08/07/2025
ক্রাশ ডায়েটের (দ্রুত ওজন কমানোর) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :
আমরা যখন ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেই এটা খুব স্বাভাবিক যে আমরা চাই খুব দ্রুত যেনো ওজন কমাতে পারি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে মানুষের কটুকথা ও বিভিন্ন শারীরিক রোগ ব্যাধি আমাদের অস্থির করে তোলে। আমরা খুঁজতে থাকি সবচেয়ে সহজ উপায়। ইন্টারনেটে আজকাল সবকিছুই সহজলভ্য, তাই চট করেই খুজে নেই সহজ কোন টোটকা, ডায়েট পিল বা একটা ডায়েট চার্ট। কোন ডায়েট বা এক্সারসাইজ না করেই কমিয়ে ফেলুন ১০ কেজি! শুধু মাত্র একটি পানীয় পানে পেটের মেদ ঝেরে ফেলুন! এই বিজ্ঞাপন গুলো খুব আকৃষ্ট করে তখন। ওজন কমাতে আমরা এতোটা অস্থির হয়ে যাই যে আমরা সেসব ফলো করতে শুরু করি। অল্প সময়ে অনেক বেশি ওজন কমানোর জন্য আমরা তখন ক্রাশ ডায়েট করি পরে কি হবে না ভেবেই। আজ আমরা কথা বলবো ক্রাশ ডায়েট কি এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।
#ক্রাশ_ডায়েট_কি?
ক্রাশ ডায়েট মূলত এমন একটি ডায়েট প্ল্যান যা খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি ওজন কমানোর প্রতিশ্রুতি দেয় । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রাশ ডায়েট গুলো অনেক লো ক্যালরির হয়ে থাকে (৮০০-১০০০ ক্যালরির ও কম) এবং এতে প্রধান নিউট্রিয়েন্ট গুলো অনুপস্থিত থাকে।
ডিম ডায়েট, ফল ডায়েট, ডিটক্স ডায়েট, মিলিটারি ডায়েট এগুলো বিভিন্ন ক্রাশ ডায়েটের নাম। এই ডায়েট গুলোতে সপ্তাহে ২-৩ কেজি বা মাসে ৮-১০ কেজি কমানো যাবে এমনটা বলা হয়। যেখানে অধিকাংশ নিউট্রিশনিস্ট বা বিশেষজ্ঞের মতে সপ্তাহে ০.৫ - ১ কেজি কমানো স্বাভাবিক ও নিরাপদ। বিশেষজ্ঞদের মতে স্বল্প মেয়াদী ওয়েট লস প্ল্যানের চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্ল্যান বেশি কার্যকর কারন সেটা সাসটেইনেবল , সব নিউট্রিয়েন্ট গ্রহণের প্রতি সচেতন থাকা যায় এবং ওজন কমানোর পর সেটা ধরে রাখা ও সহজ।
#ক্রাশ_ডায়েট_কেন_করে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার বা কোন নির্দিষ্ট গোল (যেখানে আদর্শ ওজন বা ফিজিক্যাল ফিটনেস কে প্রাধান্য দেয়া হয়) কে সামনে রেখে অনেকে ক্রাশ ডায়েট করে। আবার বিভিন্ন ইভেন্টে যেমন বিয়ে বা কোন উৎসব কে সামনে রেখে ও ক্রাশ ডায়েট করে ওজন কমায় অনেকে। এদের কারোরই উদ্দেশ্য ফিটনেস অর্জন নয় কারণ যারা ফিটনেস সচেতন তারা শুধু ভালো ফিজিক না সাথে সুস্বাস্থ্যের কথাও চিন্তা করে। তারা ক্রাশ ডায়েট করে পরবর্তী বিড়ম্বনায় ভুগতে চান না।
#ক্রাশ_ডায়েট_পরবর্তী_বিড়ম্বনা:
🔰নিউট্রিয়েন্ট ডেফিশিয়েন্সি : ক্রাশ ডায়েটে তাৎক্ষণিক ভাবে ওজন কমলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই ভয়ানক কারণ অনেক কম ক্যালরি গ্রহন ও নিউট্রিশনে ঘাটতি। প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টগুলো যেমন প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল এর অভাবে পরবর্তীতে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে :
▪️ইমিউন সিস্টেম / রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়া।
▪️ত্বক, চুল ও নখের ক্ষতি।
▪️রক্ত শূন্যতা, হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি
▪️পানি শূন্যতা ও ফলস্বরুপ
-কোষ্ঠ কাঠিন্য
- মাথা ব্যথা
-ক্লান্তি
- পানির সাথে ইলেকট্রোলাইট ও কমে যায় যার ফলে মাসল ক্রাম্পিং ।
🔰মাসল লস ও মেটাবলিজম স্লো হয়ে যাওয়া।
🔰ক্রাশ ডায়েটের অন্যতম, সবচেয়ে বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো এই ডায়েটে যা ওজন কমানো হয় তা আরো দ্রুত গতিতে ফিরে আসে। হুট করে অনেক বেশি ওজন কমানোর ফলে ব্লাড সুগার লেভেল কমে যায়, সবসময় ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভূত হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, মনোযোগ কমে যায়, ক্ষুধা ও বেড়ে যায়। এসব কিছু থেকে মুক্তি পেতে আমরা ওভার ইটিং শুরু করি যার বেশিরভাগ হয় আনহেলদি হাই ক্যালরি খাবার, ফলে ওজন বেড়ে যায়। ওজন বাড়তে দেখে আমরা মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়ি, ভাবি আমাকে দিয়ে কিছু হবে না তাই আগের সেই খাওয়া দাওয়া শুরু করি এবং ওজন বাড়তেই থাকে।
এসবের সাথে
- অনিয়মিত পিরিয়ড
- হরমোনের অসামঞ্জস্যতা( বিশেষ করে লেপটিন, ঘ্রেলিন, থাইরয়েড) এসব সমস্যা ও দেখা যায়। প্রভাবিত হয় ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ও। ক্রাশ ডায়েট থেকে পরবর্তী লাইফস্টাইলে ফিরতে গিয়েও অনেকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়।
#তাহলে_কি_করবেন?
▪️ডায়েট কে সাময়িক কোন টার্গেট হিসেবে না নিয়ে দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে নিন। এটা এমন না যে ৩ মাস করবেন আবার ছেড়ে দিবেন আবার ৩ মাস করবেন।
▪️বিভিন্ন টোটকা বা শর্টকাট পদ্ধতি খোজার বদলে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করুন যা শুধু ওজন কমানো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং সবসময় মেইনটেইন করা যাবে ।
▪️সব ধরণের ম্যাক্রো ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সঠিক ডায়েট প্ল্যান তৈরি করুন। যথেষ্ট প্রোটিন ও ফাইবার নিশ্চিত করতে হবে, সুগার ও প্রসেসড খাবার পরিহার করতে হবে । ফ্যাটের স্বাস্থ্যকর উৎস নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত ক্যালরি কাট করা যাবে না।
▪️ডায়েটের পাশাপাশি রেজিস্টেন্স ট্রেনিং ও হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং ( HIIT) এর চর্চা করুন। এগুলো ওজন কমানোর পাশাপাশি মাসল বৃদ্ধি /সংরক্ষণে সাহায্য করে।
▪️পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
▪️ পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করুন । অপরিমিত ঘুম হরমোনের অসামঞ্জস্যতার প্রধান কারণ।
স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানো সময় সাপেক্ষ হলেও পরবর্তী সমস্যায় ভুগতে না চাইলে ওজন কমানোর সময় অবশ্যই আমাদের এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।