21/07/2022
কলকাতা ও ভেলোরে চিকিৎসার কমপ্লিট গাইড :
ভারতের তামিলনাড়ুর একটি মনোরম শহর ভেলোর। বাংলাদেশীদের অধিকাংশ সেখানে যান উন্নত চিকিৎসার জন্য। ভেলর শহরে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ ( সিএমসি ) এবং শ্রী নারায়ণী হসপিটাল ও রিসার্চ সেন্টার অবস্থিত। এই দুটি জায়গাতেই মানুষেরা বেশি যান ।তাই আমি এই পোস্টে কলকাতা ও ভেলোরের কমপ্লিট গাইড বর্ণনা করছি। শেয়ার করে রাখুন সময় মতো কাজ লাগবে।
কিভাবে যাবেন,ট্রেনের টিকেট কিভাবে কাটবেন, কোথায় থাকবেন, যেতে খরচ কেমন, টাকা / ডলার কোথায় ভাঙ্গাবেন, কি খাবেন, ভাষাগত সমস্যা, হাসপাতাল ও ডাক্তারের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার সব কিছুই থাকছে এই পোস্টে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র :
বাংলাদেশ থেকে বাইরের যেকোন দেশে যেতে হলে আগে আপনার প্রয়োজন পাসপোর্ট লাগবে ভারতের ভিসা যা হাইকমিশন থেকে পাবেন।
আপনার কয়েক কপি ছবি, পাসপোর্টের কয়েকটি ফটোকপি ও কলম সাথে রাখুন । কলকাতায় এসে সময় পেলে আপনার সর্বশেষ ভিসার কয়েকটি ফটোকপি ( ভারতে জেরক্স নামে পরিচিত ) করে রাখুন। কারণ সিম কিনতে কাজে লাগবে ।
আপনি চাকরি করলে কর্মরত প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিন এবং এর লিখিত ডকুমেন্ট কয়েকটি ফটোকপিসহ সাথে রাখুন। বর্ডারে লাগতে পারে। বাংলাদেশ সীমান্ত পার হবার সময় বাংলাদেশ সরকারকে ট্রাভেল ট্যাক্স দিতে হয়। আগে ছিল ৩০০ টাকা এখন তা ৫০০ টাকা করা হয়েছে। বর্ডারেই সেটা হয়তো পেয়ে যাবেন।
যাতায়াত :
আকাশপথ কিংবা স্থলপথে যাওয়া যায়। আকাশ পথে যেতে চাইলে আগে থেকেই ভিসায় উল্লেখ থাকতে হবে। প্লেনে সরাসরি ভেলোর যাওয়া যায় না। প্লেনে ঢাকা থেকে চেন্নাই যেতে হবে। তার পর বাস কিংবা ট্রেনে ভেলোর । ঢাকা থেকে চেন্নাই সপ্তাহে চারটি প্লেন যাওয়া আসা করে এবং সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের মত। প্লেনের টিকেট আগে থেকে কেটে রাখলে খরচ কিছুটা কম পড়ে ।
স্থলপথে যেতে চাইলে দেখুন আপনার পাসপোর্টে ভারতে ঢোকার জন্য কোন বর্ডারের উল্লেখ আছে । যদি আপনি হিলি বর্ডার দিয়ে ইন্ডিয়া প্রবেশ করেন, তবে আপনি মালদহ থেকে কিংবা কলকাতা থেকে ট্রেন ধরতে পারেন। কলকাতা থেকে ভেলরের দুরত্ব প্রায় ১৭৫০ কিলোমিটার । সময় লাগে ৩0-৩৮ ঘন্টা । কলকাতা বা মালদহ থেকে সরাসরি কিছু ট্রেন আছে । আবার অনেক সময় একটু ভেঙ্গে ভেঙ্গেও যেতে হতে পারে যেমন- মালদহ থেকে কলকাতা, কলকাতা থেকে চেন্নাই, চেন্নাই থেকে ভেলোর।
