29/09/2022                                                                            
                                    
                                                                            
                                            স্তন টিউমার ও স্তন ক্যান্সার এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা:- 
[SCHD কোর্স এর সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত ]
মহিলাদের স্তন টিউমার (ব্রেস্ট টিউমার) হওয়া বর্তমানে সচারাচর একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান অনেক নারী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কোন কারণে কোষের বিভাজন ও ধ্বংসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত হলে টিউমার বা অর্বুদ তৈরি হয়।
ব্রেস্ট বা স্তনে টিউমার হলে মহিলারা প্রথমেই মনে করেন বোধহয় স্তনে ক্যানসার হয়েছে। কোন লাম্প বা ফোলা তৈরি হওয়া মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয়।
♦ অর্বুদ বা টিউমারের প্রকারভেদ :
=====================
ব্রেস্ট বা স্তনে দু’ধরনের টিউমার হয়। অবশ্য শরীরের যেকোনো জায়ঘাতেই এই দু’ধরনের টিউমার হয়। একটা হল বিনাইন টিউমার যা নন ক্যান্সার টিউমার এবং অন্যটা হল ম্যালিগ্যান্ট বা ক্যান্সার টিউমার।
বিনাইন টিউমার যেকোন বয়সেই হতে পারে। অর্থাৎ সাত বছর থেকে সত্তর বছর যেকোনো বয়সেই দেখা যেতে পারে। ম্যালিগ্যান্ট টিউমার বিদেশে সাধরণত চল্লিশ-পয়তাল্লিশে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ত্রিশ বছর বয়সেও খুব অল্প সংখ্যায় দেখা যায়।
♦ বিনাইন টিউমার :
বিনাইন টিউমার সম্বন্ধে বলতে গেলে খুব পরিচিত যে টিউমারটি দেখা যায় তা হল ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা। যেটা কিন্তু পনেরো বছর বয়স থেকে আঠারো থেকে তেইশ চব্বিশ বছরের মেয়েদের দেখা যায়। শক্ত চাকার মতো, এক জায়ঘায় ধরলে অন্য জায়গায় সরে যায়। এই টিউমারটার আসলে গঠনগত ক্রটি দেখা যায় এবং সম্পূর্ণ বিনাইন। এই টিউমার থেকে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না। আর যেহেতু এই টিউমারগুলো থেকে ক্যানসার হবার সম্ভাবনা নেই, মূলত টিউমারগুলোকে অপারেশন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ১০০ ভাগ ভালো হয়,  টিউমার অপারেশন করলে তা স্থানিক ভাব মাত্র দূর হলেও প্রকৃত রোগটি শরীরে রয়েই যায় অন্য কোন ঔষধেও এই টিউমারগুলো সারে না। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর পরে নতুন করে কোনো ফাইব্রয়েড অ্যাডিনোমা তৈরি হয় না।
♦ সিস্ট কাকে বলে :
===========
আর এক ধরনের লাম্প হচ্ছে সিস্ট। সিস্ট জিনিসটা হল একটা জলভরা থলি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যেরকম লোকের চুল পাকে তেমনি ব্রেস্টে কিংবা কিডনিতে সিস্ট আসবে, কিছু কিছু কোষ মরে যাবে, সেই জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যাবে। একটু জল ভরে যাবে জায়গাটা। সেটাকেই সিস্ট বলে। আর এই সিস্টগুলো থেকে কখনোই ক্যানসার হয় না। তবে কিছু কিছু ক্যানসার আছে যারা সিস্ট নিয়ে বয়ে বেড়ায়। একশোটা সিস্টের মধ্যে নিরাসব্বইটাই কিন্তু বিনাইন বা নন ক্যানসারাস দেখা যায়। যদি কারো