02/08/2022
#সেরিব্রাল_পালসি (মস্তিষ্ক পালসি) কি?
সেরিব্রাল পালসি (সিপি) হল একটি অ-প্রগতিশীল স্নায়বিক সমস্যা যা বাচ্চাদের উন্নয়নশীল মস্তিষ্কের আঘাত বা বিকৃতির কারণে ঘটে। এটি গুরুতর শৈশব অক্ষমতার একটি খুব সাধারণ কারণ। এটি প্রধানত নড়াচড়া এবং পেশী সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে।
♦এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
জন্মের সময় থেকে 5 বছর বয়স পর্যন্ত যেসব ধারাবাহিকতার ধাপগুলি অর্জন করার প্রয়োজন, যেমন ঘুরে যাওয়া, বসা এবং হাঁটা তা সিপির ক্ষেত্রে দেরি হতে পারে। এটি মেয়েদের থেকে ছেলেদের মধ্যে বেশি হয়, এবং সাদা মানুষের তুলনায় কালো মানুষের মধ্যে বেশি হয়।
♦বয়স ভিত্তিক উপসর্গগুলি হল:
3-6 মাস:
বিছানা থেকে বাচ্চা তোলার সময় মাথা নুইয়ে পড়া
সারা শরীরে কঠোরতা
পেশীর ক্ষমতা কমে যাওয়া
কোমর ও ঘাড় বেশি বেড়ে যাওয়া
6 মাসের চেয়ে বেশি বয়স:
ঘুরে যাওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়া
একসঙ্গে হাত আনতে ব্যর্থতা
মুখে হাত আনতে অসুবিধা
10 মাসের থেকে বড়:
ভারসাম্যহীন হামাগুড়ি দেওয়া চলন
সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানোর অক্ষমতা
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
এটি মূলত মস্তিষ্কের পর্যায় গঠনের সময় কোনও আঘাত বা অস্বাভাবিকতার কারণে মস্তিষ্কে কোনো ক্ষতি হলে হয়। এটি পেশীর গঠন, প্রতিক্রিয়া, অঙ্গবিন্যাস, সমন্বয়, আন্দোলন এবং পেশী নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে।
♦মস্তিষ্কের উন্নয়নে সমস্যা করতে পারে এমন অন্যান্য কারণগুলি হল:
পরিবর্তন: জিনগত অস্বাভাবিকতা মস্তিষ্কের বিকাশের কারণ হতে পারে।
প্রসবকালীন সংক্রমণ: যে সংক্রমণগুলি রুবেলার মত গর্ভাবস্থায়ের সময় উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে।
ভ্রূণে আঘাত: শিশুর মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাঁধা পেলে তা মস্তিষ্কের কাজকর্মকে নষ্ট করতে পারে।
শৈশবে সংক্রমণ: প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া যা মস্তিষ্কসংক্রান্ত এলাকাগুলিকে প্রভাবিত করে।
মানসিক আঘাতের ক্ষত: যানবাহন দুর্ঘটনার ফলে গুরুতর মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।
অক্সিজেন অভাব: কঠিন শ্রম অথবা প্রসবের সময় অক্সিজেনেই অভাব।
♦এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
ডাক্তার লক্ষণগুলি বা উপসর্গগুলির পরীক্ষা করে এবং শারীরিক পরীক্ষা করে শিশুর মূল্যায়ন করে। শিশুটিকে একটি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ স্নায়ু চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হতে পারে।
পরীক্ষাগুলির একটি সিরিজ করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে:
√মস্তিষ্কের স্ক্যান:
√ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই): মস্তিষ্কের কোনও ক্ষত বা অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
√ক্রেনিয়াল আল্ট্রাসাউন্ড: মস্তিষ্কের প্রাথমিক মূল্যায়ন; এটা তাড়াতাড়ি হয় এবং সস্তা।
√ইলেক্ট্রোএন্সেফালোগ্রাম (ইইজি): মৃগীরোগ সনাক্ত করতে।
এছাড়াও অন্যান্য যে পরীক্ষাগুলি করা হয়:
দৃষ্টির সমস্যা
কানে শোনায় বিকলতা
কথা বলতে অসুবিধা
বুদ্ধিমত্তার অভাব
নড়াচড়া না করার রোগ
সিপির চিকিৎসার জন্য শিশুটির দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের একটি দল দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করে।
♦সেরিব্রাল পালসিতে ফিজিওথেরাপি :
সেরিব্রাল পালসি চিকিৎসার ক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্টের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। কারণ প্রায় সবার কিংবা বেশিরভাগেরই কমন কিছু সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়, যেমন মাসল দুর্বল এবং টাইট, জয়েন্ট স্টিফ, ব্যালেন্স, কো-অর্ডিনেশন এবং হাঁটাচলায় সমস্যা, হার্ট-লাংয়ের মাসল দুর্বল। এর কারণে ঠান্ডা লাগা, শ্বাসকষ্ট বা বুকে কফ জমা ইত্যাদি। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট শিশুকে সঠিকভাবে অ্যাসিসমেন্ট করে সমস্যা বুঝে তার জন্য প্রযোজ্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান করে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং, স্ট্রেন্থেনিং ব্যালেন্স এবং গেইট ট্রেনিং ব্যবহার করে থাকেন শিশুকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে।
√√স্ট্রেচিং : স্ট্রেচিং শিশুর হাত ও পায়ের মাসল-জয়েন্টকে নরম এবং স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। মূলত এই স্ট্রেচিং এক্সারসাইজগুলো খুবই সেনসিটিভ প্রকৃতির হয়ে থাকে। স্ট্রেচিং কম দিলে কোনো কাজেই আসবে না, আবার বেশি দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে সেরিব্রাল পালসি শিশুর মাসল লেন্থ এবং জয়েন্ট রেঞ্জ ফিরিয়ে আনতে ‘স্ট্রেচিং’ অপরিহার্য। আর এজন্য অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে থেকেই স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ নিতে হবে। এছাড়া কিছু কিছু ডিভাইসের মাধ্যমে ও স্ট্রেচিং দেওয়া হয়। যেমন ফিজিও বল, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, গেইটার, অ্যাডাকটর টুলস ইত্যাদি। শিশুর সমস্যা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এসব ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।
√√স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ : হাঁটা শুরু করার ক্ষেত্রে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের সময় অনেকটা বেশি লাগে একটা সুস্থ শিশুর তুলনায়। কারণ যেখানে একটা সুস্থ শিশুর ‘বসা-হামাগুড়ি-হাঁটাহাঁটি-দৌড়ানো’ প্রক্রিয়াটি বেশ সময় সাপেক্ষ, সেখানে একটা সিপি শিশুর আরও বেশি সময় প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ, গেইট ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি প্যারালাল বার করা হয়।
√√ব্যালেন্স-কো-অর্ডিনেশন : কিছু কিছু সিপি শিশুর মাসল পাওয়ার এবং জয়েন্ট রেঞ্জ মোটামুটি হাঁটাচলার মতো ঠিক থাকে।।
#ফিজিওথেরাপি_সার্ভিস
#চেম্বারঃ জামান হেল্থ কেয়ার
#ঠিকানাঃ বাসা-৯, ব্লক-ডি, ইস্টার্ন হাউজিং(২য় পর্ব), রুপনগর, মিরপুর, ঢাকা
#ফোনঃ 01684319913