ভারতে দূরের যাত্রা ট্রেনেই ভালো হয়। কলকাতায় কয়েকটি বড় বড় ট্রেন স্টেশন আছে যেখান থেকে ছেড়ে যায় বড় বড় শহরে। হাওড়া স্টেশন কিংবা সাতরাগাছী স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় চেন্নাই কিংবা ভেলোরের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি ট্রেন।
ভারতে দূরের ট্রেনের টিকেট পাওয়াটা অনেক সময় কষ্টের হয়ে যায়। কারন ভারতে ট্রেনের যাত্রী অনেক অনেক বেশি। এখানে আগে ছিল ২ মাস আগে থেকে ট্রেনের টিকেট কাটার ব্যবস্থা এখন সেটা হয়েছে ৪ মাস। তবে ততকাল নামে আর একটি ব্যবস্থা আছে যা ট্রেন ছাড়ার আগের দিন টিকেট ছাড়ে। তাই অনেক সময় কলকাতায় থাকতে হতে পারে।টিকেট আগে থেকে কাটা না থাকলে কিংবা পেতে সময় লাগলে আপনাকে কলকাতাতে দুই-এক রাত থাকতে হতে পারে। কলকাতার সব হোটেলই আপনাকে রাখতে পারবেনা । তবে নিউ মার্কেটের আশে পাশের হোটেল/গেষ্ট হাউসগুলোতে থাকতে পারেন। ঢাকার বাসগুলো যেখানে থামে সেখানে বেশ কিছু গেষ্ট হাউজ আছে থাকবার মতো। সেখানে চেক আউট ( হোটেল ছাড়ার সময় ) সময় দুপুর ১২টা । অর্থাৎ সেখানে দিন ধরা হয় দুপুর ১২টা থেকে পরদিন দুপুর ১২টা। হোটেল ভাড়া ৫০০, ৬০০, ৭০০, ১২০০ বিভিন্ন্ রকমের, সুবিধা ভেদে ভাড়া কম বেশি হয়।
টাকা / ডলার কোথায় ভাঙ্গাবেন ?
টাকা বা ডলার আপনি অনেক জায়গাতেই চেন্জ করতে পারেন । তবে সীমান্তে টাকা বা ডলার চেন্জ রেট টা কম। অর্থাৎ সীমান্তে চেন্জ করলে আপনি পরিমাণে কম পেতে পারেন। প্রয়োজনে কিছু চেন্জ করে নিতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় কলকাতায় চেন্জ করে নিলে । তাহলে চেন্জ রেট বেশ ভালো পাওয়া যায়। ঢাকার বাসগুলো যেখানে থামে, সেখানে বেশ কিছু মানি চেন্জার আছে । তবে কয়েক দোকানে খোজ নিয়ে যে ভালো রেট দিচ্ছে তার কাছ থেকে চেন্জ করে নিতে পারেন । অনেকেই মনে করতে পারেন যে ভেলোরে গিয়েই ভাংবো ! সেক্ষেত্রে চেন্জ রেট কম পেতে পারেন। কারোন ভেলরে টাকা চেন্জ হয় অনেক কম। তাই রেটও কম ।
বাড়ির সাথে যোগাযোগ :
বাড়ির সাথে যোগাযোগ রাখার মাধ্যম হতে পারে মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেট। মোবাইল বা ইন্টারনেটের জন্য আপনাকে একটি ভারতীয় সিম কিনতে হবে। আপনি চাইলে বাংলাদেশি সিম রোমিং করে নিয়ে সেখানে চালাতে পারেন। তবে এক দেশের সিম অন্য দেশে রোমিং করাটা অনেক সময় ঝামেলার কাজ হয়ে যায় এবং কল রেটও বেশি হয়। বর্ডারে অনেক সময় অনেকেই সিম কেনেন। প্রায় ই দেখা যায় সিমগুলো কলকাতার মধ্যেই সীমাবধ্য থাকে, এর বাইরে আর কাজ করেনা । সিম বর্ডারে না কিরে কলকাতাতে কিনুন। এয়ারটেল কিংবা ভোডাফোনের সিম কিনতে পারেন ।
