17/07/2025
ডিভাইস আসক্তি: শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ও ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি
বর্তমান যুগ প্রযুক্তিনির্ভর। স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদি এখন ঘরের প্রতিটি কোণে জায়গা করে নিয়েছে। অনেক সময় এসব ডিভাইস হয়ে উঠছে শিশুদের চুপ করানোর সহজ উপায়। কিন্তু এই সহজ সমাধানটি শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ও ডিভাইস নির্ভরতা শিশুদের মধ্যে ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ডিভাইস আসক্তি কীভাবে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে?
শিশুদের স্বাভাবিক শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য বাস্তবিক অভিজ্ঞতা, পারস্পরিক যোগাযোগ, খেলাধুলা, গল্প বলা, ও পরিবারিক সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ডিভাইসে আসক্ত শিশু এসব কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে নিচের প্রভাবগুলো লক্ষ্য করা যায়:
• ভাষা বিকাশে বিলম্ব: শিশু যখন মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শোনে ও অনুকরণ করে, তখন তার ভাষা শেখার গতি বাড়ে। কিন্তু স্ক্রিনে কথা শোনা একমুখী যোগাযোগ তৈরি করে যা ভাষার বিকাশে বাধা দেয়।
• সামাজিক দক্ষতার ঘাটতি: ডিভাইস আসক্ত শিশু বাস্তব সমাজে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে অনিচ্ছুক হয়ে পড়ে। এটি পরবর্তীতে আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে।
• সেন্সরি সমস্যা ও মনোযোগের অভাব: অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুদের মস্তিষ্কে অতিরিক্ত উদ্দীপনা তৈরি করে, যা মনোযোগের ঘাটতি ও অতিসক্রিয়তা (Hyperactivity) তৈরি করতে পারে।
ডিভাইস আসক্তি ও ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারের সম্পর্ক:
- গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু দিনে ২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইমে অভ্যস্ত, তাদের মধ্যে ASD, ADHD এবং Developmental Delay এর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
- ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগেরি’র গবেষণায় বলা হয়, ২ বছর বয়সে যারা দিনে ১ ঘন্টার বেশি স্ক্রিন ব্যবহার করে, তাদের ৩ বছর বয়সে আচরণগত সমস্যার ঝুঁকি ৭০% বেশি।
- বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে শহরাঞ্চলের শিশুরা অধিকাংশ সময় ঘরে থাকে এবং নিরাপদ খেলার জায়গার অভাব রয়েছে, ফলে তারা আরও বেশি ডিভাইস নির্ভর হয়ে পড়ে।
অভিভাবকের ভূমিকা ও করণীয়:
শিশুদের ডিভাইস আসক্তি থেকে রক্ষা করতে হলে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। কিছু করণীয়:
• স্ক্রিন টাইম সীমিত করা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য দিনে ১ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম নয়।
• বিকল্প কার্যক্রম প্রদান: বই পড়া, ছবি আঁকা, গান শেখা, গল্প বলা কিংবা আউটডোর খেলার মতো কার্যক্রমে শিশুকে যুক্ত করা।
• পরিবারিক সময়: প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় সন্তানদের সঙ্গে কথা বলা, খেলা করা এবং আবেগ ভাগ করে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
• নিজেরা উদাহরণ হওয়া: বাবা-মা নিজেরাও যেন অতিরিক্ত মোবাইল বা টিভি ব্যবহার না করেন।
উপসংহার
প্রযুক্তি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা নয়, প্রয়োজন সঠিক ভারসাম্য। শিশুদের বিকাশের পথে ডিভাইস যেন সঙ্গী হয় সহায়ক হিসেবে, বাধা নয়। তাই এখনই সময় সচেতন হওয়ার, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাভাবিক বিকাশ এক ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।