19/08/2023
সবাই সময় থাকতে সাবধান হোন
২০২৩ সালের এই জমানায় এসেও খোদ ঢাকা শহরের মানুষ যদি বাসায় অদক্ষ ধাই এনে ডেলিভারি করায়! সেটা আসলেই মেনে নেয়া যায়না।
গতকাল শুক্রবার সকালে ইমারজেন্সিতে ডিউটি করছিলাম। ঝাঁকে ঝাঁকে জ্বরের পেশেন্ট, এদের মধ্যে ম্যাক্সিমামই ডেঙ্গি। হঠাৎ কান্না করতে করতে দুই নারী উপস্থিত। একজনের কোলে সাদা একটা বাচ্চা, আরেকজন এর হাতে নীল একটা পলিব্যাগ। দুজনের মাঝে সাদাটে একটা রশির মতো সংযোগ!
প্রথম দেখায় বুঝে উঠতে পারিনি। পরে দেখলাম বাচ্চা হওয়ার পরে প্লাসেন্টা (জরায়ু ফুল) না কেটেই নিয়ে চলে আসছে!
হিস্ট্রি নিয়ে জানলাম, বাচ্চা ডেলিভারির পরে কান্না করেনি (এটাকে মেডিকেল এর ভাষায় বলা হয় perinatal asphyxia.) এমন বাচ্চাকে নাক মুখ গলা ভালো করে পরিষ্কার (সাকশন) দিয়ে পিঠে ম্যাসাজ দিতে হয় (রিসাসিটেশন করা ... এটা জটিল ব্যাপার, অভিজ্ঞ লোক দরকার)। এগুলো ম্যানেজমেন্ট হাসপাতাল ছাড়া কখনোই কোন বাসায় সম্ভব না।
যাইহোক, বাচ্চা ডেলিভারির পরে কান্না করেনি, বাচ্চাটার কর্ড বেঁধে কেটে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসলেও হয়তো সেভ করা যেতো। কিন্তু অদক্ষ ধাই বাচ্চাটা ডেলিভারির পর কর্ডে সামান্য একটা সুতা দিয়ে ঢিলেঢালা বাঁধন দিয়ে কর্ড না কেটেই হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এতে করে ঢিলেঢালা থাকা সুতা বাচ্চার কর্ডে চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে। বাচ্চার শরীরের সমস্ত রক্ত কর্ডের মধ্য দিয়ে প্লাসেন্টা তে চলে গিয়েছে। বাচ্চা হয়ে গেছে সাদা, ফ্যাকাশে। পরিণতি যা হবার তাই, আমাদের কাছে আসার আগেই মৃত্যু।
এর পিছনে কে দায়ী?????
একটা মায়ের দীর্ঘ ৯ মাসের শারিরীক, মানসিক যুদ্ধের শেষে ফুটফুটে বাচ্চাটি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হওয়ার, সফল হওয়ার গল্প লেখার বদলে লিখতে হচ্ছে কষ্ট ও বেদনার গল্প। এর পিছনে দায়ী কারা? দোষী কারা??
দেশের প্রত্যেকটি সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে, উপজেলা হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিকেও নরমাল ডেলিভারি করানো হচ্ছে প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে এবং বিনামূল্যে।
এরপর ও কেন মানুষ একজন গর্ভবতী নারীর জন্য এতটুকু সহানুভূতি দেখিয়ে ভালো জায়গায় ডেলিভারি করাতে নিয়ে যায়না?
এইসব ফ্যামিলি মেম্বারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত একটা খুনের অপবাদে।
এরা খুনী। এরাই খুনী।
সময় থাকতে গর্ভবতী নারীর যত্ন নিন, দায়িত্বশীল আচরণ করুন। তাহলে মা, বাচ্চা দুজনই ভালো থাকবে।
কার্টেসি :ডা. মুমিনুর রহমান জুয়েল
কালেক্টেড