সিফিলিটিক, সাইকোসিস,  টিউবারকুলার মায়াজমেটিক ডায়াথিসিস তৈরি হয় তবেই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাচ্চাদের দুধ খাওয়াতে গিয়ে অনকে সময় স্তনে দুধ জমে যায়। ঠিকমতো দুধটা না বেরোনোর জন্য রয়ে গেল। সেটাও একটা সিস্ট। পার্থক্য হল একটা সিস্টে দুধ আছে, অন্য সিস্টে জল রয়েছে। কিন্তু দুধটা জমে থাকার দরুন আদৌ কোনো অসুবিধা হয় না। তাহলে সিস্টের মতো চাকা বা সিস্ট নিয়ে যদি কেউ আসে সেখানে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাধ্যমেই আরোগ্য সম্ভব এক্ষেত্রেও অপারেশনের দরকার পড়ে না। কোন কোন সময় প্রয়োজন বোধে আলট্রাসোনোগ্রাফি করে সিস্ট নির্ধারণ হয়ে গেলে ক্লিনিকেই নিডল সিরিঞ্জের সাহায্যে একটু বার করে দিলেই দুধ কিংবা জল যাই হোক সমস্যা মিটে যাবে। পাশা পাশি হোমিও চিকিৎসা নিতে হবে। এটা করলেই পুরোপুরি নিরাময়।
ব্রেস্ট ক্যানসার :
==========
ব্রেস্ট ক্যানসার সম্বন্ধে বলতে গেলে প্রথমেই বলব ‘ব্রেস্ট ক্যানসার’ সেরে যায়। ব্রেস্ট ক্যানসার একটা মাল্টি সিস্টেমিক ডিজিজ। শুধু ব্রেস্ট ছাড়া অন্যান্য অঙ্গেরও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সেই কারণে ব্রেস্ট ক্যানাসরের চিকিৎসা করাতে  মিলিত প্রয়াসে সুসম্পন্ন হয় কারণ রোগীর আস্থা, স্বজনদের সহযোগিতা ও কাউন্সেলরেরও প্রয়োজন। এভাবে একটা টিম তৈরি হয়। যাদের মিলিত প্রচেষ্ট থাকে রোগীকে সমস্ত রকম উদ্বেগ ও চিন্তা থেকে মুক্ত রাখা।
♦ লক্ষণ :
১। ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণে রোগীরা সাধারণত লাম্প, নিপল ভিতরে ঢুকে যাওয়া, বুকে চাকা বা গাঁট/ শক্ত কিছু অনুভব করেন। অনক সময়স্তনবৃন্ত থেকে লাল রঙের রস বা রক্ত বের হয়।
২। কমবেশি সব মহিলাদের স্তনেই লাম্প থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি ক্যানসারাস ও কয়েকটি নন-ক্যানসারাস। এই ব্রেস্ট লাম্পগুলি অনেক সময় আন্ডারআর্ম বা কলার বোনের তলাতেও দেখা যায়। এছাড়া স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে যেগুলি টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না। 
৩। কোনও রকম র্যাশ নেই স্তনে, তবু ইচিং বা চুলকানির মতো অনুভূতি হচ্ছে, এমন কিছু কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ। অনেক সময় এর সঙ্গে নিপ্ল থেকে হালকা হালকা রস নিঃসৃত হয়, স্তনের ত্বকেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। তাই চুলকানির মতো কিছু হলে নিজে থেকে কোনও ক্রিম বা লোশন লাগানো উচিৎ নয়। 
৪। স্তনে টিউমার থাকলে তা আশপাশের ব্রেস্ট টিস্যুগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ফলে স্তনে একটা ফোলা ফোলা ভাব দেখা যায়। এরই সঙ্গে স্তনে লাল ভাবও থাকে। স্তনে হাত দিলে বা চাপ দিলে ব্যথাও লাগে।
৫। কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথাও ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে কারণ এই ক্যানসার স্তন থেকে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরের এই অংশগুলিতে। এই সমস্ত জায়গায় ব্যথা হলে সাধারণের পক্ষে জানা সম্ভব নয় তা মাস্ল পেইন নাকি ক্যানসারের কারণে ঘটছে। তাই পরীক্ষা করে নেওয়াই ভাল। 