সিম কিনার সময় বলুন যে আপনি বাংলাদেশে কথা বলবেন এবং কলকাতার বাইরে যেতে হলে সেটাও বলুন । ইন্ডিয়া থেকে সাধারনত বাংলাদেশে কলরেট ১০ – ১২ রুপি। তবে এখানে সিমে প্রোমো রিচার্জ বা পাওয়ার রিচার্জ করে নেয়া যায় বাংলাদেশের জন্য যার মেয়াদ থাকে ৩০দিন। এইটা করলে কলরেট চলে আসে ২ রুপি প্রতি মিনিট। ইন্ডিয়াতে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গেলে সিমে রোমিং চালু হয়ে যায় । এ ক্ষেত্রে আপনি কল রিসিভ করলেও একটা চার্জ কাটা হয় ( প্রায় .৬০ পয়সা মত )। আপনি যদি ভেলোরে এসে সিম কেনেন তাহলে রোমিং চার্জ থাকবে না (তবে ভেলোরের বাইরে গেলে আবার এই সিমেও রোমিং চালু হবে ), কলকাতার সিম হলে থাকবে। ইন্টারনেটের কোন রোমিং চার্জ নেই। যদি ভেলোরেই বেশি দিন থাকতে হয় তো সেখানেই একটি সিম কিনে নিতে পারেন।
বাংলাদেশিরা বা যেকোন ফরিনার রা ইন্ডিয়াতে যে সিম কেনে সেটার মেয়াদ থাকে ভিসা ভেলিড থাকা সাপেক্ষে। অর্থাৎ ভিসার মেয়াদ শেষ হলে সিমের মেয়াদ ও শেষ।
ট্রেনের টিকেট কিভাবে কাটবেন ?
ভারতে ট্রেনের টিকেট অনলাইনেও কাটা যায়। অনলাইনে টিকেট কাটতে রেলওয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই হয়তো সেটা কঠিন হবে। এজেন্টের মাধ্যমে কিংবা আপনি নিজে স্টেশনে গিয়ে টিকেট কাটতে পারেন। ইন্ডিয়াতে ততকাল নামে একটি টিকেটিং ব্যবস্থা আছে যা প্রতিটি স্টেশনে এমনকি অনলাইনেও আছে আসলে এই ব্যবস্থাতে ট্রেন ছাড়ার ২৪ ঘন্টা আগে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে। এতে নির্ধারিত কিছু আসন দেয়া হয় ।
আলাদা কিছু আসন রাখা হয় বিদেশীদের জন্য। এই টিকেট কলকাতায় ফেয়ারলি প্লেসে দেয়া হয় । পুরো ঠিকানা হল- ফেয়ারলি প্লেস, ১৪-এর কাছে, স্ট্রান্ড রোড, কলকাতা।
এখানে আপনার পাসপোর্ট নিয়ে হাজির হন, আশা করা যায় টিকেট পেয়ে যাবেন । তবে সকাল সকাল এলে সেদিনের টিকেট পাবার সম্ভাবনা বেশি । সকাল সকাল বলতে ১০টার আগে এবং এখানেও ততকালে টিকেট দেয়া হয় । ততকালে টিকেটের দাম একটু বেশিই পড়ে । কেন্সার রুগীদের জন্য এবং তার এটেন্ডেট ( সাথে থাকবেন যে যিনি ) এর জন্য টিকেটে ছাড় আছে ।
