
20/06/2024
এক স্ত্রী নিয়ে সুখে থাকার গাইড
বর্তমান যুগের ব্যাপার হোক আর সামাজিক শিক্ষার ব্যাপার হোক, একই সাথে একাধিক স্ত্রী রাখা অনেকের জন্যই প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। আর প্রচলন না থাকায় বা ভুল ব্যাখ্যার কারণে, ভয়ের বিভিন্ন মিথ্যা গল্প থাকায় সতীন কনসেপ্টটাই একটা আতংকের নাম!
দুঃস্বপ্নের একটা নাম!
যদিও অনেক মেয়েরা সতীন মেনে নিতে কিন্তু মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকে। বরকে তারা শুরু থেকেই নিজের একার সম্পদ ভাবে না। কিন্তু বিয়ের সময় নিজের ভুলে অথবা বাবা মায়ের ভুলে এই সব উদারপন্থী মেয়েদের ইগ্নোর করে পজেসিভ মানসিকতার মেয়েদের বিয়ে করে আনা হয়।
সুন্দরী, ট্যালেন্ট কিংবা ধনী পরিবারের একটা মেয়েকে আগে থেকে জিজ্ঞাসা না করে, ইচ্ছামতো ভালবাসা দেখিয়ে, সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে পাগল করার পর যখন সতীন কনসেপ্টটা আনা হয়, তখন জুলুম হয়ে যায়। এর থেকে বড় জুলুম আর সত্যিই হয় না।
যাদের একাধিক বিয়ে লাগবে, তারা প্রথম বিয়ের আগেই ঐ উদারপন্থীদের খুজে বের করলেই কিন্তু হয়ে যায়।
বিয়ের পর একটা আদুরে পজেসিভ মেয়েকে ইসলাম, সুন্নাহ ও মাসয়ালা শেখাতে যাওয়াটা বরংচ বেয়াদবী। এবং ঠিকঠাক ভাবে না করতে পারলে মৌলিক ইমানই নষ্ট হবার আশংক থাকে।
তাহলে এখন যেহেতু দ্বিতীয় বিয়ে করাটা জুলুম হয়ে যাচ্ছে, তাই এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে, আর আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে। ধৈর্য ধরা ছাড়া আর হালাল কোন উপায় নেই।কারণ, হালাল না পেয়ে মুসলমান হারামে ঝাপ দিবে না।'বিয়ে না করতে দিলে আমি পরকীয়া করবো', এটা মুসলমানের হুমকী হতে পারে না।
এখন নিজেকে সামলে কিভাবে ধৈর্য ধরা যেতে পারে?
১।
চোখ ও কানের কঠিন পর্দা করতে হবে।অন্য কোন মেয়েদের দিকে তাকানো যাবে না।
তাদের কথা ভাবাও যাবে না। তাদের কথা শোনাও যাবে না। স্ত্রী সহ সবাইকে নিষেধ করে দিতে হবে, কোন মেয়ের গল্পও তার সামনে যেন না করে। কড়া নিষেধ!
সারাক্ষণ নারীদের নিয়ে গল্প করে এমন বন্ধুদের থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতে হবে।
ইউটিউব ও ফেসবুক থেকে খুব সাবধান, খুব সাবধান!
২।
ফেরোমোন থেকে বেঁচে থাকা জরুরী।
রাস্তায় মাস্ক ব্যবহার করা খুব দরকার।
সুযোগ থাকলে মেয়েদের সাথে লিফট ব্যবহার না করলে ভালো। বাসে-ট্রেনে একসাথে বসার তো প্রশ্নই ওঠে না। যত দূরে সরে যাওয়া যায়।
কাছাকাছি চেয়ার হলে, একই রূমে বেশিক্ষণ কাজ করতে হলে মেয়েদের সাথে খুব রিস্ক। চেষ্টা করতে হবে অবস্থান বদলানোর জন্য। নাহলে জাস্ট চাকরী বদলে ফেলা উচিত।
অভাব অনটন আসলে আসুক, ফেস করতে হবে।
৩।
স্ত্রীকে সম্মান করতে হবে।
ঝগড়া এড়িয়ে চলতে হবে, অভিমান করে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না, বাড়তি সম্মান দিতে হবে। স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা, স্ত্রীকে খোচাখুচি করা এগুলো ক্ষতিকর। এমনকি ইয়ার্কী করে করা হলেও ক্ষতিকর। অনেক সময় নিজের মন নিজের অনিচ্ছাতেই ই্য়ার্কিকে সিরিয়াসলি নিয়ে নেয়, এবং প্রথম স্ত্রী্র বিকল্প খুজতে উস্কে দিবে।
তাই কিসে সমস্যা হচ্ছে সরাসরি বউকে বলে দিতে হবে। 'সে নিজে বুঝে নিক' এই আশায় বেশিক্ষণ অভিমান করে থাকা যাবে না।
৪।
স্ত্রীর সাথে অতিরিক্ত হাসাহাসি, অতিরিক্ত রসিকতা, অতিরিক্ত ফান করা যাবে না।অতিরিক্ত বলেছি কিন্তু...