৬। স্তনের আকার এবং সাইজ পরিবর্তনও এই ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। সচরাচর এই বিষয়টি স্বামী চোখেই বেশি পড়ে। 
৭। স্তনে লাম্প সব সময় বড় আকারের হয় না। ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো লাম্পও দেখা যায় স্তনবৃন্তের আশপাশে। অন্তর্বাস পরে থাকার সময় যদি ঘর্ষণ অনুভব করে। বিছানায় শোওয়ার সময় যদি ব্যথা লাগে। 
৭। ব্রেস্টফিডিং করছেন না অথচ স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প দুধের মতো জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হয়। এটি ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম বড় লক্ষণ। অনেক সময় স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত পড়তেও দেখা যায়।
৯। স্তনবৃন্ত হল স্তনের অসম্ভব সংবেদনশীল অংশ। যদি দেখা যায় যে স্তনবৃন্ত স্পর্শ করলেও তেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে না বা একেবারেই অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছে তবে তা ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। স্তনবৃন্তের ত্বকের তলায় ছোট ছোট টিউমার তৈরি হলেই এমনটা হয়। 
১০। স্তনবৃন্ত চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের শেপ অসমান হয়ে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ, বিশেষ করে যদি ব্রেস্টফিডিং না চলাকালীন অবস্থাতেও এই বিষয়গুলি চোখে পড়ে সামান্য সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিৎ।
১১। স্তনের উপরের ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, অনেকটা কমলালেবুর খোসার মতো, ক্যানসারের প্রাথমিক স্টেজের লক্ষণ। 
♦ স্তন টিউমার (Brest Tumour) এর কারণ : 
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় Brest Tumour বা Cancer এর কারণ হিসেবে মায়াজমকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাইকোসিস ও টিউবারকুলোসিস মায়াজম ও সক্রিয় থাকতে পারে। এছাড়া পারিবারিক বা বংশগত ইতিহাসে কারও ক্যান্সার হয়ে থাকলে ওই মায়াজমটি Brest Cancer-এর ঝুঁকিটা আরও বাড়িয়ে দেয়।
ডিজিটাল বিজ্ঞান এখনো স্তনের টিউমার বা ক্যান্সার জাতীয় টিউমারের কারণ খুঁজে বের করতে পারেনি। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা Brest Tumour-এর কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন। যেমন: 
১। কোন আঘাতজনিত কারণে স্তনের Tissue বা কোষ নষ্ট হয়ে গেলে।
২। অনেক বেশি বয়সে প্রথমে গর্ভধারণ। 
৩। বাচ্চাকে যদি স্তনের দুধ পান করানো না হয়। 
৪। যেসব পরিবারে ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের ইতিহাস পাওয়া যায়। 
৫। ইস্টোজেন ও প্রজেস্টোরেন হরমোনের আনুপাতিক বৈষম্য তেজষ্ক্রিয় আয়নের প্রভাবের কারণে। 
৬। মাসিক হচ্ছে একটি বড় কারণ।
৭। কম বয়সে মাসিক হওয়া এবং বেশি বয়সে বন্ধ হয়। 
৮। এছাড়া রেডিয়েশনের প্রভাবেও টিউমার ও ক্যান্সার হতে পারে।
♦ স্তন টিউমার / প্রদাহ / ক্যান্সার রোগ নির্ণয় পরীক্ষার নামঃ
স্তনের প্রদাহ ( Mastitis ) -রোগ নির্ণয় পরীক্ষার নামঃ  
A ) Haematological Test- এর অন্তর্গত পরীক্ষাসমূহঃ 
i ) Blood R / E ( TC , DC , ESR ) : 