ইন্ডিয়ান রেলের সিটের কয়েক প্রকার ক্লাস আছে । প্রধান দুটি ভাগ হল এসি ও নন এসি । নন এসির মধ্যে আছে জেনারেল ( গাদাগাদি সিস্টেম ) এবং স্লিপার ( শুয়ে বসে যাওয়া যায় ) । আর এসির মধ্যে আছে ৩ টায়ার এসি ( উপর থেকে নিচে ৩ জন শোবার এবং পাশাপাশি ৩ জন বসার ব্যবস্থা আছে ), ২টায়ার এসি ( উপর থেকে নিচে ২ জন শোবার এবং পাশাপাশি ২ জন বসার ব্যবস্থা আছে ) । এসি ছিট গুলোতে একটি বালিশ, বালিশ কাভার, একটি বাংকেট / কম্বল, দুটি চাদর ও একটি ছোট তোয়ালে দেয়া হয় তবে নন এসিতে নিজেকেই সাথে নিতে হবে এসব যদি প্রয়োজন মনে করেন।
ট্রেনের টিকেট করার সময় আপনার কাছে ট্রেনের নাম্বার জানতে চাওয়া হতে পারে। কোন রুটে কোন ট্রেন চলে, কবে কবে চলে এবং তাদের নাম্বার কি জানতে ভিজিট করুন। এই নাম্বার টি সাধারনত ৫ ডিজিটের হয়ে থাকে। যেমন- 22818 হল MYS HOWRAH EXP ট্রেনের নাম্বার ।
আপনার টিকিটের স্টেটাস জানার জন্য ইন্ডিয়ান রেইলওয়ের ওয়েব সাইটে গিয়ে PNR Status চেক করুন। অনেক সময় দেখা যায় যে প্রথমে আপনার সিট নাও হতে পারে, তবে পরে আবার সিট হয়ে যায় । তবে ওয়েটিং লিস্ট দুরে থাকলে অনেক সময় রিস্ক হয়ে যায় সিট কনর্ফাম হওয়ার।
এজেন্টের মাধ্যমেও টিকেট কাটতে পারবেন । এরা টিকেট প্রতি ২০০ থেকে ৭০০ রুপি পর্যন্ত সার্ভিচ চার্জ নেবে ।
ট্রেন কোন প্লাটফর্মে দাড়াবে ?
হাওড়া স্টেশনে ২৩টি প্লাটফর্ম আছে । এরকম অনেক স্টেশন আছে যার প্লাটফর্ম সংখ্যা বেশ কয়েকটি। ভারতে প্রতিটি ট্রেনের আলাদা নম্বর আছে। আপনার টিকেটেই লিখা থাকবে আপনার ট্রেনের নম্বর। প্রতিটি স্টেশনেই স্পিকারে ঘোষণা করা হয় কোন ট্রেন কোন প্লাটফর্মে দাঁড়াবে। আবার বড় বড় স্টেসন গুলোতে ডিসপ্লে বোর্ড আছে এবং সেখানেও দেখানো হয় কোন ট্রেন কোন প্লাটফর্মে দাঁড়াবে। ট্রেন ছাড়ার ৪০ – ৪৫ মিনিট আগে থেকে ডিসপ্লে বোর্ডে দেখায় ।
ট্রেন ছাড়ার মিনিমাম ২০ মিনিট আগে প্লাটফর্মে যান, কারণ ট্রেনের বগি অনেক বেশি। অনেকটা পথ হাঁটতে হতে পারে। তবে যাদের চলাচলে সমস্যা, স্টেশনে খোঁজ নিন, হুইল চেয়ার পাওয়া যেতে পারে। কিংবা অনেক সময় কুলিরও সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।
ছোট স্টেশনগুলোর ক্ষেত্রে স্টেশনে দেখে নিন আপনার ট্রেনটি কোন প্লাটফর্মে দাড়াবে এবং আপনার বগিটি কোন যায়গায় দাঁড়াবে। স্টেশন মাস্টারের রুমের আশেপাশে নোটিশ বোর্ডে বিস্তারিত দেয়া থাকে ।
ট্রেনের ভেতর কী খাবেন ?
