13/09/2025
'গরীবের ডাক্তার' নামে খ্যাত 'করোনা শহীদ' ডাক্তার মঈন উদ্দীন ভাইয়ের ইন্তিকালের ৫ বছর অতিবাহিত হল। যে সময়ে 'ফার্ষ্ট ডিভিশন' পাওয়া সোনার হরিণ ছিল,সে সময় তিনি এসএসসি ও এইচএসসিতে 'বাঁ হাতে লিখে' ফার্ষ্ট ডিভিশন পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের এই কৃতি সন্তান ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্য ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সভাপতি ছিলেন।কর্মজীবনে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।অত্যন্ত সাধাসিধে জীবনের অধিকারী ডাক্তার মঈন উদ্দীন খুব অল্প সময়েই সিলেটের একজন নামকরা 'মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ' ডাক্তার হিসাবে পিরিচিতি লাভ করেন। তিনি ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেটে চেম্বার করতেন।একান্ত প্রয়োজন না হলে রোগীর 'টেষ্টের' জন্য লিখতেন না।
ডা.মঈন ভাইর সাথে সাক্ষাৎ হলেই জিজ্ঞেস করতেন-"আফনারার সংগঠনর খরব কিতা?"
জোটের পার্টনারদের লুটপাট ও দূর্ণীতির কারণে জোটের রাজনীতিকে খুবই অপছন্দ করতেন।জনশক্তির মান অবনতির জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন।এলাকার সংগঠনের খবর জানার চেষ্টা করতেন।জোটের রাজনীতির বিষয়ে সিলেটের অন্য ডাক্তার ভাইদেরও তখন আপত্তি দেখেছি।হয়তো উনাদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হত।
মঈন ভাই সত্যিই একজন মানবিক ডাক্তার ছিলেন।আমার বড় ছেলেকে নিয়ে একবার অন্য ডাক্তারকে দেখানোর জন্য সিলেট ইবনে সিনাতে গিয়েছি।ইচ্ছে করেই ডা.মঈন ভাইকে দেখাতে চাইনি। কারণ তিনি মনে করতে পারেন হয়তো ফ্রিতে দেখানোর জন্য তাঁর কাছে গিয়েছি।হঠাৎ নীচ তলায় উনার সাথে দেখা হয়ে গেলে জিজ্ঞেস করেন,কেন এসেছি।
বললাম,ছেলেকে ডাক্তার দেখাব।
সমস্যা কি জানতে চাইলেন।
সমস্যা জেনে বললেন,আধা ঘন্টা পর আমি চেম্বারে যাব ছেলেকে নিয়ে আসেন।
যথা সময়ে চেম্বারের সামনে গিয়ে পরিচিত এটেনডেন্টের কছে বললাম-ডাক্তার সাবের সাথে কথা হয়েছে আমাকে ভিতরে যাবার একটু সুযোগ দিবেন।এ কথা বলে এটেনডেন্টের কাছে নির্ধারিত ফী জমা দিতে চাইলে তিনি বললেন,স্যারকে জিজ্ঞেস না করে আপনার কাছ থেকে টাকা নিতে পরবনা।আমি বললাম- ফ্রি দেখানোর জন্য উনার কাছে আসিনি,ভাল ডাক্তার হিসাবে এসেছি,আপনি ফী জমা নিন।তিনি একটু বিব্রত ভাবে টাকা রাখলেন।ছেলেকে দেখিয়ে বের হবার আগেই ডাক্তারসাব কলিং বেল টিপে এটেনডেন্টকে জিজ্ঞেস করলেন,"তুমি মখছুছ ভাইর গেছ থাকি টেখাটুকা লইছনি? অগুইন ফিরত দিও।"
আমি আপত্তি করলে বললেন,"যাইন"।
আরেকবার খুব বড় সমস্যায় আমার শ্বশুড়কে ইবনে সিনায় ভর্তি করেছি।ডা.মঈন ভাই অন্য কেবিনে 'রাউন্ড' দিতে গিয়ে আমার সাথে দেখা হলে বললেন,"কোনু রোগীনি?"
বললাম,আমার শ্বশুড় ভর্তি।
কত নাম্বার কেবিনে ভর্তি আছেন জানতে চেয়ে বললেন,"ঠিকাছে আমি দেইখ্যা যাইমু।"
পরে তিনি এসে দেখে পরামর্শ দিয়ে স্টাফকে বললেন,"এই! আমার বিল লেইক্কনা।"
যাবার সময় বললেন,"অবস্থা যানাইন যে!"
একবার আমার 'সামান্য' একটি শারিরীক সমস্য দেখা দিলে স্থানীয় ফার্মেসী ও 'লেকাল ডাক্তার' থেকে ঔষধ খেয়ে উপশম না হওয়ায় ডা.মঈন ভাইয়ের কাছে গেলাম।এই 'মামুলী' বিষয়ে চিকিৎসা দেয়া তাঁর পক্ষে কোন বিষয়ই না মনে করে তাঁর কাছে গেলে তিনি ইবনে সিনার একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।বিষয়টি আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগল।কিন্ত পরবর্তীতে আরো ৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে আমার এই 'সমান্য' শারিরীক সমস্যা থেকে ১ বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ করে মুক্তি পেতে হয়েছিল।হাতুড়ে ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ ডাকারের তফাৎ তখন ভাল ভাবে বুঝেছিলাম।একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়েও তিনি কেন বিভাগীয় ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছিলেন তখন অনুধাবন করেছিলাম।
ডা.মঈন ভাই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এলে তাঁর বাড়িতে যাবার জন্য দাওয়াত দিতেন।তাঁর ছাত্র ও কর্মজীবনে এমন দাওয়াতে কয়েকবার তিনির বাড়িতে গিয়েছি।এই সময় এলাকার লোকেরা লাইন ধরে তাঁদের 'এলাকার ডাক্তারের' কাছ থেকে ফ্রি চিকিৎসা নিতেন।রোগীদের সামাল দিতে চেম্বারের এটেনডেন্টও বাড়িতে হাজির হতেন।
তাঁর ইন্তিকালের পর আর কখনও উনার বাড়িতে 'ঈদে বেড়াতে' যাওয়া হয়নি,ফ্রি চিকিৎসা নিতে রোগীরাও আর বাড়িতে ভীড় করেননি!
আল্লাহ প্রিয় ডা.মঈন উদ্দীন ভাইকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন এবং তাঁর প্রিয় স্ত্রী-সন্তানকে হেফাজতে রাখুন।
# #-কপি পোস্ট