25/08/2025
জীবন নিয়ে লিখতে আমার বেশ লাগে।
একটা সময় ছিল যখন প্রায়ই লিখতাম। সাফির অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আর সেভাবে লেখা হয়নি।
আজ একটা গান নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করবো।
গান: মন মাঝি খবরদার
কথা ও সুর: সংগ্রহ
গানের সাধক প্রতীকীভাবে জীবনের পথ, সময় ও জীবনের আত্মোপলব্ধি গুলো কথামালায় গেঁথেছেন।
১ম শ্লোক লিখেছেন-
"মন মাঝি খবরদার
আমার তরী যেন ভেড়ে না
আমার নৌকা যেন ডুবে না ॥"
সাধক এখানে "মন মাঝি " বলতে নিজেকে বা স্ব-অস্তিত্ব কে বুঝিয়েছেন। আর নৌকা বলতে জীবনকে বুঝিয়েছেন। জীবন নৌকার মাঝি- সাধক নিজেই।
সাধক বলেছেন - সাবধান, আমার জীবন নৌকার পথ যেন না থেমে যাই।
২য় শ্লোক লিখেছেন-
"সাড়ে তিন হাত নৌকার খাঁচা
মন মাঝি রে ঘন ঘন জোড়া
সেই নৌকা খান বাইতে আমার তো
মন মাঝি রে হাড় হইলো গুড়া রে ॥"
কি আশ্চর্য , প্রতিটি মানুষ তার হাতের সাড়ে তিন হাত দৈর্ঘ্য হয়। আর এই সাড়ে তিন হাত শরীরে ২০০ টাই বেশি হার আছে। শত শত লিগামেন্টের জোড়া দিয়ে এই শরীরটা চলে।
সাধকের শরীরটা ভেঙে যাচ্ছে দিনে দিনে। ক্লান্তি , যন্তনা আর সংগ্রাম ফুটে উঠেছে প্রতিটি শব্দে। জীবনে যত গভীর হচ্ছে, যত দিন যাচ্ছে- সাধক ততো ক্লান্ত হচ্ছে।
শেষ শ্লোক লিখেছেন-
"মাস্তুলে উঠিয়া রে মাঝি
মন মাঝি রে এদিক ওদিক চায়
পেছন ফিরে চাইয়া দেখ রে
মন মাঝি রে বেলা ডুইবা যায় ও রে ॥"
জীবনের পথে সাধক কোন এক সময়, একদিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আর কত কি ভাবে- জীবনের হিসাব নিয়ে বসে সে। জীবন খাতার হিসাব হয়তো শূন্যই রয়ে যাই। তবুও সময় বহমান। এ বেলায় সাধকের শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে।
হয়তো অপেক্ষা ! ওপারের !
গানের কথার গভীরতা এতো অতল! আমি সেভাবে কিছুই লিখতে পারলাম না।
এই সাধক আমি নিজেও।
আমিও সাধকের মতো বড্ড ক্লান্ত কিন্তু থেমে গেলে তো চলবে না।
আমার সাথে আমার সাফীরের জীবন জড়িত।
গত তিন বছর আমি আমার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি তার জন্য।
ঝিনুক যেমন তার খোলসের ভিতর মুক্তাকে আগলে রাখে , আমিও ঠিক সেই ভাবে আমার সবটুকু দিয়ে আমার ছেলেকে আগলিয়ে রেখেছি।
এই যেমন এখন রাত প্রায় তিনটা। আমি জেগে জেগে ভাবছি আর লিখছি। পশে সাফীর ঘুমুচ্ছে। আমরা হাসপাতালে ভর্তি ICU তে আছি। সাফীরের Immunotherapy চলছে।
কিছুক্ষন আগে নার্স এসে বললো - তুমি ঘুমিয়ে পর। আমরা আছি। কোনো প্রব্লেম হবে না।
আমি বললাম - "শেষ হোক "
IV লাইনে Immunotherapy drug, NS, DS, Morphine আরো কত কি চলে। মাঝে মাঝে এয়ার ইন লাইন হয় , ইনফুসিওন কমপ্লিট হয় , লাইন জ্যাম হয় আর তখনই ব্রীফ ব্রীফ শব্দ হয়। আমি তখন মেশিনটা পজ করি , নার্সকে কল করি। নার্স এসে টিক করে দেয়। ব্রীফ ব্রীফ শব্দে যদি সাফীরের ঘুম ভেঙে যাই , তাই আমি জেগে থাকি।
এই রকম প্রতিদিন শত শত চিন্তা আমাকে করতে হয়। যাতে সাফির আর একটু ভালো থাকে।
মাঝে মাঝে ওই সাধকের মতো আমারও মনে হয় "হাড় হইলো গুড়া রে"
কিন্তু খবরদার আমার নৌকা যেন ডুবে না। আমি যেন শেষ না হয়ে যাই।
জীবন যুদ্ধে আমিও ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, বাস্তবতার কাছে হেরে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। তবুও আমি আশা ছাড়ি না।
সাধকের মতো আমিও এদিক ওদিক চায়।
পেছন ফিরে জীবনের হিসাব মিলাতে যাই।
একটা সুখের আলোর অপেক্ষায় বেলা চলে যাই।
সবশেষে দেখি সাফীর বাদে আমার কিছু নাই।
বেরঙিন জীবন খাতার সব রং আজ ফিকে হয়ে এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।
আমার সাফীর ...
পুনশ্চ: ভিডিওটা আমি গতবছর আমাদের মেহেরপুরের তেরোঘরিয়া বিলে ধারণ করেছিলাম। আজ পূর্ণতা পেলো।
Supporting Cancer
American Cancer Society
Wes' Fight Against Neuroblastoma
Kendal's fight against neuroblastoma
বাংলাদেশি ফটোগ্রাফি
Friends
Bangladesh Cancer Support Group