ট্রেনের যাত্রাটা বেশ বড়ই। আপনি চাইলে আগে থেকেই খাবার নিয়ে ট্রেনে উঠতে পারেন, কিংবা ট্রেনের ভেতরেও খাবার কিনতে পারেন। ওয়েটাররা এসে অর্ডার নিয়ে যাবেন আপনার কাছ থেকে, শুধু একটু খেয়াল রাখতে হবে কখন এলেন তারা। আবার বড় বড় স্টেশন গুলোতে ট্রেন বেশ কিছুটা সময় দাড়ায়, সেক্ষেত্রে প্লাটফর্ম থেকেও খাবার নিতে পারেন ।
শুকনো খাবার হিসেবে নিতে পারেন বিস্কুট, চিপস, কুড়কুড়ে, শুকনো কেক আর ভারি খাবার হিসেবে ভেজ নন ভেজ দু ধরনের খাবারই পাবেন। ট্রেনের ভিতরের ভেজ খাবার হয় ভেজ কারি রাইস, ভেজ বিরিয়ানি, আর নন ভেজ হয় ডিম বিরিয়ানি, কারি রাইস। দাম ৬০ রুপি থেকে ১০০ রুপির মধ্যে।
খাবারের কথা যখন এলোই তাহলে আরও একটি বিষয় আসে, তা হল ত্যাগ করা । এসি কামরাগুলোতে সুব্যবস্থা আছে টয়লেটের। সাবান, পানি, মগ সবই পাবেন। তবে নন এসি কামরার ক্ষেত্রে সাবান এবং একটি ছোট মগ সাথে রাখা ভালো। সাথে রাখুন টিস্যু বা ন্যাপকিন ।
কোন স্টেশনে নামতে হবে ?
ভেলোরের স্টেশনের নাম কাটপাড়ি স্টেশন ( Katpadi Station )। আপনার টিকেট যদি ভেলোর পর্যন্ত হয়, তা হলে আপনাকে নামতে হবে এখানেই।
অনেক সময় কলকাতা থেকে চেন্নাই পর্যন্ত টিকেট করা থাকে। কারন সব ট্রেন কাটপাড়ি যায় না। সেক্ষেত্রে আপনাকে চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে নামতে হতে পারে। আবার কোন কোন ট্রেন চেন্নাই এগমোর স্টেশনে নামিয়ে দেবে আপনাকে। এবার সেখান থেকে বাসে কিংবা ট্রেনেও আপনি ভেলোর যেতে পারেন । ট্রেনে গেলে খরচটা কম পড়ে।
আপনাকে যদি চেন্নাই এগমোর স্টেশনে নামতে হয়, তো সেখান থেকে আপনি আবার চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে আসুন। বাস ভাড়া ৫ রুপি, আর অটো ভাড়া ৫০ রুপি। এবার চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে কাটপাটি পর্যন্ত ট্রেনের টিকেট করে চলে আসুন। প্রয়োজনে কর্তব্যরত পুলিশদের সহায়তা নিন স্টেশনে। আবার বড় স্টেশনগুলোতে হেল্প ডেস্কও আছে ।
যদি চেন্নাই এ আপনাকে থাকতে হয় তো চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনের পাশেই কিছু
হোটেল/লজ/গেস্ট হাউস পাবেন, ভেলোরে থাকবেন কোথায় ?
ভেলোর স্টেশনে নামার পর বাসে কিংবা অটোতে করে আপনি সি এম সি যেতে পারবেন । সি এম সির পাশেই বেশ কিছু হোটেল আছে। সেগুলোতে থাকতে পারেন। কিংবা সাইদাপেটেও থাকতে পারেন। হোটেল/লজ ভাড়া ১৫০ থেকে ৬০০ পর্যন্ত। সুবিধা ভেদে দাম কম বেশি হতে পারে। সিএমসির পাশের লজগুলোর ভাড়া একটু বেশি। সাইদাপেটে ভাড়া একটু কম। হোটেল ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করলে রান্নার সরনজামও পাবেন নিজে রান্না করে খাবার জন্য। বাঙালি হোটেলও আছে কিছু।
যে হোটেল বা লজে থাকুন, হোটেল/লজের পেমেন্ট স্লিপগুলো ঠিকমত সংগ্রহ করুন এবং সাথে রেখে দিন । পরবর্তি ঝামেলা এড়াতে এগুলো কাজে দেবে।
ভেলোরের মানুষ কোন ভাষায় কথা বলে ?
