
23/08/2024
আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অনেক দূর্বল। সেজন্যই শক্ত করে আজ অব্দি কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি এই দেশ। আশা করি পররাষ্ট্রনীতি শক্ত এবং মজবুত করে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই ব্যাপার তুলে ধরতে হবে কঠিন ভাবে।
বড় লিখা অনেকেই পড়তে চায়না। যারা পড়বে তারা বুঝবে। 🙂
👇
প্রথমে জানি বাঁধ কি এবং কেন দেয়া হয়?
বাঁধ হচ্ছে একটি দরজা সম্বলিত দেয়াল।
নদীতে বাঁধ বলতে এটাই বুঝবো একটা প্রবাহমান নদীতে তালাবন্ধ দরজা সহ দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে।
যখন দরজা খোলা হবে না , জল অন্যদিকে আসবে না। যখন খোলা হবে হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসবে।
কেন বাঁধ দেয়া হয় ?
যাতে কেউ জল প্রিসার্ভ বা সংরক্ষণ করতে পারে। এই সংরক্ষিত জল দিয়ে তারা পরে সেচ প্রকল্প করতে পারে। কারণ শুষ্ক মৌসুমে অনেক দূরের এলাকা গুলো যদি জল না পায় তখন এই সরক্ষিত জল ব্যবহার করা যেতে পারে।
এবার আসি তিস্তা বাঁধ নিয়ে….
তিস্তা নদীটা ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেই প্রবাহমান। একটা অভিন্ন নদী । বাচারা নদী আপনাদের মত রীদনীতি বোঝে না ।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে ঢুকেছে এই নদী। ভারতের সিকিম থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ছুঁয়ে বাংলাদেশে পড়েছে তিস্তা।
সেই নদীর ওপর বাঁধ দিয়েছে ভারত। বাঁধের নাম তিস্তা বাঁধ বা তিস্তা ড্যাম বা ব্যারাজ।পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় তিস্তা নদীর ওপর তৈরি হয়েছে ২৮৫ ফুট উঁচু এই বাঁধ।
বাঁধস্থলে বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে কম। চর পড়ে যায়। এই বাঁধে পানি আটকে রেখে সেই পানি শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
তখন বাংলাদেশের ১২ টা বেজে যায়। কারণ সব পানি তো তারা রেখেই দিয়েছে। বাংলাদেশে খরা এর সৃষ্টি হয় , সেচ এর জন্য জমিগুলোতে পানি পাওয়া যায় না। উত্তরবঙ্গের অনেক অনেক কষ্ট হয়।
আবার বর্ষাকালে ঠিক উল্টা , যেহেতু বর্ষাকালে সরক্ষন এর বেশী তারা রাখতে চায় না, তারা অতিরিক্ত জলধারায় বন্যা হবার ভয়ে দরজা খুলে দেয় , বন্যা তখন উল্টা বাংলাদেশের জন্য অবধারিত হয়।
নদীকে স্বাভাবিক ভাবে প্রবাহিত হতে দিলে হয়ত দুই দেশ ই কম পেতো কিংবা দুই দেশ ই বেশি পেতো কিন্তু তাও
সেটাকে natural বা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম বলা যেত। And that would have been Fair .
কিন্তু এভাবে বাঁধ দিয়ে সব জল নিজের করে নেয়াটা আন্তর্জাতিক প্রতিবেশী চুক্তি কে লঙ্ঘন করা।
অনেকটা এমন ……আপনার থেকে শক্তিশালী কোনো সহচর , যেদিন তার ক্ষিধে আপনার সারাদিনের একমাত্র খাবারটি ছিনিয়ে নিবে আবার যেদিন সে অন্য কোথাও খেয়ে এসেছে , সেদিন সে তার সব খাবার আপনার পেট ভরা থাকলেও ঠেসে ঠেসে ঢুকাবে। এটা অন্যায়।
ভারত এই অন্যায় করছে কেন ???
সম্ভবত এটার উত্তরে ভারত বলবে আমাদের ইচ্ছা , আমরা আমাদের স্থানে বাঁধ বানিয়েছি , আমরা আমাদের দেশের কথা ভাববো , তোমাদের কি ??
