05/09/2025
🔴কানাডার চিকিৎসা ব্যবস্থা: ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল।
ছোটবেলায় ইংরেজি টেন্স শিখতে গিয়ে একটা বাক্য খুব বিখ্যাত ছিলো।
“ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগীটি মারা গেল।”
আমরা গদগদ হয়ে মুখস্থ করতাম, পরীক্ষায় লিখতাম। তখন কে জানতো একদিন বাস্তবে এসে এরকম একটা বাক্য আমার জীবনেও খাটবে!
এখন কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে কানাডার চিকিৎসা কেমন? আমি গম্ভীর মুখে শুধু একটি উত্তর দিই-
“ডাক্তার দেখিবার পূর্বেই রোগীটি মারা গেল।”
প্রহসনের শুরুঃ
ঘটনা আজ থেকে দশ বছর আগের। পেটে অদ্ভুত সমস্যা। যাই খাই, তাতেই ঢেকুর ওঠে! পানি খেলেও ঢেকুর। প্রথমে ভেবেছিলাম নরমাল গ্যাসট্রিক। গ্যাসট্রিকের ওষুধ খাইলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না! ওষুধ খেয়ে গ্যাস না কমে, বরং সন্দেহ জাগলো, আমার শরীরে হয়তো নতুন কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
তারপর শুরু হলো টেস্টের স্তুপ।
ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট, এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, এমনকি এমআরআই পর্যন্ত।
সবখানেই এক এবং অভিন্ন রেজাল্ট- নেগেটিভ।
আমি মনে মনে বললাম, “পজিটিভ হলে অন্তত আমার দুঃখ কমতো। এই নেগেটিভই আসলে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পজিটিভ বিপদ।”
হাসপাতালে গেলেই ডাক্তাররা রহস্যময় ভঙ্গিতে বলে,
“আপনার কিছু হয়নি। এই নিন কিছু গ্যাসের ওষুধ।”
আমি বলি, “ডাক্তার সাহেব, পানি খেলেও গ্যাস হয়!”
ডাক্তার রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেন, “তাহলে পানি খাবেন না।”
এক মাসের লড়াইঃ
এক মাস ধরে শুধু দৌড়ঝাঁপ। ইমারজেন্সি ঘুরলাম, স্পেশালিস্ট ঘুরলাম। ডাক্তাররা একেকজন এসে Sherlock Holmes-এর মতো আমার পেট নিয়ে গবেষণা করলেন।
শেষ পর্যন্ত একজন বললেন, “আপনার লিভারের পাশে ব্যাকটেরিয়া।”
আরেকজন বললেন, “না না, এগুলো মনের সমস্যা।”
অবশেষে ধরা পড়লো, এইচ পাইলোরি।
অ্যান্টিবায়োটিক খেলাম, আর আলহামদুলিল্লাহ, কিছুটা ভালো হলাম। তবে গ্যাস থেকে গেল। বলতে গেলে গ্যাস আর আমি রুমমেট হয়ে গেলাম, সদা সর্বদা সঙ্গী।
১০ বছরের পূর্তি উৎসবঃ
গ্যাসট্রিকের দশ বছর পূর্তি হতে না হতেই শুরু হলো ভয়ংকর পেইন। এতই তীব্র যে, সারারাত বিছানায় কাতরাই, ঘুম আসে না।
আবারো টেস্ট, আবারো নেগেটিভ।
ডাক্তাররা এবার নতুন গল্প শোনালেন, “আপনার ক্রস্টিপেশন হয়েছে।”
আমি বললাম, “ডাক্তার, ক্রস্টিপেশন থাকলেও কি এতটা ব্যথা হয় যে মানুষ ঘুমাতে পারে না?”
ডাক্তার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, “পারে।”
এবং প্রেসক্রিপশনে দিলেন- ল্যাক্সেটিভ।
কিন্তু ব্যথা কমলো না। দিন গড়াল, রাত গড়াল, ব্যথা রইল।
সত্য প্রকাশঃ
অবশেষে আমার ফ্যামিলি ডাক্তার সন্দেহ করলেন, গলব্লাডারে স্টোন।
পাঠালেন আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতে। চারদিন পর রেজাল্ট এলো- হ্যাঁ, সত্যিই স্টোন আছে।
এবার আমাকে রেফার করা হলো সার্জনের কাছে।
ট্র্যাজেডির শুরুঃ
সার্জনের অফিস থেকে ফোন এলো শুক্রবার দুপুরে, যখন আমি মসজিদে জুমার নামাজ পড়ছি।
ফোন ধরতে পারলাম না। ভয়েসমেইল রেখে গেল।
নামাজ শেষে ফোন করলাম, কেউ ধরলো না।
এভাবেই কেটে গেল দুই দিন।
সোমবার অফিস আওয়ারে কল করতেই ধরলো। খুশি হয়ে ভেবেছিলাম, এবার বুঝি অপারেশন হবে।
কিন্তু শুনলাম-
“আপনাকে দুই-আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ডাক্তার দেখবেন, তারপর সার্জারির দিন ঠিক করবেন।”
আমি তখন গম্ভীর মুখে মনে মনে উচ্চারণ করলাম
“ডাক্তার দেখিবার পূর্বেই রোগীটি মারা গেল।”
উপসংহারঃ
বাংলাদেশকে খুব মিস করলাম। ওখানে টাকা থাকলে অন্তত চিকিৎসা পাওয়া যায়। কিন্তু কানাডায় আজকাল খুব সহজেই চিকিৎসা মেলে না, মেলে শুধু অপেক্ষা, অপেক্ষা আর অপেক্ষা।
এ দেশে ডাক্তারদের দেখা পেতে পেতে অনেক সময় রোগীর দেখা মিলেই যায় না।
(সংগৃহীত)