25/09/2025
বেবি নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন বা নাস্তায় বাচ্চার জন্য এমন কোনো পুষ্টিকর খাবার খুঁজছেন যা সহজেই ঝটপট রান্না ছাড়া রেডি করা যায় পাশাপাশি প্রচুর পুষ্টিকর আর মজাদারও? আমাদের বেবিফুডগুলো হতে পারে এর সহজ সমাধান। দেখুন পথিক কাপল কিভাবে বেড়াতে গিয়ে আমাদের বার্লি সিরিয়াল সহ অন্যান্য খাবার দিয়ে আপু বাচ্চার সুষম পুষ্টি, মজাদার খাবার নিশ্চিত করেছেন। আর খাবার বানাতেও কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। 💚
বেবি নিয়ে দেশের বাহিরে ঘুরতে গিয়ে ওদের খাবার কিভাবে ম্যানেজ করেন !! 🤔
গত কয়েকদিন যাবত আমাদের ইনবক্স, কমেন্ট সেকশনে সবচেয়ে বেশি এই প্রশ্নটাই পেয়েছি। চলুন আজকে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাদের বিষয়টা বুঝিয়ে বলি 😎
আমার সাথে দুই বয়সের দুইটা বেবী। একজন তিন বছর প্লাস আরেকজন ৮ মাস+। প্রথমত ভ্রমণ বা ট্যুরের আগে আমি সর্ব প্রথম নিজের মণকে কাউন্সিলিং করি। ধরুন সাধারনত আমরা কোথাও ঘুরতে গেলে সর্বনিম্ন ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিনই বাহিরে থাকি। এটা খুবই অল্প একটা সময়, এই টুকু সময়ের মধ্যে যদি খাবার দাবার সিডিউল অনুযায়ী খুব একটা নাও দেয়া যায় এটা কোন বিষয় না। জায়ানের যেহেতু আট মাস ও বুকের দুধেই থাকতে পারবে আর আরু যেহেতু ৩ বছর ও আমাদের সাথে সাধারন খাবারই শেয়ার করতে পারবে। বিশেষ করে কলা বা অন্যান্য ফল যেগুলো সব দেশেই ভালো ভাবেই পাওয়া যায়। এছাড়া দেখা যায় ট্যুর ছাড়াও মাসে অন্তত দুই তিনদিন আমাদের বাহিরে বিভিন্ন কিছু খাওয়া পরে। যেমন বার্গার, পিৎজ্জা, ফ্রাইড রাইস ইত্যাদি। সো ট্যুরে গিয়েও দু তিনদিন যদি বেবি সেই খাবার খায় সেটাতেও কোন সমস্যা হওয়ার কথা না (যদি আপনার বেবী এই ধরনের খাবারে অভ্যস্ত থাকে)। তবে হ্যা অবশ্যই সাস্থ্য সম্মত জায়গার খাবার খেতে হবে। যেমন আমরা বার্গার কিং, ম্যাকডোনাল্ডস থেকে এবার অনেক এই ধরনের খাবার খেয়েছি এন্ড আরুও খেয়েছে। আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা হয়নি। আর জায়ানের জন্য সবসময় সাথে কলা রাখতাম। খুব বেশি সলিড ক্রভিং উঠলে কলা খাইয়ে দিতাম। এছাড়া বুকের দুধেই হয়ে যেতো। এবার আসি সেকেন্ড ফেইজে। প্রতিদিন ঘোরাঘুরি করে আমরা রাতে যখন হোটেলে ফিরতাম তখন আমাদের তেমন আর কিছু করার থাকতো না। তখন আমি সময় নিয়ে ওদের জন্য দেশ থেকে ক্যারি করে নিয়ে যাওয়া চাল, ডাল, আলু, গাজর তেল ও মসলা দিয়ে খিচুড়ি করতাম। মানে রাতে অন্তত একবার ওদের ডেইলি রুটিনের খাবার চার্টটা মেইনটেইন করতাম। এছাড়া সুযোগ পেলে সকালে ঘুরতে যাবার আগে, কিছু হোম মেইড পাস্তা, নুডুলস এগুলো সেদ্ধ করে হটপট টাইপ বক্সে নিয়ে নিতাম। এতেই মোটামোটি পুরো দিন চলে যেতো। আর বাহিরে ঘুরতে গেলে আশে পাশে এমন নতুন নতুন অনেক ধরনের আইটেম চোখে পরে যেগুলো একটু একটু করে টেস্ট করতে গেলেও পেট ভরে যায়। যদি আপনার বেবীর বয়স ২.৫+(আড়াই বছর+) থাকে তাহলে তার খাবার নিয়ে এতো টেনশনের কিছুই নেই। সে আপনার সাথেই টুকটাক এটা সেটা খেয়ে সার্ভাইব করে যাবে। আর রাতে তো হোটেলে ফিরে প্রপার মিল দিচ্ছেনই। আর আমার ছেলের মত ৮ মাস বা এরকম বয়সের বেবীর জন্য বুকের দুধই যথেষ্ট (১০-১২ দিন ট্যুরের জন্য) সাথে কলা এন্ড বিদেশে বিভিন্ন সুপার শপে পিউরি প্যাক পাওয়া যায়, সেটা দিতে পারেন। (অবশ্যই ভালো করে রিসার্চ করে উন্নত মানের টা দিবেন) আমি যেমন মালয়শিয়াতে Ge**er এর টা পেয়েছি। বেশ ভালো ছিলো। সেই সাথে বাংলাদেশ থেকে জাফ্রিন আপুর পেইজ থেকে তালবিনা পাওডার নিয়ে গিয়েছিলাম যেটা যাস্ট গরম পানি দিয়ে মিক্স