হাসাহাসি, দুষ্টমী, ফান তো বউয়ের সাথেই করবো, কিন্তু অতিরিক্ত আর করা যাবে না। কারণ তাহলে আমাদের ডোপামিন রিসিপটরগুলো আমাদের উস্কে দিবে। 'এমন মজার মানুষ বেশি বেশি চাই, আরও কালেকশন চাই' এমন শক্তিশালী আকাঙ্খা তৈরি হবে। যার সাথে ফাইট করে টিকতে পারবে অধিকাংশ মানুষ।
আদর, সোহাগ, ভালবাসা সব কিছু লিমিটের উপর থাকবে, লিমিটের মধ্যে থাকবে। লিমিট ক্রস করলেই বিপদ।
৫।
স্ত্রীর অতিরিক্ত সেবা নেয়া যাবে না।
সেম ব্যাখ্যা
৬।
স্ত্রীকে যথেষ্ট সেবা করতে হবে।হাত পা টিপে দেয়া, বাতাস করা, পার্সোনাল বা ঘরের কাজে হেল্প করা। কিছুটা শারীরিক মানসিক শ্রম খরচা হবে। ব্রেণই তখন বলবে, 'না, না থাক থাক। এই বালা একটাই যথেষ্ট।'
৭।
স্ত্রীকে অতিরিক্ত সেবা করা যাবে না।সেবা করতে করতে একটা পর্যায়ে আবার উল্টো রিয়াকশন হতে পারে। ধর্মীয় মহৎ চিন্তা মাথা খোঁচা দিতে পারে, তাই অবশ্যই এটাতে সতর্ক থাকতে হবে। অতি সেবা আর কম সেবা দুটোই বাদ।
৮।
নিজের শখ ও স্বপ্নে একটা বেলা ডুব দিয়ে দিতে হবে।ঐখানে কাউকে স্থান দেয়া যাবে না। কাউকে আনা যাবে না।শক্তিশালী শখ ও স্বপ্ন দ্বিতীয় বিয়ের নেশা কমিয়ে আনে।
৯।
দেশ ও সমাজ নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। রাজনীতি অর্থনীতি নিয়ে ভাবতে হবে।
শুধু ভাবলে হবে না, কাজই শুরু করতে হবে।
'আরে রাজনীতি কি আমার কাজ? রাজনীতি নোংরা', এসব বলে পার পাওয়া যাবে না। ভাবতে হবে রাজনীতি নিয়ে। এসব নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করলে অবশ্যই দুইটা বড় লাভ।
এক- বাড়তি কামনা বাসনা হাওয়া হয়ে যায়। পৃথিবীর কষ্ট দেখে, দেশের কষ্ট দেখে আর নিজের সুখের কথা সামনেই আসতে চায় না।
দুই- আয়ু কমে যায়। ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসলে বেশি বাঁচার কথা না। তাই আরো বিয়ের অবদমিত কামনার আগুনে বেশি জ্বলতে হবে না। হায়াত যতটুকু কাজে লাগে, ভালো। বাড়তি কষ্টের কি দরকার?
১০।
আল্লাহর কাছে সারাক্ষণ দোয়া চাওয়া। জিকিরের মতো করে দো্য়া চাওয়া।এটাই এক নম্বরে লেখা উচিত আসলে। কিন্তু ১০ নম্বরে দিলাম, কারণ আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, তিনি মাফ করবেন।এটা কাজ যে করবেই করবে, সবাই নিশ্চিত।
১১।
খাবার নিয়ন্ত্রণ।
খাবার খুবই কম খেতে হবে। খুব বেছে, হিসাব করে খেতে হবে।
যা খাওয়া হবে, তা যেন খরচ হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে বেশির ভাগ রাতে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া খুব উপকারী। ক্ষুধার কষ্ট অন্য চিন্তায় অনেকখানি বাধা দেয়। পুরোটা পারে না, কিন্তু অনেকটা কাজ করে।
যেকোন মানসিক নিয়ন্ত্রণের মা হলো খাবার নিয়ন্ত্রণ। খাবার নিয়ন্ত্রণ মানে নফস সোজা!
১২।
কঠোর ব্যায়াম ও কায়িক শ্রম।নিয়ন্ত্রিত খাবারে ব্যায়াম করলে, বিশেষ করে রাতের দিকে বা দুপুরে ব্যায়াম করলে তখন দূর্বলতা থাকে। তখন বাড়তি উড়ালি চিন্তাভাবনা মাথায় আসার সাহস করবে না।আর যারা কায়িকশ্রম বেশি করে, তাদের নফস তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, পা ধরে বসে থাকে।
১৩।
স্ত্রীকে ভিন্ন ভিন্ন সাজে ঢঙে দেখতে হবে।বউকে বাসার কাজে ব্যস্ত রেখে কাজের মহিলা বানিয়ে রাখাটাই পরকীয়ার সবচাইতে বড় কারণ। তাই অবশ্যই বাসায় কাজ কমাতে হবে। বউকে কাজের মহিলা দিতে হবে, স্বস্তার মধ্যে ভালো ভালো পোষাক সাজদ্রব্য দিতে হবে যেন বিভিন্ন রকম আলাদা আলাদা সাজগোজ করতে পারে।
কথা বলার টোন, ঢং ইত্যাদিও বদলে নিতে পারে বউ চাইলে। বেশি বেশি রঙঢঙ করলে বউকে আর একঘেয়ে লাগবে না। পায়জামা মনে হবে না। বাসার চেয়ার টেবিল মনে হবে না।
এক স্ত্রীকে নিয়েই সুখি থাকা যাবে, তৃপ্ত থাকা যাবে।
এই পদক্ষেপগুলো দ্বিতীয় বিয়ের বেসিক চাহিদাকে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবে।
কিন্তু যারা আলাদা, যারা স্পেশাল, যাদের প্রয়োজন আরও তীব্র, আরও অসহ্য তাদের জন্য আমি দুঃখিত।তারা অবশ্যই এক্সপার্টের সাহায্য নিন।
ঔষধ, চিকিৎসা, অপারেশন, থেরাপি অনেক কিছুই লাগতে পারে।
আল্লাহ আপনাদের নিয়মিত তীব্র যন্ত্রণা উপশমের ব্যবস্থা করে দিন