18/04/2025
Skin Picking চর্মরোগ নাকি মানসিক রোগ !!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আলেয়া বেগমের সবকিছু পরীক্ষা শেষে ডাক্তার আপা যখন মাথা নীচু করে প্রেসক্রিপশন লিখছেন তখন আলেয়া বেগম খানিকটা নীচু গলায় বললেন, আপা আমার কিন্তু আরো একটা গোপন রোগ আছে ! ডাক্তার মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলা। রোগীদের প্রতি সত্যিকার অর্থেই দরদি। উনি মাথা তুলে চাইলেন, ঠান্ডা গলায় শুধালেন, কি গোপন রোগ ? আলেয়া বেগম বললেন, দেখবেন ? আগ্রহ এবং কৌতুহল নিয়েই ডাক্তার জানতে চাইলেন, কি দেখি !
এবার আলেয়া বেগম তার বোরখার হাতটা তুলে দেখালেন এবং বললেন, এই যে দ্যাখেন ভালো করে লক্ষ্য করেন, আমার হাতের নীচ দিয়ে বিরবির করে একটা পোকা হেঁটে যাচ্ছে। এই যে, এই যে দ্যাখেন, এইতো মাত্র হেঁটে গেল। দেখতে পেলেন?”
হ্যাঁ, শুনতে অবাক বা আজব লাগলেও, এটা কিন্তু সত্যি। মানে এমন রোগ আছে, এটা সত্যি না হলেও এমন ধারনা পোষন কারি রোগী অনেক আছে।এটা এক ধরনের মানসিক রোগ যাকে Excoriation বা Skin Picking Disorder বলে। যার আভিধানিক অর্থ হলো ত্বকের চামড়া টেনে তোলা। কথ্য ভাষায় বলা যায়,ত্বকের চামড়া চুলকানো বা খুঁটানো।
আমরা সবাই দিনে অন্তত্য একবার বা দু’বার আমাদের ত্বক চুলকে থাকি। কিন্তু যখন এই কাজটা সীমার বাইরে চলে যায় অর্থাৎ যখন কেউ মাত্রাতিরিক্ত চুলকাতে থাকে, এক পর্যায় চামড়া টেনে ধরে, হাত অথবা পা প্রায়ই জোরে করে ঝারা দিয়ে উঠে নিজের গালের চামড়া ধরে টানে এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজেকে থাপ্পর মারে তখন সেটা মোটেও স্বাভাবিক নয় কারণ ওই ব্যক্তি তার ত্বকের নীচে কোন কিছুর উপস্থিতি টের পায়।
কোন বয়সে এবং কি ভাবে বিকাশ লাভ করে :
সাধারণত বয়ঃসন্ধি কালে Skin Picking Disorder শুরু হয়।তবে খুব ছোট শিশু, যেমন –১০ বছরের নীচের থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত ব্যক্তিও যে কোন সময় আক্রান্ত হতে পারে।এই ডিসঅর্ডারে সাধারণত মহিলারা বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকে। খোদ আমেরিকাতেও মহিলা রোগীর সংখ্যাই বেশী।
SPD সাধারণত দুই ভাবে হতে পারে।
প্রথমত ; ত্বকের ইনফেকশন, ফুসকুড়ি বা ছোট খাটো আঘাতের পর। ত্বকে খোস-পাঁচড়া হলে তা শুকানোর জন্য সময় দিতে হয়।কিন্তু তা না করে সেটা চুলকানো বা খোঁটাখুটি করলে ত্বকে ক্ষতর সৃষ্টি হয়। এবং এটা যত চুলকাবে বা চামড়া ধরে টানাটানি করবে তত এর ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে। এভাবে চক্রাকারে বারবার চলতেই থাকে।
দ্বিতীয়ত ; মানসিক ভাবে চাপ বোধ করলে।আমরা খুব stress feel করলে অবচেতন ভাবেই নখের চতুর্প্বাশে বা ক্ষততে ব্যপক ভাবে চুলকাতে থাকি। এতে করে উপস্থিত আরাম হয় বটে কিন্তু পরবর্তীতে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
কি ভাবে বুঝবেন আপনি বা আপনার কাছের ব্যক্তিটি Skin Picking Disorder এ আক্রান্ত কিনা ?