ভারত অনেক বড় একটি দেশ এবং স্থান ভেদে এদের ভাষার পরিবর্তনও বেশ। কলকাতাতে আপনি বাংলা, হিন্দি কিংবা ইংলিশ চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে তামিলরা হিন্দিতে কথা বলতে অভ্যস্ত নন। বলতে বা শুনতে আগ্রহীও নন। তবে ইদানিং হিন্দি চলে। ভেলোরের অনেকেই এখন বাংলা কিছু বোঝেন এবং কথাও বলের। সিএমসির ডাক্তাররাও কিছু কিছু বাংলা বোঝেন এবং বলেন। তবে ইংলরেজি বা হিন্দি হলে ভাল কাজ চলবে। এখানে অনেক জায়গাতেই বাংলা লেখা দেখতে পাবেন। মোটামুটি চারটা- তামিল, হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজি।
কি খাবেন ভেলোরে ?
আমরা যেমন ভাতে পাগল, তেমনি ভেলোরের স্থানীয়রা ইটলিতে পাগল। স্থানীয় খাবার অনেকের পক্ষেই খাওয়া সম্ভব নয়। কারোন এদের বেশিরভাগ খাবারই কিছুটা টক এবং এরা কারি পাতা প্রচুর ব্যবহার করে আমাদের ধনে পাতার মতো।
কিছু বাঙালি খাবারের হোটেল রয়েছে। তবে সবগুলতে পুরো বাঙালি স্বাদ পাওয়া যায় না। আপনি চাইলে নিজেও রান্না করে খেতে পারেন। বেশি দিন থাকতে হলে নিজে রান্না করে খাওয়াটাই ভালো।
আপনি ৪০-৬০ টাকা/মিল হিসাবে ভাত পেয়ে যাবেন। এছাড়া সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার ও উপভোগ করতে পারেন তবে ৩-৪ দিন এর বেশি টানতে পারবেন না।
এপোয়েন্টমেন্ট:
এপোয়েন্টমেন্ট মুলত দুই প্রকার এর হয়!
১. জেনারেল এপোয়েন্টমেন্ট : জুনিয়ার ডাক্তার দেখেন
২. প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট : সিনিয়ার ডাক্তার রা দেখেন
এখান থেকে কেউ গেলে অবশ্যই প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট নেবেন।
এপোয়েন্টমেন্ট পদ্ধতি:
সাধারনত অফলাইন & অনলাইন দুই রকমের এপোয়েন্টমেন্ট নেওয়া যায়। যেহেতু আমরা বাংলা থেকে যাচ্ছি তাই আমাদের ওখানে কোন লোক নেই ধরে নিয়ে অনলাইন এপোয়েন্টমেন্ট করাতে হবে।
অনলাইন এপোয়েন্টমেন্ট : মোটামুটি যেহারে ভীড় হয়, তাতে কোন ডিপার্টমেন্ট এর প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট পেতে আপনাকে ১৫ দিন থেকে ৩ মাস অব্দি সময় লাগতে পারে।
অফলাইন এপোয়েন্টমেন্ট:
ভেলোর এর মেন গেট এ ঢুকলেই দেখতে পাবেন SILVER GATE FOR NEW APPOINTMENT..
আপনি আপনার প্রব্লেম টা ওখানে জানালেই ওরা নিদিষ্ট ডিপার্টমেন্ট এ এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে দেবে। এক্ষেত্রে আপনি ৩-৩০ দিনের মধ্যে প্রাইভেট এপোয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন একপ্রকার নিশ্চিত।
জরুরীকালীন ট্রিটমেন্ট:
এর জন্য আলাদা EMERGENCY বিভাগ রয়েছে, সেখানে যাবেন। ওরাই সব প্রসেস বলে দেবে।
জেনারেল এপোয়েন্টমেন্ট: অনলাইন অথবা অফলাইন এ করা যায়। ১-৩ দিন এর মধ্যে এপোয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন।
কোন ডিপার্টমেন্ট এ যাবেন?
আপনি অনলাইন এ আপোয়েন্টমেন্ট নিতে গেলে কোন ডিপার্টমেন্ট এ নেবেন সেটা জানা জরুরী, নাহলে টাইম & পয়সা নষ্ট। ধরুন- কানের প্রব্লেম- ENT, হরমোন প্রব্লেম- endocrinology, ক্যন্সার পেশেন্ট: onchology etc...