করে ইন্সট্যান্ট খাওয়ানো যায়। এটাও আমার ভীষন কাজে দিয়েছে। এই সেইম জিনিসটা আমি কাশ্মীর যাওয়ার সময়ও আরুর জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। এছাড়া যে হোমমেইড নুডুলসটা নিয়ে গিয়েছি সেটা আপুর থেকেই নেয়া। লাস্ট বাট নট দা লিস্ট, দেশ থেকে একটা ছোট্ট মিনি কুকার নিয়ে যাবেন, যাতে সুযোগ পেলেই রান্না করে খাওয়াতে পারেন। এছাড়া চাইলে এমন কোন হোটেল বা সার্ভিস এপার্টমেন্ট বুক করবেন যেখানে কিচেনেট ফ্যাসেলিটি আছে। এতে আপনার অনেক সুবিধা হবে। সেই সাথে ছোট একটি ফ্লাক্স যেখানে গরম পানি ক্যারি করতে পারবেন সাথে রাখতে পারেন। আর অবশ্যই দেশ থেকেই বাবুদের দৈনন্দিন যে খাবার গুলো খাওয়ান সেগুলো একটু একটু করে মিনিবক্স করে নিয়ে নিবেন। যেমন আমি একটা ছোট ব্যাগই নিয়েছিলাম যাস্ট ওদের খাবার পার্পাসে। যেখানে ওদের সব খাবার থাকতো। কিন্তু এটা নিয়ে কিন্তু আমি এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াই নি। এটা হোটেলে থাকতো। আর প্রতিদিন ঘুরতে যাওয়ার সময় আগের দিন রাতের রান্না করা কিছু (রাতে খাইয়ে বাকিটা ফ্রিজে রাখতাম, সকালে গরম করে নিতাম), বা একটু পাস্তা বা নুডুলস সেদ্ধ করে পিঠ ব্যাগে নিয়ে ঘুরতে চলে যেতাম। সাথে কিছু ফ্রুটস যেমন কলা, কমলা, আংগুর এসব রাখতাম ( আপনার বাবু যে ফল পছন্দ করে)। সবচেয়ে বড় একটা বাস্তবিকতা কথা হলো, আপনি যতই আপনার সন্তানকে জাংক ফুড, ফাস্ট ফুড বা চকলেট এসব থেকে দূরে রাখেন, বিদেশ বা দেশে ঘুরতে গেলে এসব একটু এডযাস্ট করে নিতেই হয়। কারন যেখানেই যাবেন, ডানে বামে সামনে পেছনে এগুলোই। কতবার আর বাবুকে সামলাবেন!! সো ঐ স্পেসেফিক কয়েকটা দিনের জন্য রুটিন বা অভ্যাস একটু এদিক সেদিক হলেও ভয় বা টেনশনের কিছু নেই। দেশে ফিরেই বা বাসায় ফিরে অল্প কিছুদিনেই আবার আগের অভ্যাসে চলে আসবে। যেমন আরুও অনেক হাবিজাবি খেয়েছে ঐ কতদিন, কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ এখন সে বাসায় ফিরে আবার বসার তৈরি তার দৈনন্দিন খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। মূল কথা হলো, বড়দের মত এরাও সুযোগের সৎ ব্যবহার করে। সেখানে সুযোগ পেয়ে যা ইচ্ছা তাই নিবে খেতে চাইবে। আমার বাসায় ফিরে আর সেই সযোগ না পাওয়ায় এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যাবে। এবার চলুন একটা ম্যাজিকাল টিপস দেই। আপনাদের মাঝে অনেকর বেবীই আছে খেতে চায়না। কিন্তু এসব বেবীরাই দেখবেন ঘুরতে গিয়ে নিজে থেকেই খেতে চাইবে। শুধু আপনি একটু পর পর এটা সেটা তাকে খাওয়ার জন্য সাধবেন না। ঘুরতে থাকবেন। ওর ক্ষুধা পেলে নিজেই চেয়ে খাবে। তবে সর্বোপরি একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে, যেটাই খাচ্ছে বা যেখান থেকেই খাচ্ছে সেটা প্রপার হাইজেনিক কিনা। যদিও বিদেশে সেটা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি মেন্টেইন করা হয়। আর সবচেয়ে বেশি ইম্পর্টেন্ট হলো বাবা মা হিসেবে সবার আগে আপনাকে বাবুর খাবার নিয়ে স্ট্রেস ও টেনশন ঝেড়ে ফেলতে হবে। রিজিকের মালিক আল্লাহ, কোন না কোন ভাবে উনিই ব্যবস্থা করে দিবেন। আশা করি আমার এই পোস্ট থেকে একটু হলেও সবাই আইডিয়া পেয়েছেন। এরপরেও যদি কারও কোন প্রশ্ন বা কনফিউশন থাকে কমেন্ট করবেন। আমি রিপ্লাই করার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ ❤
ওপরের এই কথাগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার। আপনাদের ভিন্ন অভিজ্ঞতা বা মতামত থকাতেই পারে। সর্বোপরি একজন সন্তানের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং উপযোগী কি সেটা তার বাবা মাই সবচেয়ে ভালো নির্ধারন করতে পারে…