 # WBC -এর মোট সংখ্যাধিক্য বৃদ্ধি পাবে ।  # DC of WBC -এর নিউট্রোফিল বৃদ্ধি পাবে । 
 # ESR -বৃদ্ধি পাবে । 
B ) Microbiological Test- এর অন্তর্গত পরীক্ষাসমূহঃ 
i ) Masto Swab Gram Stain & C / S. এই পরীক্ষার মাধ্যমে স্টাফাইলোকক্কাস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কি না তা সনাক্ত করা যাবে । 
 # স্তনে যদি ক্যান্সার আক্রান্ত হয় তাহলে যে পরীক্ষা করতে হবে 
A ) Histopathological Test -এর অন্তর্গত পরীক্ষাসমূহঃ
 i ) FNAC পরীক্ষা ।
♦ টিউমার, স্তন টিউমার (Breast Tumor) & ক্যান্সার (Cancer) বিষয়ে হোমিওপ্যাথি :
==========================
ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সুফল হোমিওপ্যাথি গবেষক ও চিকিৎসক ডা. বার্নেট তাঁর ক্লিনিক্যাল গবেষণায় লক্ষ্য করেন যে, একটি বা দুটি হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবহারে প্রায়ই টিউমার এবং ক্যান্সার সারানো যায় না। কারণ টিউমার/ক্যান্সারের পেছনে সাধারণত অনেকগুলো কারণ (Link) থাকে । আর একেকটি কারণ দূর করতে একেক ধরনের ঔষধের প্রয়োজন হয়। তিনি পিত্তপাথর থেকে কোলেস্টেরিনাম (Cholesterinum) নামক একটি ঔষধ আবিষ্কার করেন যা দিয়ে অনেক লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার তিনি নির্মুল করেছেন। হোমিওপ্যাথিতে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যর্থতার একটি মুল কারণ হলো রোগীর জীবনীশক্তিহীনতা বা মারাত্মক শারীরিক দুর্বলতা (low vitality) ।
অধিকাংশ রোগী কবিরাজি এবং এলোপ্যাথিক চিকিৎসা করে শরীরের বারোটা বাজিয়ে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, তখন আসে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে। অবাক লাগে যখন দেখা যায়, লোকেরা স্তন টিউমার এবং স্তন ক্যান্সারের মতো সহজ রোগে অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অথচ অকল্পনীয় শক্তিশালী হোমিওপ্যাথি ঔষধের কাছে স্তন টিউমার এবং স্তন ক্যান্সার একেবারে সহজ রোগ। (যদি রোগী চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে) 
স্তন টিউমার সম্পর্কে হোমিওপ্যাথি গবেষক ও চিকিৎসক ডা. বার্নেট একটি মজার গল্প লিখে গেছেন। এক মহিলার স্তনে ক্যান্সার হলে বার্নেট প্রায় দেড় বৎসর হোমিওপ্যাথি ঔষধ খাইয়ে বিনা অপারেশনে সেটি সারিয়ে দেন। কিছুদিন পর সেই মহিলা তার এক বান্ধবীকে ডা. বার্নেটের কাছে নিয়ে আসেন, যার ডান স্তনে একটি টিউমার হয়েছে। ভদ্র মহিলা ডা. বার্নেটকে জিজ্ঞেস করলেন, “এটি নিরাময় করতে আপনার কত দিন লাগবে?”। বার্নেট বললেন, “দুই বৎসর”। ভদ্র মহিলা বললেন, “তাহলে আমি অপারেশন করাকেই ভালো মনে করি। কেননা তাতে মাত্র পনের দিন লাগে”। তারপর সে অপারেশন করাল এবং অপারেশনের ছয় মাস পরে তার বাম স্তনে আবার টিউমার দেখা দিল। বাম স্তনে টিউমার আবার অপারেশন করে ফেলে দেওয়ার ছয়মাস পরে তার জরায়ুতে ক্যান্সার দেখা দেয়। জরায়ুতে অপারেশনের কিছুদিন পর সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। এভাবে দুই বছর ঔষধ খাওয়া যার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়েছিল, তিন তিনটি অপারেশনের ধাক্কায় দেড় বছরের মধ্যে সে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিল। হায়! নির্বোধ মানুষেরা সব বিষয়ে কেবল শর্টকার্ট রাস্তা খোঁজে, কিন্তু তারা বুঝতে চায় না যে, শর্টকার্ট রাস্তা প্রায় সবক্ষেত্রেই মানুষের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে।