যদি না বুঝতে পারেন তাহলে ওদের সাইট এ দেওয়া হেল্পলাইন এ ফোন করে জেনে নিতে পারেন। প্রব্লেম বললেই ওরা ডিপার্টমেন্ট বলে দেবে। আপনার রোগ এর লক্ষন অনুযায়ী ডিপার্টমেন্ট এর আন্ডারে CLINIC বাছতে হয়।
CMC DETAILS:
সিএমসি এর মেন ৩-৪ টা বিল্ডিং।
=> OPD BUILDING (outdoor patients) - আপনাকে ডাক্তার দেখবেন মুলত এই বিল্ডিং এ। এর ৫ টা ফ্লোর এ কাজ হয় সাধারনত।
গ্রাউন্ড ফ্লোর: এই ফ্লোর টা সমস্ত টেষ্ট এর জন্য বরাদ্দ। blood, x-ray,urine test সহ প্রায় সব টেষ্ট এখানে হয়। ডাক্তার যে টেষ্ট গুলো লিখে দিয়েছে, সেই স্লিপ টা নিয়ে পেমেন্ট ক্যাস কাউন্টার এ যেতে হয়। পেমেন্ট করার জন্য CASH / DEBIT -CREDIT-ATM CARD/ CRISS CARD ব্যাবহার করা হয়।(বিস্তারিত পরে দেওয়া আছে).।
পেমেন্ট করার স্লিপ এ লেখা থাকবে আপনাকে কোথায় কোন রুম এ যেতে হবে। ধরুন ব্লাড টেষ্ট এর জন্য - G20, XRAY- G11 এই রকম। আপনি সকাল সকাল এসে লাইন এ দাঁড়িয়ে টেষ্ট গুলো করিয়ে নিন। সকাল ৬ টা থেকে কাজ শুরু হয়ে যায়। আপনাকে ৫-৫:৩০ টা থেকে লাইন এ দাড়াতে হবে তাড়াতাড়ি এর জন্য।
*ফাস্ট ফ্লোর, সেকেন্ড ফ্লোর, থার্ড় ফ্লোর এ বিভিন্ন রুম এ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর প্রাইভেট & জেনারেল ডাক্তার রা দেখেন। আপনার এপোয়েন্টমেন্ট লেটার এ লেখা থাকবে আপনাকে কোথায় কোন ফ্লোর এ যেতে হবে।
উদাহরন স্বরুপ:
*OPD Building SECOND FLOOR 210, report to MRO at 10:30am... র মানে হল আপনাকে সেকেন্ড ফ্লোর এ ২১০ নং রুম এর সামনে গিয়ে MRO COUNTER E এপোয়েন্টমেন্ট কপি টা জমা দিতে হবে সকাল ১০:৩০এর সময়। ১ ঘন্টা আগে পিছু হলেও প্রব্লেম হয়না সাধারনত।
*ISSCC BUILDING:- এটাও OPD BUILDING এর মত গুরুত্ব পুর্ন। এখানে যেসব কাজ গুলো হয়, নিউ এপোয়েন্টমেন্ট, রিপিট এপোয়েন্টমেন্ট, ফার্মেসী, ক্রিস কার্ড, CASH PAYMENT, & অবশ্যই ডাক্তার রাও দেখেন উপরের ফ্লোর গুলিতে।
NEW APPOINTMENT:
সাধারনত ৪-১০ অব্দি কাউন্টার এ নিউ আপোয়েন্টমেন্ট, টেষ্ট, অনান্য কিছুর জন্য পেমেন্ট করা হয় নগদ টাকার মাধ্যমে।
=>RE- APPOINTMENT :
11-13 নং কাউন্টার এ কোন ডাক্তার এর পুনরায় এপোয়েন্টমেন্ট করানো হয়। এক্ষেত্রে কাউন্টার এ বল্ললেই হবে ডাক্টার কবে দেখতে চেয়েছে, ওরা এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে দেবে।
=>ফার্মেসী :
সাধারনত ৩ মাসের জন্য ওষুধ দেয় রোগীদের। ফার্মেসী তএ পেমেন্ট করে ওষুধ নেবার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়।
=> CRISS CARD:
এই কার্ড টা বানিয়ে নিলে আপনার হয়রানি অনেকখানি কম হয়ে যাবে। আপানার HOSPITAL NO.( PATIENT ID) দেখিয়ে বললেই ৪০২ নং কাউন্টার থেকে ক্রিস কার্ড বিষয়ক যাবতীয় সাহায্য করে দেবে। এই ক্রিস কার্ডে আপনাকে টাকা ভরতে হবে অগ্রিম ভাবে ( trhough cash transffer /atm transffer). তবে আমি ATM card ইউজ করেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। ক্রিস কার্ডের মজা হল বেশি বড় লআইনে দাঁড়াতে হবে না পেমেন্ট এর জন্য কারন criss card payment counter আছে প্রায় সব জাইগায়।
=> APPOINTMENT DATE CHANGE:
এগিয়ে বা পিছিয়ে আনা...