এই টা অন্যায় কথা , অমানবিক কথা , স্বার্থপরের মত ভাবনা।
এই যে ভালো সহচর হবার দৃষ্টান্ত না রাখা সেটা কে প্রতিহিত করতে হলে , বিশ্বদরবারে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি শক্ত করতে হবে।
সব দেশ নিজেদের স্বার্থ দেখবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন অন্যরাষ্ট্র অন্যায় করে তাকে বিরোধ টাও স্মার্টলি করতে হয় , বিশ্বের দরবারে নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হয় , বড় বড় অভিভাবকদের কাছে বিচার ঠিকভাবে জানতে হয়।
কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থ দেখতে দেখতে সেগুলো ভুলেই যায় বা ইচ্ছে করে ভুলে থাকে।
বুয়েটের ড. আইনুন নিশাত স্যার বলেছেন আইনুন নিশাত বলছেন, “আল্টিমেটলিতো ভারত থেকে কতটা পানি আসবে সেটার সিদ্ধান্ত হতে হবে। এখন পর্যন্ত ভারত গায়ের জোরে আমাকে শূন্য দিচ্ছে। এটাতো আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে না। কাজেই বণ্টনের ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোনো ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনা আমার কাছে অবাস্তব মনে হয়।”
মজার কথা হচ্ছে , শুষ্ক মৌসুমে ৫০০০ কিউসেক চেয়েছিলো , তারা দিচ্ছে ১২০০ কিউসেক এর মত। আর বর্ষাকালে যখন তখন গেট খুলে দিচ্ছে , গেট খুলার সময় টাও নির্ধারণ করছে না। এটা একটা আন্তর্জাতিক অপরাধ এর মত।
ভারত এটা করছে কারণ , আমরা তাদের কে করতে দিয়েছি আমাদের কূটনীতিক দুর্বলতার কারণে।
আমরা যেদিন মুখস্ত বিদ্যা কমিয়ে, এবং কাগজে কলমে স্মার্ট কম হয়ে যখন ব্যবহারিক স্মার্ট কিংবা স্ট্রিট স্মার্ট এবং কিছুটা আত্মরক্ষাকারী বুদ্ধি দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করবো , সেদিন অন্যায় করতে পারবে না।
উল্টাপাল্টা জায়গায় সামগ্রিক পরিবেশ এবং সামগ্রিক পৃথিবীর কথা না চিন্তা করে বাঁধ বসানো টাই অন্যায়। গেইট খোলা না খোলা তো পরের কথা।
এবার যেমন ভারতের ত্রিপুরা আর বাংলাদেশে প্রবাহিত অভিন্ন নদী গোমতী নদীর বাঁধ ডম্বুর গেট খোলাতে , ফেণী , নোয়াখালী আর কুমিল্লাতে বন্যা। খুব খারাপ হলো ।
মনেপ্রানে চাই,
বাংলাদেশের পররাস্ট্র কূটনীতি অনেক মেধাবী হবে, অনেক ক্ষুরধার হবে ভবিষ্যতে , চুক্তিটা আমাদের পক্ষে আনার জন্য ।
এবার ফেসবুকে আঙুলের জোরে কম্পিউটারের কীবোর্ড বা মোবাইল স্ক্রিন ভাঙা কিছু গায়েবি বিজ্ঞদের সেই মন্তব্য -
“হিন্দুরা তোরা চিল্লাস না কেন”
এক্সকিউজ মি স্যার অর ম্যাম ,
হিন্দুরা বাংলাদেশের কোন জায়গায় গিয়ে চিল্লাইসে ভারত ভালো ভারত ভালো ?
ভাই নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য আর্তি জানাইসে , এর সাথে ভারত মিশাইতেসেন কেন ?? বাংলাদেশের হিন্দুরা তো বাংলাদেশেই থাকতে চাচ্ছে , তাদের বাংলাদেশে থাকার সাথে ভারতের সম্পর্ক কি ???
কিছু হইলেই ভারত = বাংলাদেশের হিন্দু ভাবা বাদ দেন।
লেখাপড়া কম জানলে , বই কিনেন গুগল করেন , পড়তে বসেন। তারপর রাস্তায় বের হন , গ্রামে গঞ্জে যান -মানুষের সাথে কথা বলেন , আসল চিত্র কি বোঝার জন্য।
নিজের অজ্ঞতা আরো প্রকাশ করার জন্য মানুষের কথা কান দিয়ে শুনে তারপর "কান নিয়েছে চিলে " পোস্টাইলে কি আর করতে পারি !!
——————
জ্ঞান টা বাড়ান।
——————
©️ ধীমান
২১শে আগস্ট, ২০২৪