
24/07/2025
আমাদের দেশে এখনো একটি বড় ভুল ধারণা প্রচলিত আছে— ডায়েটিশিয়ান মানেই এমন একজন নারী, যিনি মূলত ওজন কমানোর পরামর্শ দেন, নিজে সব সময় সুঠাম থাকেন এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন।
অনেকের ধারণা, ডায়েটিশিয়ানের কাছে কেবলমাত্র ওজন বেশি এমন মানুষরা যান – শুধু সৌন্দর্য বা পোশাকে মানানসই দেখানোর উদ্দেশ্যে।
কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
একজন ক্লিনিকাল ডায়েটিশিয়ান হলেন একজন চিকিৎসা-সহায়ক বিশেষজ্ঞ, যিনি চিকিৎসক দলের সঙ্গে মিলে রোগীর জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও বৈজ্ঞানিক পুষ্টি পরিকল্পনা তৈরি করেন।
যেমন:
তৃতীয় ডিগ্রি পোড়া (Burn) রোগী
ক্যান্সার রোগী
আইসিইউ বা সেপসিসে আক্রান্ত রোগী
কিডনি ও লিভার জটিলতায় ভুগছেন এমন রোগী
অপুষ্ট শিশু
গর্ভবতী ও প্রসূতি মা
অপারেশনের পরবর্তী রিকভারি অবস্থায় থাকা রোগী
এই ধরনের পরিস্থিতিতে সঠিক পুষ্টিই হতে পারে চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে, বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে, পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনা এখনো সীমিত। অবকাঠামোগত ঘাটতি এবং সচেতনতার অভাবে অনেক রোগী অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকেন, যার ফলে চিকিৎসার কার্যকারিতা কমে যায় এবং সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে।
এই প্রেক্ষাপটে আমি, আমার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে, একটি তৃতীয় ডিগ্রি পোড়া রোগীর জন্য সাধারণ পুষ্টি নির্দেশিকা তুলে ধরছি।
এটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে, তবে অন্তত পুষ্টির গুরুত্ব অনুধাবনে সহায়তা করবে বলে আশা করছি।
🔹 তৃতীয় ডিগ্রি পোড়া রোগীর পুষ্টি পরিকল্পনা
শরীরে পোড়া মানেই শুধু বাহ্যিক ক্ষতি নয়—
এই সময়ে রোগীর শরীরের মধ্যে:
দ্রুত শক্তি ক্ষয় ঘটে
টিস্যু ক্ষয় হয়, নতুন কোষ গঠন দরকার হয়
সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
শরীরের চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়ে যায়
সঠিক পুষ্টি না পেলে:
ক্ষত শুকাতে দেরি হয়
সংক্রমণ বেড়ে যায়
জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে
🕒 পুষ্টি কখন শুরু করা উচিত?
রোগীর রক্তচাপ ও শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খাবার শুরু করা উচিত
রোগী যদি অচেতন থাকেন, তাহলে নাকের মাধ্যমে টিউব ফিডিং (NG tube) করা যেতে পারে
যদি মুখে খাওয়া সম্ভব না হয়, তবে স্যালাইনের মাধ্যমে (IV) পুষ্টি দেওয়া হয়
---
🍽 পুষ্টির উপাদান ও পরিমাণ
শক্তি ও প্রোটিন চাহিদা:
| বয়স | শক্তি (ক্যালরি) | প্রোটিন | |------|------------------|----------| | শিশু | প্রতি কেজিতে ৬০–১০০ ক্যালরি | প্রতি কেজিতে ২.৫–৪ গ্রাম | |
প্রাপ্তবয়স্ক | প্রতি কেজিতে ৩০–৪০ ক্যালরি | প্রতি কেজিতে ১.৫–২.৫ গ্রাম |
উদাহরণস্বরূপ, ২০ কেজির একটি শিশুর প্রতিদিন প্রয়োজন হতে পারে ২০০০ ক্যালরি ও ৫০–৮০ গ্রাম প্রোটিন।
---
যদি রোগী মুখে খেতে পারেন:
খিচুড়ি + ডিম/মুরগি
ডিমের সাদা অংশ + কলা
ঘন দুধ/সুজি
দই, চিজ
চিনি ছাড়া ফলের রস
যদি খেতে না পারেন:
নাকের টিউব দিয়ে তরল ফর্মুলা (যেমন: হাই প্রোটিন/ইমিউন সাপোর্ট ফর্মুলা)
💊 ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ
উপাদান কাজ
ভিটামিন C কোষ গঠন, ক্ষত শুকানো
ভিটামিন A ত্বক সারাতে সাহায্য করে
জিঙ্ক কোষ গঠনে সহায়তা করে
আয়রন ও বি-কমপ্লেক্স রক্ত ও শক্তির উৎস
সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
এগুলো সাপ্লিমেন্ট আকারে দেওয়া যায়, তবে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শে।
📋 নিয়মিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন:
প্রতিদিন: ওজন, প্রস্রাবের পরিমাণ, সংক্রমণের লক্ষণ
সাপ্তাহিক: রক্তের প্রোটিন ও সুগার লেভেল এবং ক্ষত শুকানোর অগ্রগতি
লেখক:
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা
সিনিয়র নিউট্রিশনিস্ট, ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
সহ-প্রতিষ্ঠাতা, নিউট্রিলার্নবিডি