ISSCC building e HELPDESK এ লম্বা লাইন দেবেন পেমেন্ট স্লিপ টা নিয়ে। অনেক ভীড় হয়। ওখানে আপনার প্রব্লেম বঅললেই ওরাই ডেট চেঞ্জ এর ব্যাবস্থা করে দেবে।(আগে যদি ডেট ফাকা থাকে তবেই)
=>PMR BUILDING:
সাধারনত ফিজিওথেরাপি ডিপার্টমেন্ট বলা যেতে পারে। বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি এর যন্ত্রপাতি, জুতা, ডুপ্লিকেট ব্রেস্ট( সিলিকন ব্রেস্ট), ইত্যাদি সকল জিনিস এর জন্য এই ডিপার্টমেন্ট এ যেতে হয়। পেমেন্ট স্লিপ অথবা এপোয়েন্টমেন্ট লেটার এ PMR BUILDING উল্লেখ থাকবে।
=>WARD BUILDING:
পেশেন্ট দের সার্জারি & ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন এ এখানে পেশেন্ট দের ভর্তি করা হয়। এত পরিস্কার পরিছন্ন & জীবাণুমুক্ত জাইগা হয়ত আপনার বাড়ির রুমগুলিও নয়। DIAGONASIS এর উপর বেশি জোর দেয়। অনেক টেষ্ট দেয়। তারপর যখন রোগ ধরা পড়ে তখনই চিকিৎসা করে। (কোলকাতার চেয়ে এখানেই এগিয়ে)।
টেষ্ট গুলি মুলত ৩ জায়গায় করানো হয়।
@saju_mia@saju_mia
=>OPD BUILDING:
সাধারণত ম্যাক্সিমাম জনের টেষ্ট এখানেই করানো হয়। তবে বিশেষ কিছু টেষ্ট এর জন্য যেমন USG এর জন্য ৩-৪ দিন ও লাগতে পারে। তাই যখন ডাক্টার এর সাথে কথা বলবেন ওনাকে রিকুয়েস্ট করবেন যেন আপনার টেষ্ট গুলি ALPHA CLINIC এ পাঠিয়ে দেয়। ওনাদের একটা কলমের খোচা দিলেই আপনার ৩-৪ দিনের কাজ টি ১ দিনেই হয়ে যাবে।
=>EMERGENCY PATIENT:
এর জন্য এমার্জেন্সী টেষ্ট এর ব্যাবস্থা আছে।
এই টেষ্ট গুলোর কোন রিপোর্ট আপনি পাবেন না, টেষ্ট গুলো হয়ে গেলে অটমেটিক রিপোর্ট টা আপনার খাতায় চলে যাবে অর্থাৎ আপনার HOSPITAL NO. & যে ডাক্তারবাবু কে দেখবেন সেই ডাক্তারবাবুর এর কাছেও চলে যাবে। তাই, প্রব্লেম এর কিছু নেই।