হোমিওপ্যাথিকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা বিজ্ঞান (holistic healing science) অথবা মনো-দৈহিক গঠনগত (Constitutional medicine) চিকিৎসা বিজ্ঞান। অর্থাৎ এতে কেবল রোগকে টার্গেট করে চিকিৎসা করা হয় না বরং সাথে সাথে রোগীকেও টার্গেট করে চিকিৎসা করা হয়। রোগীর শারীরিক এবং মানসিক গঠনে কি কি ত্রুটি আছে (congenital defect), সেগুলোকে একজন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক খুঁজে বের করে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করেন। রোগটা কি জানার পাশাপাশি তিনি রোগীর মন-মানসিকতা কেমন, রোগীর আবেগ-অনুভূতি কেমন, রোগীর পছন্দ-অপছন্দ কেমন, রোগী কি কি জিনিসকে ভয় পায়, কি ধরণের স্বপ্ন দেখে, ঘাম কেমন, ঘুম কেমন, পায়খানা-প্রস্রাব কেমন, কি পেশায় নিয়োজিত আছে, কি কি রোগ সাধারণত তার বেশী বেশী হয়, অতীতে কি কি রোগ হয়েছিল, বংশে কি কি রোগ বেশী দেখা যায়, রোগীর মনের ওপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি জেনে রোগীর ব্যক্তিত্ব (individuality) বুঝার চেষ্টা করেন এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করেন। এই কারণে হোমিওপ্যাথিক ঔষধে এমন রোগও সেরে যায়,  #যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কল্পনাও করা যায় না। একজন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক রোগীর শারীরিক কষ্টের চাইতে বেশী গুরুত্ব দেন রোগীর মানসিক অবস্থাকে। কেননা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, অধিকাংশ জটিল রোগের সূচনা হয় মানসিক আঘাত (mental shock) কিংবা মানসিক অস্থিরতা/উৎকন্ঠা/দুঃশ্চিনতা (anxiety) থেকে। মোটকথা অধিকাংশ মারাত্মক রোগের প্রথম শুরুটা হয় মনে এবং পরে তা ধীরে ধীরে শরীরে প্রকাশ পায়। এজন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলতেন যে, মনই হলো গিয়ে আসল মানুষটা (mind is the man)। তাছাড়া পৃথিবীতে হোমিওপ্যাথি ঔষধই একমাত্র ঔষধ যাকে মানুষের শরীর এবং মনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করা হয়েছে। পক্ষান্তরে দুনিয়ার অন্য সমসত্ম ঔষধই আবিষ্কার করা হয় ইঁদুর-খরগোশ-গিনপিগ ইত্যাদি পশুদের শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এই কারণে হোমিওপ্যাথি ঔষধ মানুষের শরীর ও মনকে যতটা বুঝতে পারে, অন্য কোন ঔষধের পক্ষেই তা সম্ভব নয়।
টিউমার এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় আমাদের সকলেরই উচিত প্রথমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অবলম্বন করা। কেননা, কেমোথেরাপি, অপারেশন, রেডিয়েশন ইত্যাদি শতকরা নিরানব্বই ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যুকে দ্রুত ডেকে আনে। হোমিওপ্যাথিতে টিউমার/ক্যান্সার চিকিৎসার আরেকটি বিরাট সুবিধা হলো এতে শতকরা নিরানব্বই ভাগ ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল, কষ্টদায়ক এবং ক্ষতিকারক কোন প্যাথলজিক্যাল টেস্টের দরকার হয় না। (যেমন-বায়োপসি, মেমোগ্রাফী, এক্স-রে, সিটি ষ্ক্যান (CT scan), এমআরআই (MRI) ইত্যাদি)। কেননা হোমিওপ্যাথিতে ঔষধ দেওয়া হয় রোগীর শারীরিক গঠন এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। যারা ইতিমধ্যে কেমোথেরাপি, অপারেশন, রেডিয়েশান ইত্যাদি অপচিকিৎসা নিয়ে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গেছেন, তাদেরও কাল বিলম্ব না করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। ইহার মাধ্যমে তারা ঐসব কুচিকিৎসার কুফল থেকে মুক্ত হয়ে আবারও রোগমুক্ত সুস্থ-সুন্দর জীবনধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হবেন। যেহেতু আমাদের দেশে মেধাসম্পন্ন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে, তারপরও হোমিওপ্যাথি আরোও আয়ত্ব করে হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রেসক্রাইব করা এবং হোমিওপ্যাথদের জন্য সরকারি সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করা, এবং সরকারের উচিত আমাদেরকে মানব সেবার সুযোগ বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করা। কেননা হোমিওপ্যাথি ঔষধ একই সাথে রোগের জন্যও ভালো এবং রোগীর চিকিৎসা ব্যয়ও কমিয়ে দেয় অনেক। এমনকি যে-সব ক্ষেত্রে ক্যান্সার সারা শরীরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে রোগীকে বাচাঁনো কোন মতেই সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রোগীর যাবতীয় অমানুষিক কষ্টসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখার চিকিৎসাতেও (palliative treatment) হোমিওপ্যাথি ঔষধ অন্য যে-কোন ঔষধের চাইতে সেরা প্রমাণিত হয়ে থাকে। তাই যে-সব সেবামুলক সংস্থা মানুষকে ক্যান্সারের চিকিৎসা সেবা প্রদানরত আছে, তারা ইচ্ছে করলে ক্যানসারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একই পয়সায় আরো অনেক বেশী মানুষকে প্রকৃত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারেন। 
♦ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা : 
===================
রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আধুনিক ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ও কষ্টকর থেরাপি ছাড়াই সুস্থতা লাভ করা সম্ভব এবং রোগীর লক্ষণগুলো সংগ্রহ করে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে পারলে তাহলে ব্রেস্ট টিউমার ও জরায়ু টিউমার ব্যাধিতে হোমিওপ্যাথিতে সফল চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
♦ অর্বুদ Tumour এ ব্যাবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ:-
===================
আমরা সকলেই জানি ব্যারাইটা কার্ব টিউমার বা অর্বুদের একটি উত্তম ঔষধ। চর্বিযুক্ত অর্বুদে ইহার প্রয়োগে অব্যর্থ ফল পাওয়া যায়। স্তন ছাড়াও গ্রীবা প্রদেশে কর্ণের পশ্চাতের অর্বুদের ইহা খুব ফলপ্রদ ঔষধ। অর্বুদ খুব শক্ত প্রকারের হয়না , রবারের ন্যায় নরম এবং স্থিতিস্থাপক। ক্রম ২০০ ও ১০০০ শক্তি ।
 
 ক্যালকেরিয়া কার্ব: ফাইব্রাস টিউমারের একটি মূল্যবান ঔষধ। লক্ষণ অনুযায়ী স্তন টিউমারসহ জরায়ু এবং যকৃতের টিউমারে ইহা প্রয়োগ করে আমি অনেকগুলি রোগীকে আরোগ্য করতে সক্ষম হয়েছি । ইহা প্রয়োগ করার পূর্বে রোগীর ধাতুগত ( Constitutional ) লক্ষপের উপর গুরুত্ব দিতে হবে । চর্বিযুক্ত অর্বুদেও ইহা বিশেষ ফলপ্রদ। হাত-পা ঠাণ্ডা থাকে এবং তার পায়ে এবং মাথায় প্রচুর ঘাম হয়। রোগী ডিম খেতে ভালোবাসে। ক্রম ২০০ ও ১০০০ শক্তি ।
 
