28/05/2025
পিরিয়ড এর সময় শরীর-মাথা কিছুই কাজ করেনা!এটা প্রায় সব ফিমেল দেরই কমপ্লেইন।
বয়স কম বা বেশি এটা বিষয় না।
একজন নারী যখন প্রতি মাসে মেন্সট্রুয়েশন বা পিরিয়ড এর মধ্য দিয়ে যান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে দূর্বল বোধ করেন।
এমন হওয়ার কারণটা কি?
পিরিয়ড সাইকেল চলাকালীন দেহে যে হরমোনাল পরিবর্তন গুলো হয় তার পাশাপাশি ঠিকভাবে ঘুম না হওয়া, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া,দেহ থেকে ভালো পরিমাণে রক্ত বের হয়ে যাওয়া সবকিছু একত্রেই মূলত এই দূর্বল বোধ হওয়ার কারণ।
National Sleep Foundation এর মতে শতকরা ৩০ ভাগ নারীরই পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ঘুম এবং খাওয়া দাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
এর সাথে নানান রকমের ক্র্যাম্পস তথা তলপেট বা কোমড়ের ব্যাথা, পা ব্যাথা,মাথাব্যথা, পেট ফেঁপে থাকা, অস্বস্তি বোধ হওয়া, ঘন ঘন মুড সুইং হওয়া, পরিষ্কার ভাবে চিন্তা করতে না পারা, মনোযোগ দিতে ব্যাঘাত ঘটা এগুলো তো আছেই।
এই সময়ে একটু স্বস্তি পাওয়ার যে জিনিস গুলো সাহায্য করতে পারে তা নিয়ে একটু আলোচনা করছি।
১। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ঃ
ম্যাগনেসিয়াম muscle relaxing এর জন্য খুবই কার্যকর একটি নিউট্রিয়েন্ট। পিরিয়ডের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে এটি হতে পারে একটি perfect relief ।
মেন্সট্রুয়েশন এর সময় ইউটেরাস বা জরায়ুর পেশী গুলোর সংকোচন হওয়ার কারণেই মূলত এরূপ ব্যাথা হয়।খাবারের সাথে অথবা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করলে এই জরায়ু পেশীগুলো রিল্যাক্সড হয় এবং তা ব্যাথার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।
কিছু ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হলো- পালং শাক, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, শিমের বিচি, টুনা ফিশ, বাদামী চাল, কাঠবাদাম, ডার্ক চকোলেট, এভোকাডো, দই, কলা।
২।বি ভিটামিনসঃ
Vitamin B1, B2, B6, B9 এবং B12 মেন্সট্রুয়েশন ক্র্যাম্পস থেকে রিলিফ পেতে সাহায্য করে। কিভাবে?
আসুন দেখে নেই।
Thiamine বা vitamin B1 নিউরোমাসকুলার এবং সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম একটিভিটিস এর সাথে জড়িত। অর্থাৎ এটি জরায়ু পেশীগুলোর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মুড সুইং নিয়ন্ত্রণ এর জন্যেও থায়ামিন প্রয়োজন।
Riboflavin বা Vitamin B2 মূলত দেহে এনার্জি তৈরিতে সাহায্য করে এবং Vitamin B6 ও Folate কে একটিভেট করে। এদের কাজ নিয়ে একটু পর ই বলছি।
Pyridoxine বা Vitamin B6 দেহে serotonin নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটার প্রোডাকশনে সাহায্য করে যা কিনা আমাদের মুড কন্ট্রোল করে।
Folate বা Vitamin B9 দেহে এনার্জি উৎপাদন এবং রক্ত পুনরুৎপাদন এর জন্য কাজ করে। এটি Dopamine এবং serotonin নামক নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতেও সাহায্য করে যারা কিনা ইমোশন এবং মুড কন্ট্রোল করে, বিশেষ করে মাসের এই সময়ে।
Cobalamine বা Vitamin B12 দেহের ক্ষয় হওয়া রক্তকে পুনরুৎপাদন করতে সাহায্য করে।
