষেত্রে রোগীকে আদর্শ চিকিৎসা দিতে গিয়ে দ্বিধান্বিত হন। রোগী প্রকৃত চিকিৎসা হতে বঞ্চিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
পরামর্শ ১১ঃ 
যতবার চিকিৎসক এর কাছে যাবেন, দেখুক আর নাই দেখুক, সকল পুরাতন কাগজপত্রগুলো নিয়ে যাবেন। ফলোআপের সময়েও সঙ্গে নেবেন। এক্স-রে/এমআরআই/সিটিস্ক্যানের ফিল্মও নিয়ে যাবেন। সবচেয়ে নতুন প্রেসক্রিপশন ও পরীক্ষার কাগজ ওপরে রেখে তারিখ অনুসারে সাজিয়ে ফাইল করে আনুন, দ্রুত ভালো সেবা পাবেন।
পরামর্শ ১২ঃ 
আপনার কি হয়েছে, সম্ভাব্য কারণ, পরিণতি কি, সারতে কেমন সময় লাগতে পারে, ব্যয় কেমন হতে পারে, এসব জানতে চাওয়া আপনার অধিকার। তবে সব মিলিয়ে দু-তিন মিনিট সময় নিন। অধিক সময় নেয়াটা পেছনের মুমূর্ষু রোগীদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে।
পরামর্শ ১৩ঃ 
যেভাবে ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশন করা, সে নিয়মে ওষুধ সেবন করুন। নিয়ম নিষেধগুলো কঠোরভাবে মেনে চলুন। কারণ চিকিৎসক যা জানেন, সব আপনি জানেন না। ফার্মেসীর ব্যবসায়ী বা অন্য কারো কথা শুনে কিছু বদলাবেন না। যে কোনো সন্দেহ বা ওষুধসংক্রান্ত সমস্যায় চিকিৎসককেই জানান, অন্য কাউকে নয়।
পরামর্শ ১৪ঃ 
চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র / প্রেসক্রিপশনে দাগানো, নষ্ট করা বা হারানো বিরক্তির কারণ হতে পারে। এগুলো যত্ন করে রাখুন, দুই যুগ পরেও এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। 
পরামর্শ ১৫ঃ 
পৃথিবীর কোন সেবাই বিনামূল্যে নয়। পরামর্শ ফি/ ভিজিট দেবার মানসিকতা নিয়েই চেম্বারে যান। এটা চিকিৎসকের অধিকার। তার অধিকার না দিয়ে নিজের সুস্থতার চিন্তা করাটা অন্যায় ও  শিশুসুলভ। উদাহারন হিসেবে, চিকিৎসক আপনার দোকানে গেলে যদি তাকে বিনামূল্যে বাজার দিতে রাজি থাকেন তবেই তার কাছ হতে বিনামূল্যে সেবা আশা করুন।
পরামর্শ ১৬ঃ 
পরামর্শ ফি (ভিজিট) নিয়ে দরকষাকষি করবেন না। আপনার আর্থিক সমস্যা থাকলে সরাসরি চিকিৎসককে বলুন। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হলে চিকিৎসক এর নির্ধারিত ফি প্রদান করাই ভদ্রতা। গরীব বা অসহায় রোগীদের জন্য বেশির ভাগ চিকিৎসক অত্যন্ত সুবিবেচক। তবে কোন চিকিৎসক ফি কমাতে না চাইলেও তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করুন, কারণ চিকিৎসা ফি তার অধিকার। তিনিই ঠিক করবেন, কার জন্য তার অধিকার ছাড়বেন, কাকে ছাড়বেন না? ভিজিট দেয়াকে নিজের জন্য সম্মানহানিকর ভাববেন না বরং এটা আপনার সম্মান বাড়ায়।
পরামর্শ ১৭ঃ 
একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবার পর, তার ব্যাবস্থাপত্র অন্য চিকিৎসককে দিয়ে ঠিক আছে কিনা জানতে চাওয়া দুজন চিকিৎসকের জন্যই বিব্রতকর এবং এতে দুজনই বিরক্ত হন। পৃথিবীর সব ব্যক্তি তার নিজস্ব মতামত দেবেন। যদি আস্থাই না থাকে, তবে তার পরামর্শ নেবেন কেন? আর আস্থা থাকলে সেটাকে নষ্ট করবেন কেন?
পরামর্শ ১৮ঃ 
কোনো চিকিৎসকই জেনেশুনে ভুল চিকিৎসা দেন না। এমনকি  শত্রু এলেও উল্টো চিকিৎসা দেন না। সুস্থতার বিষয়টির মালিকও তিনি নন। তিনি কোনো জাদুকর বা ভগবান নন। উনি তার অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে রোগ নির্ণয় ও তদনুসারে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন। অতএব আস্থা রাখুন, ধৈর্য রাখুন। ঘন ঘন ডাক্তার বদলাবেন না।
পরামর্শ ১৯ঃ 
চিকিৎসা নেয়া সমাপ্ত হলে একটি চমৎকার সমাপনী বাক্য বা একটি হাসি দিন। থ্যাঙ্কস মেসেজ দিন। হতে পারে; আপনি ছিলেন ওই দিনের মনে দাগ কেটে যাওয়া সেরা রোগী। আপনাদের ছোট ছোট এপ্রিসিয়েশন তাকে আরও চমৎকার করে তুলবে। শুধু ব্যবস্থাপত্র বা চিকিৎসা নেয়ার আশা করবেন না। চিকিৎসকের দোয়াও নিন। মনে রাখবেন, আপনার সুস্থতার বিষয়টি অবশ্যই তার দোয়ার সঙ্গেও সম্পর্কিত।
পরামর্শ ২০ঃ
চিকিৎসা নেয়ার পূর্বে নামের শেষে অবশ্যই এমবিবিএস বা বিডিএস (ডেন্টাল) দেখে চিকিৎসা নিন।
ডাঃ মোঃ রেজাউল করিম রেজা 
এমবিবিএস, এমডি, বিসিএস 
।।।কিয়দাংশ মেডিভয়েস হতে পরিমার্জিত।।।