কার্বোএনামেলিস : এর স্তন টিউমারের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ। এর টিউমার পাথরের ন্যায় শক্ত। পুঁজ উৎপাদন হয় না। কখন কখন ব্যথা বর্তমান থাকে। তবে জরায়ুর শক্ত টিউমারের ইহার প্রয়োগে অব্যর্থ ফল পাওয়া যায় । কখন কখন বেদনা থাকে আবার অনেক সময় বেদনা থাকে না। ঔষধটি টিউমার ও ক্যান্সারে অধিক ব্যাবহৃত হয়। ক্রম ৩০ ও ২০০ শক্তি। 
 
কনিয়াম ম্যাকুলেটাম: রেপাটরীতে স্তনের টিউমার এর ঔষধ হিসাবে এটাকে প্রথম শ্রেণির ধরা হয়েছে। আঘাতজনিত এবং পাকস্থলী এবং স্তনের অর্বুদের ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ। অর্বুদ খুব শক্ত প্রকারের হয় এবং ভারী বোধ করে। গ্রন্থি ফুলে ভীষণ শক্ত হয়। জরায়ু এবং স্তনের এবং অণ্ডকোষের অর্বুদেও ইহা বিশেষ ফলপ্রদ ঊষধ । মনে রাখতে হবে কুনিয়ামের অর্বুদ পাথরের মত শক্ত হয়। 
গ্রাফাইটিস: ইহাও  স্তন টিউমার/অর্বুদের একটি মূল্যবান ঔষয় । গ্রীবা নিম্নোদরে ইত্যাদি স্থানে ইহার প্রয়োগে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় । চমরোগ বর্তমান থাকে তবে ইহা অব্যর্থ ঔষধ । মনে রাখতে হবে ফাইটোলক্কার মড গ্র্যাফাইটিসও স্তনের অর্বুদের একটি মহৌষধ। অস্ত্রক্রিয়ার পর ক্ষত চিহ্ন একিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় উচ্চ স্থানে প্রদাহ হলে গ্র্যাফাইটিস প্রয়োগে অব্যর্থ 
সাইলিসিয়া : ফোঁড়া কিংবা প্রদাহের পর অর্বুদের মত শক্ত হলে ইহার প্রয়োগে উপকার হয় । ইহার প্রয়োগে শক্ত ভাব দূরীভূত হয় । চর্বিযুক্ত অর্বুদেও ইহা বিশেষ উপকারী ঔষধ । ক্রম ৩০ , ২০০ শক্তি । 
ফটোইটোলক্কা: ঔষধটি স্তন টিউমার এর প্রধান ঔষধ বলা যায়। এটি স্তন অর্বুদের একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ । ইহার প্রয়োগে আমি অনেকগুলি স্তনের টিউমার সারাতে সক্ষম হয়েছি । স্তন এবং স্তনগ্রন্থির উপর ইহার কার্য্য অব্যর্থ । গ্রন্থিগুলি শক্ত হয়ে পাথরের মত শক্ত হয় ।  ক্রম ২০০ , ১০০০ শক্তি ।
হাইড্রাসটিস : স্তন ক্যান্সার সহ জরায়ুর ফাইব্রোমার অতি মূল্যবান ঔষধ বেদনা সকল সময় বর্তমান থাকে নাম ৬ , ৩০ , ২০০ শক্তি । 
 
ল্যাকেসিস : বাম স্তন সহ ওভেরিয়ান টিউমারের ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ । বামদিকে আরম্ভ হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয় । পুঁজ সঞ্চার অনেক সমান হয় । হিপার সালফার এবং মাকুরিয়াসের প্রয়োগের পর রোগী খুব দুর্বল হয়ে পড়লে ল্যাকেসিস প্রয়োগে উপকার দর্শে । ক্রম ২০০ ও ১০০০ শক্তি । এছাড়াও রেপাটরীতে আরো অনেক ঔষধ রয়েছে। ডাক্তার এর পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খাওয়া যাবে না।
লেখক:- 
ডা. এম আল মামুন। 
ডিএইচএমএস, ঢাকা। 
ভাইসপ্রিন্সিপাল: বেঙ্গল হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (প্র.), গাজীপুর। 
প্রতিষ্ঠাতা সদস্যঃ- আঃয় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ঢাকা। 
চেম্বার: দেশ হোমিও কমপ্লেক্স ঢাকা ইপিজেড সংলগ্ন আশুলিয়া ঢাকা। 
বেঙ্গল হোমিও কমপ্লেক্স। 
সুলতান মার্কেট, কাশিমপুর গাজীপুর। 
০১৮৬৬ ৫৫৫ ৮৮৮