কিন্তু এ ভিটামিন গুলোর চাহিদা যেহেতু খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা একটু কষ্টসাধ্য তাই B complex সাপ্লিমেন্ট থেকে গ্রহণ করাই ভালো।
৩।হলুদ ঃ
পিরিয়ড এর সময় মাঝারি থেকে তীব্র পর্যায়ের ক্র্যাম্পিং নির্দেশ করতে পারে ইনফ্লেমেশনকে। আর একে ফাইট করতে পারে এমন একটি জাদুকরী খাবার হলো হলুদ।
হলুদে বিদ্যমান বায়োএকটিভ কম্পাউন্ড curcumin এর এন্টি ইনফ্লামেটরি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণের কারণে এটি ইনফ্লামেশন এর সাথে সাথে সকল প্রকার ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে ম্যাজিক এর মতো।
তবে একটি ভাবার বিষয় হলো curcumin একা ব্লাড সার্কুলেশন এ ভালো ভাবে শোষিত হতে পারে না। কিন্তু এর সাথে গোল মরিচের গুঁড়ো যুক্ত করলে এর শোষণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই পানিতে হলুদের গুঁড়ো ও গোল মরিচের গুঁড়ো একত্রে মিশিয়ে কিছুক্ষণ মাঝারি আঁচে জ্বাল দিয়ে মিশ্রণটি পান করলে তা পিরিয়ড ক্র্যাম্প হতে রিলিফ পেতে সাহায্য করবে।
৪।হার্বাল চাঃ
বিভিন্ন উপকারী হার্ব যেমন আদা,লবঙ্গ,আমলকি, তুলসী, গ্রিনটি, সজিনা পাতা, কালোজিরা, দারুচিনি, যষ্ঠী মধু, ক্যামোমিল যুক্ত চা এদের antiinflammatory এবং antianxiety প্রভাবের সাহায্যে দেহে এক ধরনের আরামদায়ক ভাব এনে দিতে সক্ষম। যা কিনা পিরিয়ড ক্র্যাম্প থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
৫।স্ট্রেস রিলিফঃ
কিছু নারীদের মধ্যে পিরিয়ডকালীন ক্র্যাম্প বেশি হওয়ার একটা বড় কারণ হলো স্ট্রেস।
যারা অনেক বেশি স্ট্রেস এর মধ্যে থাকে, বিশেষ করে মেন্সট্রুয়াল সাইকেল এর প্রথম দিকে, তাদের মধ্যে পিরিয়ড ক্র্যাম্প বেশি হতে দেখা যায়।
তাই স্ট্রেস থেকে কিভাবে দূরে থাকা যায় সেদিকে একটু খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আর স্ট্রেস কমানোর একটি ভালো উপায় হতে পারে মেডিটেশন এবং এক্সারসাইজ।
৬।এক্সারসাইজ ঃ
এক্সারসাইজ এবডোমেন এরিয়াতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করার মাধ্যমে পিরিয়ড ক্র্যাম্প কমাতে পারে। এক্ষেত্রে সাহায্য করে স্ট্রেচিং এবং যোগ ব্যায়াম জাতীয় এক্সারসাইজ গুলো।
৭।গরম পানির উষ্ণতাঃ
হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি নিয়ে তার সাহায্যে পেট ও কোমড়ের ব্যাথার স্থানে শেক নিলে এটি দেহের এই অঞ্চলের পেশীগুলোকে রিলাক্সড করে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং ব্যাথার স্থান গুলোতে আরাম ভাব এনে দিতে পারে।
সবশেষে যেগুলো না বললেই নয় এমন কিছু বিষয় হলো -
-এসময় অবশ্যই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
-চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকস সহ বেশি চিনিযুক্ত খাবার গুলো এরিয়ে চলতে হবে।
- ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ ফ্রেশ শাক সবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
- মোবাইল নেটওয়ার্ক, ওয়াইফাই, সেলুলার ডাটার রেডিয়েশন থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
- এ সময়ে দিনে অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
বর্ণালী মোস্তফা মুনা
নিউট্রিশনিস্ট এন্ড লাইফস্টাইল স্পেশালিষ্ট।