আপনি বা আপনার কাছের ব্যক্তিটি এই কষ্টকর মানসিক রোগে আক্রান্ত কিনা তা বুঝবার সহজ উপায় আছে।কিছু বিষয়ে আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন।উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তবে আপনার চিকিৎসা বা সাহায্য লাগবে। যেমন ;
* দিনের বেশীর ভাগ সময়ই কি আপনার ত্বক চুলকান বা ত্বকের চামড়া ধরে টানেন ?
* এই চুলকানির জন্য কি ত্বকে কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষত হয়েছে ?
* “কতবার ত্বকের চামড়া ধরে টানতে হচ্ছে বা চুলকাতে হচ্ছে !”– এমনটা ভেবে কি আপনার মন খারাপ হয়ে যায় ?
* এই চুলকানি বা চামড়া টানা কি আপনার সামাজিক বা পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলছে ?
* আপনি কি জিম বা পার্লারে যেতে অস্বস্থি বোধ করেন ?
* কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে না চাইলেও আপনাকে শরীর ঢেকে ঢুকে রাখতে হচ্ছে ?
* এই জন্য কি কোন বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন ?
কি করা যেতে পারে ?
————————
SPD এর দুই ধরনের চিকিৎসা আছে। থেরাপি এবং মেডিকেশন।শুধুমাত্র ঔষধ দিয়ে এই রোগ পরিপূর্ণ ভাবে ভালো হয় না।
পাশাপাশি রোগীকে থেরাপিও দিতে হয়।যেমন ;
* Cognitive-behavioural therapy(CBT) একটি উন্নত মানের থেরাপি।এই থেরাপির মাধ্যমে থেরাপিষ্ট আপনাকে সাহায্য করবে, আপনার অবস্থা, মানসিক চাপ এবং অন্যান্য কারণ সনাক্ত করতে যা আপনাকে Skin picking এ বাধ্য করে।
* আপনি একটি রাবারের বল চাপতে পারেন। এতে আপনার চাপও কমবে এবং হাতও ব্যস্ত থাকবে।
* হাতে গ্লভস পরে থাকা যেতে পারে।
* আঙ্গুলে Band-Aids পেঁচিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে চুলকানির ইচ্ছা বা তাড়না বাঁধা প্রাপ্ত হবে।
* ত্বকের ব্রণ বা ত্রুটিপূর্ণ চেহারা দেখার চাইতে আয়নাতে কভার করে বা ঢেকে রাখতে পারেন। এতে চুলকানির বা খোঁচাখুচির ইচ্ছেটা বন্ধ হতে সাহায্য করবে।
Skin picking disorder কে মূলত ‘আত্ম-পরিচর্যা’ বিষয়ক পুনরাবৃত্তিমূলক ব্যবহার বলা হয়ে থাকে। যাকে Body Focused Repetitive Behaviour( BFRB ) বলে।
DSM-V অনুযায়ী Skin picking কে OCD-র শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। কারণ পুনরাবৃত্তি মূলক ব্যবহারই বাধ্যতামূলক আচরণ দ্বারা প্রভাবিত।
একটি সাধারণ অভ্যাস বা ছোট অভ্যাস থেকে একটি গুরুতর বিপদের শুরু।এর থেকে মুক্তি পেতে রোগীকে বিশ্বাস করাতে হবে উনার চিন্তাটা অমূলক আর এই কাজটি করবেন চিকিৎসক, থেরাপিষ্ট এবং পরিবারের আপনজনেরা মিলে সহনশীলতার সাথে ভালোবাসা দিয়ে।তবেই এমন কষ্টকর একটা মানসিক রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।
সবার মানসিক ও শারিরীক সুস্থ্যতা কামনা করছি।
নিবরাজ জাহান হুজায়রা, ২০১৯