03/10/2025
ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন কিন্তু ওজন কমছে না - এক পেশেন্ট আজ এটা বলে অনেক দুঃখ প্রকাশ করলেন।
তার ভাষ্য মতে সারাদিন বাসায় এতো কাজ কর্ম করতে হয়, কম খেলে শরীর কাঁপে। কাজ করতে পারেন না।
কিন্তু ডক্টর বলেছে ওজন কমাতে।
শুনেছেন ভাত কম খেলেই নাকি ওজন কমে যায়। তাই নিজে নিজে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য।
ওজন তো কমেই নি বরং দূর্বলতা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ!
তার হিস্ট্রি নিয়ে দেখা গেলো কম ভাত খেলেও সে মিড মর্নিং স্ন্যাকস হিসেবে খান বিস্কিট-চানাচুর কিংবা মিস্টি। আবার সাথে থাকে দুই একটা কলাও !
সন্ধ্যায় নাস্তার সময় খান নুডুলস / পুরি - সিঙ্গারা।
সকাল সন্ধ্যা ২ কাপ চা তো আছেই, অল্প চিনি সহ দুধ চা।
আর সবজি খেলে নাকি আলু - মিষ্টি কুমড়া থাকেই। সবজিই তো। তাই না?
আসলে যেই জায়গাটায় আমরা ভুল করি তা হলো কোন খাবার খেলে তা শরীরে কিভাবে কাজে লাগে তাই জানিনা।
অনেকেই ভাবে, শুধু ভাত কমালেই ওজন কমে যাবে। কিন্তু আসল বিজ্ঞানটা অন্য জায়গায়।
শরীরে খাবার ঢোকার পর তা শুধু পেট ভরে রাখে না - ভাঙে, হজম হয়, শোষিত হয়, তারপর হরমোনের মাধ্যমে এনার্জি ও ফ্যাট স্টোরেজে প্রভাব ফেলে।
সাদা ভাত একদিকে দ্রুত ভাঙে, ফলে গ্লুকোজে পরিণত হয় দ্রুত।অন্যদিকে আপনি যদি সাথে বিস্কিট, চানাচুর, মিষ্টি বা ভাজাভুজি খান—তাহলে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ একটু পর পরই ওঠানামা করতে থাকে।
ফলে রক্তে একটু পর পর দেখা দেয় 'গ্লুকোজ স্পাইক'!
ফলাফল?এই গ্লুকোজ গুলোকে ঠিকানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ইনসুলিন লেভেল সবসময় হাই থাকে।
রক্তে হাইপার ইনসুলিন আবার ফ্যাট বার্ন হতে দেয় না, বরং বাড়তি গ্লুকোজকে ফ্যাট হিসাবে জমা করতে সিগনাল দেয়।
সো শুধু ভাত কমালে হবে না—পুরো খাবারের মান ও ভারসাম্যটাই হলো আসল বিষয়। যার মধ্যে কখন কোন খাবার খাবেন তার দিকেও নজর রাখতে হয়।
সংক্ষেপে বলতে গেলে -
* প্লেটে বেশি রাখতে হবে বেশি করে নন-স্টার্চি সবজি (লাউ, ঢেঁড়স, করলা, ঝিঙে, শসা ইত্যাদি) । এগুলো ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে ও তৃপ্তি বাড়ায়।
আলু বা মিষ্টি কুমড়া সবজি হলেও এগুলো স্টার্চি, তাই পরিমাণ বুঝে খেতে হবে।
* খেতে হবে মুরগি, গরু, মাছ, ডিম, ডাল এর মতো ভালো মানের প্রোটিন। এগুলো শুধু পেশি রক্ষা করে না, বরং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
* বাদাম, বীজ, মাছের তেল বা সরিষার তেল, খাঁটি ঘি, অলিভ অয়েল এসব স্বাস্থ্যকর ফ্যাট হরমোন ব্যালান্সে সাহায্য করে। এবং স্যাটাইটি (তৃপ্তি) অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় যা বার বার ক্ষুধা লাগাকে প্রতিরোধ করে।
* আর ভাত। সেটা খেতে পারেন তবে ঢেঁকি ছাটা লাল চালের। ফাইবার যুক্ত ভাত খেলে দেখবেন আপনি চাইলেও বেশি খেয়ে ফেলতে পারবেন না। অল্প খেয়েই পেট ও ভরা থাকবে দীর্ঘ সময়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শারীরিক কার্যকলাপ। সারাদিন ঘরের কাজ করলে শরীর ক্লান্ত হয় ঠিকই, কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে সেটি Structured Physical Activity বা Exercise নয়।
কারণ ঘরের কাজের মধ্যে নিয়মিত সব মাংসপেশির ব্যবহার হয় না—এতে হার্টের রেট নির্দিষ্ট লেভেলে ওঠা-নামা করে না, তাই মেটাবলিজমও যথেষ্ট বুস্ট হয় না।
হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, হালকা ব্যায়াম—এসবের মাধ্যমে আপনি শরীরকে যদি সত্যিকারের “Exercise mode”-এ আনতে পারবেন তবেই সুস্থ থাকতে পারবেন।
বরং অল্প কাজ করেই যে ক্লান্তি চলে আসে, এটা দূর হয়ে যাবে। এনার্জি বেশি সময় ধরে রাখতে পারবেন।
শুধু ভাত কে দোষ দিয়ে লাভ নেই।
সঠিক ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস + নিয়মিত ব্যায়াম + যথেষ্ট ঘুম থেকেই হতে পারে টেকসই ওজন নিয়ন্ত্রণ।
বর্ণালী মোস্তফা মুনা
নিউট্রিশনিস্ট এন্ড লাইফস্টাইল স্পেশালিষ্ট।