04/09/2025
“আমি মাংস বেশি খাই না বাবা, ফ্যাট হয়ে যাবো তাই …”
গত পরশু আমার খালা আমাকে বলছিলেন।
কথাটা শুনে আমি হাসলামও, আবার খারাপও লাগলো।
কারণ উনি যেটা ভাবছেন—এটা আসলে অনেক বাঙালিরই ধারণা।
আজও পর্যন্ত যেই আমরা এটাই শিখতে পারলাম না যে - কোনটা প্রোটিন, কোনটা ফ্যাট। কোনটা খেলে কি হবে?
কোনো ভাবে সবাই এটাই শিখসে-
মাংস = ফ্যাট
ডিম = ফ্যাট
ভাত = শক্তি
কিন্তু এই প্রোটিন এর ঘাটতি হলে যে শরীর ঠিক মতো সচল থাকবে না, তা কিভাবে বুঝাবেন?
যেগুলো নিয়ে আমরা ভাবি না -
প্রথমত, প্রোটিন Muscle তৈরি করে, যেটা শরীরের Engine এর মতো।
আপনি খাবার থেকে যেই এনার্জি গ্রহণ করেন ওগুলো খরচ করবে কে?? Engine তাই না?
এখন আপনার বডিতে যদি মাংসপেশি ই না থাকে তাহলে আপনি যে খাবার খাচ্ছেন, তার কতটুকুই বা আসলে খরচ হচ্ছে। বাড়তি টুকু তো ফ্যাট হয়ে জমে যাচ্ছে শরীরে।
যারা বলেন শরীরে শক্তি পাই না কাজ করার, আপনারা কি মাসল গুলোকে কাজে লাগান?
ঘরের কাজ কর্মে আসলে মাসল অতটাও ব্যবহার হয় না যতটা আমরা মনে করি। হ্যাঁ, যদি আগের কালের মা খালাদের মতো ধান পাড়ান, দূর থেকে ভারি পানির কলস টেনে আনা নেওয়া করেন, যাঁতা পিষেন তাহলে বিষয়টা ভিন্ন হবে।
কিন্তু এমন না হয়ে থাকলে অবশ্যই আপনার প্রতিদিন এমন কিছু শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করতে হবে যাতে সব মাংসপেশি গুলো একটিভ থাকে।
'মেশিন না চালালে যেমন জং ধরে যায়, মাংসপেশির জন্যেও বিষয়টা তাই'।
আপনি চালালে সে চলবে, শক্তি পাই না বলে বসে থাকলে কখনওই গায়েবি শক্তি চলে আসবে না!
আর এর পাশাপাশি প্রোটিন জাতীয় খাবার অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। তৃপ্তি বেশি দেয়। তাই ভাত, রুটি, মিষ্টি খাবার বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে।
উল্টো দিকে Simple Carbs যেমন - সাদা ভাত, সাদা আটা/ময়দার রুটি কিংবা যেকোনো খাবার, নুডুলস, বিস্কুট, চানাচুর, সেমাই, পায়েস, সুজি, চিনি এগুলো যত বেশি খেয়ে ফেলবেন ততো অভ্যাসের জালে আটকা পড়তে থাকবেন।
আর এছাড়া প্রোটিন হরমোন ব্যালান্স ও ঠিক রাখে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
আমাদের বডির প্রতিরক্ষা বাহিনীর এন্টিবডি এন্টিজেন তৈরি হয় কি দিয়ে?
ঠিক ভেবেছেন,এই প্রোটিন দিয়েই।
তাহলে আপনি ভালো প্রোটিন না খেলে কি সুস্থ থাকতে পারবেন?
এখন ভাবুন তো—
আমাদের বাঙালি স্বভাব কী?
➡️ এক টুকরো মাংস,২ টুকরা আলু ঝোল দিয়ে ২ থালা ভাত খেয়ে শেষ করা।
মানে প্রোটিন বা সবজি শুধু “সাইড আইটেম” হিসেবেই থেকে যায়।
কিন্তু আসলে হওয়ার কথা ছিল উল্টো।
প্লেটে বেশি জায়গা জুড়ে থাকবে শাকসবজি, মাছ বা ডিম-মাংস, আর ভাত বা শর্করা থাকবে একদম অল্প।
কিন্তু কেমন করে যেন আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে—
“ভাত মানেই এনার্জি। কম খেলে শরীর চলবে কী করে?”
বাট সায়েন্স তো অন্য কথা।
ভাতের মতো simple carb শরীরে খুব দ্রুত এনার্জি দেয়, আবার তাড়াতাড়ি শেষও হয়ে যায়।
ফলাফল →
😴 অল্প সময়েই ক্লান্তি
😡 mood swing
🤤 বারবার ক্ষুধা
অন্যদিকে, প্রোটিন আর গুড ফ্যাট ধীরে ধীরে এনার্জি ছাড়ে, অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে, আর muscle কে সক্রিয় রাখে।
শর্করা খাবেন, তবে রিফাইন্ড বা পরিশোধিত না। খাবেন - ফুল ফাইবার লাল চাল, লাল আটা (খুব বেশি ইচ্ছে হলে), রাগী আটা, যব, মিষ্টি আলু, খোসা সহ ছোলা।
তাহলে আসল শিক্ষা কি দাড়ালো—
> মাংস বা ডিম মানেই ফ্যাট নয়।
আর খাওয়ার নিয়ম কি?
খাবার প্লেটে বেশি মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, সবজি রেখে—ভাত রাখতে হবে একদম কম। আর ভাত বা রুটি জাতীয় খাবারটা খেতে হবে খাওয়ার শেষ দিকে। এমনটা কেনো? সেটা আরেকদিন বলবো।
বর্ণালী মোস্তফা মুনা
নিউট্রিশনিস্ট এন্ড লাইফস্টাইল ডিজিজ স্পেশালিষ্ট
এশিয়া জেনারেল হাসপাতাল, টঙ্গী, গাজীপুর।